সরকার বারবার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিলেও তাতে লাভ হয়নি। অন্যদিকে কালোটাকা সৃষ্টিতে সরকারও অনেক ক্ষেত্রে দায়ী। সরকারি কর্তৃপক্ষ তথা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যদি ঠিকভাবে কর আদায় করতে পারত, তাহলে দেশে তেমন কালোটাকা তৈরি হতো না।
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বজলুর রহমান ফাউন্ডেশন আয়োজিত আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদেরা এ কথা বলেছেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলা মিলনায়তনে গতকাল শনিবার এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় অর্থনীতিবিদেরা অবশ্য এও বলেছেন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট কোনোভাবেই উচ্চাভিলাষী নয়। এটি বাস্তবায়নযোগ্য। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হয়তো রাজস্ব আদায়ও হবে। এ জন্য বাজেটে ঘোষিত রাজস্ব সংস্কার কর্মসূচিগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
সভার সঞ্চালনা করেন কৃষি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।
আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, দেশের অর্থনীতি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। রাজস্ব আদায়ও হয়ে যাবে। শঙ্কা হলো, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমে গেছে। তাদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে।
অপ্রদর্শিত আয় সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে সরকারও সমানভাবে দায়ী বলে মনে করেন সাবেক এই গভর্নর।
একই সঙ্গে কালোটাকা অর্থনীতিতে নিয়ে আসা প্রয়োজন বলেও মত তাঁর। তিনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে বলতে হবে, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আপনার অপ্রদর্শিত আয় যদি বৈধ না করেন তাহলে আমি তা বাজেয়াপ্ত করব। এর বিরুদ্ধে আপনি দেশের কোনো আদালতে মামলাও করতে পারবেন না। তাহলে সব অপ্রদর্শিত আয় চলে আসবে’।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, কৃষিতে ভর্তুকি কমানো হয়নি।
যেটা হয়েছে প্রতি বছরই ভর্তুকির কিছু টাকা বকেয়া থাকে। এবার পুরোটাই পরিশোধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছরই বাজেটে বকেয়াটা ধরে নিয়েই ভর্তুকির হিসাব দেওয়া হয়। সে কারণেই এবার ভর্তুকির আকার কম।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ও জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল বারকাত বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে যাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হয়নি এমন সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ।
আবার যাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা ছিল না, কিন্তু হয়েছে এমন সংখ্যাও ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। এসব সমস্যা দূর করা গেলে আরও ৩০ শতাংশ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
দেশে কালোটাকার পরিমাণ এখন পাঁচ থেকে ১০ লাখ কোটি টাকার—এমন মন্তব্য করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘এক কোটি বা তার বেশি আয়কর দাতা মাত্র ৪৬ জন। তবে আমার ধারণা, দেশে এমন লোক আছে ৫০ হাজার। তাঁদের অর্ধেক লোককে ধরলেও বছরে একটি করে পদ্মা সেতু করা সম্ভব’।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, অর্থমন্ত্রী এবারও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু এ টাকার মালিকেরা অতীতেও যেমন সাড়া দেননি, এবারও দেবেন না বলে মনে হয়। তার পরও এভাবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে শেয়ার কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি কেলেঙ্কারি, রেলের নিয়োগ-বাণিজ্য প্রশ্রয় পাবে। ব্যাংকগুলোর ঋণ পরিস্থিতির অবনতি হবে, খেলাপি ঋণের পরিমাণও বাড়বে।
অর্থনীতিবিদ আর এম দেবনাথ বলেন, বর্তমান সরকারের সময় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি তিনগুণ বেড়েছে।
সমস্যা হলো, দেশে দুই টাকায় যে কাজ করা হয় সেটা এক টাকায় করা যেত।
ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, দেশের করপোরেট করহার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এটা কতটুকু বিনিয়োগ সহায়ক সংকেত দেয় তা ভেবে দেখা প্রয়োজন।
মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘যত দিন কর ফাঁকি কমানো যাবে না, তত দিন কালোটাকাও এ দেশে থাকবে’।
ব্যাংকার ফারুক মঈনুদ্দীন কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়াকে ‘সামাজিক অবিচার’ বলে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘বাজেট ঘাটতি মেটাতে এখন ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়। আমরা বহুদিন ধরেই বলে আসছি, পর্যায়ক্রমে সরকারকে এ অবস্থা থেকে সরে আসতে হবে। বিকল্প হবে বন্ড। এটি করতে পারলে একদিকে বন্ড বাজার গড়ে উঠত, অন্যদিকে ব্যাংক খাতের ওপর চাপও পড়ত না। কিন্তু সরকার শুধু ব্যাংকিং খাতেই যায়।
’।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।