সহজ ছেলে রিয়াদুল হাসান রিয়াদ ১ম শ্রেণী কর্মকর্তা হিসেবে কিছুদিন আগে একটি উপজেলায় যোগদান করেছেন। তার অফিসে সেই প্রধান। জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা তার ইমিডিয়েট বস। মাঠ পর্যায়ে সরকারী কার্যক্রম বাস্তবায়নের দায়িত্ব উপজেলা পর্যা্যের কর্মকর্তাদের। সম্প্রতি রিয়াদুল একটি সরকারী বরাদ্দ নিয়ে বিপাকে পরেছে।
বরাদ্দটি দরিদ্র জনগনের জন্য সরকারের সহায়তামূলক একটি উন্নয়ন প্রকল্প। ইতিমধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যন ও এমপি মহোদয় সুফলভোগী নির্বাচনের জন্য দুটি তালিকা পাঠিয়েছেন। এছাড়াও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যন ও কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যনের সুপারিশকৃত অনেকগুলো আবেদন রয়েছে। রিয়াদ উপজেলা চেয়ারম্যন ও এমপি মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে সবদিকে ব্যালান্স করে একটি চূড়ান্ত তালিকা করে সংশ্লীষ্ট উপজেলা কমিটির অনুমোদন নিয়েছে। যদিও চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে অনেকের ক্ষোভ রয়েছে।
তালিকা সমস্যা সমাধান হলেও রিয়াদ এখন অন একটি সমস্যার মুখোমুখি। উপজেলা চেয়ারম্যন জানিয়েছেন বরাদ্দের ৫% তার জন্য রেখে দিতে হবে। দুজন ভাইস চেয়ারম্যনের একজন ২% দাবী করেছেন। রিয়াদ জানতে পেরেছে তাদের দাবী পূরন না হলে তারা কর্মকর্তার বিরুদ্দে দূর্নীতির অভিযোগ আনেন এবং বিভিন্ন ঝামেলায় ফেলেন। কয়েকজন সাংবাদিক আকারে ইংগিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন তাদের জন্যও ভাগ রাখতে হবে।
অফিসের পুরানো স্টাফদের সাথে কথা বলে রিয়াদ বুঝতে পেরেছে ২% থেকে ৩ % চলে যাবে তাদের পেছনে। অন্যথায় পত্রিকায় দূর্নীতি ও অনিয়মের রিপোর্ট আসবে। উপজেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে ইউএনও এর জন্য ৫% রাখতে হবে। আর উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের জন্য ৫% রাখতে হবে। অন্য সবাইকে গোপোনে পার্সেন্টেজ দিলেও হিসাব রক্ষণ অফিসের ৫% সমগ্র বাংলাদেশে ওপেন সিক্রেট।
রিয়াদের অফিসের স্টাফরাও জানিয়ে দিয়েছে পুর্বের সকল বস এ ধরনের প্রকল্পে তাদের জন্য কিছু টাকা রাখতেন। রিয়দ বুজতে পারল টাকা না পেলে স্টাফরা কাজে পর্যাপ্ত সহযোগীতা করবে না। রিয়াদ অনেক ভেবে চিন্তে শেষে জেলা কর্মকর্তার কাছে গিয়ে সব খুলে বলল। জেলা কর্মকর্তা সব শুনে রিয়াদের সরলতায় হেসে উঠলেন এবং নিজেও ১০% দাবি করলেন। টাকাটা অবশ্য বস একা নিবেন না ।
তিনি সকল উপজেলা হতে ১০% করে নিয়ে আয়ের সিংহভাগই উধ্বতন কতৃপক্ষকে পাঠিয়ে দিবেন। উপরেও বিভিন্ন পযায়ে ভাগ ভাটোয়ারার ব্যপার আছে। বস আন্তরিকভাবে উপদেশ দিলেন ভবিষ্যতে অডিট টিম যাতে ঝামেলা না করে তার জন্য ১% রেখে দিতে হবে।
বস খুব ভাল মানুষ। আন্তরিকভাবে তিনি রিয়াদকে সিস্টেম শিখালেন।
সবাইকে দিতে হবে নিজেও খেতে হবে। সকল স্তরে পার্সেন্টেজ ফিক্সড। জেন্টলমেন এগ্রিমেন্ট। কোন কোন ক্ষেত্রে হয়ত ২/১ জন পার্সেন্টিজ নেন না। তবে সকল প্রকল্পে গড়ে ২০% - ৩০% রাখতেই হবে।
তারপর নিজে খেয়ে ৫০% কাজ হলেই যথেষ্ট। এটাই সিস্টেম। একজন দক্ষ কর্মকর্তা এই সিস্টেম ম্যানেজ করে তার কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। আর অপদার্থ কর্মকর্তারাই এই সিস্টেম ম্যানেজ করতে পারে না বরং পদে পদে ঝামেলা তৈরি করে।
রিয়াদ সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সে কি দক্ষ কর্মকর্তা হবে নাকি অপদার্থ কর্মকর্তা হবে।
একদিকে তার এতদিনের আদর্শ অন্যদিকে ঝামেলামুক্ত চাকুরি জীবন। একদিকে তার স্বল্প বেতনের চাকুরি ও সংসারের অভাব অন্যদিকে বাড়তি আয়ের হাতছানি।
বন্ধুরা বলুনতো, রিয়াদের কি করা উচিত? সে কি করবে? আপনি এ পরিস্থিতিতে কি করতেন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।