আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি, মেয়েটি আর বুয়া প্রেমিকা !

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! বাজার থেকে মাছ কিনে আনা বড়ই ঝামেলার কাজ । আর সব থেকে ঝামেলার কাজ হল সেই কিনে আনা মাছ কাটা আর মাছের আঁশ ছাড়ানো । সেই বিরক্তিকর কাজটা করছিলাম রান্না ঘরে । কদিন থেকে বুয়া বাদ দিয়েছি । বুয়ার সব কাজ কর্ম এখন আমিই করি ।

বাসায় আরো দুজন আছে কিন্তু বেহুদা সময় কেবল আমার হাতেই আছে । তাই মোটামুটি রান্না বান্না আমিই করি । অবশ্য রান্না করতে খুব একটা খারাপ লাগে না তবে এই মাছ পরিস্কার করতে বড় বিরক্ত লাগে । এই বিরক্তির কাজ করছিলাম । রান্না ঘরের জানলার পরেই বেসিন ।

বেসিনের কল ছেড়ে মাছ পরিস্কার করছিলাম তখনই এক ঝটকা আলো এসে আমার চোখে লাগল । প্রথম কিছুক্ষন আমি ঠিক মত তাকাতে পারলাম না ! কারন আলো একদম আমার চোখ বরাবর আসছিল । যখন এক পাশের জানলা বন্ধ করে দিয়ে অন্যটা দিয়ে তাকালাম তখন দেখতে পেলাম পাশের বাড়ির ঐ ফাজিল মেয়েটা । আল্লাহ এই মেয়ের হাত থেকে আমাকে বাঁচাও । এই মেয়েটা কি ? এই মেয়ের সমস্যা কি ? আমাকে কি কাজের ছেলে ভাবছে নাকি ? অবশ্য ভাবাটা খুব বেশি অস্বাভাবিক না ।

ঐ রান্না ঘর আর এই রান্না ঘর মুখোমুখি । আর এখানে যেমন বেসিনের পাশেই জানলা ওখানেও তাই । আমি যখন রান্না ঘরে আসি প্রায় সবসময় মেয়েটাকে দেখি রান্না ঘরে । প্রথম প্রথম কিছু লক্ষ্য না করলেও সেদিনের পর থেকে লক্ষ্য করছি মেয়েটা আমার সাথে কেমন ফাজলামো করছে । সেদিনও অবশ্য আমার সাথে ফাজলামোই করছিল ।

একটা মেয়ে এমন ভাবে ফাজলামো করতে পারে আমি ভাবতেই পারি নি । সেদিন বিকেল বেলা ছাদে বসে হাওয়া খাচ্ছিলাম হঠাৎ কে যেন কাজের বুয়া বলে ডাক দিল । আমি তখনও মেয়েটাকে খুব একটা লক্ষ্য করি নি । কিন্তু আসে পাশে লক্ষ্য করে দেখলাম ও পাশের ছাদ আর এই ছাদে কেবল আমি আর সে । এবং সে আমাকেই ডাকছে ।

আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম -আমাকে বলছেন ? মেয়েটি বলল -হ্যা ! তোমাকেই বলছি । -তুমি ? আমি খুব বড় না হলেও যে কেউ প্রথমেই আমাকে তুমি বলে ডাকবে এটা মেনে নিতে খানিকটা কষ্ট হয় । আমি বললাম -কি ব্যাপার আপনি আমাকে কাজের বুয়া ডাকছেন কেন ? আমাকে কি দেখতে কাজের বুয়ার মত ? মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল -না । ঠিক কাজের বুয়ার মত না । তবে কাজের ছেলের মত ।

-মানে ? কি বলতে চাও তুমি ? আমিও আপনি থেকে তুমিতে নেমে এলাম । আরো বললাম -মুখ সামলে কথা বল বললাম । -নইলে কি করবা ? তরকারিতে লবন কম দিবা ! এই বলে মেয়েটা জোরে জোরে হাসতে লাগলো । আমি যে তরকারিতে ঠিক মত লবন দিতে পারি না এই কথাটা এই মেয়েটা কিভাবে জানলো ? নাহ ! এটা এই মেয়ের জানার কথা না ! আন্দাজে বলেছে ! আমি বললাম -কি ? তুমি হাসছো কেন ? -এমনি হাসছি । -আর বললে না তো আমাকে কাজের বুয়া কেন ডাকলে ? মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হওয়ার ভান করে বলল -আশ্চার্য ! তুমি এই ছয় তলায় কাজ কর না ? -আমি ? মানে কি ? তোমাকে কে বলল যে আমি ছয়তলায় কাজ করি ? -কে বলবে ? আমাদের বাড়ির বুয়া বলেছে ।

