০৩.০৬.২০১২ তারিখের একটি সংবাদপত্রে চোখ পড়ল। বহুলপ্রচারিত ঐ দৈনিকটির প্রথম পাতায় তিনটি চমকে দেওয়া শিরোনাম দেখতে পেলাম।
১. দেশে ২ কোটি বা তার বেশি টাকার মালিক নাকি মাত্র সাড়ে চার হাজার
২. আসছে কালো টাকা সাদা করার মহোৎসব
৩. বর্তমানে কালো টাকার পরিমাণ হচ্ছে জিডিপির ৩৭%।
কথা ছিল এ সংখ্যায় ২০১২-২০১৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট নিয়ে আলোচনা করার। কিন্তু সংসদে বাজেট পেশ হতে আরো কয়েক দিন বাকি।
অন্যদিকে বিভিন্ন কারণে আলকাউসারের জুলাই সংখ্যাটি নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকাশ করার চেষ্টা চলছে। তাই বাজেট নিয়ে এ সংখ্যায় লেখা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া এসব নিয়ে কলম কালি ও সময় খরচ করতে এখন আর ভালোও লাগে না। অহেতুক পাঠকের মূল্যবান সময় নষ্ট করা হয় কি না সে আশংকাও হয়।
কারণ অভিজ্ঞ মহল এখনকার বাজেটগুলোকে হিসাব-নিকাশের জাদুকরী বলেই মনে করে থাকেন।
এগুলো এমন কিছু অনুমাননির্ভর হিসাব-নিকাশ, যেগুলো বাস্তবতা থেকে অনেক অনেক দূরে অবস্থান করে এবং এমন কিছু উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির কাহিনী ও দাবি-দাওয়া, যেগুলো সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
কোনো সম্মানিত পাঠক যদি উপরের কথাগুলো একটু কঠোর মনে করে থাকেন তবে কয়েকটি উদাহরণের প্রতি নজর দিলেই ব্যাপারটা খোলাসা হয়ে যাবে আশা করি।
চলতি অর্থবছরের (৩০ জুন ২০১২ এ সমাপ্য) ঘাটতি বাজেট পূরণের জন্য বলা হয়েছিল ১৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করবে সরকার। কিন্তু বছরের অর্ধেক যেতে না যেতেই সে অংক অতিক্রম করে ঠিক করা হয় ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এ অংক সম্ভবত আবারো বাড়ানো লাগবে।
কারণ গত অর্থবছরের শেষ মাসেই ঋণ করা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা।
বরাদ্দকৃত এডিপির ৪৯.৪% মাত্র বাস্তবায়িত হয়েছে গত দশ মাসে। তা হলে বাকি দু’ মাসে কি ৫০% এর বেশি বাস্তবায়িত হয়ে যাবে? কিন্তু সেসব কথা মনে না রেখেই হয়ত এ বছরও এডিপির বরাদ্দ রাখা হবে আরো অনেক বড় করে।
আচ্ছা গত এক বছরে গণমানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় কতভাগ বেড়েছে? বাড়িভাড়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী, স্বাস্থ্যরক্ষাখরচ, শিক্ষা ব্যয়, পানি-বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর মূল্য, পরিবহন খরচ ইত্যাদি পূর্বের বছরের দেড়-দু’গুণও কি হয়নি? কিন্তু বাজেট-বক্তৃতায় হয়ত বলা হবে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১১% এর কম। তাহলে সাধারণ মানুষ নিজের বাস্তব অবস্থা বিশ্বাস করবে নাকি পরিসংখ্যান ওয়ালাদের কথার উপর আস্থা রাখবে!!
এখানেই শেষ নয়, আরো পরিহাস অপেক্ষা করছে।
বলা হতে পারে, মাথাপিছু গড় আয় ৭৪৮ ডলার থেকে বেড়ে ৭৭২ ডলার হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারের শিশু, তরুণ, যুবক, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ ও ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকল মানুষের গড় মাসিক আয় হল ৫৩০০/- টাকার মত। একটি অতি দরিদ্র পরিবারের সদস্যসংখ্যা যদি হয় ৭ জন তবে সে হিসাবে তাদের গড় মাসিক আয় হওয়ার কথা ৩৭০০০/- টাকার বেশি! হিসাবের মারপ্যাঁচে মাথা ঘুরে উঠার আগেই বলে রাখি এত কিছুর পরও আগামী ৭ জুনের বাজেট-বক্তৃতায় জিডিপির প্রবৃদ্ধির পরিমাণ শুনানো হবে ৬.৩০% এরও বেশি। এই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন আসলে কাদের হয় তা সচেতন লোকজনের অজানা নয়।
অর্থমন্ত্রী মহোদয় ঘোষণা করেছেন, এবার ভ্যাটের (মূল্য সংযোজিত কর) আওতা আরো বাড়ানো হবে।
অর্থাৎ সকল ধনী-গরীব এমনকি একজন ভিখারিণীও প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কেনার সময় প্রতিদিন নিজ হাতে সরাসরি যে করটি পরিশোধ করে থাকে তা বিস্তৃত হবে আরো অনেক প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীতে। মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর জন্য এ হাতিয়ারটি কি কম কিছু?
