আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাহিত্য সমালোচনা

অরুণালোক বিবর্তন ১৫ তম সংখ্যা নিয়ে মন্তব্য: সাহিত্য মনের খোড়াক। একটি পাক্ষিক পত্রিকাতে সাহিত্যের অংশ যা থাকা উচিত বিবর্তনেও তেমনটি আছে। এর প্রথম সংখ্যাটি যে কলেবরে বা যে বিষয় নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল তাতে আমার মনে হয়েছে একটি প্রগতিশীল চিন্তা নিয়েই পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু কয়েকটি সংখ্যার পর থেকেই যখন দেখি অধ্যাপক ওমর ফারুক কিংবা আখন আব্দুল মান্নান নামে কিংবা তার মতো আরো কয়েকজন (যারা বাংলাদেশের একটি বিতর্কিত গোষ্ঠীর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত) এই পত্রিকাতে তাদের ঢংয়ে লিখছে এবং তা বিবর্তনে প্রকাশিত হচ্ছে তখন আমার বেশ কষ্ট লেগেছে। গত সংখ্যা (১৫ নং) থেকে কয়েকটি লেখার কথা আমি আজকে বলতে চাই: অধ্যাপক ওমর ফারুকের- আলোর পথে- সংখ্যা নং ১৫ লেখকের এই লেখাটি কোন্ গুরুত্বে পত্রিকাতে ছাপা হয়েছে তা নিয়ে আমার বেশ বড় রকমের প্রশ্ন আছে।

তার পরে তার লেখার শেষ অংশে (৩৩পৃষ্ঠার) একজন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীকে তিনি যেভাবে আল্লাহর খাস বন্দাতে পরিণত করেছেন তাতে করে লেখক যেমন বিতর্কিত হবেন সাথে সাথে সম্পাদক হিসেবে আপনিও আপনার দায় এড়াতে পারবেন না। তৈয়ব খানের কবিতা: তিনি কি আপনাদের জাতীয় কবি নাকি? একজন ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের এত এত লেখা প্রায় প্রতি সংখ্যাতেই লক্ষ করা যায়। তার কবিতার কোন মর্মকথা আমার বোধগম্য হয় না। তিনি আসলে কি লিখতে চান তিনিই স্পষ্ট জানেন। গত সংখ্যাতে তিনি ফল নিয়ে যেসব ছবি প্রকাশ করেছেন তা সম্পূর্ণ সংখ্যাটিকেই নিুমানে পৌঁছে দিয়েছে।

এছাড়া গত প্রায় ৫-৬ সংখ্যাতে তার লেখা কবিতা পড়তে পড়তে মনে হয়েছে বাংলাদেশে আপনাদের পরিচিত আর কোন কবি নেই। ১৫ সংখ্যার কবিতার পাতায় পম্পা সাহা ব্যতিত আর কোন কবিতাই পড়ার যোগ্য নয়। ১৫ নং সংখ্যার প্রচ্ছদ রচনাটি সুন্দর ও সার্থক হয়েছে। কেবল পদ্মা সেতু নিয়ে এরকম একটি পূর্ণাঙ্গ সংখ্যা বাংলাদেশের কোন পত্রিকাই প্রায় করেনি। সেক্ষেত্রে সৌমিত্র দেব এর লেখাটি আরো বিস্তারিত ও কিছু কিছু মানুষের ইন্টারভিউ যুক্ত করে দিলে ভাল হতো।

সংখাটিতে নবীন চৌধুরীর যে লেখাটি ছাপা হয়েছে তা পত্রিকাটির ওজন কমিয়ে দিয়েছে। এই লেখাটি শিশুতোষ বললে অত্যুক্তি হবে না। অন্যসব ধারণা ভাল হয়েছে, ভ-জ্ঞ সম্ভবত একটি ছদ্ম নাম। তার নাম প্রকাশ করলে আমরা আরো খুশি হব। লেখাটি সময়উপযোগি হয়েছে।

বিষয় নির্মান যুক্তিযুক্ত তবে সাজানো গোছানো এবং পত্রিকার কাগজটা যদি আর একটু উন্নতমানের হয় তাহলে আরো ভালো হতো। ডিজাইনে আরো বেশী প্রফেশনাল হওয়া উচিত। আমি একজন পাঠক মাত্র। আমি নিয়মিত পত্রিকাটি সংগ্রহ করি এবং পড়ি। তবে পত্রিকাটির একজন শুভাকাঙ্খি।

উপরোল্লেখিত বিষয়গুলোতে আপনার সুদক্ষ পরিচালনা এবং লেখা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনার সুদুরপ্রসারি চিন্তা কামনা করছি যা একজন সম্পাদকের মৌলিক দায়িত্ব। আমাকে ক্ষমা করবেন যদি অতিরঞ্জিত বলে ফেলি। বিনীত নিজামউদ্দিন ১১৯/৯ পিসিকালচার হাউজিং ঢাকা। প্রতি নিজাম উদ্দিন ১১৯/৯ পিসিকালচার হাউজিং ঢাকা। প্রিয় সুহৃদ আসসালামু আলাইকুম।

আশা করি ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে ভাল আছি। সম্প্রতি বিবর্তন পত্রিকায় আপনার একটি ই-মেইল আমাকে আপনার কাছে কয়েকটি লাইল লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছে। সত্যি কথা বলতে কি, ইদানিং কেউ আর অপরের দোষ ত্রুটি ধরিয়ে দেয় না। একে তো নাগরিক জীবনের ব্যস্ততায় সময়ের তীব্র অভাব, অন্যদিকে সামাজিক দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে অসচেতনতা মহৎ এ কাজটি থেকে বিরত রাখে।

আবার অপরের দোষ ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে অনেক সময় বিড়ম্বনার শিকারও হতে হয়। তো, এতোসব ঝক্কি কে পোহায় বলুন! মানুষ এখন নিজেকে নিয়ে নিজেই ব্যস্ত অথবা ‘চলুক না যে যার পথে, কী এসে যায়’ এরকম মনোভাব নিয়ে পরস্পরের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে নিজের ভেতরে ডুব দিয়ে বসে থাকে। ফলে সমাজ চলছে ফ্রি স্টাইলে। তাই সমাজের প্রতিটি স্তরের প্রায় মানুষেই একটা ‘চলুক যে যার পথে’ কিসিমের মনোভাব নিয়ে দূরে সরে যাচ্ছে। আশা করি সমাজের দিকে দৃকপাত করলে আপনিও আমার সাথে একমত হবেন।

