বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য রেহেনা আক্তার রানু যখন চুদুর বুদুর নিয়ে উত্তেজনার সর্বোচ্চ শিখরে- আমি তখন নিজ আসনে বসে ছিলাম। তার মুখে চুদুর বুদুর শব্দমালার বর্ণিল ঝংকারে পুরো সংসদ হৈ হৈ করে উঠলো। সবাই কেনো হই হই করলো তা আমি বুঝলাম না বটে কিন্তু আমার শরীর মনে কাঁপন ধরলো অন্য কারনে।
বাংলাদেশ প্রতিদিনে আমি নিয়মিত একটি ধারাবাহিক উপন্যাস লিখছি গত কয়েক মাস ধরে। নাম-মোঘল হারেমের দুনিয়া কাঁপানো প্রেম।
এটি একটি গবেষণাধর্মী ঐতিহাসিক উপন্যাস। সংসদ সদস্য রানু সেদিন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তার ঠিক দুই দিন পূর্বে আমি ৫ম পর্ব লিখা শেষ করে পত্রিকায় পাঠাই ছাপানোর জন্য। আমার লেখা সাধারনত শনিবার ছাপানো হয়। অর্থ্যাৎ যেদিন জমা দিয়েছিলাম তার ৩/৪ দিন পর। কাজেই পত্রিকায় ছাপা হবার পূর্বেই আমার চুদুর বুদুর রানু কিভাবে পেলেন এই চিন্তায় আমি অস্থির হয়ে পড়লাম।
অন্যদিকে, আমার ভয় হলো সম্মানিত পাঠকদের সন্দেহ নিয়ে। কারন যেহেতু জাতীয় সংসদে রানুই প্রথম চুদুর বুদুর শব্দমালা ব্যবহার করেছে। কাজেই আইনানুযায়ী মেধাস্বত্ব তার। আমি সে ক্ষেত্রে দায়ী হতে পারি নকল করার দায়ে। যদিও বাংলার হতভাগ্য বিজ্ঞানীর মতো আমিই প্রথম এটির আবিষ্কর্তা।
প্রবাদ আছে স্যার জগদীস চন্দ্র বসু নাকি মার্কনীর পূর্বেই রেডিও আবিষ্কার করেছিলেন।
রানু কেনো চুদুর বুদুর করলো তা তিনি নিজে জানেন। কিন্তু আমি কেন করলাম তা আমি এখন বলছি। উপন্যাসের সব ঘটনা, উপাখ্যান এবং বেশির ভাগই চরিত্রই ঐতিহাসিক। এমনি এক ঐতিহাসিক চরিত্র পাগলের বেসে আগ্রায় এলো।
ইংরেজীতে এই পাগলকে বলা হয়েছে পড়হভঁংরহম সধফ। কনফিউসিং শব্দটির হুবুহু প্রতিশব্দ অনেকগুলো। যেমন বিভ্রান্ত সৃষ্টিকারী, নয়ছয় ইত্যাদি। এগুলোর সঙ্গে আমাদের দেশের আঞ্চলিক পরিভাষার মিল খুজতে গিয়ে হঠাৎই আমার কলমে চুদুর বুদুর পাগল শব্দমালা লিখা হয়ে গেলো।
বর্তমান সংসদে সরকার ও বিরোধী দলীয় সকল সংসদ সদস্যগণের সঙ্গেই আমার চমৎকার দহরম মহরম সম্পর্ক রয়েছে।
তবে পুরুষগণের তুলনায় মহিলাদের সঙ্গেই আমার সম্পর্ক বেশী। সেই সূত্রে বিএনপির সকল মহিলা এমপির সঙ্গে রয়েছে সুসম্পর্ক। কয়েকজনের সঙ্গে ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব। অর্থ্যাৎ তুই তুমির পর্যায়। আমি পাপিয়া ও রানুকে চিঠি দিয়ে জানালাম তারা কিভাবে আমার শব্দমালা চুরি করলো।
ওরা উত্তর করলো- এটা নাকি নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষা। স্বাক্ষী হিসেবে জানালো মাননীয় স্পীকারকে। কারণ তিনিও নোয়াখালীর মেয়ে। তারা আমাকে আবারো জিজ্ঞাসা করলো পটুয়াখালী অঞ্চলে চুদুর বুদুর বলতে কি বুঝায়। বললাম ওটা আমাদের এলাকায় ব্যবহৃত হয় না।
পাল্টা প্রশ্ন তাহলে তোমার পাশের এমপি ও হুইপ আ. স. ম ফিরোজ ভাই কেনো এত রেগে গেলেন চুদুর বুদুর শুনে। আমি বললাম-জানি না।
সেই দিনের পর সারা বাংলায় চুদুর বুদুরের বোমা ফাটলো। পথে, হাটে, মাঠে, ঘাটে, চায়ের দোকানে চুদুর বুদুরের আলোচনা। আলোচনা চলে গেলো পশ্চিম বাংলাতেও।
কলকাতার নামকরা পত্রিকায় পন্ডিতেরা লিখলো চুদুর বুদুর বাজে শব্দ নয়। বাংলার ঘরে ঘরে পৌছে গেলো চুদুর বুদুরের কেরামতি। রানুর বক্তব্যের পরের দিন ঘটলো আরো এক মজার ঘটনা। আমি তখন সংসদে। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ও আমার বন্ধু নাজমা আখতার হাসতে হাসতে আমার পাশে এসে বসলো।
বললো আচ্ছা বন্ধু বলতো, চুদুর বুদুর অর্থ কি? আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো? সে উত্তর করলো গতকাল রানুর বক্তব্য শোনার পর তার ছোট ছেলে কথায় কথায় চুদুর বুদুর শব্দটি ব্যবহার করছে এবং বলছে এটি নাকি ভারি মজার শব্দ। এটি উচ্চারণ করতে গিয়ে বেশ আনন্দ পাচ্ছে। অন্যদিকে এটির মানে না জানার কারনে নাজমার নিকট বিশ্রি লেগেছে। ফলে সে ছেলেকে নিষেধ করেছে ওটা না বলার জন্য। সহজ সরল ছেলেটি কেবল বলেছে চুদুর বুদুর অর্থ কি? নাজমা তার ছেলের প্রশ্ন শুনে আমতা আমতা করে উত্তর দিয়েছে কাল বলবো।
সেমতে সে আমার নিকট এসেছে এটির অর্থ জানার জন্য এবং তাই বললাম যা আমি জানতাম। আমার বন্ধুটি সরলতা মিশ্রিত কৃতজ্ঞতার হাসি দিয়ে আমার নিকট থেকে চলে যাবার মুহুর্তে সতর্ক করে বললো এই দ্যাখো চুদুর বুদুর নিয়ে আবার বেশি চুদুর বুদুর করবা না না কিন্তু।
সৌজন্যে-গোলাম মাওলা রনি ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।