আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদের সাজুগুজু

দেখতে যেমন সুন্দরী তেমনি মাথা মোটা কলি সম্পর্কে বেয়াইন হলেও আমার জানের জান প্রাণের প্রাণ সখী। প্রতি ঈদেই কোনো না কোনো গণ্ডগোল বাধাবেই। গত ঈদের ঘটনা। ঈদের চাঁদ দেখে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে এসএমএস করছি, এমন সময় কলির হাজব্যান্ড মাহিনের ফোন। রিসিভ করতেই বেশ উত্তেজিত হয়ে বলল, ‘আবিদা, কলিকে পাওয়া যাচ্ছে না।

’ -মনে হয় কারও সঙ্গে ভেগেছে। -ফান করবা না। সত্যি কলিকে পাওয়া যাচ্ছে না। কলি কি তোমার বাসায় গিয়েছে? -তোমার বউকে পাওয়া যাচ্ছে না আর আমি ফান করব এমনটা ভাবতে পারলা? আর আমার বাসায় এলে তো তোমাকে বলেই আসত তাই না? -তুমি আমার কথা বিশ্বাস করছ না? কলির নাম্বারে কল করে দেখ। আমি গত আধঘণ্টা ধরে ট্রাই করছি।

নাম্বার বন্ধ। বউ পাগল মাহিন ভাইয়ের উত্তেজনায় আর রসিকতা না করে লাইন কেটে দিয়ে কলির নাম্বারে কল করে দেখি, নাম্বার সত্যি সত্যি বন্ধ। মিনিট দশেক পর আবার মাহিন ভাইয়ের ফোন। এবং কলিকে এখনও পাওয়া যায়নি শুনে বাসা থেকে বের হলাম। একই এলাকায় বাসা হওয়ার কারণে যেতে ১০ মিনিটের মতো লাগল।

গিয়ে দেখি মাহিন ভাইয়ের বেহাল দশা। আত্মীয়-স্বজন সবার বাসায় কল দেয়া হয়েছে জানিয়ে আমাকে নিয়ে পুরো বাসা আরেকবার খুঁজে বেচারি পুলিশে খবর দিতে বেরিয়ে গেল। কি মনে করে ছাদে উঠে দেখি, কলি ছাদে বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে বসে আছে। সারা মুখে বিভিন্ন সবজি দিয়ে ঘরে বানানো ফেসিয়াল। দুই চোখের পাতায় আলু বাটা।

চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার জন্য হারবাল ক্রিম। ঠোঁটের কালচে ভাব দূর করে লালচে করার জন্য এক জাতীয় ক্রিম লাগিয়ে কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছে। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোতে ভূতের মতো দেখাচ্ছে! নারীর রূপচর্চা সম্পর্কে অজ্ঞ কোনো পুরুষ দেখলে নিশ্চিত ভূত ভেবে হার্টফেইল করবে! -রূপচর্চা করবি ভালো কথা। তাই বলে ছাদে এসে করতে হবে! -আর বলিস না, কারেন্ট ছিল না। বাতাস না হলে শুকাবে না তো, তাই ছাদে এসেছি।

-তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু মোবাইল বন্ধ করেছিস কেন? -আরে কেউ কল দিলে কথা বলতে গেলে ত্বকে টান পড়বে তো তাই। তা এই অসময়ে তুই আমার এইখানে কেন? -আমি তো অসময়ে এখানে। আর বউপাগলা মাহিন তোকে কেউ কিডন্যাপ করেছে ভেবে পুলিশে খবর দিতে গেছে। ইসরে! আমাকে ঘরে না পেলে যেন ছাদে আসে এসএমএস লিখেও সেন্ট করতে ভুলে গিয়েছি বলে মোবাইল অন করে মাহিনকে কল দিল।

