জীবনকে উপভোগ করতে চাই জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে
বাবা,তুমি কেমন আছো আমাদের ছেড়ে? না ফেরার দেশে চলে গেলে কি অভিমানে বাবা জানা হলো না। তোমাকে নিয়ে এত সহসা এমন স্মৃতি কাব্য লিখবো কখনো ভাবি নি বাবা। সন্তান হিসাবে আমার প্রতি যে তোমার কত ভালোবাসা ছিলো তা কি করে বোঝাই বাবা। আমার কাছে তো তার কোন উপমা নেই বাবা। তোমাকে ছাড়া আমার জীবন কিভাবে কাটবে তার ভাবনায় তোমার সারাটা জীবনের প্রতিটি ক্ষণ ,প্রতিটি মুহুর্ত কাটতো বাবা সেই তুমি কেমন করে আমকে ছাড়া না ফেরার দেশে আছো বাবা বড় জানতে ইচ্ছে করে।
বৈশাখের প্রথম দিনটি তোমার খুব প্রিয ছিলো বাবা। সেই প্রিয় দিনেই প্রিয়জনকে ছেড়ে চলে গেলে বাবা না ফেরার দেশে। তোমাকে নিয়ে লিখতে বসতে চেয়েছি বাবা অনেক বার,আমার লেখার হাত তো বাবা সচল হয় না। আমার লেখার প্রতিটি ক্ষণে তোমার উপস্থিতি ছিলো বাবা অনুপ্রেরণার এক মহান আদর্শ। তোমার অনুপস্থিতি আমার ভাবনা চিন্তাকে হঠাৎ এলোমেলো করে দিয়েছে বাবা।
অনেকদিন ফেসবুক, ইন্টারনেটে ঢুকতে পারি নি। তোমার ভালোবাসার কথাতো বাবা লিখে শেষ করা যায় না । কোনটা ফেলে কোনটা লিখি বাবা। তোমার জীবনইতো বাবা ভালোবাসার ইতিহাস তোমার মৃত্যু বাবা আমাকে এত আলোড়িত করেছে আমার জীবনের সব ভাবনা , আনন্দ, হাসি যেন নিমিষেই মিলিয়ে গেলো। আমাকে নিয়ে তোমার কত স্বপ্ন ছিলো বাবা, পরিবার পরিজন নিয়ে তোমার কত সংগ্রাম আমি আমার নিজের চোখে দেখেছি বাবা।
কিভাবে তিল তিল করে তুমি গড়ে উঠেছো, আমাদের গড়ে তুলেছো-তার প্রতিদানতো বাবা হয়তো সন্তান হিসাবে দিতে পারি নি। আমার চেষ্ঠার কোন ত্র“টি ছিলো না বাবা,তবুও আমার সকল অপারগতা তুমি ক্ষমা করো বাবা।
বাবা বৈশাখের প্রথমদিনে সকালবেলা স্নান করে ধর্মীয় অনুশাসন সম্পাদন করে যখন ঘরে আসতে তোমাকে প্রণাম করে আর্শীবাদ নিতাম বাবা-সেই প্রিয় দিনেই ছেড়ে গেলে বাবা আমাদের। কত আনুষ্ঠানিকতা ছিলো তোমার এ দিনকে ঘিরে। এবারও তো তার কমতি ছিলো না ।
আমার বোন, আত্মীয়স্বজনদের সাথে টেলিফোনে কথা বলতে,তোমার প্রিয় নাতনিদের জন্য মাটির ব্যাংক নিযে আসতে, এ দিন পুরাতন ব্যাংক ভেঙ্গে আবার নতুন কেনা ব্যাংকগুলোতে টাকা দিয়ে নতুন বছর শুরু করতে। তোমার প্রিয় নাতনিদের জন্য মাটির ব্যাংক এনে রেখে রেখেছিলে বাবা-কিন্তু সে ব্যাংক এ টাকা দিয়ে নতুন বছর শুরু করতে পারনি বাবা। তোমার মৃত্যু পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতাতেই তোমার প্রিয় দিনের সব স্বপ্ন মিলিয়ে গেলো।
