বাংলাদেশে বাস করি যারা বাসে [Bus এ] আমাদের যে কত রকম অভিজ্ঞতা ! একেকজনের ঝুলি শেষ হতে হতে ইসরাফিলের শিঙ্গা বেজে যাওয়ার কথা !
ঢাকার একটা বাচ্চা প্রথমে প্রথমে কয়েকদিন সফল ভাবে উসাইন বোল্ট এর রেকর্ড ভাঙতে ভাঙতে বাসে উঠে নিজের ওপর বেশ সন্তুষ্ট হয় ... কিছুদিন পর এই বাচ্চাই উসাইন বোল্ট এর নতুন রেকর্ড ভাঙতে ভাঙতে জানালা দিয়েও উঠতে সফল হয় , নিজের প্রতি সন্তুষ্টির মাত্রা আরেকটু বাড়ে । এই পর্যায়ে মানবশিশুর চোখ ফোটে । এবার এরা ইম্প্রোভাইজেশানে দক্ষ হতে শুরু করে ।
অভিযানপ্রিয় শিশুরা এক বাসের জানালা দিয়ে হনুমান স্যারের মত 'সমুদ্র-লঙ্ঘন-লম্ফ' দিয়ে অন্য বাসের ব্যাক ডোর বরাবর ঝাঁপিয়ে পড়ে । জ্যামের মধ্যেই ডেস্টিনেশান চেঞ্জড !
চোখ ফোটায় চারপাশের পৃথিবীর দিকে নজর এদের একটু তীক্ষ্ণ হয়ে গেছে ততদিনে ।
এই পর্যায়ে ঢাকার প্রতিটি রাস্তাই এদের কাছে 'অন-ট্র্যাফিক রেসিং ট্র্যাক' । একই কোম্পানীর ২/৩ টি বাস বিশ্বখ্যাত 'ঢাকাইয়া - কচ্ছপ - রেসিং- জ্যাম ' এর ধাক্কায় একসাথে হয়ে যায় যখন এদের মুখে তখন 'চান্দের মত হাসি' দেখা যায় । নোটপ্যাড খুলে বাসদের লাইসেন্স নম্বর লেখা আর বাজির রেট ঠিক করতে করতে রাস্তা হয়ে যায় রেসিং ট্র্যাক ! [ যদিও বেশির ভাগ সময় যেই বাসের ওপর কেউ বাজি ধরে নি ওটাই ফিনিশিং লাইন পার করে আগে ওইদিন আমরা লিস্ট করতে পারলাম ৪টা নিউ ভিশনকে ... কিন্তু চিড়িয়াখানার দিকে শেষে দৌড়াতে দেখলাম ৫ নম্বর আরেকটাকে ! এইটা কোত্থেকে উদয় হল ঠিক বুঝলাম না ... আসমান থেকে নাযিল হয়েছিল বোধহয় !! ]
বাকি যাত্রীদের কখনও যুগপৎ বিরক্ত করতে করতে ,কখনো কিঞ্চিৎ আগ্রহী করতে করতে এরা পথ চলে । এরা পথ চলে নাকি পথ এদের চালায় সেটা প্রমাণ করে দেখানো মুশকিল ।
বন্ধু নাফীসকে সেদিন গত ভ্রমণের কাহিনী বলছিলাম ।
চিড়িয়াখানাগামী এক নিউ ভিশনে যাচ্ছি তখন , রাইনখোলায় [ ঢাকা কমার্স কলেজের পাশেই ] বাস থেমেছে । নেমে যাব আমি । বেশির ভাগ যাত্রীই এখানে নেমে যায় । হেল্পার ভাই গেইটের কাছ থেকে রিমাইন্ডারের মত বলে উঠল , ' ভাড়া গুলো হাতে হাতে লন তো ... ভাড়াগুলো হাতে হাতে লন । ' কালবিলম্ব না করে জানালা খুলে লাফ দিলুম ।
হেল্পার ভাইয়েরা এসব ক্ষেত্রে দুইটি ভুল করেন ।
প্রথমতঃ পাগলদের কখন বলতে নেই ' নাও ডুবাইস না ' । কী ? শোনেন নি সেই কাহিনী ? আচ্ছা বলি-ই তাহলে -
এক গ্রামে একটা মাত্র নদী গেছে । এই নদী জনজীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ । প্রতিদিন এই নদী পার হতে হয় অগুণিত গ্রামবাসীকে ।
খেয়া ঘাটের মাঝিদের মধ্যে ছিল এক পাগল । সে নিঁখুত নিপাট ভালো মানুষ তবে নৌকা মাঝ নদীতে আসলে সে নৌকা ডুবিয়ে দেয় । কোন আগাম সংকেত না দিয়েই ! ওই মাঝি যে পাগল এইটা গ্রামবাসী তো বটেই , গ্রামের অন্য পাগলরাও জানত । তো সবাই 'ইনা'কে সযত্নে এড়িয়ে চলে । ঝামেলা বাধল যখন গ্রামে এক শহুরে ভদ্রলোকের পদধূলি পড়ল ।
ইনি কোন এক কাজে সেইবার-ই প্রথম এই গ্রামে এসেছেন । নদী পাড় হওয়া তাঁর বিশেষ দরকার । ওই পাড়েই কাজ কি না ! খেয়াঘাটের সন্ধান করতে দেখে বাজারের এক দয়ার্দ্র গ্রামবাসী তাকে পাগলের বর্ণনা দিয়ে বলে দিয়েছে , ' পাগলায় কিন্তু নৌকা ডুবায় ' । ভদ্রলোক ঘাট পর্যন্ত আসতে আসতে ওই কথা বেমালুম ভুলে গেছেন । মাসুদ রানা তো আর না , যে সব মনে থাকবে !
