আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুভ্রতার শরৎ এলো দুয়ারে

আমি পেশায় সংবাদকর্মী। এর পাশাপাশি পড়াশুনাও করি। আর ফেসবুকে বসি, আরও অনেক কিছু করি। সব এখন মনেও নেই। 'আজি কি তোমার মধুর, মুরতী/হেরিণু শরৎ প্রভাতে হে মাতা বঙ্গ-শ্যামল অঙ্গ ঝরিছে অনল শোভাতে'_ শুভ্রতার ঋতু শরতের বর্ণনা দিয়ে এমনই পঙক্তিমালা সাজিয়েছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

ঝকঝকে কাচের মতো স্বচ্ছ নীল আকাশ আর তার মধ্যে পেঁজা তুলার মতো সাদা মেঘমালা_ এসব নিয়েই প্রকৃতি বরণ করে নেই শরৎকালকে। কিন্তু শরতের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের এক অপরূপ বর্ণনা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে শরৎকালের সেই মাধুর্য এখন আর খুঁজে পায় না মানুষ। তবু ষড়ঋতুর বৈচিত্র্যে আজ থেকে শুরু হচ্ছে শরৎকাল। ঋতু পরিক্রমার তৃতীয় ঋতু শরৎকাল।

বাংলা ভাদ্র ও আশ্বিন মাস নিয়ে শরৎকাল। ইংরেজি মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত শরৎ ঋতুর পথচলা। গতকাল বুধবার ছিল পহেলা ভাদ্র। শরৎকে বলা হয় শুভ্রতার প্রতীক! সাদা কাশফুল, শিউলি, সি্নগ্ধ জ্যোৎস্না, আলোছায়ার খেলা দিনভর_ এইসব মিলেই তো শরৎ। শরৎকালের দ্বিতীয় মাস অর্থাৎ আশ্বিনের শুরুর দিকেই শরতের আবির্ভাবটা লক্ষণীয়।

শরতের সি্নগ্ধতা এক কথায় অসাধারণ! জলহারা শুভ্র মেঘের দল যখন নীল, নির্জন, নির্মল আকাশে পদসঞ্চার করে তখন আমরা বুঝতে পারি শরৎ এসেছে। শরতের আগমন সত্যিই মধুর। গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ আর বর্ষায় অঝোরধারায় শ্রাবণ ঢলের পর আসে শরতের আলোছায়ার খেলা; এই মেঘ, এই বৃষ্টি, আবার এই রোদ। শরতের অন্যতম বড় আকর্ষণ কাশফুল! নদী তীরে বনের প্রান্তে কাশফুলের রাশি অপরূপ শোভা ছড়ায়। কাশফুলের শরৎ : পৃষ্ঠা ১৫ কলাম ৪ এ অপরূপ সৌন্দর্য পুলকিত করেনি এমন মানুষ খুঁজে মেলা ভার।

গাছে গাছে শিউলির মন ভোলানো সুভাষে অনুভূত হয় শরতের ছোঁয়া। শরতের মেঘহীন আকাশে গুচ্ছ গুচ্ছ কাশফুলের মতো সাদা মেঘের ভেলা কেড়ে নেয় মন। শরৎকালে কখনো কখনো বর্ষণ হয়, তবে বর্ষার মতো অবিরাম নয়। বরং শরতের বৃষ্টি মনে আনন্দের বার্তা বয়ে আনে। চারপাশের শুভ্রতার মাঝে বৃষ্টির ফোঁটা যেন আনন্দ-বারি! বৃষ্টি শেষে আবারো রোদ।

দিগন্তজুড়ে একে সাতরঙা হাসি দিয়ে ফুটে ওঠে রংধনু। প্রকৃতির এ অপরূপ যেন প্রিয় মানুষের সানি্নধ্য চায়। হয়তো ইচ্ছা হয় গোধূলির ওপারে হারিয়ে যেতে প্রিয়জনের হাতটি ধরে। প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ এ ঋতুর চরিত্রের সঙ্গে বর্ণনা করেছে প্রিয়তমাকে। তিনি তার 'এখানে আকাশ নীল' কবিতায় লিখেছিলেন 'এখানে আকাশ নীল_নীলাভ আকাশজুড়ে সজিনার ফুল/ফুটে থাকে হিম শাদা_রং তার আশ্বিনের আলোর মতন'।

অনেকের মতে, শরৎকালে নাকি মনটা নেচে ওঠে। ছুটির নেশা, উৎসবের নেশায়! কারণ, এ শরৎকালে মাঠে মাঠে সবুজ ধানের ওপর সোনালি আলোর ঝলমলানি দেখা যায়। প্রতীক্ষায় থাকে কৃষকরা। আসন্ন নবান্নের আশায়। আলোক-শিশিরে-কুসুমে-ধান্যে বাংলার প্রকৃতিও খুশি।

আর বাঙালির সেই প্রাণের উৎসবটা তো রয়েছেই_ শারদীয় দুর্গাপূজা। শরৎ শারদীয় আরাধনায় হিন্দু সমাজকে উৎসবমুখর করে, বিজয়ার বেদনায় করে ব্যথিত। শরতের বর্ণনা দিতে গিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, 'শরৎ, তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি/ ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙুলি/ শরৎ, তোমার শিশির-ধোয়া কুন্তলে/ বনের-পথে-লুটিয়ে পড়া অঞ্চলে/ আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি'। শুধু রবীন্দ্রনাথই নন শরৎ নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন জনপ্রিয় বাংলা গানও রয়েছে শরৎ বন্দনার। উৎপল সেন লিখেছিলেন 'আজি শরতের আকাশে মেঘে মেঘে স্বপ্ন ভাসে'।

শরতের মন ভোলানো প্রকৃতিতে মন যে কী চায় তা বোঝা বড়ই মুশকিল! রোদ আর বৃষ্টির লুকোচুরি খেলায় মনেও যেন জমে মেঘ, আবার কখনো হয়ে ওঠে রৌদ্রকোজ্জ্বল। কিন্তু ব্যস্ত এ নগরীতে, শত ব্যস্ততার মাঝে আমরা পারি না মনের আকাঙ্ক্ষায় শরতের রঙে সাজাতে। তবু যেন মনে হয় হারিয়ে যাই_ শরতের কাশফুল, গোধূলি, শিউলি আর জ্যোৎস্নার মাঝে। প্রিয়জনের হাত ধরে অনুভব করি সি্নগ্ধতা। প্রকাশ: ১৬ আগস্ট, ২০১২ : দৈনিক যায়যায়দিন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।