বাবা তুমিই তো ছিলে আমার উৎসাহদাতা ,অনুপ্রেরণা। আমার সাফল্য আর লেখনীতে তুমি কত গর্ব অনুভব করতে বাবা।
এবারের ঢাকা একুশে বই মেলাতে প্রথম আলো ব্লগ সংকলন ‘আলোর মিছিল’ এ আমার লেখা যখন বের হলো সেই কথাটি তোমাকে বলেছি কিনা আজ মনে পড়ে না বাবা। কিন্তু তোমার নাতনিদের কাছে শুনেছি তুমি তা জেনেছিলো এবং কয়েকজনকে দেখিয়েওছিলো বইটা। । এমন ছিলো তোমার আনন্দ উৎসাহ বাবা। তোমার মৃত্যুর পর আর কোন লেখা আমার হয়ে উঠে নি।
বাবা আমার কলমে যেন এক ধরণের শূন্যতা হাহাকার। ফেসবুক ,ব্লগে কোন লেখা লিখতে পারি নি। বাবা তোমার জীবনের শেষ দু:খের অনুভূতিগুলোর কথা মনে হলে আমি নিজেকে নিজেকে সংবরন করে বাখতে পারি না। পরিবারের সকলের জন্য কি চেষ্টাই না তুমি করো নি বাবা-তোমার সাধ্য আর সামর্থ্যের মধ্যে। তোমার জম্মওতো বাবা সোনার চামচ মুখে দিয়ে হয় নি।
বড় অভাব অনটনের মধ্যে বেড়ে উঠা মানুষ ছিলে তুমি। তিলে তিলে বেড়ে উঠে তুমি নিজেই হয়ে উঠেছিলো আপনগুণে এ সমাজের একজন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্বে। শিক্ষকতার মত মহান পেশাকে ব্রত করে জীবনটা সপে ছিলে মানুষ তৈরীর মহাযজ্ঞে। তোমার ছায়া তলে তো আমাদের ঠিকানা ছিলো। এ পৃথিবীর বুকে আমি বাবা ঠিকানা হারা হয়ে গেলাম ,আর তুমি আকাশের ঠিকানায় মিলিয়ে গেলে।
তোমার অসুস্থতার ব্যাপকতা বাবা সন্তানের কষ্ট হবে ভেবে ততটা গুরুত্ব দিয়ে বলো নি, নাকি আমার বুঝতে অক্ষমতা ছিলো জানি না-তুমি জানতে বাবা তোমার সন্তানের উপর দিয়ে কত ঝড়ই না বয়ে গেছে। সেতো আমি একলা সামলানোর চেষ্ঠা করেছি। তুিম জানতে বাবা তোমার সাথে আমিও যাদের ভালো মন্দে থাকার চেষ্ঠা করেছি তারা সবাই তোমাকে ভুল বুঝেছে। তোমার জীবদ্দশায় সে ভুলের উত্তর টা তোমার দেয়া হলো না। তুমি মনে প্রানে চেয়েছিলে তোমার আপনজনদের হৃদয়ের কাছে টেনে কিছু কথা বলতে , তোমার দুয়ারে এসে তোমাকে অবহেলা করার দীর্ঘশ্বাস আমাকে কাদিঁয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন।
সমাজের অন্য দশজনের মত পরিবারের অনেককেই কলম ধরে লেখাপড়া শেখানোর চেষ্ঠা করেছো অন্তত। আর কিছুই করেছা বলে বলি না- যদি করে থাক তাহলে তো তা জানেন অর্ন্তযামী। সকলের প্রতি তোমার দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছা নিষ্ঠার সাথে। যদি কেউ ভুলে যায় যাক বাবা-জীবদ্দশায়তো তুমি কাউকে ভুলো নি,অনন্তপারের অসীম ঠিকানা থেকে তুমি কাউকে ভুলো না বাবা। সুদীর্ঘ ৪০ বছরের শিক্ষকতা জীবনে তোমার অনেক ছাত্র ছাত্রী আজ সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত ।