বরাবরের মতো এবারও হয়ত বাজেটে খরচের জন্য অন্যতম শীর্ষ বরাদ্দ থাকবে সুদ পরিশোধ খাতে। অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান অভিশপ্ত এ সুদকে ঘৃণা করলেও তাদের পক্ষ হয়ে অব্যাহতভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা সুদী লোন করে যাচ্ছে সরকার এবং সেগুলোর সুদও আদায় করা হচ্ছে গণমানুষের ট্যাক্স ও ভ্যাটের টাকা দিয়ে।
উপরোক্ত বিষয়াদি এবং এগুলোর সাথে আরো অনেক জরুরি (!) কথার দলিলসমৃদ্ধ এক ব্রিফকেস কাগজের বাজেট-বক্তৃতা করতে গিয়ে হয়ত আগামী ৭ জুন (২০১২) হাঁপিয়ে উঠবেন মাননীয় অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল মাল আবদুল মুহীত।
‘আবুল মাল’ আরবী শব্দ, যার সহজ অর্থ ‘সম্পদের বাবা’।
ব্যাপারটি কাকতালীয় বটে। অর্থমন্ত্রী তো সম্পদের বাবাই। কারণ সম্পদ আহরণকারীকে যদি এর বাবা বলা যায় তাহলে বিপুল পরিমাণ সম্পদ খরচকারী (জাম্বু সাইজের ঘাটতি বাজেট প্রদানকারী)কে কেন বলা যাবে না আবুল মাল বা সম্পদের বাবা!
মাপ করবেন সম্মানিত পাঠক। হিসাব-নিকাশ ও পরিসংখ্যানের জাদুকরী কথাবার্তা শুনে আপনি বিরক্ত হয়ে উঠলেন কিনা, সে চিন্তা থেকেই একটু রসিকতা।
আপনারা যে যাই বলুন আমাদের এ অর্থমন্ত্রীকে আমাদের কাছে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সৎ মনে হয়েছে।
স্মরণ করুন, ঋণ খেলাপির তালিকা সংসদে প্রথম দিন তিনি কীভাবে পেশ করেছিলেন (যদিও কয়েকদিনের মধ্যেই ভিন্ন বিবৃতি দিতে হয়েছে)। আরো স্মরণ করুন, শেয়ারবাজার কেলেংকারীর তদন্ত-প্রতিবেদন হাতে পেয়ে প্রথমে অনুচ্চারিত যে কথাগুলো বলে ফেলেছিলেন এবং নতুন ব্যাংক অনুমোদন প্রসঙ্গে মিডিয়ার কাছে যে ভাষায় তা প্রকাশ করেছেন। তিনি দলীয় বা উপরের চাপে পরে কী বললেন সেটিকে আমলে নেয়ার পরিবর্তে যদি তার প্রথম কথাগুলো ধরা হয় তবে ভদ্রলোককে নিশ্চয় কিছু ব্যতিক্রম মনে হবে।
যা হোক এ লেখা যখন প্রিয় পাঠকের হাতে থাকবে ততদিনে তারা ৭ জুনের বাজেট সম্পর্কে আদ্যোপান্ত জেনে যাবেন, যাতে উপরে বর্ণিত বিষয়াদি থাকলেও ধর্ম ও নৈতিকতার উন্নয়নের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো বরাদ্দ থাকবে না। থাকবে না উপরের পর্যায়ের লোক ও সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কৃচ্ছতা সাধনের কোনো ফর্মূলা বা পরিকল্পনা।
বরং বিগত কয়েক বছরের মত আয়ের সাথে সামঞ্জস্যহীন বিশাল খরচের পরিকল্পনা এবং দেশী-বিদেশী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা সুদী ঋণ নিয়ে ঘাটতি পূরণের সহজ (!) সমাধান থাকবে নিশ্চয়। এর সাথে গরীব জনগণের কাঁধে আরো কত প্রকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের বোঝা চাপানো যায়, জ্বালানী, বিদ্যুৎ ও পানির দাম আরো কত বাড়ানো যায় সে চেষ্টা তো অব্যাহত থাকবেই। তথাকথিত গণতান্ত্রিক ও জনগণের সরকারের এ কর-ব্যবস্থা ও বেহিসেবি খরচের আয়োজন একসময়ের একনায়ক শাসকদের জুলুমকেও হার মানায়। তবে এটি কোনো এক সরকারের নীতি নয়; বরং বছর বছর থেকে চলে আসা গতানুগতিক ব্যবস্থা, যার মূল কথা ও চিন্তাগুলো প্রায় সব আমলে একই রকম থাকে।
