মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে,
ম্যাডাম, সালাম নিবেন। নিশ্চয়ই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে সারাদিনের কমর্ব্যস্ততা শেষে ঘরে ফিরেছেন, শান্তির ঘুম দিবেন বলে। সারাদিন এই মন্ত্রনালয় থেকে ওই মন্ত্রনালয় কত ছোটাছুটি। আপনার এরূপ ছোটাছুটিতে ব্যবহার হয় বুলেটপ্রুফ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ির বহর। ওরে বাবা কি সে গতি।
আপনার এই গাড়ির গতি চলমান রাখতে রাস্তা বন্ধ করে দিতে হয়। দিতে তো হবেই না!!! আপনি কি আর জ্যামে বসে থাকবেন?? আর আপনার প্রাণপ্রিয় বান্ধবী সেও কিন্তু কম যান না, সারাদিন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে টিভিতে খোঁজ নেন তার কোন কোন অনুসারীকে আপনি চৌদ্দশিকে ঢুকালেন।
ম্যাডাম আমার খবর তো নিবেন না তাই উড়ো চিঠি দিলাম। আমি আছি ভালো ম্যাডাম। প্রতিদিনের মতো আজো একটি গতানুগতিক দিন পার করলাম ম্যাডাম।
সেই সকাল আটটায় ঘুম থেকে উঠে সোজা গেলাম টয়লেটে। কল ছেড়ে দেখি পানি নাই। কি আর করা আসন পরিবর্তন করে উঠে গেলাম বালতির জমানো পানি নিতে। সেই দিয়েই কর্ম সাধন। এক বালতি পানিতেই আমাদের বাসার সবার সকালের কাজ সারতে হয়্।
তারপর বের হলাম একটু উত্তরা যাবো বলে, ম্যাডাম জানিয়ে রাখি আমাদের নিজস্ব গাড়ি নেই। এতোদূর যেতে সিএনজি বা ট্যাক্সি লাগে সে ভাড়া তো নেই তাই বাসে যাই। বাসে উঠলাম। ওরে বাবা, শেষ কবে যে বাসে সিট পেয়েছি মনে নেই । গেলাম দাড়িয়ে, ম্যাডাম যদি দেখতেন বাসের সে কি চেহারা।
পুরো ধ্বজভঙ্গ!! চাকা একবার ঘুরলে চল্লিশবার কচকচ আওয়াজ করে । সে কি শ্রুতিমধুর। এরকম চারশত বার কচকচ আওয়াজে গাড়ির চাকা থেমে যায়, বলুন কেন?? কারণ ঐ একটাই, জ্যাম ম্যাডাম জ্যাম! সবাই এতা মিলেমিশে দাড়িয়ে আছি, দেখলে মনে হয় স্বামী স্ত্রীও এতটা ঘনিষ্ট হয়ে থাকে না। একজনের গায়ের সাথে লেগে থাকে আরেকজন , বাসের সব দাড়ানো যাত্রী। আমার পাশের জনের ঘাম না আমার শার্ট এ লেগে যায় ম্যাডাম।
দাড়িয়ে থেকেও বসে যাওয়া যাত্রীদের দেথে ঈর্ষা হয় না কেন জানেন ম্যাডাম, তারা বারবার তাদের পশ্চাতপদ উঠায়,কারণ সিটের নিচ থেকে ভাঙ্গা রড তাকে নাকি বারবার সুড়সুড়ি দেয়,জড় পদার্থ এর কি মশকরা। ম্যাডাম একবার যদি উঠতেন বাসে জীবনে ভুলতে না। স্বাদ লেগেই থাকবে আপনার মস্তিষ্কে।
কর্মস্থলে যাবার পর দেরীর কারণ দর্শানো, বকা খাওয়া এতো নৈমত্তিক ব্যাপার। সে নাই বা বললাম।
ঘরে ফিরলাম একই উপায়ে। ফ্রেশ হবো পানি আছে তবে কলে না বালতিতে, সেই দুপুরে নাকি একবার এসেছিল। ভাত খেয়ে একটু ফেসবুকে ঢুকলাম নেট স্লো , তাই ৭০০ টাকা দিয়ে ইন্টারনেটের গতিময় গতির ভাবনা আমাদের না। এ যুগে ৭০০ টাকা টাকা হলো। কিন্তু ম্যাডাম আমাদের কাছে না ৭ টাকার মান ও অনেক।
গরীব তো। কি করবো বিরক্ত ঘুমিয়ে পড়লাম।
হঠ্যা ভাঙ্গলো ঘুম ম্যাডাম বলুন তো কেন??
কারণ এই রাত ১২:৩০ টার সময়ও কারেন্ট গেল। পূর্বে উল্লেখ করেছি না আমরা গরীব, আমাদের না আইপিএন ও নাই, জেনারেটরের সংযোগ নাই, তবে আর কি করা?? তালপাখার বাতাস খাই, হাতের ব্যায়াম হয়, আর আশেপাশে শুনি কিছু বাচ্চা এই মধ্যরাতে কানছে। কেন কানছে।
ও গরম। ওদের বাসায়ও তাহলে আইপিএস বা জেনারেটর নেই। কি করব সারাদিন কায়িক শ্রম শেষে ঘর্মাক্ত শরীরে শুয়ে আছি তারই প্রতীক্ষায়। সে কখন আসবে। ফ্যান টা ঘুরবে কখন।
ম্যাডাম পরিশেষে এতাটুকু বলি আপনার ডিজিটাল বাংলাদেশে আমার কাছে স্বাধীনতা মানে হলো রাতের এসময়ে বিদ্যুতের দর্শন। খোদা হাফেজ ম্যাডাম।
স্নেহময়
আশিক মাহমুদ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।