ঘাটে এসেই তিনি সোজা হরিণশাবকের মত লাফ দিয়ে সেঁধিয়ে গেলেন সামনে যেই ফাঁকা নৌকা দেখলেন সেটাতেই ।
ঘটনা চক্রে ওইটাই পাগলবাবুর নৌকো ! নৌকা নির্বিঘ্নে চলতে থাকল । মাঝ নদীতে এসে শহুরে বাবুর মনে পড়ল কেউ তাঁকে মাঝ-নদী সতর্কতা সংকেত দিয়েছিল ! মাঝিকে ভাল করে খেয়াল করলেন তখন-ই ! ইনিই যে হিরো সেটা বুঝতে শহুরে বাবুর বেশিক্ষণ লাগল না । আর মাঝনদীতে পৌঁছে কি হবে সেটা বুঝতে জ্যোতিষ্যী হওয়া লাগে না । বাবু চিংড়ির মত মুখ করে বসে রইলেন ।
কিন্তু রাখে আল্লাহ , মারে কে ? পাগলবাবু ওইদিন দিব্যি ভুলে গেছেন নৌকা যে ডুবানো লাগবে ।
মাঝনদী প্রায় পাড় হয়ে যাচ্ছে , শহুরে ভদ্রলোক হাহাকার করে উঠলেন , "পাগল রে!! নাও ডুবাইস নাআ! "
রিমাইন্ডার , রিমাইন্ডারের কাজ করল । কালবিলম্ব না করে পাগল , পাগলের কাজ করল । নৌকা আর নদীর বুকে থাকে ?
হেল্পার ভাইয়েরা এই ভুল তো করেন-ই ।
দ্বিতীয়তঃ তাঁরা খেয়াল করেন না গাণিতিক সম্ভাব্যতার কথা ।
' ভাড়া গুলো হাতে হাতে লন তো ... ভাড়াগুলো হাতে হাতে লন ।
'
এই কথা আমাদের মস্তিষ্কে সংকেত দিল বাস থেকে নামার । দরজা দিয়ে নামলে ভাড়া দিতে হবে তাই কি আমরা জানালা দিয়ে নেমেছিলাম ? উহু ... এত ছোটলোক ভাবছেন কেন ? আহা ! এসব ঠিক না !
আসুন গাণিতিক ভাবে দেখি ?
বাসে ২৪ টা জানালা এবং একটি দরজা । বাস থেকে 'ভাগা'র উপায় ২৫ টি ।
সুতরাং , দরজা দিয়ে নামার ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা = ১/২৫ = ৪%
অপর পক্ষে জানালা দিয়ে নামার ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা = ২৪/২৫ = ৯৬%
দেখতেই পাচ্ছেন । গাণিতিকভাবে জানালা দিয়ে নামার সম্ভাবনাই বেশি !
আশা করি হেল্পার ভাইয়েরা এই পোস্ট পড়ে কিছু শিখবেন ।
এই পোস্টটিকে লিফলেট আকারে ঢাকার হেল্পার-কন্ডাক্টর ভাইদের বিলি করার জন্য মাননীয় বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হল ।
সবাইকে ধন্যবাদ । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।