-তোমাদের বাড়ির বুয়া বলেছে ? -হুম । তো সে কিভাবে জানলো ? -আরে আশ্চার্য সে তো প্রতিদিনই তো তোমাকে রান্না করতে দেখে । সেও রান্না করে । তুমিও রান্না কর । ঐ দিন আমাকে কি বলে জানো ? বলে আপাগো দেখেন না ঐ বাড়িতে কি হ্যানসাম একখান পোলা কাম করে ।

আমার তারে মনে ধরছে । এই বলে মেয়েটি আবারও জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগল । হ্যানসাম ? আমি হাসবো নাকি কাঁদবো ঠিক বুঝতে পারলাম না ! শেষ পর্যন্ত কাজের বুয়া ? রাগে দুগে আমি ছাদ থেকে চলে আসি । সপ্তাখানেক আমি রান্না ঘরে গেলাম না । সব কিছু ডুবে মরুক ।

কিন্তু আমার রুমমেটদের রান্নার যে অবস্থা তাই বাধ্য হয়ে আমাকে আবার রান্না ঘরে যেতে হল । আর আজকে রান্না করতে এসে আবার এই বিপত্তি । নাহ ! ফাজলামীর একটা লিমিট থাকা উচিৎ। আমি অন্য জানলাটা বন্ধ করে দিবো ঠিক এই সময়ে পাশের বাড়ির মেয়েটা বলল -এই এই এই । খানিকটা বিরক্ত হয়ে বললাম ।

-এই সপ্তাহটা কোথায় ছিলে ? ছুটি নিয়েছিলে নাকি ? -দেখ ফাজলামো করবা না । -আরে রাগ করো কেন ? গ্রামের বাড়িতে তো যেতেই পারো তাই না এতে রাগ করার কি আছে এতো ? -শুনো আমি এখানে কাজ করি না । আর আমি কাজের লোকও না । আমার সাথে ফাজলামো করবা না । -আরে কি বল ! তাইলে আমার কাজের বুয়ার কি হবে ? ও ব্যাচারী তো তোমারে তার মন দিয়ে ফেলেছে ।

-চুপ । আমি জানলা বন্ধ করে দিলাম । ফাউল প্যাচাল পাইড়া লাভ নাই । বিকেল বেলা আমাদের গলিটার ভিতরে বেশ ভিড় দেখা যায় । অন্যান্য এলাকার মত না ।

এখানে সব বাসার ছোট ছোট বাচ্চারা খেলা ধুলা করে । ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে তাদের মায়েরাও বের হয় । এমন কি বাচ্চাদের বড় আপারাও বের হয় । এলাকা জমজমাট হয়ে যায় । আমি বিকেলে বের হলে খারাপ লাগে না ।

আজকেও বিকেলে যখন বের হইছি টিউশনিতে যাওয়ার জন্য । কয়েক কদম হেটেছি তখনই একদম সামনে থেকে সেই ফাজিল মেয়ে এসে হাজির । মুখে দুষ্টামির হাসি । -এই কাজের বুয়া ! আবার ? নাহ ! এই মেয়ে ফাজলামি শুরু করেছে । আমি মেয়েটিকে এড়িয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলাম ।

এই মেয়ের সাথে সময় নষ্ট করার কোন মানে নাই । -এই কোথায় যাও ? আমাদের বুয়ার হৃদয় ভেঙ্গে তুমি চলে যেতে পারো না । আমি বিরক্ত হয়ে পিছনে তাকালাম । মেয়েটার মুখে তখনও দুষ্টামির হাসি । সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ।

