আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদের স্মৃতিচারণ (নব্বই দশক)

এইসব ভালো লাগে... খুব বেশি আগের সময়ের কথা বলার মত বয়স হয়ে ওঠেনি, যে সময়টার জন্যে মন পোড়ে কোন কোন বর্ষাদিনে, সে সময়টা আজকের দিন থেকে বড়জোর ১৫-২০ বছর আগের। প্রায় প্রতি ঈদে বাড়ি যাওয়া হতো। না গেলে বাচ্চা মনে যে কি অভিমান জমতো তা কিবোর্ড টিপে প্রকাশ করার ক্ষমতা আমার নেই। রঙিন রোদ চশমা আর বাহারী প্লাস্টিকের হাতঘড়িময় ঈদের সময়টুকু চোখের সামনে দিয়ে হারিয়ে গেলেও ঠিক ওই ফ্যাশন টা কখনোই রোচেনি। মনে পড়ে আমি বেশ বুড়ো বয়সে রোজা রাখা ধরি।

ক্লাস ফাইভে প্রথম একটা রোজা রেখেছিলাম দু’বেলা স্টাইলে। ২৯ রোজা ছিলো সেটা, গ্রামের বাড়িতে গেলে দাদীমা বললেন ভাত খেয়ে নাও, দুপুর দেড়টা বাজে। মনের জোর বরাবর ই কম ছিলো। একসময় নিজেকে পার্শে মাছ আর বেগুনের তরকারী খেতে আবিষ্কার করলাম। বিস্বাদী সে খাবার খেয়ে রোজা ভাঙ্গার কোন মানেই খুঁজে পেলাম না।

তবে এরফলে একটা জেদ চলে এলো। পরবর্তী রমজানে দুটো রোজা রেখেছিলাম। সবগুলো রোজা রাখা ক্লাস নাইনে গিয়ে শুরু করি। ক্লাস এইটে থাকা কালীন ঈদের সময় একবার পরিবহন ধর্মঘট দিয়ে দিলো। খুলনায় বাস বন্ধ, প্রাইভেট কার জাতীয় কিচ্ছু পাওয়া যাচ্ছে না।

সেহরী করেই ট্রেন ধরতে হবে যশোর পর্যন্ত। সেই ভোরে গিয়ে দেখি রেলস্টেশনে অবিশ্বাস্য ভীড়। ট্রেনে কোন রকমে সীট পেলাম, কিন্তু দম বন্ধ ভীড়। জানলা দিয়ে সমানে মানুষ ঢুকছে। যশোরে নেমে আরেক কাণ্ড।

আমাকে জানলা দিয়েই নামতে হয়েছিলো। কোথা থেকে আব্বা একটা প্রাইভেট কার জোগাড় করলেন, সেটা নিয়ে বহু অপ্রধান সড়ক ঘুরে তবে পৌছালাম গ্রামে। গ্রামের বাড়ী যাওয়ার জন্যে আগে এরকম টান অনুভব করতাম। এই পরিস্থিতি এখন হলে অবশ্যই যেতে চাইতাম না! যাই হোক, মনে পড়ে সেজ চাচারা তখন কক্সবাজার থাকেন। ঈদের আগ দিয়ে মাইক্রো নিয়ে এসে পড়তেন ঠিক কোন কোন বার।

ভীষণ মজা হতো। পরে সেজচাচারা যশোরে শিফট হন। ১৯৯৮ এর ঈদ সম্ভবত (ভুল হতে পারে), প্রথমে ঘোষণা এলো চাঁদ দেখা যায় নি, দাদুরা চাচারা তারাবী পড়ে এসেছেন। আব্বা বুদ্ধি করে আমাদের নিয়ে রওনা দিয়ে দিয়েছিলেন ৭ টার দিকেই খুলনা থেকে। এরপর শোনা গেলো রাত ১০ টার দিকে, পরদিন ঈদ! সেজচাচার একপাল ছেলেমেয়ে লাইন দিয়ে শুয়ে পড়েছে।

আমি আর নীরাপু গিয়ে ওদের কানের কাছে সে কি চিল্লা পাল্লা! সেবার সারা রাত সারা দেশের বউঝিরা জেগে জেগে ঈদের রান্না গুছিয়েছেন। গ্রামে আমাদের বাড়িতে টেলিভিশন আসে অনেক আগে। পাড়ার লোকজন ভেঙে পড়তো আমাদের বাড়ি বাংলা সিনেমা তথা ‘বই’ দেখবার জন্যে। আমি খুব একটা টিভি ফ্রিক ছিলাম না কোন সময়ই। ইত্যাদি ঘটা করে দেখা হতো, পিনপতন নীরবতা ছিলো অপরিহার্য।