হায়! যদি আমরা ফিরে যেতে পারতাম সোনালী যুগের আদর্শ সে আর্থিক ব্যবস্থায়, যাতে ছিল না কোনো অযাচিত কর, ছিল না অপব্যয়ের কোনো চিন্তা, ক্ষমতাসীনদের নিরাপত্তা, প্রটোকল ও সম্মানীর নামে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ের কথা যখন কেউ
চিন্তাও করত না; বরং খলীফারা তাদের পরিবারের সাধারণ ব্যয় নির্বাহের খরচটুকুই শুধু রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে পেতেন।
সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যেদুনা আবু বকর রা. মাথায় কাপড়ের পুটলী নিয়ে বাজারের পথে ছুটেছেন, হযরত উমর বাঁধা হয়ে দাড়ালেন। কোথায় যাওয়া হচ্ছে খলীফাতু রাসূলিল্লাহ? বাজারে যাচ্ছি, এগুলো বিক্রি করে যা আয় হবে তা দিয়ে পরিবারের খরচ মেটাতে হবে। পাল্টা প্রশ্ন, তা হলে রাষ্ট্রের কাজ-কর্ম দেখবে কে, চলুন আমরা আবদুর রহমান ইবনে আউফের (আরেক মুরুববী সাহাবী) কাছে যাই। ঘটনা শুনে ইবনে আউফ (রা.) বললেন, আমি আপনাকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সামান্য পরিমাণ খাবার এবং পিঠ ও মাথা ঢাকার মত বস্ত্র ভাতা হিসাবে নেয়ার অনুমতি দিতে পারি। আল্লাহর দরবারে আম্বিয়ায়ে কেরামের পরে সবচেয়ে মর্যাদাবান মানুষটি এতেই খুশি থাকলেন।
ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে দিয়ে ওইটুকু ভাতা দ্বারা গুজারা করলেন নিজের ও পরিবারের খরচাদি।
আর ২য় খলীফা হযরত উমর (রা.) এর ইতিহাস তো মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে অনেকেরই জানা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তিনি কতটুকু সম্পদ নিতে পারবেন সে বিষয়ে গঠিত পরামর্শসভায় একজন ছাড়া সকলে মত দিলেন আপনার যাবতীয় খরচাদি যতটুকু লাগে বাইতুল মাল থেকে গ্রহণ করুন, কিন্তু হযরত আলী (রা.) বললেন, আপনি দু’ বেলার খরচই কেবল নিতে পারেন, এর বেশি নয়। অর্ধ জাহানের খলীফা আমিরুল মুমিনীন এক জনের মতটিই গ্রহণ করলেন (সংখ্যাগরিষ্ঠের মত নয়) এবং নিজের জন্য দৈনিক মাত্র ২ দিরহাম করে ভাতা নির্ধারণ করলেন।
এইসব ইতিহাস আমাদের সোনামণি ও তরুণ-যুবকদের পাঠ্যপুস্ত্তকে জায়গা পাওয়া মানা।
সেগুলো না লেখা বা বিকৃতির (!) দায়ে বর্তমান সময়ে কাউকে জেল-জরিমানা পেতেও শোনা যায়নি বা কারো বিরুদ্ধে রুলও ইস্যু হয়নি।
যাক সেসব কথা। রাষ্ট্রে যখন অপচয়-অপব্যয় হবে না, জনগণের টাকাকে পবিত্র আমানত মনে করা হবে তখন কোনো ঋণের প্রয়োজন হবে না। সুতরাং সুদ দেয়ারও প্রশ্ন আসবে না।
যে বাজেট নিয়ে আমি কথাই বলতে চাইনি তা নিয়েই আপনাদের কিছু সময় ব্যয় করে ফেললাম।
ফিরে আসি মূল প্রসঙ্গে।
