খুব গোলমেলে, নিজেও ভাল জানি না। তবে আছে,এই ঢের।
চন্দ্রবত্সরের হিসেব অনুযায়ী প্রতি বছরই রোযা দশ দিন করে এগিয়ে আসে। ছেলেবেলায় রোযা হত পুরো গরমকালে। যদ্দূর মনে পড়ছে আগষ্ট -সেপ্টেম্বর মাস ছিল সেটা।
কিংবা হয়ত আরেকটু আগের কথা বলছি। জুলাই-আগষ্ট। দিন তারিখগুলো বেশ ভালই গুলিয়েছে বুঝতে পারছি। তখন চাঁদ দেখা নিয়ে এত ঝামেলা ছিল না। সবাই আশা করতেন যে রোযা তিরিশ দিনেই শেষ হবে, আর বেশিরভাগ তাই হত।
কোন বছর ২৯দিনেই চাঁদ দেখা যেত। মসজিদের ঘোষণার প্রয়োজন হত না আর চাঁদ দেখা কমিটিও তখন ছিল না। গরমকালের পরিস্কার আকাশে আমরা বারান্দা থেকেই দিব্যি চাঁদ দেখতে পেতাম। ছোট্ট একসুতো বাঁকা চাঁদ। আকাশের এক কোণে মুখ বাড়িয়েছে খানিকক্ষণের জন্যে।
নিয়ে এসেছে খুশির ঈদের খবর। একমাসের সিয়াম সাধনা শেষ। কাল ঈদ। দাদি উঠে যেতেন ছাদে, চাঁদের দিকে তাকিয়ে দু হাত তুলে রেখেছেন বুকের কাছে প্রার্থনার জন্যে। এটা নাকি চাঁদ দেখার দোয়া।
দাদির দেখাদেখি আমরাও হাত দু হাত বুকের কাছে তুলে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। দাদি কি দোয়া পড়ছেন কিছুই জানি না, দাদির প্রার্থনা শেষ হলে হাত দুটো নিজের গোটা মুখে বুলিয়ে 'আমীন' বলে প্রার্থনা শেষ করেন, আমরাও তাই করি। নিচে তখন রেডিওতে বাজছে নজরুলের সেই অবিস্মরণীয় গান,
রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
আপনাকে তুই বিলিয়ে দে , শোন আসমানী তাগিদ।
তোরা সোনা-দানা, বালাখানা সব রহে ইল্লিল্লাহ
দে যাকাত , মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ
ও মন রমযানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদগাহে
যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ।
রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমণ, হত মেলাও হাতে,
তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরীদ।
রমযানের ঐ রোযার শেষে এলো খুশির ঈদ।
যারা জীবন ভরে রাখছে রোযা, নিত্য উপবাসী
সেই গরীব ইয়াতীম মিসকিনে দে যা কিছু মুফিদ
রমযানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ।
এলো খুশির ঈদ এলো, এলো খুশির ঈদ।
এলো খুশির ঈদ,
ও মন রমযানের ঐ রোযার শেষে এলো খুশির ঈদ।
বাংলাদেশের প্রাতিটি শহর, প্রতিটি গ্রামে ঈদগাহের মাঠ আছে, যেখানে ঈদের নামাজ পড়া হয়। বেশ বড় মাঠ দেওয়াল দিয়ে ঘিরে দেওয়া থাকে। যেখানটায় দাঁড়িয়ে ইমাম ঈদের নামাজ পড়ান, সেখানে বেশ কারুকাজও করা থাকে, যেমনটি মসজিদে থাকে। এই ঈদগাহের মাঠ আছে প্রায় প্রতি গ্রামে জেলা শহরে আর বড় শহরে।
ঈদের নামাজ মানুষ বড় জমায়েতে পড়তে পছন্দ করেন বলে পাড়ার মসজিদে ছোটখাট জামাত হয় না। বড় বড় মসজিদগুলোতে ঈদের জামাত হয় কিন্তু গ্রামে সকলেই ঈদগাহে নামাজ পড়েন। দাদু, আব্বুরা ঈদ্গাহ থেকে ঈদের নামাজ সেরে ফেরার সময় চলে যান কবরস্থানে।
যেখানে শুয়ে আছেন পূর্বপুরুষেরা সব। আত্মীয়-বন্ধু, পড়শী।
কারও বা সন্তান। কবরস্থানে দাঁড়িয়ে সমবেত নীরব প্রার্থনা করেন ঈদগাহ ফেরত সব মানুষ। কবরবাসী মানুষগুলোর জন্যে। তাদের আত্মার শান্তির জন্যে। নতুন পাঞ্জাবী লুঙ্গি আর টুপি পরিহিত সব পুরুষেরা, বাচ্চা ছেলেরা।
সুগন্ধী আতরের সুবাস ছড়িয়ে যায় গোটা কবরস্থানে। এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা বিরাজ করে কবরস্থানে। কারও হয়ত সদ্য হারানো কোন প্রিয়জন শুয়ে আছে এই কবরস্থানে, তার গাল বেয়ে নামে জলের ধারা। নি : শব্দ সব মানুষ বাড়িমুখো হন কবরস্থানকে পিছনে ফেলে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।