যথাযথ গর্ভধারণ প্রতিটি নারীর জন্যই আনন্দের। অন্তঃসত্ত্বাবস্থায় নারীর মনে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে তার পেটের ভিতরের ক্রমবর্ধমান অনাগত ভবিষ্যৎ শিশুটি কিভাবে বেড়ে উঠছে? দেখতে কেমন হবে? কবে দেখবো? ইত্যাদি। সমগ্র মা জাতি এসব কৌতুহলের কিছুটা সমাধান পেতে পারেন নিচের ছবিগুলো দেখে-
(১) গর্ভধারণ: পুরুষের শুক্রাণু (sperm) স্ত্রীলোকের ডিম্বাণুতে (ovum) বিদ্ধ হয়েই শুরু হয় গর্ভধারণ। এ সময় বংশগতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক উপাদান জীনগত গঠন (genetic makeup) সম্পূর্ণ হয় এবং শিশুর লিঙ্গ নির্ধারিত হয়। গর্ভধারণ শুরুর তিন দিনের মধ্যে নিষিক্ত ডিম্বক খুব দ্রুত বিভাজিত হয়ে বহুকোষে পরিণত হয়।
ইহা ফ্যালোপিয়ান নালি (fallopian tube) দিয়ে জরায়ুতে (uterus) গিয়ে পৌঁছে এবং জরায়ুগাত্রে সংযুক্ত হয়। এ সময় ভ্রুণের পুষ্টি যোগানোর জন্য জরায়ুর অন্তরাচ্ছদক অঙ্গ গর্ভফুলের (placenta) গঠন শুরু হয়।
(২) গর্ভাবস্থার ৪র্থ সপ্তাহে: এ পর্যায়ে শিশুর অঙ্গ-সংস্থানের উন্নয়ন শুরু হয় যা অবশেষে মুখমন্ডল, ঘাড় ও গলা গঠন করে। হৃদপিন্ড এবং রক্তবাহী শিরা ও ধমনীর উন্নয়নও চলতে থাকে। ফুসফুস, পাকস্থলি ও যকৃতের ঊন্নয়ন শুরু হয়।
বাড়িতে বসে গর্ভাবস্থা পরীক্ষায় ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়।
(৩) গর্ভাবস্থার ৮ম সপ্তাহে: বর্ধনশীল ভ্রুণ এ সময় আকারে প্রায় আধা ইঞ্চির মত হয়। চোখের পাতা (eyelids) ও কানের গঠন আরম্ভ হয় এবং নাকের ডগা (tip of the nose) দৃষ্টিগোচর হয়। বাহু ও পায়ের গঠন সুসম্পন্ন হয়। হাত ও পায়ের আঙ্গুল লম্বা হয় এবং সহজেই পার্থক্য করা যায়।
(৪) গর্ভাবস্থার ১২তম সপ্তাহে: শিশু পরিমাপে প্রায় ২ ইঞ্চির মত হয় এবং নাড়াচাড়া শুরু করে। মা খুব সহজেই শিশুর এই নাড়াচাড়া অনুভব করেন। বিশেষ ধরনের যন্ত্রের সাহায্যে চিকিৎসক বাচ্চার হৃৎস্পন্দন শুনতে পারেন। শিশুর লিঙ্গ সহজেই পরিলক্ষিত হয়।
(৫) গর্ভাবস্থার ১৬তম সপ্তাহে: এখন শিশুটি পরিমাপে প্রায় ৪.৩ থেকে ৪.৬ ইঞ্চি এবং ওজনে প্রায় ১৪১.৭৫ গ্রাম হয়।
শিশু তার চোখ পিট পিট করতে পারে (blink)। হৃদপিন্ড ও রক্তনালীসমূহ পুরাপুরি গঠিত হয়। হস্ত ও পদাঙ্গুলির রেখাসমূহের ছাপ (fingerprints) সুস্পষ্ট হয়।
(৬) গর্ভাবস্থার ২০তম সপ্তাহে: শিশুর ওজন হয় প্রায় ২৮৩.৫০ গ্রাম এবং লম্বায় প্রায় ৬ ইঞ্চির মত হয়। এসময় শিশু তার বৃদ্ধাঙ্গুলি চুষতে পারে, হাই তুলতে পারে (yawn), শরীর সম্পূর্ণভাবে টানটান করে লম্বা বা প্রসারিত করতে পারে (stretch) এবং মুখভঙ্গি করতে পারে বা মুখ ভেংচাতে পারে।
এসময় মা তার জরায়ুতে বাচ্চার নাড়াচাড়াকে হালকা টোকা/চাপড় বা প্রজাপতির পাখা ঝাপটানোরমত স্পন্দন অনুভব করেন (quickening)।
