আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেয়েটি কিন্তু ছেলেটা

seremos como el Che
পার্ক বেঞ্চটা বসে থাকে একা, মেয়েটির অপেক্ষায়, জায়গাটা মেয়েটার অনেক পছন্দ ছিল কিনা! মেয়েটি অবশ্য আর আসে না, ছেলেটা কিন্তু আসে। উস্কুখুস্কু চুল, এলোমেলো পোষাক, আর হাতে জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে, ভাষাহীন বসে থাকে কিছুটা সময়। ফিল্টারে পৌঁছালে সিগারেটটাকে বেঞ্চের উপরেই ঠেসে ধরে নিভায়। হয়ত তার মনের জ্বালাটা, তাতে কিছুটা জুড়ায়। মাঝে মাঝে মলিন জিন্সের পকেট থেকে বের করে আনে একটি আংটি।

একমনে চেয়ে থাকে সেদিকে পুরোনো ভাবনায় চক্চক্ করে ওঠে তার চোখ দু’টি। বিরহকে সে হারিয়ে দিয়েছে, কিন্তু স্মৃতিগুলি যেন নাছোড়বান্দা, তার পিছু ছাড়তেই চায় না! জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটির পুকুরটাও তাদের অপেক্ষা করে, যদিও জোড়ার অভাব তার নেই, এই জীবনে প্রেম-পুনঃপ্রেম সে যথেষ্টই দেখেছে। মেয়েটি পাড়ে এসে বসে, কিছুক্ষণ পর আসে নতুন ছেলেটি, মেয়েটির হবু বর। তারা একে অপরকে, জড়িয়ে ধরে বসে। কাছে আরও কাছে, তারা শুনতে চায় একে অপরের নিঃশ্বাস।

ছেলেটি অনেক বড় ব্যবসায়ী, বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান। টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ী সবই আছে, দরকার এখন একটা টুকটুকে বৌ। মেয়েটি সারাদিন ভয়ে থাকে, আর ছেলেটা ব্যস্ত অফিসে। মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারেনা, পাছে রাগ হয়ে যায় ছেলেটার, হাসিমুখে সুখী থাকার, আপ্রাণ চেষ্টাটা করে যায় শুধু। ছেলেটি স্মৃতির বাক্স হাতড়ায়, ইঞ্জিন কভারে বসে ঢাকা-যশোর, মেয়েটির জন্য কতবারই না করেছে সে।

কোচিং ভর্তির টাকা দিয়ে কিনে দেওয়া আংটি, আর টিউশনীর ঘাম ঝরানো টাকা, নিষ্ঠুরভাবে উপহাস করে যায় তাকে। মেয়েটির কাজি অফিসে যাওয়ার বায়না, মনে করে শত দুঃখেও হাসি পায় তার। কি বাচ্চাই না ছিল মেয়েটি! সিগারেটের ধোঁয়ারা ছাদে বাধা পায়, সৃষ্টি করে কৃত্রিম মেঘ, তবুও বাড়তে থাকে রাত। সেদিন ছেলেটার আশেপাশে আঁধার হয়ে এসেছিল খুব, কিন্তু সে যে হারতে শেখেনি কোনদিন! তাই হারতে চাইল না এবারও। জীবনের প্রায় ছিঁড়ে যাওয়া রশিটা, শক্ত করে ধরে উঠে এল আবার।

দগদগে ক্ষতটা সেরে গেলেও, দাগটা থেকে গেল হৃদয়ে। ছেলেটি ঠিকই অফিসে যায়, বাইরে থেকে ছন্দময়। খালি জীবনের কি জানি কি একটা হারিয়ে গেছে হঠাৎ, যেটা আর কখনও ফিরে পাবার নয়। । উৎসর্গঃ আবদুল্লাহ আল মামুন –কে।

আমার ভাবতে গর্ব হয় যে এই হারতে না শেখা মানুষটা আমার বন্ধু। ২৫শে এপ্রিল, ২০১১
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।