তাদের কৃতজ্ঞতাবোধ সন্তান হিসাবে আমাকে গর্বিত করে বাবা। অনেকে সেই দুর বিদেশ থেকেও অনেকে টেলিফোনে সমবেদনা জানিয়েছে। সমাজের তোমার অবস্থানে শূন্যতা নেমে এলো। বাবা তোমার এ অসুস্থতা যে এত সহসা তোমাকে আমাদের মাঝ থেকে নিয়ে যাবে তাতো ভাবতে পারি নি। জীবনের অনেক অসুস্থতার দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে তোমার‘বিজয়’ নামের বিজয় পতাকাটা আমাদের সামনে অনেকবার তুলে ধরেছো।
আমি কি পারি নি বাবা তোমার শেষ জীবনের আকুতিগুলো বুঝতে ?এখন মর্মে মর্মে আমি অনেক কিছুই বুঝছি-আমার তো এখন করার কিছুই নেই। তুমি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছ-কিনতু তা তো বুঝতে দিলে না বাবা। তোমার সন্তানের কষ্ট হবে ভেবে কত দূ:খই না তুমি নীরবে সয়ে গেছো। তুমিতো বাবা আমাকে অনেক কিছুই দিয়েছো-সব সুযোগ সুবিধা থাকা স্বত্ত্বেও তোমাকে জীবনের শেষ ক্ষণেসঠিক স্বাস্থ্যসেবা হয়তো দিতে পারি নি বাবা। এটা আমাকে চরম ভাবে পীড়িত করে।
জানি তোমার অনেক অভিমান ছিলো বাবা-সে অভিমানের কথা আমাকে বলতে-সে কথা রেখেই বাবা তুমি চলে গেলে আমাদের ছেড়ে নীরবে। তুমি বলতে বাবা আদর্শবান মানুষ হয়ে জীবন ধারণ করতে। তোমার আদর্শে বাবা আমি একজন খুব সাধারণ মানুষ হয়ে বেচেঁ থাকতে চাই। অনেক পরিচিতজন যখন তোমার বলে বাবা কি জানি এক মায়ায় আমার চোখে জল এসে যায়। আমি বাবা স্থির থাকতে পারি না।
তোমার বলা কথাগুলো আমার মনেপড়ে প্রতিনিয়ত। যে দিকে যাই শুধু তোমার স্মৃতি, তোমার হাতের স্পর্শ, তোমার পদচিহ্ন,তোমার কীর্তিগাঁথা গৌরব। বাড়ির আঙ্গিনার প্রতিটি ধূলিকনা বৃক্ষ ,লতা পাতায় ,পত্র পল্লব যেন শুধুই তোমার কথাই বলছে বাবা। সব গুলোর বেড়ে উঠায় তোমার হাতের স্পর্শ ছিলো বাবা। বৃক্ষ তোমার খুব প্রিয় ছিলো বাবা।
বাড়ির চারিদিকে বৃক্ষ আর বৃক্ষের বাগানের দিকে তাকালেই বাবা তোমাকেই মনে পড়ে তোমার নিজের হাতের রোপিত গাছে তুমি নিজেই দগ্ধ হয়ে হারিয়ে গেলে বাবা। বাবাতোমার নিজের হাতে খনন করা পুকুরে মাছ চাষ করেছো নিজের হাতে । মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগেও বাবা আমি মাছ ধরেছি । তুমি তা দেখে দারুন খুশী হয়েছিলে বাবা। তোমাকে তোমার নাতনিরা ঘরে নিয়ে দেখিয়েছিলো।