(৭) সময় এখন আল্ট্রাসাউন্ড (ultrasound) করার: গর্ভাবস্থার ২০তম সপ্তাহে সচরাচর আল্ট্রাসাউন্ড করা হয়। চিকিৎসক এ সময় পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন যে গর্ভফুল সুস্থ, নীরোগ আছে ও তা ভালভাবে সংযুক্ত আছে এবং শিশুটি যথাযথভাবে বেড়ে উঠছে। আল্ট্রাসাউন্ডে আপনি শিশুর হৃৎস্পন্দন শুনতে পাবেন এবং শরীর, বাহু ও পায়ের নাড়াচাড়া দেখতে পাবেন। শিশুটি ছেলে না মেয়ে তাও জানতে পারবেন।
(৮) গর্ভাবস্থার ২৪তম সপ্তাহে: শিশুর ওজন হয় প্রায় ৬৩৫ গ্রাম। অন্তঃকর্ণ পুরাপুরি গঠিত হয় এবং শিশু জরায়ুতে তার প্রকৃতিস্থ অবস্থান বুঝতে পারে। অবস্থানের পরিবর্তন বা নাড়ির স্পন্দন বৃদ্ধির মাধ্যমে শব্দের প্রতি সক্রিয়ভাবে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। শিশুর যদি হেঁচকি (hiccups) ওঠে তবে মা তার পেশীর হঠাৎ ঝাঁকুনি (অনিচ্ছাকৃত)জনিত গতিশীলতা টের পেতে পারেন।
(৯) গর্ভাবস্থার ২৮তম সপ্তাহে: শিশুর ওজন হয় প্রায় ৯০৭ গ্রাম এবং শিশুটি ঘন ঘন তার অবস্থান পরিবর্তন করে।
এ সময় অনাকাঙ্খিতভাবে অপূর্ণকালীন প্রসব (premature delivery) হলেও শিশুর বাঁচার বেশ সম্ভাবনা থাকে। বাচ্চা প্রসবের আনুসঙ্গিক ব্যবস্থাদি এ সময় হতেই নিতে হয়।
(১০) গর্ভাবস্থার ৩২তম সপ্তাহে: শিশুর ওজন হয় প্রায় ৯০৭ গ্রাম এবং কাছাকাছি স্থানে পর্যায়ক্রমে অল্পবিস্তর ঘুরতে থাকে। চামড়ার নিচে চর্বিস্তর গঠিত হয় বলে চামড়ায় স্থানে স্থানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু ভাঁজ পড়ে। এ সময় হতে প্রসবকাল পর্যন্ত শিশুর জন্মকালীন মোট ওজনের অর্ধেক সম্পাদিত হয়।
মায়ের স্তন হতে শালদুধ (colostrum) বের হয় যা দুনিয়ার সর্বোৎকৃষ্ট শিশুখাদ্য 'মায়ের বুকের দুধ' তৈরীর ইঙ্গিত দেয়।
(১১) গর্ভাবস্থার ৩৬তম সপ্তাহে: নানাবিধ উপাদান (factors) যেমন লিঙ্গ, গর্ভস্থ বাচ্চার সংখ্যা, মা-বাবার আকার-আকৃতি প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে বাচ্চার আকার-আকৃতি ভিন্ন ভিন্ন হয়। স্বভাবিকভাবে বর্ধিত একটি শিশু এ সময় লম্বায় প্রায় ১৮.৫ ইঞ্চি এবং ওজনে প্রায় ১৭০০ গ্রাম হয়। মস্তিষ্ক খুব দ্রুত বিকশিত হয়, ফুসফুসের গঠন প্রায় সম্পূর্ণ হয়। এ সময় হতে শিশুর মাথা সাধারণত মায়ের শ্রোণীর (pelvis) দিকে নিম্নমুখী হয়ে অবস্থান করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) বর্ণনামতে মা এখন 'সীমিতকাল' (at term) এ অবস্থান করছেন।
(১২) শিশুর জন্ম: ৪০তম সপ্তাহ পার হওয়ার পর সাধারণত বাচ্চা প্রসব হয়। তবে প্রসবকাল ৩৮-৪২ সপ্তাহ পর্যন্ত হতে পারে। ৪২ সপ্তাহ পরও বাচ্চা প্রসব না হলে চিকিৎসক কৃত্রিম উপায়ে প্রসব বেদনা (labour pain) উৎপন্ন করতে পারেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।