অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল ক্ষান্ত বর্ষণ কাক ডাকা বিকেলের সেই লাজুক রোদ্দুর- অমলকান্তির মত আমারও ইচ্ছে ছিল বিকেলের রোদ্দুর হওয়ার তাই একসময় মনের সাথে কলমের ঠুকাঠুকি শুরু করলাম আর রক্ত ঝরালাম আমার প্রিয় ডায়েরীতে । এভাবেই শুরু হল আমার রোদ্দুর হওয়ার
শ্রাবণের প্রথম দিন। প্রথম দিবসেই শ্রাবণ রুদ্র মূর্তি ধারণ করেছে। সারা শহর ভাসিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বৃষ্টি জলের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শহর তাই শ্রাবণ জলে প্লাবিত।
শহরটা এমন হয়েছে যে শ্রাবণের জল লাগবে না, শহরের সব মানুষ যদি এক সাথে থুথু নিক্ষেপ করে তাহলে বন্যা নির্ঘাত। তখন পত্রিকায় আসবে থুথু বন্যায় প্লাবিত শহর। আরব আলীর চায়ের দোকানে বসে আছি। বৃষ্টি হচ্ছে তুমুল। চা খাচ্ছি আর বৃষ্টি জলের দুষ্টমি দেখছি।
সাথে কিছু টোকাই জুটেছে তারা ইচ্ছে মত জল নিয়ে খেলছে। কেউ সাতার কাটছে কেউ প্লাস্টিকের বোতলে নৌকা বানিয়ে ভাসিয়েছে । রিক্সাওয়ালার অর্ধেক দেখা যাচ্ছে আর অর্ধেক নাই পানির নিচে আছে মনে হয়। যাত্রীরা বিরক্ত হচ্ছে আবার খুশি হচ্ছে । এই ঝুমঝুম বৃষ্টি কবুতর জোড়ার জন্য উপযুক্ত সময়।
আরব আলী বললো দেখছেন হিমু ভাই, মেঘ দিলেই ফ্লাড হইয়া যা টাউনে। আরব আলী কথা বললে দুই একটা ইংরেজি বলবেই। আমি বসে বসে ভাবছি জল হণ্টন করলে এখন খারাপ হবে না। উপরে বৃষ্টি নিচে পানি আর পানি । পা দেখা যায় না।
কোন দিকে হাঁটছি তাও দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ ম্যানহোলে সাতার কাটা শুরু করলাম। দেখা গেল আমি বঙ্গপোসাগর গিয়ে উঠেছি। এরকম ঘটনা হওয়া সম্ভব।
আরব আলীর চা রাজ্য থেকে বের হয়ে গেলাম।
জল হণ্টন করবো। হাঁটছি আর বাদলের কথা মনে পড়ছে। কি একটা অদ্ভুদ জিনিস নাকি সে স্বপ্নে দেখেছে। মানুষের মত আবার মানুষ না। সে অস্থির হয়ে আছে কি এটা বের করার জন্য।
চোখ নেই মুখ নেই আবার দেখতে মানুষের মত। এটা কেমনে হবে বুঝতে পারছি না। বাদলের কাছে গেলে বুঝা যাবে ঘটনা কি? আমার পেছনে কার যেন অস্তিত্ব পেলাম। মনে হল আমার পাশেই হাঁটছে। কিন্তু পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি।
কাছে না কিছুটা দূরে একটি ছেলে আমার দিকে প্রবল উৎসাহে দৌড়ে আসছে। দূরের জিনিস কাছে চলে আসা। এটাও মস্তিকের একটা খেলা। ভাবছি ঘটনা কি। আর ভাবা হল না।
আমার সেন্স বললো হিমু দৌড় লাগা। দিলাম ভূ-দৌড়। হাটুজল পানিতে আমি দৌড়াচ্ছি। বেশ মজা লাগছে দৌড়াতে । মনে হচ্ছে পানি দৌড় প্রতিযোগিতা হচ্ছে।
উৎসুক জনতা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তারাও দৌড় দেবার একটা প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরকম হয়! আমি যদি এখন দৌড় থামিয়ে তাকিয়ে থাকি তারাও তাকিয়ে থাকবে আবার আমি যদি মাথা পানিতে ডুবিয়ে রাখি তাও কয়েকজন করবে নির্ধিদ্বায়। আমি দৌড়াচ্ছি আমার সামনে যারা ছিল তারাও দৌড়াচ্ছে। এদেশে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটে একজনে দৌড়ে তার পিছনে কয়েকজন দৌড়ায় আবার সামেনর দিকে যারা তারাও জোরসে দৌড় দেয়।