কিন্তু এ দূরে সরে যাওয়াটাকে অনেকেই ঠিকঠাক মেনে নিতে পারে না। আমি পারি না। এখন দেখছি আপনিও পারেন না। আপনি নিঃস্বার্থভাবেই অন্যের ত্রুটিগুলোকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন ঠিক আমারই মতো। আমি কখনও অন্যের দোষ ত্রুটি মুখে বলে তাঁকে বুঝাই, কখনও লিখে বুঝাতে চেষ্টা করি এবং যখন কেউ বুঝে না, বা নিজের স্বার্থের দিক চিন্তা করে বুঝেও না বুঝার ভান ধরে, তখন নিজেকে আর সামাল দিতে পারি না, চেঁচামেচি করি, কখনও কখনও হাতও তুলে বসি।

ব্যক্তিগতভাবে আমি খুব আবেগ প্রবণ মানুষ, চেঁচামেচিটা সেই কারণেই। এক্ষেত্রে আপনি খানিকটা ব্যতিক্রম। আপনি মুখে বলার সময় এবং সুযোগ হয়তো করে উঠতে পারেন নি, তাই একছত্র একটি চিঠি লিখে তাঁকে তাঁর দোষ ধরিয়ে দিয়েছেন। এটি একটি মহৎ কাজ এবং প্রশ্নাতীতভাবে সাহসী কাজও বটে। তাই হৃদয়ের খুব গভীর থেকে আপনাকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি।

এমন একটা সময় ছিলো (সতেরো শ’ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে বিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত, যা বাংলা সাহিত্যের স্বর্ণযুগ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে) যখন বাংলা সাহিত্যের সমালোচনা হতো। এ সমালোচনাটা ছিলো খুবই পজিটিভ। হবে নাই-বা কেন? বাংলা সাহিত্যের দিকে আপনি একটু দৃষ্টি ফেললেই ধরতে পারবেন। তখন বাংলা সাহিত্যের আকাশে ছিলো বঙ্কিম, ঈশ্বরচন্দ্র, বিভূতি, ফাল্গুনী, শরৎ, রবী ঠাকুর, নজরুল, মীর মোশাররফ হোসেন, বন্দে আলী মিয়া, গোলাম মোস্তফা, সত্যেন্দ্রনাথ, উপেন্দ্র কিশোর, সৈয়দ মোজতবা আলী, সুকুমার রায়, জীবনানন্দ, সুকান্ত, ডক্টর মুনিরুজ্জামান, বহুভাষাবিদ ড. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, কালী প্রসন্ন, কামিনী রায়, বেগম সুফিয়া, মুনির চৌধুরী, সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ, ফররুখ আহমেদ, আব্দুল কাদির প্রমুখ নক্ষত্র। তখনকার সময় সাহিত্য সমালোচনার কদর ছিলো।

কিন্তু বর্তমান সময়ের বাঙালি হিসেবে আমাদের বড়ো দুর্দিন এখন। কেননা, ঐ সব জ্বলজ্বলে নক্ষত্রের সামনে পরবর্তী প্রজন্ম শামসুর রাহমান, ঝর্ণা দাস পুরুকায়স্থ, হেলাল হাফিজ, আল মাহমুদ, রুদ্র মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, শংকর, সঞ্জিব চট্টোপাধ্যায়, সমরেশ বসু, সমরেশ মজুমদার কিন্তু নিজেদের তেমনটা উজ্জ্বল করে তুলতে পারেন নি। যেমনটি পারেন নি সৈয়দ আলী আহসান কিংবা আবদার রশিদ, মহাদেব সাহা। অবশ্য যদি আকবর হোসেনের কথা বাদ দিলে অবস্থাটা তাই দাঁড়ায়। কেননা, কী পাই নি, মোহমুক্তি, অবাঞ্ছিত ইত্যাদি বইগুলো আকবর হোসেনের কথা দারুণভাবে মনে করিয়ে দেয়।

এদিক দিয়ে রুমেনা আফাজ, রিজিয়া রহমান, কাজী আনোয়ার হোসেন একটি ভিন্ন আঙ্গিকের সাহিত্য পাঠকদের দরবারে তুলে দিতে পারলেও মনের পুরো খোরাক জোগাতে ব্যর্থ হয়েছেন। কবিতার ব্যাপারটাও ঠিক তাই। বাংলা সাহিত্যের স্বর্ণযুগের সময় আমরা বাংলা কবিতাকে যেভাবে দেখেছি বা পড়েছি পরবর্তী কবিদের কাছ থেকে সেই স্বাদ পেতে ব্যর্থ হয়েছি। দিন যতো যাচ্ছে বাংলা সাহিত্য ততোটাই ম্রীয়মান হতে বসেছে। আপনি অবশ্য ইমদাদুল হক মিলন, হুমায়ূন আহমেদ ইত্যাদি লেখকের কথা বলতে পারেন।

লক্ষ্য করলে দেখবেন এঁরা কিন্তু রঞ্জন দেবনাথকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন নি। কেন? নিশ্চয়ই কারণ আছে। কারণটা কী? কারণটা হচ্ছে, এরা এসেছে নিজস্ব পয়সা খরচ করে প্রকাশকের কাছে গিয়ে প্রথম প্রথম বই ছাপাতেন। জনশ্রুতি আছে, হুমায়ূন আহমেদ নাকি প্রথম প্রথম তাঁরই ছাত্রছাত্রীদের কাছে জোর করে নিজের লেখা বই বিক্রি করতেন। পরে নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে কোথাও কেউ নেই নাটকে বাকের ভাইয়ের ফাঁসি রোধ করার জন্য লোক ভাড়া করে মিছিল করিয়েছেন।

