মেয়েটির নাম আফসারী আক্তার। বন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে ঘুরতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে। কখনো কি ভেবেছিলেন, বন্ধুর জন্মদিন তাঁর মৃত্যুদিন হয়ে থাকবে! ১ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে অন্য দিনের মতোই বের হয়েছিলেন। মা-বাবার আদরের মেয়েটি আর বাড়ি ফিরে এল না।
আফসারী লেখাপড়া করতেন ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজে বাংলা বিভাগে স্নাতক প্রথম বর্ষে।
সেদিন তিনি বন্ধুর সঙ্গে বেরিয়েছিলেন। বোটানিক্যাল গার্ডেনে যাওয়ার আনুমানিক ১৫ মিনিট পর আফসারীর এলাকার ছেলে আবদুস সামাদ তাঁর সঙ্গে একান্তে পাঁচ মিনিট কথা বলতে চান। আবদুস সামাদ আফসারীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন, কিন্তু আফসারী তাঁকে না বলেন। তবু সামাদ তাঁকে একা কথা বলতে বলেন। একা কথা বলতে রাজি না হওয়ায় আবদুস সামাদ তাঁর মুঠোফোন ছিনিয়ে নিতে উদ্যত হন।
তখন আফসারী বাধ্য হন ছেলেটির সঙ্গে কথা বলার জন্য। সঙ্গে থাকা বন্ধুটি তখন একটু আড়ালে অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ বন্ধুটি খেয়াল করেন, আবদুস সামাদ দৌড়ে বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে বের হচ্ছেন। তখন সামনে এগিয়েই দেখেন আফসারী মুখ ও মাথা থেঁতলানো অবস্থায় পড়ে আছেন। পাশে পড়ে থাকা ইটে রক্ত।
ঘটনা বুঝতে আর বাকি থাকে না বন্ধুটির। চারপাশের লোকজনের সহায়তায় আফসারীকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কক্ষে (আইসিইউ)। চিকিৎসকের পরামর্শে রাত নয়টায় নেওয়া হয় ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। ২ সেপ্টেম্বর রাত তিনটার দিকে আফসারীর বাঁচার আশা খুব সামান্য বললে তাঁর পরিবার আবারও তাঁকে নিয়ে আসে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
তারপর পাঁচ দিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে অচেতন পড়ে থেকে সবাইকে কাঁদিয়ে ৬ সেপ্টেম্বর সকাল নয়টায় আফসারী চলে যান না-ফেরার দেশে।
মেয়ের এ রকম মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না আফসারীর মা-বাবা। ময়মনসিংহ শহরের নওমহলে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, এখনো সেখানে মাতম চলছে। মা হালিমা আক্তার ও বাবা আতাউর রহমানের চোখের পানি শেষ হচ্ছে না। কোনো কথা বলার মতো অবস্থায় নেই তাঁরা।
আফসারীর একমাত্র বোন আফরিনা শুধু চান, তাঁর বোনের হত্যার যেন বিচার হয়। এদিকে আফসারীর সেই বন্ধুর সঙ্গে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিন-চার মাস আগে আফসারীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছে। শুধু বন্ধুত্ব ছিল তাঁদের। এভাবে বন্ধুকে হারাতে হবে, তিনি ভাবতে পারেননি। অন্যদিকে হত্যাকারী আবদুস সামাদের বাড়িতে গেলে কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। প্রথম কিছুদিন সবাই ঘটনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। এরপর আন্দোলন স্তিমিত হয়ে আসে। দোষী ব্যক্তিদের বিচার খুব কমই হয়। কিন্তু আমাদের চাওয়া, এটি যেন আর না হয়।
অপরাধী যেন শাস্তি পায়। ’।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।