আমার মেজাজটা আসলেই খারাপ হল । সোজা মেয়েটার দিকে হেটে এসে খুব জোরে একটা ধমক দিলাম । বেশ কর্কশ গলায়ই বললাম -এই রকম ফাজলামো করলে কি থাপড়ায়ে দাঁত খুলে ফেলব । মনে হয় একটু বেশি জোড়ে ধমক দিয়ে ফেলেছিলাম । মেয়েটা নিজেও খানিকটা অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন ।

আমি একটু আসে পাশে তাকিয়ে দেখলাম মোটামুটি সবাই ই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে । আমি আর দাড়ালাম না । পেছন ঘুরে হাটা দিলাম । একবারপেছনের দিকে তাকালাম না ! কেন জানি নিজের কাছেও খানিকটা কেমন লাগছিল । একটা পিচ্চিকে ধমক দেওয়া যায় ।

একটা ছেলেকেও ধমক দেওয়া যায় কিন্তু এক মেয়েকে এভাবে সবার সামনে ধমক দেওয়াটা জানি কেমন । যাক যা হয়ে হয়েছে । মেয়েটির জ্বালানো বন্ধ হবে । কিন্তু তবুও মনটা একটু খুতখুত করতে লাগলো । কয়েকদিন মেয়েটার কোন খোজ রইলো না ।

তার আরও দিন দুয়েক পর মেয়েটাকে ছাদে দেখতে পেলাম । আমাকে দেখেও কেন জানি দেখলো না । মুখটাও কেমন বিষন্ন মনে হল । সেদিনের সেই হাস্যজ্জল চেহারাটা আর দেখা যাচ্ছিল না । মেয়েটা চলে যাচ্ছিল তখন আমি নিজেই মেয়েটাকে ডাক দিলাম ।

-এই । মেয়েটা দাড়িয়ে আমার দিকে তাকাল । -কি ? -তোমাদের বুয়ার কি খবর ? -কেন ? -এমনি । আমার উপর তার মন এসেছে তাই ভাবলাম একটু খোজ খবর নেই । মেয়েটি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল -তুমি খুব খারাপ ।

-কেন ? -আমাকে ঐ ভাবে বকলে কেন ? আমার আব্বু আম্মুও কোন দিন আমাকে এভাবে বকে নাই । -আচ্ছা । তা তুমি আমার সাথে ওমন ফাজলামো করছিলে কেন ? মেয়েটি আমার কথার জবাব দিল না । কেবল কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো । -আচ্ছা আমি সরি ।

মেয়েটি তবুও চুপ । -আরে তুমি এভাবে চুপ থাকলে আমার প্রেম কাহিনীর কি হবে ? তুমি ছাড়া যে এই কাহিনী এগোবেই না । এই কথাতে মনে হল খানিকটা কাজ হল । মেয়েটি আমাকে মুখ ভেঙ্গালো । -তুমি পচা ।

-তুমি তো সুইট । -ইস । -সুইট আর সুন্দর । -ইস । ঢং ।

আমাকে বকতে আবার ঢং করবে । আমি হেসে ফেললাম । আমি আরো কি বলতে যাচ্ছিলাম তখন দেখি এক মাঝ বয়সি মহিলা ছাদে এসে হাজির । মেয়েটির দিকে তাকিয়ে একটা মোবাইল এগিয়ে দিতে দিতে বলল -আফা মনি আপনার ফোন । মেয়েটা ফোনটা হাতে নিল ।

মহিলা যখন চলে গেল আমি বললাম -আরে তোমার মোবাইল আছে দেখি । -তো ! থাকবে না ? -আচ্ছা ! মোবাইলে ব্যালেন্স আছে তো ? -কেন থাকবে না ? -দেখি আমাকে একটা কল দাও তো । -ইস ! এই সব ফালতু ট্রিকস আমার সাথে চলবে না । -আচ্ছা । বুঝলাম ।

এসো ঝগড়া পাশে রেখে এখন একটু কথা বলি ! মেয়েটি অন্য দিকে তাকিয়ে রইল । -বলবা না ? আচ্ছা ঠিক আছে ! ঐ মহিলা কে যে তোমাকে মোবাইল দিয়ে গেল ? এবার মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল ! তারপর বলল -তোমার বুয়া প্রেমিকা । হিহিহিহি ! facebook ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩২ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।