একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় একাধিক বক্তা বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দেশের সংবিধান ও ইসলামবিরোধী। হেফাজতের নাম করে এগুলো মূলত জামায়াতে ইসলামীর দাবি।
গতকাল শনিবার ‘হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক ওই আলোচনা সভায় বিশিষ্টজনেরা এ মত দেন। ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় বক্তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সরকার যদি নাগরিক সমাজের বিভিন্ন উদ্যোগকে সমন্বিত করে এদের প্রতিরোধে বাস্তব ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে দেশ ও জাতি মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।
সূচনা বক্তব্যে নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি প্রকৃতপক্ষে জামায়াতের দাবি। জামায়াত যখন রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়, তখন তারা দুটি দাবি তোলে। একটি ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের দাবি, আরেকটি আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি। কে মুসলিম আর কে অমুসলিম—তা ঘোষণার দায়িত্ব রাষ্ট্রের নয়।
সমাজকল্যাণবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন বলেন, জামায়াত মাঠে নেমেছে তাদের নেতারা যেন শাস্তি না পান এ জন্য।
আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সমালোচনা করে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, তাঁকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে অনেকে কথা বলছেন। কিন্তু মাহমুদুর রহমানের জন্য দেশে শতাধিক মানুষ খুন হয়েছেন, এটা কেউ বলছেন না। তিনি সংবাদপত্রের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে, কোনো নৈতিকতা না মেনে ধর্মীয় উসকানি দিয়েছেন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, হেফাজতে ইসলাম যেসব দাবি করেছে, পাকিস্তান আমলে তা শোনা গেছে। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ কীভাবে গড়া সম্ভব?
হেফাজতকে জামায়াতের সামাজিক সংগঠন আখ্যায়িত করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, সরকারের উচিত জামায়াতের পাশাপাশি হেফাজতের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করা।
নির্মূল কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি তুরিন আফরোজ বলেন, হেফাজতের ১৩ দফা দাবির মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম দাবি শুধু সংবিধান পরিপন্থী নয়, এগুলো ইসলামবিরোধী। নারী-পুরুষের প্রকাশ্য বিচরণ ইসলামে নিষিদ্ধ নয়। বিবি খাদিজা (রা.) মক্কা শহরের একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। ইসলামে নারীশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া ইসলামে ভাস্কর্য নির্মাণ মোটেও নিষিদ্ধ নয়।
সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, যাঁরা ইসলামকে হেফাজতের কথা বলছেন, তাঁরা কোরআন ও ইসলামবিরোধী কথা বলছেন। আল্লাহর দায়িত্ব কেউ পালন করতে পারে না। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার জন্য সব ধর্মের মানুষ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেনি।
হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজের সভাপতি অজয় রায় বলেন, ‘বিবিসিকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ব্লাসফেমি আইন হবে না, এ জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু মদিনা সনদ অনুসারে দেশ চলবে, এটা বলার কোনো দরকার ছিল না।
দেশের সংবিধান ও আইন আছে, সে অনুসারে দেশ চালাতে হবে। ’
‘উগ্রবাদী গোষ্ঠীর’ সঙ্গে আলাপ-আলোচনাকে নিরুৎসাহিত করে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক হারুন হাবীব বলেন, যখনই উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, ওই গোষ্ঠীগুলোই লাভবান হয়েছে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাংবাদিক কামাল লোহানী। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।