এখন বুঝছি বাবা যে তুমি মাছ ধরার সময় সারাক্ষণ পাশে পাশে থাকতে সেই সেদিন কেন তুমি ঘর থেকে বের হচ্ছিলে না। তোমার অসুস্থতা বাবা তোমাকে তার আগে থেকেই গ্রাস করতে শুরু করেছে। বাবা গত কালও পুকরে নেমেছি মাছ ধরেছি,শুধু বাবা তুমি নেই। মলা মাছ তোমার খুব প্রিয় ছিলো বাবা। পুকুরের মলা মাছ দিয়ে ভাত খেতে বসে তোমার মনে পড়ে চোখ অশ্র“তে ভিজে গেলো বাবা।
বিজয়া দশমী ,দীপাবলী নববর্ষের দিনে বড়জনের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে তুমি বাবা । তোমার ঘড়ি, তোমার মোবাইল তোমার মৃত্যুর পরে হঠাৎ করে নির্জীব হয়ে গেলো বাবা। বাংলা নববর্ষের আনন্দ দিনে চির বেদনায় মনে রাখার জন্যই স্মরণীয় দিনে স্মরণীয় হয়ে গেলে বাবা। একুশে টিভির প্রতিদিনের রাশিফল অনুষ্ঠানটা তোমার প্রিয় ছিলো। ডায়েরীতে,ব্যাংকের বিভিন্ন কাগজে তোমার নিজের হাতের লেখা দেখে মন কেঁদে উঠে ।
এমন সুন্দর হাতের লেখা আর কোথায় পাবো বাবা। কোন কিছুই ফেলতে ইচ্ছে করছে না বাবা। তোমার প্রিয় সবকিছুই ঠিকই আছে, শুধু প্রিয় মানুষটি নেই । তুমি বাবা ছায়া হয়ে আমার পাশেই আছো। তোমার অস্তিত্ব অনুভব করি আমার প্রতিটি কাজে।
বাবা কতো দু:খ সুখের স্মৃতি তোমাকে ঘিরে। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম তুমি আমার পথ চেয়ে থাকতে প্রতিদিন। তোমার সন্তান নিরাপদে বাড়িতে আসছে কিনা- সে ব্যাকুল প্রতীক্ষা ছিলো তোমার। বিশ বছর আগের সেই দিন গুলোতে যখন আমি ফিরে যাই-নীরবে অশ্রু ঝরে দুচোখ বেয়ে। কোন অহমিকা চাওয়া পাওয়া ছিলো না তোমার,খুব সাধারণ জীবন যাপন করতে।
তোমার সন্তানের কাছে তোমার কোন আবদার ছিলো না বাবা। মৃত্যুর দু,একদিন আগেও তুমি তোমার অনেক ছাত্রছাত্রীকে পড়িয়েছো। পড়ানোর অদম্য নেশা অবসরের দীর্ঘ সময় পড়ে ও এতটুকু কমেনি বাবা। তোমার সন্তানকে তুমি কারো কাছে ছোট করে যাওনি বাবা। তোমার শেষ জীবনের যে অভিপ্রায় তুমি ব্যক্ত করতে সেই ইচ্ছার ষোল কলা পূর্ণ করেই চলে গেলে অনন্ত পারের অনন্ত যাত্রায়।
কথা বলতে বলতেই চলে গেলে। বাড়ি থেকে এ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে যেতে যেতে বাবা তুমি বলছিলে ‘আর কত দূর আর কত দূর?”চট্টগ্রাম মেট্রেপলিটন হাসপাতালের সিসিইউতে বাবা তোমার কপালে হাত বুলিয়ে দিয়েছি পরম মমতায়। এর খানিক পরেই বাবা চলে গেলে দূরে ,অনেক দূরে।
বাবা প্রতি মাসের ৬ তারিখ তুমি নিয়মিত পেনশন নিতে ব্যাংকে যেতে। তার আগে থেকেই তোমার সেকি প্রস্তুতি।
