স্বপনের সমাধি খোঁড়া এ জীবন ... মনের গোপন ঘরে যে শ্বাপদ ঘর করে তাকেই লালন করে চলা এ জীবন!
আজ এখানে (জাপানে) ঈদ। অফিস-ডে হওয়ায় এবার ঈদ তেমন জমেনি। রোজকার মত জেলি, পাউরুটি আর চা দিয়ে নাস্তা সেরে ওসাকা-মসজিদে গেলাম নামাজ পড়তে। বিভিন্ন দেশ থেকে আশা পুরুষ-মহিলা মিলে প্রায় ৬০/৭০ জন মুসলিম একসাথে ঈদের নামাজ পড়লাম। নামাজ শেষে কুলাকুলি করছিলাম আর খুব আশা করছিলাম একটা দাওয়াত পাওয়ার।
কিন্তু সেরকম কোন আভাস পেলাম না। দিন দিন এখানে ফ্যামিলির সংখা কমে আসছে, তাছাড়া অধিকংশেরই নামাজ পড়ে অফিস বা ল্যাবে যেতে হবে, কার সময় আছে দাওয়াত খাওয়াবে! মন খারাপ করে চলে আসছিলাম, হঠাত রানী (ব্লগার “নতুন রাজার” সহধর্মীনি)তার বাসায় যেতে বল্লো; রাজা নাকি আমাকে বলতে ভুলে গেছেন। যা’হো্ক, মাইন্ড করার টাইম নাই, লুফে নিলাম দাওয়াতটা। অন্য সবার সাথে গেলাম তাদের বাসায়, প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশী আয়োজন করেছেন। পেট পুরে খেয়ে দেয়ে এই মাত্র ল্যাবে আসলাম।
কাজে মন বসছে না, হাজার হলেও ঈদ বলে কথা, তাই ব্লগে বসলাম। অনেক দিন কিছু লিখিনা; লিখিনা বললে ভুল হবে, পোষ্ট লিখিনা, কিন্তু প্রতিদিনই অন্যের পোষ্ট পড়ি আর পছন্দ হলে তাতে মন্তব্য লিখি। নিজের লেখা নিজে পড়েই বুঝতে পারি তা কত নিম্নমানের হয়েছে- তাই মানূষ কে আর জ্বালায় না। মানুষ যে কিভাবে মনের কথাগুলোকে এত সুন্দর করে উপস্থাপন করে!
সবকিছু এলোমেলো লাগছে, আসলে মনটা ভাল নেই। আমার ঈদের সব আনন্দ এবার বাংলাদেশে চলে গেছে।
ক’দিন আগে আমার ছেলেটা দেশে চলে গেছে, গত ঈদে এখানে ছিল। ওকে নিয়েই গত ঈদে “ঈদের আনন্দ নিয়ে বাপ-ছেলের পাল্লাপাল্লি” নামে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম। কার ছোটবেলার ঈদের আনন্দ বেশী, আমার না তার, এই নিয়ে বাপ-ছেলের কথপোকথন। এবার স্বীকার না করে উপায় নেই, এই ঈদে তার আনন্দ আমার থেকে হাজার হাজার গুন বেশী। ওরা গ্রামে গেছে ঈদ করতে।
বলতে গেলে এবারই গ্রামে ওর প্রথম যাওয়া। প্রথমবার গিয়েছিল মাত্র ৩ মাস বয়সে, এখন প্রায় ৩ বছর। নাওয়া খাওয়া ভুলে আনন্দ করছে শুনলাম। আমার সাথে ফোনে তার কথা বলার সময় নেই- কুরবানীর গরুর দড়ি ধরে টানাটানি, তার শরীরে একটু হাত বুলান, ছাগল, মুরগী, বিড়াল, কুকুর ছানা কে আদর করা, চাচার সাথে সাইকেলে চড়া, ফুফুর সাথে মেহেদীর পাতা বাটা, দাদির রান্নায় খড়ি এগিয়ে দেওয়া, দাদার সাথে পকুরে মাছ ধরা--- আরো কত কাজ তার! তাকে ছাড়া এখানে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে; তারপরও- আমার ছেলে আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গাগুলোতে আনন্দে ছুটাছুটি করছে, কাল সকালে ঈদের নতুন জামা-কাপড় পরে তার দাদার হাত ধরে সবার সাথে ঈদগাঁয়ে নামাজ পড়তে যাবে-দৃশ্যগুলো কল্পনা করে আনন্দে আমার চোখ ভিজে আসছে!!
আমাদের জন্য দোয়া করবেন! সবাই সুস্থ থাকুন! সুখে থাকুন! সবাই কে ঈদ মুবারক!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।