বিষয়টি আপনি লন্ডনের বাঙালি লেখিকা হেলেনা হকের লেখায় পাবেন। এ পসঙ্গে আমি আমার বন্ধুবর প্রত্যয় জসীমের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। প্রত্যয় জসীম কিন্তু সেই শামসুর রাহমান, রুদ্্র মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ ঢঙ্গে কিংবা হেলাল হাফিজের মতো করেই লিখছেন। বলয় থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব কোন কিছু দাঁড় করাতে পারেন নি। উনি ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটনকেও ছাড়িয়ে যেতে পারেন নি।

যেমন পারেন নি আমাদের আরেক বন্ধুবর মাহমুদ ইকবালও। অপরদিকে লক্ষ্য করলে দেখবেন, আমাদের দেশের কিছু সোনার মানুষ নিজের দেশের গ-ি ছাড়িয়ে সুদূর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে যাচ্ছেন। এরা কারা? আপনার নিশ্চয় জানতে ইচ্ছে করে। আপনার কৌতুহল নিবৃত্ত করতে তাঁদের কয়েকজনের নাম আমি এখানে তুলে ধরছি। এঁরা হচ্ছেনÑ অধ্যাপক ওমর ফারুক (লক্ষ্মপুর জেলার রাধাপুরের কৃতি সন্তান, যিনি ১৯৭৬ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় সারা দেশে মেধা তালিকায় স্থান করে নিতে পেরেছিলেন।

পরবর্তীতে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে মালয়েশিয়ায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ শেষে ইংল্যান্ডের মতো দেশে প্রবাসী বাঙালিদের জীবনযাত্রার উপর গবেষণামূলক কর্মকা-সহ বাংলা সাহিত্যের বিস্তার ঘটিয়ে চলেছেন। তাঁর রচিত গবেষণামূলক বইগুলো যদি আপনি পড়েন তো বুঝতে পারবেন যে, বিবর্তন পত্রিকায় উনার মতো বড়ো মাপের লেখকের লেখা কেমন সমৃদ্ধ করেছে। বাংলা সাহিত্যের এমন কোন শাখা নেই, যেখানে এ কীর্তিমান মানুষটির হাতের ছোঁয়া পড়ে নি। এরকম আরও অনেক বাঙালি কীর্তিমান লেখক যেমন কবি রহমত আলী পাতনী, কবি শিহাবুজ্জামান কামাল, লেখক ও সাংবাদিক (লন্ডন থেকে প্রকাশিত বাংলা পোস্ট সম্পাদক) আবু তাহের চৌধুরী, কবি অধ্যাপক ইয়াওর উদ্দিন (ওয়েস্ট মিনিস্টার জার্নাল পত্রিকার সম্পাদক), কবি আলিফ উদ্দিন, লেখক হালিমা হক, সাবেক অর্থনীতিবিদ কিবরিয়া সাহেবের ভাতিজা আবুল কালাম আজাদ ছোটন, অধ্যাপক মিজানুর রহমান, ডা: আবুল কালাম আজাদ, মঞ্জু সরকার মণি, ড. মরহুম আশরাফ উদ্দিন আহমেদ, কবি শাহ মোহাম্মদ মাশুক, ব্যারিস্টার কুতুব উদ্দিন আহমেদ এমবিএ এবং বিখ্যাত কলামিস্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম সংগঠক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে দেশের ভেতরে ও বাইরে প্রচার ও প্রসারে কীরূপ ভূমিকা রেখে চলেছেন। শুধু তাই না, কীর্তিমান এসব মানুষেরা বাংলাভাষাকে ইউরোপে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে চালু করার বিষয়েও নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।

উল্লেখিত এসব লেখকদের অনেকের সাথেই আমার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগাযোগ আছে। সে যাক। আপনি আকন আব্দুল মান্নান সম্পর্কে লিখেছেন। লিখেছেন যে, তিনি একজন বিতর্কিত লেখক। হ্যাঁ, আপনার কথা আমি অস্বীকার করবো না।

উনি বা উনাদের অনেকেই বিতর্কিত লেখক বটেন। কিন্তু বিতর্কটা কেন? উনারা আসলে কী লিখছেন? উনারা যা লিখছেন, তা হচ্ছে, জীবনের প্রতিটি স্তরে ধর্মকে প্রধান্য দেওয়া ভিন্ন কিছু নয়। যে কোন মানুষই তাঁর নিজ নিজ ধর্ম-কর্ম পালন করবে, এটাই নিয়ম বা বিধান। আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন, আপনাকে তা পুরোপুরি পালন করতে হবে। এখন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের কোন হিন্দু বা খ্রিস্টান বা বৌদ্ধ যদি নিজ যোগ্যতা বলে দেশের শীর্ষপদে আসীন হতে পারেন এবং তিনি যদি যথাযথভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারেন, তবে তো দোষের কিছু নেই।

উচিৎ হবে, সেই ব্যক্তির সৎ নেতৃত্বকে স্বাগত জানানো। বাংলাদেশে সেটা হচ্ছেও। তা না হলে সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের মতো লোক ক্রাইম করার পরও বহাল তবিয়তে থাকতে পারতো না। কেননা, বাংলাদেশের মানুষ যখন তার সত্তর লক্ষ টাকার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন, ঠিক তখনই তাঁর দীর্ঘ চুয়ান্ন বছরের সফল রাজনীতির বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করেন। আপনি কি বিএনপি’র সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফর রহমান বাবরের দুর্নীতি নিয়ে একদিনও আলোচনা করেন নি? কিংবা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বাসগৃহ থেকে মদের বোতল উদ্ধার হয়, তখন ঘুমিয়ে ছিলেন? কিংবা বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ২০০৯ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি পিলখানার বিডিআর জৌয়ানদের নৃসংশভাবে হত্যাকা-ের পরে যখন সাহারা খাতুন বারবার টেলিভিশনে বলেছেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর আদেশ বলে এখানে এসেছি’ তখন আপনার মনে কি প্রশ্ন জাগে নি, যে একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে বারবার প্রধানমন্ত্রীর তোতা পাখি হওয়া মানায় না? কিংবা সাংবাদিক সাগর-রুনি যখন বাসভবনে আততায়ীর হাতে নিহত হন, তখন কি আপনার মনে একটা প্রশ্নও জাগে নি যে, কেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কারও বেডরুম পাহাড়া দেওয়া সরকারের কাজ নয়? বলুন, জবাব দিন।