বাজারের তালিকা ,তোমার প্রিয় নাতনিদের আবদারের তালিকা লিখে নিতে কাগজে। তারপর যখন পেনশন নিয়ে বাজার করে বাড়িতে আসতে তোমার প্রিয় নাতনিদের সাথে কি এক মহা আনন্দে মেতে উঠতে বাবা। আজ বাবা সেই আনন্দ কোথায় গেলো?এপ্রিলের ৬ তারিখ বাবা তুমি পেনশন আনতে যেতে পারনি, কিনতু তোমার সমস্ত প্রস্তুতি ছিলো। তোমার সারা মাসের ঔষধগুলো ঐদিনই আনতে। সেদিন যেতে পারনি বলে তোমার নিজের হাতে ঔষধের নাম লিখে টাকাও দিয়ে আমাকে আনতে দিয়েছিলে বাবা।
আমি এনেছিলাম ঠিকই,কিনতু তার একসপ্তাহ পরেই বাবা তুমি আমাদের ছেড়ে অনন্তপারে। আমার আনা যে ঔষধগুলোর সবটুকু বাবা খেয়ে যেতে পার নি সেগুলো দেখে মন হু হু কেঁদে উঠে । সংসারের নিত্য কত বিষয় তুমি নিজ হাতে সামলাতে বাবা, আজ সব আমাকে সব দায় দায়িত্ব আমাকে দিয়ে গেলে । তোমার সাথে এক টেবিলে ভাত খাওয়ার সুখস্মৃতি ভুলি কি করে?মাছের টুকরোটুকুতো নিজ হাতে আমার পাতে তুলে দিতে কত স্নেহ মমতায়। কি করে তা ভুলি বাবা- কি করে ভুলি?আমার স্ত্রীর হঠাৎ জরুরী অপারেশন তোমাকে বিচলিত করেছিলো খুব বেশী।
সেই ঝড় সামলানোর মাসখানিক পরেই তোমার মহাপ্রয়াণ। সেই ঝড়ের ধকল টা আমার উপর ছিলো বলেই হয়তো আমাকে চেপে কিছুই বলতে চাও নি। এই ভাবনা আমাকে তাড়িত করছে আমকে প্রতি নিয়ত। আমার ছোট বোনটা চট্টগ্রাম শহরে ছিল না বলে তোমার এমন শরীর নিয়ে শহরে রেখে তোমাকে ডাক্তার দেখাতে পারি নি সঠিক সময়ে , আমার এ অক্ষমতা তুমি ক্ষমা করো। তোমার নামই বাবা সবার ঠিকানা ছিলো একদিন,সবাই তোমার ঠিকানা ভুলে গেলো, শেষে তুমিই ঠিকানা হারা হয়ে গেলে।
তোমার নামের ব্যাংক একাউন্টে সামান্য টাকা থাকার কথা বলেছিলে বাবা মৃত্যুর আগের দিন,বলেছিলে চেকে তোমার স্বাক্ষর নিয়ে রাখতে। আমি নিজের সমস্ত বিবেক দিয়ে বিবেচনা করেও তা নিতে পারি নি। কারন বাবা তুমি এত সহসা আমাদের ছেড়ে যেতো পার না। তুমি ভাবতে বাবা তুমি ছাড়া আমার জীবন কিভাবে কাটবে? তোমার মৃত্যু পরবর্তী কার্যগুলো নিয়ে আমার সাথে তোমার ভাবনা গুলো শেয়ার করতে। আমি বাবা তোমার সকল ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তোমার মৃত্যু পরবর্তী সকল কার্য সম্পাদন করার যথাসাধ্য চেষ্ঠা করেছি।
আমার হৃদয় বলছে তুমি অনন্ত পারের অসীম আকাশ থেকে সবই দেখেছো আর আর্শীবাদ করেছো বাবা।