কালো টাকার পরিমাণ এবং কালো টাকা সাদাকরণ প্রসঙ্গে বলার জন্যেই কাগজ কলম হাতে নিয়েছিলাম। আমার ছোট মেয়েটির প্রশ্ন, কালো টাকা আবার কী জিনিস? আমরা ৫০০, ১০০, ৫০, ১০ কোন নোটের রং তো কালো দেখিনি? আর কালো জিনিস আবার সাদা হয় কীভাবে? আমরা তো বরং সাদা চুলে কালো রং লাগাতে দেখি, শুনেছি কালো কাপড়গুলোও নাকি প্রথমে সাদা থাকে, কিন্তু কালোকে সাদা করতে তো শুনিনি। লেখাটি অল্প সময়ে শেষ করতে হবে তাই চোখ বড় করে মেয়েকে পড়ার টেবিলে ফেরত পাঠালাম।
আমাদের দেশে কালো টাকার পরিমাণ কত তার সঠিক হিসাব হয়ত কারো কাছেই নেই।
বিভিন্ন আলামতের মাধ্যমে একেকজন একেক রকম সংখ্যা বলে থাকেন। সম্প্রতি বিদেশী একটি সংস্থার রিপোর্টে কালো টাকার পরিমাণ বলা হয়েছে জিডিপির ৩৭%, বা ১ লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকা। এ সমীক্ষাটি চালিয়েছেন অষ্ট্রিয়ার এক গবেষক। অন্যদিকে অর্থমন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কালো টাকা আছে জিডিপির ৪৬% থেকে ৮১% এর মধ্যে, যা হিসাব করলে হয় ১ লাখ ৭৭ হাজার কোটি থেকে ৩ লাখ ১০ হাজার কোটির মধ্যে। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, বাস্তবে কালো টাকার পরিমাণ হবে আরো অনেক বেশি।
যেখানে শুধু একবার ভুল জায়গায় চালক কতৃক গাড়ী প্রবেশ করিয়ে দেয়াতেই বেরিয়ে আসে ৭০ লাখ টাকা, ওসমান গনী সাহেবদের নিকট পাওয়া যায় তুলার পরিবর্তে টাকাভর্তি বালিশ, সুবিধাজনক জায়গায় বদলী হওয়ার জন্য নাকি নজরানা দিতে হয় লক্ষ-কোটি টাকা, সামান্য মেম্বর-চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য ব্যয় করা হয় কোটি টাকা (এমপিদের কথা নাই বা বললাম)। সে টাকাগুলো সুদে-আসলে উঠালে তার পরিমাণ কত হবে? আবার বড় বড় রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টের জন্য বরাদ্দকৃত টাকার অর্ধেকও প্রকল্পে ব্যয় হয় না বলে জনমুখে শোনা যায় সব সময়, সেখানে কালো টাকার পরিমাণ ৩ লাখ কোটি বললে কম বলা হবে নিশ্চয়। তবে বর্তমান পরিভাষায় শুধু অবৈধ বা হারাম পন্থায় কামাই করা টাকাকেই কালো টাকা বলা হয় না; বরং কর পরিশোধ না করে গোপন রাখা হয়েছে এমন বৈধ উপার্জনের টাকাও কালো টাকার অন্তর্ভুক্ত। অনেকে আবার এ শ্রেণীর কালো টাকার নাম ‘অপ্রদর্শিত আয়’ও দিয়ে থাকেন।
আজকে আমি শুধু প্রথম প্রকারের কালো টাকা নিয়েই বলতে চাই, যার পরিমাণ ২য় শ্রেণীর কালো টাকার চেয়ে নিশ্চয় অনেক গুণ বেশি এবং যে কালো টাকার মালিকদের কাছে শুধু সাধারণ জনগণই নয়; বরং সম্ভবত পুরো রাষ্টযন্ত্রই জিম্মি হয়ে আছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে কালো টাকার উপার্জন এক শ্রেণীর লোকের কাছে অত্যন্ত সহজ-সরল একটি কাজ এবং এটি হয়ে থাকে অনেকটা প্রকাশ্যেই। কালো টাকার বড় বড় হোতারা অনেক সময় নেপথ্যেই থেকে যায় এবং অবশ্যই তারা নিজেদেরকে