আমি বাঙালি এবং বাংলাদেশী
আগে জুটেছিল শান্তির জন্য নোবেল। এরপর পেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম পুরস্কার। এবার পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল। হ্যাঁ, তিনি আর কেউ নন; বাংলাদেশের সন্তান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। উপরের তিনটি পুরস্কার বিশ্বে এর আগে পেয়েছেন মাত্র ৬ সৌভাগ্যবান ব্যক্তি।
নরম্যান বারলগ, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, নেলসন ম্যান্ডেলা, ইলি উইমেল, অং সান সু চি ও মাদার তেরেসার সঙ্গে এবার যুক্ত হল ড. ইউনূসের নাম। উল্লেখ করা যেতে পারে, ইউনূস শুধু এই তিন পুরস্কারই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার
বিশ্বব্যাপী কেন এত স্বীকৃতি ড. ইউনূসের? কারণ, তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র পৃথিবী থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণের দর্শন হাজির করেছেন। সেই দর্শন দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকাও রেখেছে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক স্থানেই। তারই অনুরোধে এবার কংগ্রেসনাল মেডেলের নকশায় পরিবর্তন এনে সেখানে খোদাই করা হয়েছেÑ আমরা দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠাব। ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের দর্শনের পর ড. ইউনূস সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে পথ এঁকেছেন, সেটাও বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
প্রথমে দারিদ্র্য বিমোচন, অতঃপর অর্থনৈতিক উন্নয়ন। কী চমৎকার স্বপ্ন! তিনি এত পুরস্কার পাবেন না, তো কে পাবেন? নারীর স্বনির্ভরতার ক্ষেত্রেও তার অবদান অপরিসীম। শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশেই তিনি নারী সমাজকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে যে ভূমিকা রেখেছেন, তা অসামান্য। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের চেয়ারম্যান জন বোয়েনার যথার্থই বলেছেন, ড. ইউনূসের কাজ মানুষকে শ্রেয়তর জীবনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ড. ইউনূস খুবই স্বল্প পরিসরে শুরু করেছিলেন তার ক্ষুদ্রঋণের প্রকল্প।
আর আজ বিশ্বের ২০ কোটিরও বেশি মানুষ সুবিধা পাচ্ছে ক্ষুদ্রঋণের। তার অর্থনৈতিক দর্শনের অন্তর্গত শক্তির কারণেই তা দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করে। এই দর্শনে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশের দরিদ্র নারী সমাজের একটি বড় অংশ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক সহায়তা পেলে তারা স্বনির্ভর হতে পারেন। সামাজিক জীবনাচরণের ক্ষেত্রেও তারা এগিয়ে গেছেন। গৃহবন্দি জীবন থেকে বেরিয়ে এসেছেন উৎপাদন জগতে।
বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর অগ্রসরমানতাÑ এই দুই-ই নজর কেড়েছিল বিশ্ববাসীর তথা নোবেল কমিটির। তাই ২০০৬ সালে ড. ইউনূস তার গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে পেয়েছিলেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। স্বদেশের সন্তানের এই কীর্তিতে আমরা সেদিন আনন্দে বিভোর হয়েছিলাম। ৭ বছর পর আবার আমরা উদ্বেলিত একই ব্যক্তির আরেকটি অসামান্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্তিতে।
তবে পরিহাস এই যে, বিশ্ববাসী ড. ইউনূসের কৃতিত্বের স্বীকৃতি দিলেও তার স্বদেশে একটি বিশেষ মহল বিশেষ করে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীগন তার প্রতি কাক্সিক্ষত আচরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তারে তাকে অভিনন্দন জানানোর সৌজন্যতা বোধ করল না। ধিক ধিক ধিক প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীগনকে। গ্রামীণ ব্যাংক নিয়েও বর্তমান সরকার তার প্রতি যে আচরণ করেছে তার জন্য বর্তমান সরকারকে ধিক জানায়। ড. ইউনূসের সাফল্যে সমগ্র জাতির একাট্টা হয়ে গর্বিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেউ কেউ তার সাফল্যে গর্বিত না হয়ে ঈর্ষাবোধ করেছেন।
বিষয়টি নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। তার প্রতি রইল আমাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও বিন্রম শ্রদ্ধা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।