তোমার সময় জ্ঞান , নিয়মানুবর্তিতার কোন তুলনাই হয়না বাবা। কোথাও যেতে হলে বাবা তুমিতো সবারই আগে তৈরী হয়ে থাকতে। পরিবারের সকলের বিয়ে সাধিতে তোমার কর্তব্যপরায়নাতার কোন কমতি ছিল না। সবার দিকে খেয়াল করে কেমন করে বাবা তুিম শেষের দিকে নিজের শরীরের প্রতি একটু বেখেয়ালি হয়ে গেলে? বাবা অনেকেই বলে তোমার হিমালয় সম সুখ ছিলো- আমি জানি বাবা তোমার হিমালয় সম দু:খও ছিলো ।
তোমাকে ছোট করে যারা বড় হতে চেয়েছে তাদের প্রতি কোন দু:খ নেই বাবা । বাবা আমি যখন চট্টগ্রাম শহরে যেতাম আসতে দেরী হলে ফোনে প্রতিনিয়ত খবর নিতে ,কোথায় আছি জানতে চাইতে। রাত হলে টর্চ লাইট নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে। প্রচন্ড শীতের রাতে গাযে কাঁথা জড়িয়ে কিংবা বরষার রাতে ছাতা মাথায় দিয়ে রাস্তায় আমার জন্য এমন অপেক্ষা করার কেউ নেই বাবা। কয়েক দিন আগে চট্টগ্রাম টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে কলেজের কম্পিউটার সামগ্রী আনার জন্য শহরে গিয়েছি বাবা বাড়ী ফিরতে অনেক রাত হয়েছিলো বাবা ।
রাতের অন্ধকারে যখন রাস্তায় গাড়ী থেকে যখন নেমেছি দুচোখ বেয়ে অশ্র“ নামলো, এ প্রথম এমনি অন্ধকারাচ্ছন্ন বৃষ্টিমুখর রাতে তুিম আমাকে নিতে এলে না বাবা। তোমার শূন্যস্থানে আরতো কেউ নেই বাবা। ছোট্ট বেলায় তোমার সাথে কত মেলায় গিয়েছি বাবা -সেই সুখ স্মৃতি আজও আমাকে তাড়া করে ফেরে বাবা। গুরুদাস ফকির বাবাজীর মেলা থেকে সেই ছোট্ট বেলায় আমাকে আমার আবদারের একটি খেলনার ঘোড়ার গাড়ি কিনে দিয়েছিলে সেই আজও ভুলি নাই বাবা । এ রকম আরো কত কি বাবা।
এলাকার প্রতিটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তোমার সরব উপস্থিতি ছিলো। খাওয়া দাওয়া পোষাক আশাকের প্রতি তোমার কোন লোভ ছিল না। অতি সহজ সরল জীবন যাপন ছিল তোমার, কোন আভিজাত্য ছিল না । সাদা পায়জামা আর সাদা পাঞ্জাবী পরেই তোমার জীবন কেটে গেলো বাবা। শিক্ষক হিসাবে যে জীবন শুরু করেছিলে শিক্ষক হিসাবেই জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটালে।
বলতে, নিজে ঘর সংসার করতে করতেও পড়ালেখা করেছা,বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছ্। তোমার ঐ পথ ছিলো বড় কঠিন , দুর্গম। আমিতো তোমার ঐ কষ্ঠের ছিঁটেফোঁটাও করি নি। বলতে ঐ সময় ইচ্ছে করলে আরো অনেক বড় চাকুরী করতে পারতে, কিনতু সেই দিনের সেই যৌথ পরিবারের পারিবারিক প্রয়োজনে তা হয়ে উঠে নি। সেই পরিবারের প্রিয় জনেরা তোমাকে যা দিয়েছে তা তো তুমি জানো ।