রাখে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এর জন্য শুধু পদ্মাসেতু এবং বিজিবির দপ্তরে রেলের লোকদের কাছে পাওয়া ৭০ লাখ টাকার দিকেই নজর দেয়ার প্রয়োজন নেই; বরং এরকম দু’ একটি ঘটনা সম্ভবত এক্ষেত্রে তরকারির মাঝে লবনের পরিমাণ মাত্র। এ কালো টাকাগুলোই মূলত সৃষ্টি করে সামাজিক বৈষম্য। বনী আদমের বৃহত্তর অংশ একটি গোষ্ঠির শোষণের হাতিয়ার হয়ে থাকার পিছনে কালো টাকার প্রভাব অসামান্য।
আর পণ্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধিতে, প্রয়োজনীয় আবাসন সুবিধা (জমি/ফ্ল্যাট) সাধারণ জন-গোষ্ঠির আয়ত্বের বাইরে চলে যাওয়ার পিছনে এ শ্রেণীর টাকাওয়ালাদের প্রভাব তো কারো অজানা নয়। জমি/ফ্ল্যাটের মূল্য যতই হোক ঐ শ্রেণীর লোকদের জন্য তা কোনো সমস্যাই নয়। আর গাড়ির ট্যাক্স বা মূল্য যতই বৃদ্ধি পাক তাদের পরিবারের সকলের জন্য ১/২ টি করে কোটি কোটি টাকার গাড়িও থাকা অপরিহার্য। সড়ক-মহাসড়কে জায়গা থাকুক বা না থাকুক ঐসব গাড়ির লাইসেন্স দিতে হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে।
আর এ কালো টাকাগুলো একসময় সাদা হওয়ার পর এগুলোর মালিকগণ হয়ে যায় ব্যাংক, বীমা, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল, টিভি, পত্রিকা ও গ্রুপ অব কোম্পানিজের মালিক।
(সব ব্যবসায়ী বা মিডিয়ার মালিক যে এ শ্রেণীর নয় তা তো বলাই বাহুল্য। ) সুতরাং কালো টাকা সাদা করতে হবে বৈকি। এদেরকে ধুয়ে-মুছে জাতীয় অর্থনীতিতে, শেয়ারবাজারে এবং নতুন ব্যাংক, টিভি স্থাপনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে অবদান রাখার সুযোগ না দিলে তা তো জুলুমের আওতায় পড়ারই কথা। এ কারণেই কালো টাকা সাদা করা নিয়ে কারো কারো আপত্তি বাঁকা চোখে দেখেন ঐ বিজ্ঞ রাজনৈতিক ও সুধী (!) মহল।
বড়দের সে বিতর্কে আমাদের প্রবেশ করা উচিত হবে না।
আমরা শুধু এতটুকু বলতে পারি যে, ইসলামে কালো টাকা উপার্জনের যেমন বৈধতা নেই, তেমনি সে টাকা সাদা করার ন্যূনতম সুযোগও নেই। এ ধরনের অবৈধ উপার্জনকারী কালো টাকাওয়ালা ধরা পড়লে শুধু তার জেল-জরিমানাই হবে না; বরং ক্ষেত্রবিশেষে তার হাতও কাটা যাবে। আর সকল টাকা বাজেয়াপ্ত করে যথাসম্ভব মালিকদেরকে ফিরিয়ে দিতে হবে। মালিক সনাক্ত করা সম্ভব না হলে তা জমা হয়ে যাবে রাষ্টীয় কোষাগারের দরিদ্রফান্ডে, যা শুধুই ব্যয় করা যাবে গরীব-দুঃখীদের পিছনে।
এমন বিধান ও তার প্রয়োগ থাকলে কেউ কি আর কালো টাকা উপার্জনের পিছনে মেতে থাকবে? কিন্তু প্রশ্ন হল কবে ফিরে আসবে সে হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস।
আমরা আমাদের আমল-আখলাক, লেনদেনকে শুদ্ধ করব আর কবে!! এবং ক্ষমতাসীনরা প্রচলিত দূষিত অর্থব্যবস্থা থেকে বের হয়ে ইনসাফপূর্ণ হালাল অর্থব্যবস্থা কায়েম করতে বাধ্য হবে আর কবে? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।