বান্ধবী মহলে সাজুগুজুর জন্য বিখ্যাত কলি এবার রমজানের শুরু থেকেই শপিং করেও কেনাকাটা শেষ করতে না পেরে ২৫ রমজানের দিন হাজির আমার বাসায়। ঈদের থ্রিপিসের সঙ্গে মিলিয়ে নেইল পালিশ কেনার জন্য গেলাম চাঁদনী চকে। সকাল থেকে দুপুর অবধি ঘুরেও থ্রিপিসের সঙ্গে ম্যাচিং করা নেইল পালিশ না পেয়ে কলি গাউছিয়া যাওয়ার প্ল্যান করল। এদিকে আমার পায়ের অবস্থা কেরোসিন। কিন্তু নাছোড়বান্দী কলির এনার্জি দেখে মনে হচ্ছে যেন এইমাত্র শপিংয়ে এসেছে! -কলি, সবাইতো ঈদে জামার সঙ্গে মিলিয়ে নখ পালিশ দেয়, তুই একটু ব্যতিক্রম করলে হয় না? -ঠিক বলেছিস সই।

তোর কাছে কি কোনো আইডিয়া আছে? -আছে মানে! এমন আইডিয়া আছে যে সবাই তোর ঈদের সাজুগুজুর প্রশংসায় যদি পঞ্চমুখ, ষষ্ঠ মুখ, সপ্তমুখ না হয়েছে তোর বিল্লিটার নাম আবিদা রাখিস! -আমি জানি তোর মাথায় অনেক বুদ্ধি। এবার আইডিয়া বল। -তোর থ্রিপিস, জুতা মিলিয়ে কয়েকটা কালার তাই না? -হুঁ, একদম তাই। -সবগুলো ম্যাচিং করে যেহেতু কোন কালারটা নখে দিবি তা পাচ্ছিস না। তাই এক কাজ কর, থ্রিপিসে যত কালার আছে সব কালারের নখ পালিশ কিনে নে।

সবগুলো নখে আলাদা আলাদা কালারের নেইল পালিশ লাগালে সেই রকম ফ্যাশন হবে রে বান্ধবী। মাথা মোটা কলি আইডিয়াটা যে এভাবে লুফে নেবে, ভাবতেই পারিনি। নেইল পালিশের ব্যাপারটা শেষ হতেই ভাবলাম মুক্তি পাব! কিন্তু, না। বিউটি পার্লারে ঈদের আগের দিন গেলে নাকি ভীড়ের কারণে ফেসিয়াল, ভ্রু প্লাক এইসব ঠিক মতো করে না। তাই বাধ্য হয়ে বিউটি পার্লারে! ওর দেখাদেখি আমারও শখ জাগল সাজুগুজু করার।

ফেসিয়াল, ভ্রু প্লাক, হেয়ার কাট, হেয়ার ডাই, হাত পায়ের নখের সাইজ, পায়ের তলা সাইজ সব করে বিল দিতে গিয়ে আরেকটুর জন্য জ্ঞান হারাবার দশা। ৩ হাজার টাকা শেষ। সাজুগুজুর ১৪ গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে বাসায় ফিরতে রিকশায় উঠলাম। -সই রে এমন করে ক্ষেপে থাকলে ত্বকে সেটার প্রভাব পড়বে। -চুপ, একদম চুপ।

গুষ্টি কিলাই তোর রূপচর্চার। তোর না হয় বউপাগল স্বামী আছে। আমার কে আছে? তিলতিল করে জমানো ৩ হাজার টাকা তোর কারণে ২ ঘণ্টায় শেষ। কলি কিছু বলতে যাচ্ছিল। তার আগেই রিকশা সামনের চাকা পানির নিচের খোলা ম্যানহোলে পড়ে উল্টে গেল।

দুইজন দুই দিকে ছিটকে পড়লাম। রাস্তার ময়লা পানি সারা শরীরে মেখে গেল। ইয়াক থু করতে করতে উঠে কলিকে টেনে ওঠালাম। আর একটা রিকশা ঠিক করে ওঠার পরই শুরু হয়ে গেল কলির সাজুগুজু নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্যান প্যান। খোলা রাস্তায় চিটংপাং হয়ে যাওয়ার দুঃখের চাইতে সাজুগুজু নষ্ট হয়ে যাওয়ার দুঃখে কাতর কলির দুঃখ আরও বাড়িয়ে দিতে ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে মিনি সাইজের আয়না বের করে হাতে ধরিয়ে দিলাম।

আয়নায় নিজের চেহারার অবস্থা দেখে কলি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে রীতিমত কান্না জুড়ে দিল। একটু আগেও ৩ হাজার টাকার শোক ভুলে গিয়ে না হেসে পারলাম না! বেচারি বান্ধবী আমার!  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.