আপনি কিন্তু আকন আব্দুল মান্নান বা প্রফেসর ওমর ফারুকের কোন লেখায় হিন্দু বিদ্বেষী মনোভাব খোঁজে পাবেন না। পাবেন কি, সরকার পরিচালনার অদক্ষতার সমালোচনা। যা এসব কীর্তিমান লেখকগণ তাঁদের লেখায় ফুটিয়ে তুলতে প্রয়াসী। বিএনপি নেতা ইলিয়াছ আলী গুম হয়ে যাবার পর আব্দুল গাফফার চৌধুরীও কিন্তু আওয়ামী সরকারের সমালোচনা করেছেন। সৃষ্টিশীল সমালোচনা যে কেউ করতে পারেন।

করেনও। যেমন মুন্সি আব্দুল মান্নানের লেখা যদি পড়েন, আপনার মনে হবে ঘোরতর আওয়ামী বিরোধী। আপনি যদি কষ্ট করে বাংলা বাজারে যান এবং অধ্যাপক ওমর ফারুকের ‘সবিনয় নিবেদন’ বা ‘রক্তাক্ত পিলখানা’ অথবা আকন আব্দুল মান্নান (এককালে বরিশাল বিএল বিশ্ববিদ্যালয়ের কীর্তিমান ছাত্র, বাংলা বিভাগ) এর ‘রাজনীতি ও সময়ের সঙ্কলন’ বইটি সংগ্রহ করে পড়েন, তবে আমার বিশ্বাস উনাদের প্রতি আপনার ধারণা পাল্টে যাবে। অবশ্য লন্ডনে যদি আপনি ‘সঙ্গিতা ইউকে লিমিটেড, ২২ ব্রিক লেন, ই১ ১ডিটি’ বুক স্টলেও এঁদের বই পেতে চান, তাও পাবেন। লেখক বুদ্ধিজীবীরা কেন সরকারের সমালোচনা করেন, এটা আপনাকে বুঝতে হবে।

‘সমালোচনা না থাকলে গণতন্ত্র অচল’ আপনি যদি এ মূলমন্ত্রে বিশ্বাসী না হোন, তবে আমি বলবো আপনি এখনও মাতৃগর্ভেই আছেন। সরকার বলেন আর বিরোধী দল বলেন, এদের সমালোচনা যদি না থাকে, বা কেউ না করে, তবে সেখানে স্বৈরাচার জন্ম নিতে বাধ্য। ডেমোক্রাসি আর ডিকটেটরশিপের পার্থক্য বোঝার মতো ক্ষমতা নিশ্চয়ই আপনার আছে। বর্তমান দুনিয়ায় যেখানে সবাই গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহতভাবে করে যাচ্ছে, সেখানে আপনি তো এদের লিখতে সুযোগ না দিয়ে বিবর্তনে চিঠি পাঠিয়ে গণতন্ত্রকে খুন করেছেন। আপনি তো খুনি।

অধ্যাপক ওমর ফারুক যদি লিখে থাকেন যে, মওলানা দেলোয়ার হোসেন ভাল লোক, তবে নিশ্চয়ই তিনি অন্যায় কিছু লিখেন নি। কেননা, একটি পরিবারের দুই ভাই থাকলে, এ দু’জনই যে বাবার সাফাই গাইবে এমন কোন কথা নেই। মওলানা দেলোয়ার হোসেন সাইদীর বিষয়টি এখনও বিচারাধীন। সরকার চাইবে দেলোয়ার হোসেন যদি সত্যিই যুদ্ধাপরাধী হয়ে থাকে, তবে তাঁর আইনানূগ বিচার হোক। শুধু সরকার কেন, দেশের সর্বস্তরের শান্তিকামী মানুষ চাইবেন যেন যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়, আমিও চাইবো, আপনিও চাইবেন, অধ্যাপক ওমর ফারুকও চাইবেন।

এখন ধরে নিন, অধ্যাপক ওমর ফারুকের কাছে সাইদী সংক্রান্ত যে দলিল বা ডকুমেন্ট আছে, তাতে সাইদী অপরাধী নয় এবং যদি সত্যি সত্যি নিরপেক্ষ তদন্ত হয় এবং যদি প্রমাণিত হয় যে, মওলানা দেলোয়ার হোসেন সাইদী আসলে যুদ্ধাপরাধী নয়, তখন তো আপনার থোতা মুখ ভোতা হয়ে যাবে। কী করবেন তখন আপনি? একটা কথা মনে রাখবেন, আইন শেষ পর্যন্ত অপরাধীর পক্ষে নির্দোষ প্রমাণে কাজ করে যায়। শেষ পর্যন্ত অপরাধীকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। মহান আল্লাহ যেমন তার পাপী বান্দাকে বারবার সুযোগ করে দেন শুধরে যাবার জন্য, রাষ্ট্রীয় আইন ঠিক তেমনই। এটা একটা মনস্তাত্বিক বিষয়।

আমি পুরো তিন বছর আইনের ছাত্র ছিলাম। ছাত্রাবস্থায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলাম। বিশ্বাস না হলে আপনি ধামরাই গিয়ে আমার সম্পর্কে তথ্য নিতে পারেন। আপনাকে ওপেন চ্যালেঞ্জ দিলাম। পারলে গ্রহণ করেন।

আড়াল থেকে রাষ্ট্রপতিকেও শালা বলে গাল দেওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবটা বড়ো কঠিন। সে যাক। একটা পত্রিকা হচ্ছে মত প্রকাশের প্লাটফর্ম। এখানে যে কেউ লিখবে।

পত্রিকা হচ্ছে বয়ে চলা নদীর মতো। এখানে তাবৎ প্রাণী তৃষ্ণা নিবারণ করতে আসবে। আর আপনি কি না বলেছেন, বিতর্কিত এ লেখকদের লেখা বিবর্তনের মতো পত্রিকায় যেন লেখা প্রকাশ না করে। বিবর্তনের জন্ম তো আমরা সেদিন দিলাম। তার আগেও আমি নিজের পত্রিকা করেছি, অন্য পত্রিকাতেও কাজ করেছি।