কয়েক মিনিটেই দেখি শহরের মানুষ যে দিকে পারছে দৌড়াচ্ছে । কেউ চিৎকার করে বলছে কাইলা আসছে দৌড় দেন আইলার পরেরটা কাইলা। আবার কেউ চিৎকার করে বলছে মাইর লাগছে রাজনৈতিক দলের মধ্যে। দৌড় ভূ-দৌড়। সারা শহর দৌড়াচ্ছে একমাত্র আমি ছাড়া।
ঐ ছেলেটাকে ও দেখা যাচ্ছে না। এক গ্রুপ আবার এটা প্রতিরোধের হুমকি দিয়ে পথ আটকে রাখছে একজন তর্জনি উচিয়ে ভাষণ দিচ্ছে ভাইয়েরা…..আমার।
আপনারা ভয় পাবে না । এই শহরে পানি যতদিন আছে তা এক ফোটাও কাউকে দেওয়া হবে না। দরকার হয় রক্ত দেবো তবে পানি দেবো না ।
এ যে পানি পথের যুদ্ধ। এর মধ্যে স্লোগান ভেসে আসছে জান দেবো, মান দেবো, পানি মাগার দেবো না। প্রবল উৎসাহে সবাই মিছিল করছে। এরই মধ্যে পুলিশ এসে ছত্র ভঙ্গ করতে লাঠিপেঠা শুরু করলো। আমি বাদলদের বাসার দিকে রওনা দেই।
ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয় । পুলিশ একবার পেছনে যাচ্ছে আর জনতা একবার পেছনে যাচ্ছে এ যেন রসিটানা প্রতিযোগিতা।
বাদলদের বাসার কলিংবেল টিপ দিতেই খালু দরজা খুলে দাঁড়ালেন। অতি উৎসাহে তিনি আমাকে বললেন, হিমু দেখছো! শহরে কি হচ্ছে?
আমি অবাক হয়ে বললাম, না তো!
আরে পানি নিয়ে যুদ্ধ হচ্ছে। এখন সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে।
টিভিতে সরাসরি দেখাচ্ছে। সরকার মনে করছে বাহিরের দেশের বা বিরোধী দলের আগামী নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত। মনে হচ্ছে গৃহযুদ্ধ লাগবে দেশে।
আমি টিভির সামনে বসে আছি। প্রবল উৎসাহে খালু টিভি দেখছেন আর আলোচনা করছেন।
উদ্ভুদ পরিম্তিতি নিয়ে বিভিন্ন চ্যানেলে টকশো শুরু হয়েছে। বিশ্লেষকগণ ভয়ংকর রকমের বিশ্লেষণ করছেন। কেউ বলছেন একটি গ্রুপ পানি নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে আবার কয়েকজন কথা বলতে গিয়ে বিশ্ব পানি ব্যবস্থার স্বরুপ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আইন সামনে নিয়ে এসেছেন। প্রত্যেক চ্যানলই এসব খবরে বুদবুদ করছে। খালু চ্যানেল ঘোরাচ্ছেন আর উত্তেজিত হচ্ছেন।
হঠাৎ একটি চ্যানেলে দেখা গেল দু;জনকে এর প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেকে ধরা হয়েছে। তাদের ছবি দেখা যাচ্ছে টিভিতে। দেখা গেল যে ছেলেটা আমার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল সে আর যে ভাষণ দিলো সেই লোক। আমি উঠে দাঁড়ালাম চলে যাবো। খালু বললেন, হিমু
জ্বি খালু জান।
বাদলের রুমের দিকে যাবে না। যেভাবে আসছো সেভাবে চলে যাও । বাদলের মাথা আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। প্রতি রাতে সে স্বপ্নে কি যেন দেখে। মানুষের মত কিন্তু হাত পা মুখ চোখ কিছু নেই।
আমার ধারনা এটা তুমি তার মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছো। সে এখন বলছে মানুষের বিবর্তেনর একটি স্তরে মানুষের রুপ কি এই রকম ছিল? এই নিয়ে সে আমাদের ঝালাচ্ছে। আমি বললাম, সমস্যা নাই খালু এটা এমনিতেই সেরে যাবে। সে ডারউইন হয়ে যাচ্ছে চিন্তা করছেন কিছু! আপনাদের ছেলে দ্বিতীয় ডারউইন। সে হবে বাংলার ডারউইন ।
ফালতু কথা বাদ দাও। এখন যাও।
আমি চলে আসলাম থানায় যেতে হবে, মূল পরিকল্পনাকারী দুইজনকে দেখে আসি।
গুলশান থানার ওসির সামনে। ওসি আমার পূর্ব পরিচিত নাম আজাদ ।
উনি নিচের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছেন। আমাকে বললেন, হিমু সাহেব কেন আসছেন?
