আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বের সকল আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালেই বিদেশী আইনজীবী কাজ করেছেন

গর্জে ওঠার এইতো সময়.... তিতাস বাচাও, দেশ বাচাও বিশ্বের সকল আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বা আদালতেই বিদেশী আইনজীবী পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশেষ করে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল ফর রুয়ান্ডা (আইসিটিআর), ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল ফর দ্যা ফরমাল যুগোশ্লাভিয়া (আইসিটিওয়াই), সিয়েরালিয়নের বিশেষ কোর্ট (এসসিএসএল), কম্বোডিয়ার বিশেষায়িত চেম্বার কোর্ট (ইসিসিসি)। আন্তর্জাতিক মানের সেই বিচার সংশ্লিষ্ট প্রসিকিউটর বা বিচারকরাও ছিলেন আন্তর্জাতিক মানের। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও বিদেশী আইনজীবী আনার সুযোগ দেয়ার বিধান রয়েছে। এ জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশেষ দূত ষ্টিফেন জে র‌্যাপসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনও সুপারিশ করেছিল।

কিন্তু বিধিমালায় বার কাউন্সিলের অনুমোদন দেয়ার শর্তযুক্ত করা হয়েছে। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সরাসরিই বলে দিয়েছেন, ট্রাইব্যুনালে কোনো বিদেশী আইনজীবী মামলা পরিচালনায় আসতে পারবে না। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। ২০১০ সালে সংশোধিত দ্যা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) এ্যাক্ট, ১৯৭৩ অনুযায়ী এই ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। আইনের আলোকে ট্রাইব্যুনাল বিধিমালা প্রণয়ন করেছে।

বিদেশী আইনজীবী নিয়োগের ব্যাপারে বিধিমালার ৪২ ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অনুমতি সাপেক্ষে ট্রাইব্যুনাল যেকোনো বিদেশী আইনজীবীকে প্যাকটিসের সুযোগ দিতে পারবে। বিদেশী আইনজীবী নিয়োগে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষ থেকে গত বছর ট্রাইব্যুনালে আবেদন করা হয়। কার্যপ্রণালী বিধির একটি বিধানের কথা উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল ওই আবেদন খারিজ করে বিষয়টি বার কাউন্সিলের ওপর ছেড়ে দেয়। ডিফেন্স টিমের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক গত বছরের ১২ জুলাই বিদেশী আইনজীবী নিয়োগের অনুমতি চাওয়ার পর ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার (বর্তমানে ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক) মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, বার কাউন্সিলের অনুমতি নিয়ে তারপর এ ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালে আসতে হবে। বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাক্টিশনার্স এন্ড বার কাউন্সিল অর্ডার-১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ২৭(১)(ক) বাংলাদেশে কোনো আদালতে মামলা করার জন্য প্রথম শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।

সম্প্রতি আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কোনো বিদেশী নাগরিক কোনো মামলা পরিচালনা করতে পারবেন না। তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দেন, ট্রাইব্যুনালে কোনো বিদেশী নাগরিক মামলা পরিচালনা করতে পারবেন না। এ ব্যাপারে এডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, বার কাউন্সিলের কাজ হচ্ছে আদালতে আইনজীবীদের প্র্যাকটিস করার জন্য সনদ দেয়া। বিদেশী আইনজীবীরা এ দেশে সনদ নিতে আসবে না। তারা অন্যকোনো আদালতে নয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিশেষ মামলা পরিচালনার জন্য আসবেন।

ট্রাইব্যুনালের বিধানে সে সুযোগ রাখা হয়েছে। কিন্তু বিদেশী আইনজীবীদের জন্য বার কাউন্সিলের অনুমতির শর্তযুক্ত করা ঠিক হয়নি। ট্রাইব্যুনালই অনুমতি দিতে পারতো। বিদেশী আইনজীবী আনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতোপূর্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিদেশী আইনজীবী আনার বিষয়ে বার কাউন্সিলে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু অনুমতি পাওয়া যায়নি।

এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তিনি জানান, বিশ্বের অন্যান্য দেশে সকল আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালেই বিদেশী আইনজীবী ছিলেন, তারা কাজ করেছেন। ষ্টিফেন জে র‌্যাপের সুপারিশ : বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচার কার্যক্রম দেখার জন্য বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে এসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশেষ রাষ্ট্রদূত ষ্টিফেন জে র‌্যাপ। তিনি বাংলাদেশ সফর শেষে সরকারের কাছে লিখিত সুপারিশ দিয়েছিলেন। এতে তিনি বিদেশী আইনজীবী নিয়োগের ব্যাপারে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধের বিষয়টি খুবই বিশেষায়িত একটি ক্ষেত্র এবং এসব বিচারের ক্ষেত্রে বিশ্বের সব দেশে একই মাপকাঠি, পদ্ধতি ও মান বজায় রাখা উচিত।

আর এ জন্যই বিদেশী আইনজীবীর উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি। সুপারিশে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের ৪২ ধারায় বিদেশী আইনজীবীদের উপস্থিতির অনুমতি দেয়া হয়েছে। যেকোনো পক্ষ বিদেশী আইনজীবী আনতে পারবে। তবে এ অধিকারকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সরকারের উচিত বার কাউন্সিলের কাছে বিদেশী আইনজীবী আনার ব্যাপারে প্রস্তাব করা, যাতে বার কাউন্সিল বিদেশী আইনজীবী আনার বিষয়টি অনুমোদন করে। আদালতের পক্ষ থেকে প্রধান কৌঁসুলি বার কাউন্সিলের কাছে বিদেশী আইনজীবী আনার প্রস্তাব করতে পারেন।