এখন ছোট্ট চায়ের দোকানেও টিভি ডিভিডি প্লেয়ার! প্রতি ঈদে নীরাপু না হয় আমি কিছু একটা খেলার আয়োজন করতাম। নীরাপু আসলে সেই সময় থেকে নিউজ প্রেজেন্টারের ট্রেনিং পেয়েছিলো। ফানি বাংলা নিউজ পড়ে শোনাতো। টুকটাক ঈদির টাকায় খাওয়া দাওয়া চলতো। ছোট দাদুভাইয়ের মাটির ঘরের পিছনটা যেখানে রানা কাকা থাকতেন ঐটা আমরা দখল করে ফুল জরি দিয়ে সাজাতাম।

এই কাজটা আপু ফুপ্পিরাই করতেন। আমাদের বাড়ি কিন্তু ঝিকরগাছা পেরুলেই, আর ঝিকরগাছার ফুল দেশখ্যাত এখন। আমাদের গ্রামেও আগে ফুলের চাষ হতো। শীতকাল ছিলো, মাঠ থেকে গাঁদা রজনীগন্ধা ফুল চুরি করে নিয়ে এসে ঘর সাজানোর কাজ চলতো। ঘরটা ২০০০ এর বন্যায় ভেঙে গিয়েছে।

এখন অস্তিত্বহীন। পরে একটু বড় করে গেম শো করা হতো। চাঁদা তুলে খরচ জোগানো হত। ‘এক মিনিট শো’ এর আদলে গেমস গুলা থাকতো। প্রতি ঈদেই আমরা লুকোচুরি, সারাসারি খেলতাম।

এক সময় ‘গাদি’ খেলার নেশা পেয়ে বসেছিলো। এটা আঞ্চলিক নাম। ভালো নাম কি দাঁড়িয়াবান্ধা? আমি জানিনা। ৬ টা ঘর থাকতো, একটা নুন ঘর, একটা কাঁচা ঘর, ঘর গুলো ২ টা সমান্তরাল আর একটা তাদের উপর লম্ব টেনে তৈরি হতো। সত্যি কথা বলতে ছোটবেলায় খেলা সবগুলো খেলার মধ্যে এইটা সবচে মজার।

শীতের দিন গুলোতে ব্যাডমিন্টন খেলাও হতো ঈদের আগের রাতে। আর খেলা হতো ক্রিকেট। ফুটবল খেলিনি বললেই চলে। একটু বড় হয়ে ঈদের দিনগুলোতে ঘুরাঘুরি হতো খুব। ভ্যানে চেপে সব কাজিন মিলে এদিক সেদিক চলে যেতাম।

ছবি তুলাতুলি হতো। আর ফিরে অনেক রাত অবদি আড্ডা দিতাম ড্রয়িংরুমে বসে বসে। কারেন্ট যদি চলে যায় তো জ্বীন ভুতের গপ্প অবধারিত ছিলো। ছোটবেলা ওগুলো শুনে আমার বাথরুম যাওয়া বন্ধ হয়ে যেত ভয়ে। আমি বরাবর ই ভীতু কিছিমের।

খাওয়া দাওয়া বলতে সেমাই, দুধ সেমাই, লাচ্ছি, চটপটি, হালিম এগুলা সকালে থাকতো। দুপুরে রাতে পোলাও, কোর্মা, টিকিয়া, রোস্ট, মাছ এইসব। আম্মু বোরহানী এক্সপার্ট, ওটাও চলে। সালামীর ব্যাপারে শেষে না বললেই নয়। সালামী নিয়ে খুব একটা লাফাইতাম না আমি।

দিলে দিবি না দিলে না দিবি টাইপ। পেতে কার না ভালো লাগে। সালামীর ব্যাপারে মামারা বেশি উদার ছিলেন চাচাদের চেয়ে! ইদানিং ঈদ বড্ড শহরকেন্দ্রিক। আমার সেটাও ভালো লাগে। ঈদ আসলে অটো মন ভালো হয়ে যায়।

তা সে সুন্দরীদের জন্যে হোক বা কতিপয় ব্যাগের উপর অনির্ভরশীলতার কারণে হোক। তবে ঢাকার ঈদ খুব ই জঘন্য, একবার করেছিলাম, ইয়াক! তবে এখন শহুরে ঈদের কথা একদম বলতে ইচ্ছে করছে না। সবাইকে আগাম ঈদ মুবারক জানাচ্ছি! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.