যাক সে কথা। বাবা ,তোমার বাবার জন্য তুমি সেই তোমার ছোট বেলায় শহর থেকে ঔষধ আনার জন্য সকালের ট্রেন ধরতে ভোরের আলো না ফুটতেই হেঁটে হেঁেট বাড়ি থেকে রওনা হওয়ার যে কষ্টকর বেদনাদায়ক দিনগুলোর কথা শোনাতে তা নীরবে শোনতাম। আজ ভাবি, আমি কি বাবা তোমার জন্য ঐ কষ্ঠের সামান্যটুকুও করতে পেরেছি? বাবা আমিএকটা ডিজিটাল ক্যামেরা কিনবো,তারপর তোমার ছবি তুলবো । সবাইকে নিয়ে স্মৃতির এ্যালবাম সাজাবো, আমার বড় সখ ছিলো বাবা। আজ আমার কাছে সবকিছূ আছে বাবা-শুধু তুমি নেই।
বড় দু;সময় গেছে বাবা আমার বেশ কিছুদিন। সখ থাকলেও অনেক কিছু করা হয়ে উঠে নি। বাবা কলিকাতা ভ্রমনের ইতিবৃত্ত তোমার আপনজনদের শোনাতে ,সেই কাহিনীতো বাবা তোমার ডায়েরীতে লেখা আছে। আমরা তা পড়ে পড়ে তোমার স্মৃতি রোমন্থন করছি। অনেক বার কলিকাতা ভ্রমন করেছা, অনেক তীর্থস্থান,অনেক জাযগা দেখার সুযোগ তোমার হয়েছে ।
এ নিয়ে তোমার পরিতৃপ্তি ও ছিলো বাবা। কিন্ত আমার একটা স্বপ্ন পূর্ণ করতে পারি নি বাবা তোমার আর মার পাসপোর্টটা নবায়ন করে এনেছিলাম আর একবার কলিকাতা পাঠাবো বলে। সেটা ছিলো এপ্রিলের ৭ তারিখ। মাকে বলেছিলাম, বাবা তোমাকে সেই কথাটা বলতেও পারি নি, তার ঠিক এক সপ্তাহ পরে তুমি বাবা অনন্ত পারের অনন্ত যাত্রায়। ঐ পাসপোর্টগুলো এখনো প্যাকেট বন্দি হয়ে রয়ে গেলো।
এবারের জম্মদিনে তোমার জম্মের তারিখ বার সম্পূর্ণ মিলে যাওযাতে মৃত্যু শংকার ভাবনাটা কি তোমাকে পেয়ে বসেছিল ? এমন ভাবনাটা নাকি মায়ের কাছে প্রকাশও করেছিলে বাবা। । গ্রামের মাটি ,মানুষ খুব ভালোবাসতে বাবা তুমি। সেই মটির মায়ার বন্ধন তুমি ছিন্ন করতে পারলে না বাবা। তোমার অন্তিম যাত্রায় সব মানুষের ভালোবাসাই প্রমাণ করে তুমি সকলের কত প্রিয় ছিলে বাবা।
হাসপাতালে নেওয়ার দিন ঘর থেকে বের হওয়ার সময় তুমি তোমার প্রিয় নাতনিদের দেখতে পার নি বাবা। তারা তখন গভীর ঘুমে মগ্ন ছিলো বাবা। কে জানিতো বাবা তোমার এ যাত্রা ছিলো শেষ যাত্রা। বাবা আমার সিদ্ধান্ত ও কথাকে তুমি যথেষ্ঠ মূল্য দিতে বাবা। অনেক সহজ সরল মানুষ ছিলে তুমি, সেই সরলতার জন্য তোমাকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে বাবা।
হার্টের চরম অসুস্থতা নিয়েও জীবনের অনেক বড় বড় টেনশনের ঝড় গুলো কেমন করে যে সামলিয়েছো বাবা আজ আমি নিরালায় বসে বসে ভাবি। আমার সুখ দু:খের কথাগুলো শেযার করার জন্য বাবা তোমার মত আর আপন কেউ নাই। অনেক প্রিয়জনের অবহেলার পাহাড়টা আর অতিক্রম করতে পারলে না বাবা। হাসপাতালে আমার ছোট্ট মেয়েটির যখন জম্ম হলো বাবা তোমার বলা কথাটা বাবা আমিতো এখনও ভুলি নি বাবা। বলেছিলো ‘লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করো’।
