আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্লগার, হেফাজতে ইসলাম মুখোমুখি নয়, পাশাপাশি চলুক তবে!

ও বিষের বাঁশী শুনে ঘরে থাকা দায় দেশে বহু কিছুই ঘটছে। অনলাইন এক্টিভিস্টরা বা স্ট্যাটাসলেখকদের নানান লেখা পড়ছি, ম্যালাদিন পর গতরাতে ব্লগেও একটু ঢু মারলাম। আলোচিত টপিকগুলোর মধ্যে পেলাম হেফাজতে ইসলাম, মাহমুদুর রহমান, ডঃ মুহম্মদ ইউনুস। যখন কোথাও ইসলামের উপর আঘাত আসে, তখন শান্তিপ্রিয় মুসলিমরাও রাস্তায় নেমে আসবে নিজের ধর্মের সম্মান রক্ষায়, এটাই স্বাভাবিক, আল্লাহর ইচ্ছা। শাহবাগের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন যখন শুরু হলো এই ফেইসবুকে কারো ওয়ালে আমি এই আন্দোলনের সুবাদে ইসলামকে শেষ করে ফেলার মতো দম্ভ করতে দেখেছি, ওয়ালমালিক সেই কমেন্টের কোন প্রতিবাদ করেননি, নিরব সমর্থন জানিয়েছেন।

তিনি তার প্রাপ্য খুব অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পেয়েছেন। আল্লাহ তাকে হেদায়েত দান করুক! আমীন! একটি রাজনৈতিক দাবী থেকে কেমন করে ধর্মীয় সংগঠন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, ধর্মীয় নীতিমালায় চলা প্রতিষ্ঠানের উপর ঘৃণা প্রকাশ শুরু হয়েছিল, নিষিদ্ধের দাবী উঠেছিল, সেটা সংশ্লিষ্টরাই ভাল বলতে পারবেন। তবে স্বাভাবিকভাবেই এর প্রতিবাদ শুরু হবে, সেটা সাহসিকতার সাথে করে দেখিয়েছেন মাহমুদুর রহমান এবং হেফাজতে ইসলাম। আমি নির্দ্বিধায় বলবো ব্লগে, ফেইসবুকে লেখালেখি করে আমরা যারা ইসলামের পক্ষে বা নাস্তিকদের নোংরা আক্রমণের প্রতিবাদ করি, এই মাহমুদুর রহমান বা হেফাজতে ইসলাম তার চেয়ে বেশি কিছু করে দেখিয়েছেন, উনারা নিঃসন্দেহে আমাদের চেয়েও ভাল মুসলিম। উনারা পায়ে হেঁটে অনেক পথ অতিক্রম করে প্রচন্ড কড়া রোদে রাস্তায় নেমে এসে ধর্মের প্রতি নিজেদের ভালোবাসা দেখিয়েছেন, আজ মাহমুদুর রহমান রিমান্ডে, বেশ অনেকদিনের রিমান্ড, তার পত্রিকাও বন্ধ।

সাফার করছেন ইসলামের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে, উনি এর আগে দিনে কয় ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন, রোযা সব রাখতেন কিনা, কোন দূর্নিতি করেছেন কি করেননি, সেটা মূল বিষয় নয়, তবে ইসলামের উপর আঘাত দেখে তিনি অন্যদের চেয়ে বেশি কার্যকর একটা পদক্ষেপ নিতে পেরেছেন, এতে করেই হয়তো আল্লাহতাআলা উনার পূর্বের অনেক গোনাহ মাফ করে দিতে পারেন। হেফাজতে ইসলামের দাবীগুলো এবং এর ব্যাখ্যাগুলো পড়ে দেখলাম, একজন মুসলিম হিসেবে বা নারী হিসেবে আপত্তি করার মতো কিছুই খুঁজে পাইনি, উনারা সিডও নারীনীতির সমালোচনা করেছেন বিবাহবহির্ভুত সম্পর্কের অধিকারবিষয়ক ইস্যুতে, এখানে নারীদের ক্ষুব্ধ হবার কি আছে? কাদিয়ানীরা খতমুনব্যুওয়তে বিশ্বাস করে না, একজন মুসলিমের 'মুসলিম' হতে হলে যে সাতটি বিষয়ের উপর ঈমান আনতে হয়, তার মাঝে রাসূল(সাঃ) সর্বশেষ নবী-- এটা অবশ্যই বিশ্বাস করতে হয়। এটা যারা বিশ্বাস করেন না ,তারা অন্যধর্মীয় সম্প্রদায়ের কেউ হতে পারেন, মুসলিম তো হতে পারেন না। তবে আমার এই ব্যাপারে তেমন কোন জ্ঞান নেই যে এটা রাষ্ট্রের অবশ্যপালনীয় কোন দায়িত্ব কিনা কোন সম্প্রদায় কোন ধর্মের অনুসারী সেটা ঘোষণা দেবার। আর উনারা ইসলামী শাসনতন্ত্রই কায়েম করতে চাচ্ছেন সেটাও সুস্পষ্টভাবে বলেছেন কিনা জানি না, তবে অনেককেই এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মদীনা সনদের কথা বলেন, এমনকি আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, তাতে বোঝা গেল আমরা মুসলিমপ্রধান দেশ, তবে পলিমাটির এই দেশের মানুষ প্রাক ইসলামের যুগের মানে যখনো ইসলাম পুরোপুরি মদিনার সমাজে প্রতিষ্ঠা হয়নি, রাসূল(সাঃ) মাত্র হিজরত করে মক্কা থেকে মদীনায় এসেছেন, তখনকার ইসলামকে হজম করতে পারি।