আমি বললাম পানি সন্ত্রাসীদের দেখতে ।
পানি সন্ত্রাসী!
-ঐ যে আজকের ঘটনার দুই হুতা তাদের দেখতে এসেছি।
-হিমু সাহেব আমি তাদের সাথে কথা বলেছি। প্রবাল ছেলেটা বলছে আপনে নাকি তার পরিচিত।
তাই সে আপনাকে ডাক দিয়েছিল। আপনে তাকে দেখেই দৌড় দিয়েছেন। আচ্ছা মত তাকে এবং ঐ খবিস কে পেঠানো হয়েছে শালা ভাষণ দেয় রাস্তায়। আপনাকে আমি এখন জেলে ঢুকাতে বাধ্য কারণ মূল পরিকল্পনাকারী আপনেও একজন।
ওসি সাহেব আজকের এতবড় ঝক্কি ঝামেলায় একেবারে অবস্থা খারাপ ।
আমি কথা বাড়ালাম না।
-ছেলেটা লাফ দিয়ে উঠলো, হিমু ভাই ! আপনার জন্য আমার এই ঘটনা।
তুমি কে?
আমার নাম প্রবাল।
আমি কথা বলিনা তাকিয়ে থাকি পাশের জনের দিকে।
প্রবালই বলে, আমাকে বেশি মারেনি।
কিন্তু ভাষণ প্রদানকারী বেচারা উঠতে পারছি না।
-না উঠাই ভালো। উঠলে আবার ভাষণ শুরু করবে। এটা তাদের অভ্যাস হয়ে যায়। ঘুমের ঘোরেও ভাষণ দেয়।
প্রবাল বললো, তার নাম নাকি জব্বার স্থানীয় কোন রাজনৈতিক দলের নেতা।
- জব্বার ভাই কেমন আছেন?
-জব্বার ভাই কোন মতে তাকালেন। ভালো না শালারা ইচ্ছে মত পিঠাইছে হাড্ডি দেখিয়া মারছে।
-এক্ষেত্রে ভালো হয়েছে মাংসে মারলে মাংস পঁচে যেতো হাড্ডিতে মারছে হাড্ডি আরও শক্ত হবে। চিন্তা করবেন না আপনাকে ফুল দিয়ে মানুষ বরণ করে নেবে।
জব্বার বলে আমরা তো এখন পানি সন্ত্রসী আরে এগুলো শেষ হয়ে যাবে যখন বৃষ্টির পানি শহর থেকে চলে যাবে।
বিকেলের দিকে আমাদের সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হল। অবশ্য তাও রুপার বদ্যনতায়। জব্বারকে ঠিকই এলাকার মানুষ মিছিল সহকারে এলাকায় নিয়ে গেল। যাওয়ার সময় জব্বার আমার হাতে চুমু খেয়ে গেল।
আপনে মহান হিমু ভাই। আপনে মানুষ না অন্য কিছু।
আমি বললাম তাহলে কি?
সে বললো অন্য কিছু। জব্বার কে মানুষ টেনে নিয়ে গেল। এখন সে তাদের নেতা।
আমি আর প্রবাল রাস্তায় হাটঁছি প্রবাল বললো সে আমার সঙ্গে হাঁটার জন্য বের হয়েছে কিন্তু আমাকে খুঁজে পাচ্ছে না। মাজেদা খালার কোন দিকের আত্মীয় হয় প্রবাল। মাজেদা খালা আমার কাছে তাঁকে পাঠিয়েছেন। প্রবাল প্রতিজ্ঞা করেছে যতদিন বাঁচবে সে আর দৌড়াবে না। প্রবাল ছেলেটাকে আমার ভালো লেগেছে ঠিক স্যারের শুভের মত চেহারা।
আমরা হাঁটছি আমি হাঁটছে……সারা দেশ হাঁটছে প্রিয় হুমায়ূন স্যার।
@};-শ্রদ্ধা থাকলো প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ। :x ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।