আমিতো বাবা তোমার স্বপ্নের পথে হাঁটার চেষ্টা করছি। আর কতো বলবো বাবা? তোমার স্মৃতিতো বাবা শেষ হয় না। পঞ্চমী তোমার খুব প্রিয় তিথি ছিলো বাবা। সেই পঞ্চমী তিথির পহেলা বৈশাখ, যেদিন তোমার স্বপ্নের নতুন জীবন শুরু হতো,হিসাবের নতুন খাতা শুরু করতে, ১৪২০ বাংলা এর হিসেবেটাও পেয়েছি বাবা- তা লিখে গিয়েছো হয়তো কয়েকদিন আগে ,অথচ সেই দিনে ছিলে না তুমি,সেই প্রিয় দিনেই না ফেরার নতুন জীবনে জীবনের খাতা খুললে বাবা? অমি আবাক হয়ে ভাবি আর মনের নিভৃতে কাঁদি। আমার এ লেখনী লিখতে অনেক বার বসতে হয়েছে বাবা, প্রতিবারই চোখের জলে ভেসে গেছে আমার দু,চোখ।
আমার এ কষ্টের দহন জ্বালা তুমিতো ছাড়া আর কেউ বুঝবে না বাবা। এখন তো আর কেউ আমাকে অমন ভালোবাসায়‘বাবা বাসু’ নামে ডাকে না। তোমার নামের আগে মৃত শব্দটি লিখতে আমার বুকের পাঁজর ভেঙ্গে যাচ্ছে বাবা। তুিমতো আমার কাছে মৃত হতে পার না বাবা। তুমি আমার কাছে চিরদিন হৃদয়ের গভীরে বেঁচে থাকা এক আদর্শ মানুষ।
বাবা বিহীন এ প্রথম ‘বাবা দিবস’ আমার কাছে অনেক কষ্টের , অনেক বেদনার। বাবা গত বছরের ১৬ জুন বাবা দিবসে তোমার শুভ কামনায় আমার ফেসবুকে তোমার ছবিসহ একটা স্ট্যাটার্স দিয়েছিলাম, তার ঠিক একবছর পরে বাবা তোমাকে ছাড়া তোমার অদৃশ্য ঠিকানায় একথাগুলো লিখতে হবে কখনোতো ভাবি নি। বাবা বিহীন নিজেকে কল্পনা করে তোমার মৃত্যুর সম্ভবত মাস দু,য়েক আগে ‘বাবা দিবস’ এর ভাবনায় একটি ছড়া লিখেছিলাম বাবা। সেটি ছিলো এ রকম-
বাবা
-------
বাবা হলেন বটবৃক্ষ
মাথার উপর ছাতা,
বাবার তরে ভালোবাসার
রইলো আসন পাতা।
বাবা হলো ছায়ার মতো
সঙ্গী সারাক্ষণ,
সঠিক পথের পথদ্রষ্টা
এমন কে আর আপন?
বাবা বিহীন জীবন যেন
হঠাৎ ছাতার পতন,
হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাওয়া যায়
বাবা কেমন রতন।
বাবা তোমাকে ছাড়াই এটি বাবা দিবসে এটি সত্যি হয়ে যাবে তা কখনো ভাবি নি।
তোমাকে আর বাবা সশরীরে সামনে থেকে ‘বাবা’ ডাকতে না পারার যন্ত্রনায দগ্ধ হচ্ছি বাবা প্রতিদিন। বাবা তুমি আমাকে শুধুই আর্শীবাদ করো, তোমার আর্শীবাদে আমি সমস্যার হিমালয় পাড়ি দেবার চেষ্টা করবো। তোমার কাছে আমার তো আর কিছুই চাওয়ার নেই বাবা--
তোমার প্রিয় আদরের-
‘বাসু’
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।