কিন্তু ইসলামের বেশিরভাগ হুকুম আহকাম বা আইন কানুন এসেছে মাদানী সুরাগুলোতে, কিভাবে একজন মুসলিম ঘরে বাইরে কুরআনের দেখানো পথে চলবে সেসবের বেশিরভাগই এসেছে মাদানী সূরাগুলোতে, মক্কী সুরাগুলোতে বেশি ছিল শিরকের বিরুদ্ধে, নামায প্রতিষ্ঠার বিষয়ে, মোটকথা ব্যক্তিগত ইবাদত, ব্যক্তিগত ঈমান, ব্যক্তি আমলবিষয়ে। আমরা বাঙালী মুসলিমরা ইসলামের স্বর্ণযুগের নিয়ম কানুনের চেয়ে দুর্বল সময়ের নিয়ম কানুনে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি। যা হোক, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আস্তিক-নাস্তিক বিষয়টা যত বেশি সামনে আসছে, তার তুলনায় শাহবাগের আন্দোলন শুরু হয়েছিল প্রথম যে ইস্যুতে সেই যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইস্যুতে তেমন কোন কথা হচ্ছে না, সেটা অনেকটাই আড়ালে পড়ে গেছে। ট্রাইবুনাল নিজের নিয়মে চলবে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চাইলে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে এর বিকল্প নেই, তবে শাহবাগের আস্তিক নাস্তিক নির্বিশেষে [এটা উল্লেখ্য যে শাহবাগের আন্দোলনকারী সবাইই নাস্তিক নয়] সব বাংলাদেশী চেয়েছিল দায়মুক্তি, দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে তারা সবাই একাত্তরে সংগঠিত অপরাধসমূহের সর্বোচ্চ সুষ্ঠু বিচার চেয়েছিল, কেউ যেন অনেক অনেক অপরাধ করে পার না পায়, তবে উপযুক্ত প্রমাণ না পাওয়া গেলেও কেবল সন্দেহের বশে বা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মানসিকতা থেকে যেন কেউ অবিচারের শিকার না হয় সেই দায়িত্বও ট্রাইবুনালের বিচারকদের। আর যেই ব্লগাররা কেবলমাত্র দেশপ্রেম থেকেই এই আন্দোলনের সাথে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত আছেন তাদের প্রতি রইলো অনেক অনেক শুভকামনা এবং নৈতিক সমর্থন, নানারকম ভুল বোঝাবুঝি, নানারকমের চাপের মাঝেও তারা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন, এখনো পর্যন্ত রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে।

এই ব্লগে এর আগেও আস্তিক নাস্তিক বিষয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে, কখনো কখনো কুতর্কও হয়েছে, কিন্তু জাতীয় কোন ইস্যুতে সবাই আবার এক কাতারে দাঁড়িয়ে নায্যকথা বলেছে, নিজেদের মাঝের বিভেদগুলো ভুলে গেছে। আশা করছি সামনের দিনগুলোতেও এভাবে সবাই দেশের প্রয়োজনে একই কাতারে দাঁড়িয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলবে, দাবী উত্থাপন করবে, আন্দোলন করবে, প্রতিবাদ করবে, আবার ভাল সময়ে সবাই মিলে খোশ গল্প করবে, হাসি ঠাট্টায়, গল্প আড্ডায়, খুঁনসুটিতে মেতে উঠবে। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.