বাংলাদেশের আরও অনেক পত্রিকা আছে, যারা ঐ সব লেখকদের লেখা স্যার স্যার বলে নিয়ে গিয়ে ছাপায়। অধ্যাপক ওমর ফারুক আন্তর্জাতিক মানের একটি পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও অন্য একটি পত্রিকার সম্পাদক। আর আকন আব্দুল মান্নান বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির দৈনিক পত্রিকা ‘ইনকিলাবের’ সহযোগী সম্পাদক। সে যাক, আপনার মতে বিবর্তন একটি আওয়ামী ঘরানার পত্রিকা। বেশ তো, সম্পাদক যদি মনে করেন, যে আপনি সত্য, তবে প্রকাশ নাই বা করলেন।

কী এসে যায়! কিন্তু এতে করে কিন্তু একটা সমস্যাও সৃষ্টি হবে। কী রকম জানতে চান? চুপি চুপি বলছি শুনুনÑ, তার আগে একটা ছোট্ট মন্তব্য করি। আমি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের চৌষট্টি জেলার চল্লিশটি জেলাতে ঘুরে বেরিয়েছি। গত নির্বাচনের আগে আমি অনেক মানুষের সাথে মত বিনিময় করেছি। বলতে পারেন এটা আমার পেশাগত কর্তব্য পালন করেছি।

এবং আমি এ মতবিনিময়ের পর অনেকের কাছেই মন্তব্য করেছিলাম, এবার আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করবে। আমার অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমার কথা শুনে খল খল করে হেসে উঠেছিলো। কিন্তু সত্যি সত্যি যখন নির্বাচন হলো, দেখা গেলো আমিই সত্য। তাই ওদের মুখে সেদিন চুনকালী পড়েছিলো। সেই আমি তৈয়ব খান বলছি, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মারাত্মক ভরাডুবি হবে।

কেউ ঠেকাতে পারবে না। আপনার মতো চুনোপুঁটি তো নয়ই। এটা শুধু আমার মত না, বিবর্তন পত্রিকার সম্পাদক আবদুল মাবু’দ চৌধুরীও একজন রাজনীতি বিশেষজ্ঞ, তিনিও ঠিক আমারই মতোন মত প্রকাশ করেছেন। এখন আগামী নির্বাচনে জেতা বা না হারা কমপ্লিটলি মহান আল্লাহর হাতে। মানুষ এখানে কিছুই নয়।

আপনি নিশ্চয় পবিত্র আল কোরআনের একটি আয়াতের কথা মনে আছে। আপনার নাম তো লিখেছেন নিজাম উদ্দিন। ধরে নিলাম আপনি একজন মুসলিম। ইদানিং অবশ্য আমি খুব প্রকটভাবে নামের বিভ্রান্তিতে ভুগছি। নাম দেখছি মুসলমানের অথচ তার ধর্ম ভিন্ন।

নাম দিয়ে ইদানিং হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টানকে আমি আলাদা করতে পারছি না। অবশ্য আমার চোখের পর্দা মহান আল্লাহ নিশ্চয়ই সরিয়ে দেবেন। আপনি নিশ্চয় বিখ্যাত গায়ক গোলাম আলীর সেই কালজয়ী গানটা শুনে থাকবেনÑ চান্দ কাব তক আন্ধেরমে রাহে/ ম্যারা জুলফু হাটা দিজিয়ে/ লজ্জাকি গাম বারহা দিজিয়ে...... সে যাক, পবিত্র কোরআনের আয়াতটা শুনুন, ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমতা দান করেন, যার কাছ থেকে ইচ্ছা তা কেড়ে নেন। ’ আমার অনুমান মিথ্যে হবার নয়। বড়ো কালমুখ আমার।

যা বলি তা কেমন করে যেন সত্য হয়ে যায়। সে যাক, তো ধরে নিন- আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় আসতে পারলো না। এখন আপনার কথানুযায়ী যদি বিবর্তন চলে, তখন এ পত্রিকাটার অবস্থা কি হবে? সেই বাংলার বাণীর মতো হবে। বাংলার বাণীর কথা আপনার মনে আছে? নাকি সস্তা আবেগে, অন্যের প্ররোচনায় তা গুলিয়ে ফেলেছেন? এবার কথা বলা যাক কবিতা নিয়ে। এ বিষয়ে আপনাকে একটু ছবক না দিয়ে পারছি না।

শুনুন, কান খুলে শুনুন। কবিতা দুই প্রকার। একটা মন্ময় অন্যটা তন্ময়। আমার কাছে অর্থবহ ও ভাবপূর্ণ বাক্যের ছান্দিক রূপই হচ্ছে কবিতা। যার মাত্রা বিন্যাসটা থাকবে কবিতার ব্যাকরণে সুনির্দিষ্ট।

কি মন্ময় কবিতা, কি তন্ময় কবিতাÑ; প্রত্যেকেই একটা নীতি মেনে চলে। মন্ময় কবিতায় ব্যক্তির মনোজগতের অনুভূতিকে গীতিময়তায় প্রকাশ করে। আমিত্ব থেকে কবি মনে এ ভাবের সৃষ্টি হয়। এখানে আমিত্ব সর্বেসর্বা। এ আমিত্বটাকে দিয়েই অপরের মাঝে নিজেকে দেখা।

যে আমিত্ব অসীম, নিরাকার। যে নিরাকার আরেক নিরাকারের অণেœষায় সদা ব্যাকুল। চিন্তামূলক, ভক্তিমূলক, শোক, প্রকৃতি, প্রেম, প্রশস্তি এ সব কিছুর ছান্দিক প্রকাশ ঘটে মন্ময় কবিতায়। পক্ষান্তরে তন্ময় কবিতায় বস্তুজগতের চারপাশের দেখা ঘটনাবলী থেকে সৃষ্টি হয় ভাব, ভাবের প্রকাশ ছন্দে। কিন্তু তন্ময় কবিতার নিজের কথা নয়, অন্যের কথাই প্রকাশিত হয়।

