আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাদেব চক্রবর্তী- টোরোন্টোর বাঙ্গালী ভিক্ষুক।

প্রবাসী কানাডার টোরোন্টো শহরে ভিক্ষুক খুব একটা চোখে পড়ে না। পাতাল রেলের স্টেশনে বসে গিটার বাজিয়ে বা গান গেয়ে ভিক্ষা করতে মাঝে মাঝে যে দু’এক জনকে দেখা যায়, তারা ভিক্ষুক হলেও কারো কাছে ভিক্ষা চান না, পাশে রাখা বাক্সে যে যা দেন তাই সই । এই সুদুর প্রবাসে একজন অন্যরকম বাঙ্গালী ভিক্ষুক হলেন মহাদেব চক্রবর্তী। মহাদেব চক্রবর্তী একজন বাঙ্গালী এবং ভিক্ষুক। আগেও দু একবার দেখেছি তাকে।

টোরোন্টোর বাংলাদেশীদের কাছে এক সুপরিচিত নাম মহাদেব চক্রবর্তী । আজ বাংলাপাড়ার ক্রিসেন্ট টাউন ক্লাবে আয়োজিত ইফতারীতে ভদ্রলোককে আবারও দেখলাম। ১৯২৭ সালে জন্ম নাটোরের বড়াইগ্রামের কোন এক অজ পাড়াগা’য়। তখন বৃটিশ আমল। বাবার চাকরির সুবাদে বড় হয়েছেন বেনারসে।

বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থবিদ্যায় মাস্টার্স করার পর মোটা বেতনের চাকুরী নিয়েছিলেন ভারত সরকারের পারমানবিক শক্তি কমিশনে। বেশীদিন করতে পারেন নি সে চাকরী। তারপর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে চাকুরী করেছেন দু’এক বছর। সেখানেও টিকতে পারেননি বেশীদিন। অতঃপর ১৯৬৩ তে চলে এসেছেন কানাডাতে।

সারাজীবন কাটিয়েছেন অধ্যাপনা করে। চাকুরীজীবন থেকে অবসর নিলেন ওন্টারিওর স্যাডবুরী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক পদ থেকে। বাংলাদেশে জন্ম নিলেও প্রায় সারাজীবন কাটিয়েছেন অবাঙ্গালীদের সাথে, কিন্তু মাতৃভাষাকে ভোলেননি। নিজের শেষ কর্মস্থল স্যাডবুরী বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন বাংলা বিভাগ, পারেননি। তারপর চেস্টা করলেন টোরোন্টোর ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাবিভাগ গড়ে তোলার, সেখানেও নিরাশ হলেন।

এই সময়ে পরিচয় হয় টোরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্কটিশ মহিলা শিক্ষকের সাথে যিনিও টোরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাবিভাগ স্থাপনের চেস্টা করে যাচ্ছিলেন। স্কটিশ এই মহিলার বাংলা প্রীতির কারন হল যে তার স্বামী ছিলেন একজন বাঙ্গালী। তিনি কিছুটা হতাশ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারনে। মহাদেব চক্রবর্তী দমে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না। তিনি স্কটিশ মহিলার ব্যার্থতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এগিয়ে যান।

ভদ্রলোকের স্ত্রী মারা যান ১৯৯৮ সালে । সে বছরেই জীবনের সঞ্চিত সমস্ত অর্থ ব্যয় করে তিনি সক্ষম হন টোরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাবিভাগ স্থাপনের। তার স্ত্রীর নামে গঠিত ট্রাস্ট থেকে মেটানো হত বাংলা বিভাগের যাবতীয় খরচ। এ বিভাগে ভর্তি হওয়া সমস্ত ছাত্রকে বাৎসরিক ১,০০০ ডলার অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে সে ট্রাস্ট থেকে। ২০১১ সাল অবধি টোরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগ চালু ছিল।

১ বছর হল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ বন্ধ। মহাদেব চক্রবর্তী আজ নিস্বঃ, ভিখারী। আজও তিনি ভিক্ষা করে চলেছেন, কিন্তু নিজের জন্য নয়। সবার কাছে ভিক্ষা চান টোরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগকে বাঁচিয়ে রাখতে।  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।