আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবুঝ নিস্পাপ ফুলের মত দুটি হৃদয় কাঁদছে তাদের বাবার জন্য

এম আর ফারজানা *********************** হুমায়ূন আহমেদ (স্যারের) মৃত্যুতে তার পাঠকগণ, পরিবার এবং ভক্তদের ক্ষতি হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তারা হচ্ছে নিষাদ ও নিনিত। অবুঝ নিস্পাপ ফুলের মত দুটি হৃদয় কাঁদছে তাদের বাবার জন্য। তারা হয়ত প্রকাশ করতে পারছে না তাদের কান্না, কষ্টের দীর্ঘশ্বাস, হারানোর বেদনা, যেমনটা নোভা, শিলা, নুহাশ কিংবা বিপাশা প্রকাশ করছে। শিলাদের অনেক স্মৃতি আছে বাবাকে নিয়ে কিন্তু নিষাদ ও নিনিত তারা বেড়ে উঠবে বাবার স্নেহ, আদর, মমতা ভালোবাসা ছাড়াই।

যাদের বাবা নেই বা বাবার সাথে তেমন কোন স্মৃতি নেই তারা বুঝবে এ যন্ত্রণা কতটুকু । হুমায়ুন আহম্মেদ তার সন্তানদের ভীষণ ভালোবাসতেন তা তার লেখায় এবং বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে সহজে অনুমেয়। তিনি বলেছিলেন, “পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু খারাপ বাবা একজন ও নেই । ” রবর্তিতে তিনি নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে বলেছিলেন, শুধু এই সন্তানদুটির জন্য আমাকে আরো কিছু দিন বেঁচে থাকতে হবে। নিউইয়র্কে থাকা অবস্থায় শাওন এবং হুমায়ূন স্যার দুজনেই যথা সাধ্য চেষ্টা করেছেন নিষাদও নিনিতকে হ্যাপি রাখার এই প্রবাসে ভিন্ন পরিবেশে।

এবং তারা সেটা পেরেও ছিলেন। শাওনের জন্য বেশ কঠিন ছিল। কেন তা নিচে উল্লেখ করছি। আমরা যারা এই আমেরিকাতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছি আমরা জানি, এখানকার পরিবেশ, আইন সব কিছুই বাংলাদেশ থেকে ভিন্ন। কতটা ভিন্ন আমি তার একটা সাধারণ উদাহরণ দিচ্ছি -আমার এক কাজিন রেগে গিয়ে তার ছয় বছরের বাচ্চাকে গালে থাপ্পড় মেরেছিল খুব জোরে যার ফলে গালে দাগ পরে গিয়েছিল।

বাচ্চা স্কুলে গেলে টিচার জানতে চেয়েছিল এই দাগের কারণ কি, বাচ্চা নির্ধিয়ায় সত্য বলেছিল ফলশ্রুতিতে পুলিশ স্কুল থেকে বাচ্চাকে নিয়ে নেয়। মা হিসাবে আমার কাজিন অযোগ্য- এই কারন দেখিয়ে। পরবর্তীতে আমার কাজিন পেপারে সাইন করে বাচ্চাকে এনেছিল বয়স ১৮ বছর হওয়া পর্যন্ত সে দেখাশুনা করবে ভালভাবে। এই হচ্ছে আমেরিকার আইন, বাংলাদেশে কি এটা সম্ভব। এখানে অপরাধের বিচার হয় হোক সেটা বড় বা ছোট অপরাধ।

প্রতি পদক্ষেপে আইন মেনে চলতে হয়। এইসব মেনে নিয়ে শাওনও স্যার ভাল ছিলেন। শাওন মা হিসেবে অনেক যত্নবান। তাকে যারা কাছ থেকে দেখেছে তারা জানে, সে কখনো চাইবে না, তার সন্তানরা এতিম হোক বাবার আদর, স্নেহ থেকে বঞ্চিত হোক শুধু তাই নয়, স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার যথাসাধ্য চেষ্টা সে করেছে । এই দুঃসময়ে স্যার ও শাওনকে কাজে সাহায্য করেছে মাজহারুল ইসলাম, বিশ্বজিৎ সাহা, ও হাতে গোনা কয়েকজন।

আমি আরো অবাক হয়েছি যখন দেখেছি এখানকার (নিউইয়র্ক) পত্রিকাগুলো শাওনের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ তুলেছে। হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছে। আজ যারা এসব লিখছে শাওন ও হুমায়ূন স্যারকে তারা কতটুকু সাহায্য করেছে নিউইয়র্কে থাকা অবস্থায়? এমন কি স্যারের মৃত্যুর পর শাওন যখন বিপর্যস্ত, সে সময় ডেথ সার্টিফিকেটে কি উল্লেখ করেছে তা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু সে সময় শাওনের পাশে যাদের থাকার কথা তারা কি ছিল? বাংলাদেশের মানুষ নিউইয়র্কের জ্যামাইকার পরিবেশ সম্পর্কে অবগত নয় কিন্তু আমরা যারা আমেরিকা প্রবাসী আমরা তো জানি এখানকার আইন ও পরিবেশ। গত সপ্তাহেও আমি জ্যামাইকায় ছিলাম কবি শহীদ কাদরী ইন্টারভিউর জন্য।

এ সময় তাকে ও আরো অনেককে জিজ্ঞাসা করেছি এখানকার পত্রিকাগুলোর এই বিরূপ আচরণের কারণ। কেউ আমায় সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। নিষাদ ও নিনিত কেমন আছে আজ আমি জানি না। শুধু জানি স্যার আজ বেঁচে নেই শাওনকে নিয়ে যত বেশি টানা-হেঁচড়া হবে তার প্রভাব পড়বে এই বাচ্চা দুটোর উপর। তার মধ্যে আবার পত্রিকায় দেখলাম নজরুল ইসলাম নামে এক আইনজীবী বুধবার সকালে চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম নিজামুল হকের আদালতে হুমায়ূন আহমেদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগে তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং অন্যপ্রকাশের সত্ত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ।

মামলাটি করা হয়েছে ৩০২/১২০বি, ৩০৪ (ক), ৪০৬, ৪২০ ও ৩৪ ধারায়। বাদি নজরুল ইসলাম তার মামলার আর্জিতে বলেন বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি ও নগদ টাকা, আত্মসাৎ করতে দুই আসামি পরিকল্পিতভাবে পরস্পরের যোগসাজশে লেখককে হত্যা করেছে। এ মামলায় দৈনিক আমার দেশের বার্তা সম্পাদক, স্থানীয় দৈনিক আজাদীর বার্তা সম্পাদক ও লেখক আবদুল হাই শিকদারকে সাক্ষী করা হয়েছে। নজরুল ইসলাম আদালতকে বলেছেন, দৈনিক আজাদী ও দৈনিক আমারদেশ পড়ে তিনি এসব তথ্য জানতে পেরেছেন। মানুষের নৈতিক অবক্ষয়ে মাত্রা কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে তার একটা জ্বলন্ত উদাহরন হচ্ছে এই মামলা ।

মামলার বাদী মনে হয় মক্কেল না পেয়ে মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আর তাই তিনি অন্যের চরিত্র বিক্রি করে বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করছেন। আমরা আমেরিকা এত কাছে থেকে যা দেখলাম না তিনি বাংলাদেশে থেকে তাই দেখে ফেললেন। এই সব মানুষেরা অর্থনৈতিকভাবে যত না দরিদ্র তার চেয়ে বেশী দরিদ্র মানুষিকভাবে …… [লেখক: প্রবাসী সাংবাদিক ও কলামিস্ট। ২ আগস্ট ২০১২ যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।