নীতি, রূপক, ব্যঙ্গ, ছড়া এগুলো সাধারণত তন্ময় কবিতার শ্রেণীতে ঠাঁই পায়। কিন্তু সব কিছুর মধ্যে যে ছন্দ থাকে, আর ছন্দ থাকলে মাত্রাকে থাকতেই হবে এবং মাত্রার জন্য লয় বা সময় থাকবে এ তো সব জানা কথা। কবিতা মানেই তো ছন্দের খেলা, মাত্রার খেলা, লয়ের খেলা এবং তালের খেলা। ভাব প্রকাশে এ সব কিছুর উপস্থিতি থাকলে তবেই না কবিতা। কিন্তু না, আজকাল আমরা যে কবিতা পড়ি তাতে কোন ছন্দ নেই।

বাজারে এত্তো এত্তো কবিতার বই কিন্তু কই! ছন্দ কোথায়? বিভিন্ন সংবাদ পত্রে সাহিত্য পাতায় কতো কবিতা ছাপা হয় প্রতিদিনই। কিন্তু কই! ছন্দ কোথায়? চারিধারে কতো নামী দামী কবি। কত্তো শিক্ষিত একেকজন, বিখ্যাত কবি হিসেবে কত্তো নামডাক তাদের । কিন্তু কই! তাদের কবিতায় ছন্দ কই? আজকাল আর কেউ কবিতা মনে রাখতে পারে না। এর মূল কারণ, কবিতা আজ ছন্দহারা।

আবার যেদিন কবিতায় ছন্দ ফিরে আসবে- সেদিন আবার কবিতা নিজের সত্যিকারের আদিরূপ ফিরে পাবে, সেদিনই এর পাঠক প্রিয়তা বাড়বে, আকাশে বাতাসে কবিতা ভাসবে সেদিন শরতের আকাশে সাদা মেঘের ভেলার মতো। আমার আফসোস হয় ছন্দের জন্য। হায় রে ছন্দ! হায়রে স্বরবৃত্ত, হায় অক্ষরবৃত্ত- মাত্রাবৃত্ত! কোথায় তোরা! এ্যা, কোথায় হারালি? বাংলা কবিতা থেকে তোরা কি একেবারেই বিদায় নিলি? তোরা বিদায় নিলি বলেই বোধ হয় বাংলা কবিতা জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। মানুষ এখন আর আগের মতো আবৃত্তি করে না, করতে পারে না। পারবে কেমন করে? ছন্দবিহীন কবিতা তো লাশের মতো, যার না থাকে প্রাণ; না সৌন্দর্য।

লাশকে কবর দেয়া ছাড়া আর তো কোন গতি নেই। পৃথিবীর কোন লাশই যেমন হৃদয়ে পুলক জাগাতে পারে না, ঠিক তেমনি আধুনিক গদ্য কবিতার নামে যে ছন্দবিহীন কবিতার উদ্ভব হয়েছে- সে-ও মনে কোন আনন্দ দিতে পারে না। আর তাই কবিতার বুঝি আজ এ পরিণতি। কবিতার পরিণতি দেখে আফসোস করি, একা একা গুমরে কাঁদি আবার পরক্ষণেই কথিত আধুনিক কবিদের ছন্দবিহীন কবিতা পড়ে মনের অজান্তেই ঠা ঠা করে হেসে উঠি। আর এ হাসি-কান্নাগুলোই বুঝিবা ছন্দ হয়ে ধরা পড়ে আমার লেখা কবিতায়।

আমি ছন্দে লিখি, লিখে আনন্দ পাই, প্রাণ পাই। এবার আসুন এবং শিখুন ছন্দ কাকে বলে। তার আগে শিখুন কবিতা কাকে বলে। কবিতার সংগাই যদি না জানেন, তবে তা নিয়ে মন্তব্য করা মুর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। আপনার মতো কিছু লোক, যারা চাটুকারিতা পছন্দ করে, তারাই কেবল অপরের দোষ খোঁজে বেড়ায়।

আপনার মতো নির্গুণ মুর্খকে কবিতা বুঝাতে যাওয়াও বিড়ম্বনার। তবু আমি আপনাকে লিখছি। তো সাধারণত কবিতা হচ্ছে ছন্দোবদ্ধ পদ। অপরিহার্য শব্দের অবশম্ভাবী বাণী বিন্যাসকে কবিতা বলে। ঈড়ষবৎরফমব এর ভাষায় ইবংঃ ড়িৎফং রহ ঃযব নবংঃ ড়ৎফবৎ." ডড়ৎফংড়িৎঃয বলেছেন, "চড়বঃৎু রং ঃযব ংঢ়ড়হঃধহবড়ঁং ড়াবৎভষড়ি ড়ভ ঢ়ড়বিৎভঁষ ভববষরহমং." ডড়ৎফং উবহঃড়হ বলেছেন, “অনংড়ষঁঃব ঢ়ড়বঃৎু রং ঃযব পড়হপৎবঃব ধহফ ধৎঃরংঃরপ বীঢ়ৎবংংরড়হং ড়ভ ঃযব যঁসধহ সরহফ রহ বসড়ঃরড়হধষ ধহফ ৎযুঃযসরপ ষধহমঁধমব' এবার দেখেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ কী বলেছেনÑ “ভাবকে কথার মধ্যে ছন্দোময় করে জাগিয়ে তুললেই তা কবিতা।

তাকে ছন্দ থেকে ছাড়িয়ে নিলেই হয় সংবাদ। তিনি ছন্দিক ভাষায় বলেছেনÑ অন্তর হতে আহরি বচন আনন্দলোক করি বিচরণ গীতরসধারা করি সিঞ্চন সংসার ধুলি জালে। ” ছন্দোস্পন্দই হচ্ছে কবিতার বিশেষ বৈশিষ্ট। ছন্দোস্পন্দই কবিতার প্রাণের সঞ্চার করে। কবিতা আর্কষণীয় হয়ে উঠে ছন্দ সৌন্দর্যের কারণে।

ছন্দ-ভাব-অলংকার-রস ইত্যাদি কবিতার প্রাণ সম্পদ। তাই কবিতায় শব্দ বিন্যাসে ছন্দ একটি প্রধান স্থান অধিকার করে আছে। মাধুর্য ম-িত ভাষারীতির ব্যবহার কবিতার অপরিহার্য শর্ত। এই মাধুর্য ছন্দের স্পন্দন যেন বীণার তারে ঝংকৃত হতে থাকে। শব্দের নির্বাচনে ও ভাবের দ্যোতনায় ছন্দের দোলা থাকতেই হবে।

প্রকৃতি ও জীবনের সান্নিধ্যে কবিমনে সৃষ্ট বিচিত্র ভাব যখন ছবির মতো প্রত্যক্ষ ও গানের মতো মধুর করে ছন্দোবদ্ধ বাক্যে প্রকাশ করা হয়, কেবল তখনই তাকে কবিতা বলে। কবিতায় বাক্যে ও চরণের বিভিন্ন অংশের মধ্যে ছন্দ একটি বিশেষ পরিমাপগত সামঞ্জস্য আনে। ছন্দের তররঙ্গিত ধ্বনি স্পন্দনের সহায়তায় পাঠক ও শ্রোতার মনে একটি স্বপ্নচ্ছন্ন অনুভূতি আছে। আর ছন্দ থাকতে তাল থাকতে হবে। তাল থাকলে লয় থাকতে হবে।

আপনার কি তবলা, খোল, খঞ্জনী, করতাল বাজানোর অভিজ্ঞতা আছে? থাকলে ভাল, না থাকলে আরও ভাল। সম ফাঁক বুঝেন? না বুঝলে শিখুন, একদম বিনে পয়সায় শিখিয়ে দিচ্ছি। তাল বিভিন্ন রকমের আছে। আমাদের দেশের প্রচলিত তালগুলোর মধ্যে হচ্ছে ছয় মাত্রার দাদরা, আট মাত্রার কাহারবা (তালের রাজা), বার মাত্রার একতাল, ষোল মাত্রার ত্রিতাল। আরও আছে পাঁচ মাত্রা, সাত মাত্রা।

এবার শিখুন। কবিতা রচনা বা আবৃত্তি করতে গেলে আপনাকে তালের তালিম নিতে হবে। যা আমাদের দেশের সো-কলড কবিরা জানেই না। তাই তারা সহজ একটি পথ বের করেছে আধুনিক কবিতার নামে। যেখানে তালের কোন বালাই নেই।

তালকানা বুঝেন? তাল-ই যদি না জানেন তো আপনাকে তালকানা বলতেও লজ্জা লাগে। কবিতার মাত্রা বিন্যাস বুঝেন? কবে শিখবেন? অক্ষর উচ্চারণের কাল (সময়) পরিমাপকে মাত্রা বলে। একটি অক্ষর উচ্চারণের সময় যে সময় প্রয়োজন সেই সময় অনুসারেই প্রতিটি অক্ষরের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যেমনঃ মনে পড়ে কত কথা। এবার এটাকে ভাঙেনÑ ম নে প ড়ে ক ত ক থা।

মগজে কিছু ঢুকলো? আরেকটি বিষয় আবারও চুপি চুপি বলিÑ অযুগ্ম ধ্বনি সব ছন্দেই এক মাত্রার ধরা হয়। আবার যুগ্ম ধ্বনি স্বরবৃত্ত ছন্দে এক মাত্রার হিসাব হয়। মাত্রাবৃত্ত ছন্দে দুই মাত্রার এবং অক্ষর বৃত্ত ছন্দে শব্দের প্রথমে ও মধ্যে একমাত্রার ও শব্দের শেষে বা প্রান্তে দুই মাত্রার ধরা হয়। কবিতায় সাধারণত ঢঙ অনুযায়ী মাত্রা স্থির হয়। যেমন ঃ স্বরবৃত্ত ছন্দে ঃ অঙ + কন = ১ + ১ = ২ মাত্রা।

মাত্রাবৃত্ত ছন্দে ঃ অঙ + কন = ২ + ২ = ৪ মাত্রা। অক্ষকবৃত্ত ছন্দে ঃ অঙ + কন = ১ + ২ = ৩ মাত্রা। কবিতা রচনা ও আবৃত্তি উভয় ক্ষেত্রেই আপনাকে জানতে হবে যদি বা ছেদ, কবিতার পর্ব, পর্বাঙ্গ, অপূর্ণ পর্ব, অতিপূর্ণ পর্ব, অতি পর্ব, পঙক্তি, চরণ, পদ, স্তবক। আরও একটি জটিল ব্যাপার আছে। যাকে অনুপ্রাস বলে।

অনুপ্রাস বুঝেন? অক্ষয় চন্দ্র বড়ালের তপসে মাছ কবিতার কথা মনে পড়ে? ওখানে অনুপ্রাস পাবেন। আমার একটা কবিতায় অনুপ্রাস এসেছে এভাবেÑ মহাসাগরের মহাজলরাশি মহানাদে মহাব্যাপে মহাক্রোশে আছড়ে পড়ে নিজের ’পরেই ক্ষেপে। আমার নেশাখোর কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘নেশাখোর’ কবিতার উদ্ধৃতি দিলাম। সে যাক। নিজের খেয়ে বনের মোষ আর তাড়াবো না।

লেখা বেশ বেড়ে যাচ্ছে। এখন ভোররাত। তবু বলছি। আপনি বিবর্তনের ১৫তম সংখ্যার উদ্ধৃতি টেনেছেন। বেশ ভাল।

ওখানে আপনি বলেছেন যে, একমাত্র পম্পা সাহার কবিতা ছাড়া আরও কারও কবিতাই নাকি হয় নি। আমি বেশ জানি সমরেশ বসুর সাগরেদ আপনারা, কিংবা রসময় গুপ্তের চ্যালা। যারা সাহিত্য বলতে কেবল চটি গল্পের মাধ্যমে যৌনতা, বেলেল্লাপনা, বেহায়াপনাকেই বুঝে এবং লেখে। তা না হলে পম্পা সাহা যেখানে লিখেছেÑ এদেশের দুপুর ঘনায় শ্মশানের ঘন অন্ধকারে কুক্কুর কুক্কুরি সহজ সঙ্গম ভুলে লালাহীন জিভ গুটিয়ে ডুকরে উঠে; বিচ্ছিন্নতাবোধে। ভাবুন একবার।

ভাদ্র মাসের মাদি ও মর্দা কুকুর গিট লেগে আছে। তো, এই হচ্ছে আপনার প্রসিদ্ধ কবি পম্পা সাহার কবিতা। যেখানে আপনার মতো কিছু মানুষ লজ্জা ভুলে মা বাবার সবার সামনে কুত্তার যৌনলীলা উপভোগ করতে শিখছেন। আর এখানে আমি আপনাকে অনুরোধ করবো, পম্পা সাহার কবিতাটি কোন ধরনের? মাত্রা বিন্যাস কি? সেটা যেন একটু খুঁজে দেখেন। অবশ্য যদি পারেন।

মনে হয় পারবেন না। কেননা, যারা অন্যের প্ররোচনায় কিছু না বুঝেই সস্তা হাততালি পাওয়ার আশায় অনর্থক মন্তব্য করে। আমি বেশ জানি, আপনি অন্যের প্ররোচনায় আমাকে একচেটিয়া দোষারোপ করে লিখেছেন। লিখেছেন এমন অনাকাক্সিক্ষত শব্দ, যা আমাকে খুবই অবাক করেছে। আপনি কি লিখেছেন, সেটি সমগ্র বাংলার পাঠকের জন্য আমি আমার এ লেখার উপরে সংযোজন করে দিয়েছি, যাতে সবাই এর মর্ম বুঝতে পারে।

কিংবা এবারের বিবর্তনের ঈদ সংখ্যার কথাই ধরুন। যেখানে আমাদের বিভাগীয় সম্পাদক মিলন আশরাফ এদেশের ৮০ভাগ মুসলমানদের শেখাচ্ছে কীভাবে হস্তমৈথুন করতে হয়। আর মুনমুন-ময়ুরীর মতো বাংলা চলচ্চিত্রের বেহায়া বেশ্যাদের সুডৌল স্তন নিয়ে আলোচনা করে। অথবা ফাতেমা সুলতানা শুভ্রার একটি উত্তরাধুনিক সম্পর্ক উন্মোচন নামের ছোট গল্পে লিখে জানায়, কীভাবে নিজের বান্ধবীকে নিজের স্বামীর সাথে সংগম ক্রিয়ায় কনডম ব্যবহার করতে হয়। তো এই হচ্ছে আপনাদের সাহিত্য।

ছিঃ ছিঃ! থু থু দিই আমি আপনাদের মতো সো-কলড সাহিত্যমোদিদের। আপনারা আসলে ওপার বাংলার দাদাদের খপ্পরে পড়েছেন। তা না হলে মুসলমানদের পবিত্র ঈদ উপলক্ষ করে নোংরামি করতো না। সে যাকÑআমার কবিতা বুঝতে হলে আপনাকে বাংলা বিষয়ের উপর নূন্যতম ¯œাতকোত্তর ডিগ্রি নিতে হবে। যেমন হয়েছে কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা বোঝার ক্ষেত্রে।

দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ৃয়া কাজী নজরুলের লেখা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঘা বাঘা অধ্যাপকেরা হীমসীম খায়, থই খুঁজে পায় না। অবশ্য আমিও তেমন শিক্ষিত নই। অক্ষরজ্ঞানহীন চারণ গায়ক লালনের গান নিয়ে এখন জার্মানিতে রিসার্স হয়। না না ভাই আমি জাতীয় কবি নই, আমি এ দেশের জাতীয় কবি নজরুলের চ্যালা। তাই আমার কবিতা আমার গুরুর মতোই হয়, অন্তত গুরুর ঢঙে হয়।

আমার কবিতা হয় কবি ফররুখ আহমেদের মতো, আমার কবিতা হয় কবি গুরু রবী ঠাকুরের মতো ভাবিয়ে তুলতে। মনে রাখবেনÑ এদেশের আশিজন লোক এখনও মুসলমান। তারা কোনদিন বিবর্তন পত্রিকা কিনবে না। হ্যাঁ, এদেশের মুসলমানরা বিবর্তন তখনই কিনবে, যখন তারা দেখবে পবিত্র ঈদুল ফিতরের মহামিলনের উৎসবে মতো তাদের মনের মতো আর্টিক্যাল পাচ্ছে। ঈদুল ফিতরের সংখ্যা যতোদিন না রমজানের সিয়াম সাধনা নিয়ে কোন রচনা লিখবে।

নীতির সাথে মেলেনি বলে আমি এ যাবৎ দেড় ডজন কর্মক্ষেত্র আর কর্মের ধরন পরিবর্তন করেছি, তবু আমার আদর্শকে নয়। প্রয়োজনে আমি বিবর্তনকে আর একটি লেখাও দেবো না। কেননা, এখানে লিখে আমি কোন পারিশ্রমিক নিই না। আমি বিবর্তন থেকে পারিশ্রমিক নিই মেকাপ গেটাপ আর পত্রিকা বাজার জাত করার জন্য, বানান ও ভাষাগত ত্রুটি সংশোধনের জন্য। এবারের ঈদ সংখ্যায় আমাকে সে বানান ও ভাষাগত ত্রুটি দেখতে দেওয়া হয় নি, আর তাই আপনি যদি পত্রিকা পড়েন তো দেখবেন কী পরিমাণ ভাষাগত ও বানানগত ত্রুটি রয়ে গেছে।

তো, আমার এটাই দুঃখ আমি সেলোফিন পেপার দিয়ে মুড়িয়ে পঁচা মাংশ বাজারজাত করছি। এদেশের অগনিত মানুষ যাতে বিবর্তন কেনে, তার জন্য আমি দিনরাত পরিশ্রম করেছি। সময় নিয়ে কখনই মাথা ঘামাই নি। মাঝরাত অব্দি পত্রিকার মেকাপ করে তারপর প্রেসে নিয়ে গেছি। পত্রিকা হাতে পাওয।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.