র‌্যাপ বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ বিশেষায়িত অপরাধ, এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক বা হাইব্রিড কোর্টে বিদেশী আইনজীবীর অংশগ্রহণ জরুরি, যারা এখানে একটি গ্রহণযোগ্য মানদন্ড অনুযায়ী প্র্যাকটিস করবেন। প্রসিকিউশন বা বিবাদী যারাই আইসিটিতে প্র্যাকটিস করতে আসবেন, বাংলাদেশ সরকার তাদের অবস্থানকালীন সময়ের জন্য অবশ্যই ভিসা দিবে। তবে এক্ষেত্রে একটা মান বজায় রাখতে হবে। গত বছরের জুলাই মাসে ওয়াশিংটনে র‌্যাপ বিদেশী আইনজীবী নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সম্মতি না দেয়া প্রশ্নে বলেন, অন্যান্য কমনওয়েলথভুক্ত দেশে এ রীতি চালু আছে এবং উভয় পক্ষই প্রয়োজনে বিদেশী আইনজীবী নিয়োগ করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এ রীতি অনুমোদন না করলে সে ক্ষেত্রে বিদেশী আইনজীবীরা বাংলাদেশী আইনজীবীদের উপদেষ্টা হিসেবে সহায়তা করতে পারেন।

যুক্তরাজ্যের লর্ড এভিবেরির সুপারিশ : যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডস এর সদস্য, ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লর্ড এভিবেরি বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে ২০টি সমস্যা চিহ্নিত করেছেন। গত বছরের জুলাইতে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যুক্তরাজ্য সফরে গেলে তার সাথে বৈঠককালে লর্ড এভিবেরি এ সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি বিদেশী আইনজীবী নিয়োগের বাধা দেয়াকে একটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, ট্রাইব্যুনালে বিদেশী আইনজীবী নিয়োগের আবেদন নাকচ করে দেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, এটর্নি জেনারেল, যিনি সরকার কর্তৃক নিযুক্ত ব্যক্তি। এখানে লক্ষণীয় এটর্নি জেনারেল ও বার কাউন্সিল সদস্যরা বিদেশী আইনজীবী নিয়োগের আবেদন দাখিল হওয়ার পূর্বেই তা নাকচ করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন।

তাতে মনে হয়, অনুমতি না দেয়ার বিষয়টি পূর্ব নির্ধারিত। তিনি বলেন, বিচার হতে হবে উন্মুক্ত, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী। এর জন্য বিদেশী আইনজীবী নিয়োগ, আন্তর্জাতিক মনিটরিংকে অনুমোদন দেয়া এবং আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী আইনগত সংশোধন করতে হবে, যার মাধ্যমে মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা হবে। যুগোশ্লাভিয়ার ট্রাইব্যুনাল : ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল ফর দ্যা ফরমাল যুগোশ্লাভিয়া (আইসিটিওয়াই) হচ্ছে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রথম যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল। নুরেমবার্গ ও টোকিও ট্রাইব্যুনালের পর এটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল।

১৯৯৩ সালের মে মাসে জাতিসংঘ কর্তৃক এটা প্রতিষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ চার্টারের ৭ চেপ্টার অনুযায়ী। ১৯৯০ সালে সাবেক যুগোশ্লাভিয়ায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করছে এই ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়াও গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ নিয়েও তারা বিচার কাজ করছে। বিশেষ করে বসনিয়ায় সার্ব আর্মিদের ধর্ষণ, যৌন নির্যাতনের বিষয়গুলো ট্রাইব্যুনালের বিচারাধীন রয়েছে। সার্ব ও বসনিয়ার সার্বদের মধ্যে জাতিগত দ্বনদ্ব নিয়ে ট্রাইব্যুনাল ব্যাপক তদন্ত চালায়।

তারা বসনিয়ার মুসলিমসহ নানা ভিকটিমদের সাথেও কথা বলে। এরপর স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত ট্রায়ালের মাধ্যমে কে দোষী ও নির্দোষী নির্ধারণ করা হয়। ট্রাইব্যুনালে ৩টি অরগান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চেম্বার, অফিস অফ দ্যা প্রসিকিউটর এবং দ্যা রেজিস্ট্রার। চেম্বারে ৩টি ট্রায়াল চেম্বার এবং একটি আপিল চেম্বার রয়েছে।

আর চেম্বারকে সহায়তা করার জন্য রয়েছে চেম্বারস লিগ্যাল সাপোর্ট টিম। তারা বিচারপতিদের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সরবরাহ, গবেষণার মাধ্যমে সহযোগিতা দিয়ে থাকে। প্রত্যেকটি ট্রায়াল চেম্বারে ৩ জন স্থায়ী বিচারপতি থাকবেন এবং সর্বোচ্চ ৬ জন ad litem বিচারপতি থাকবেন। ad litem বিচারপতিরা ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্টের অনুরোধে জাতিসংঘের মহাসচিব কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ট্রাইব্যুনালের আর্টিক্যাল ১২(১) অনুযায়ী এই নিয়োগ দেয়া হয়।

সিকিউরিটি কাউন্সিলের রেজুলেশন ১৯৩১(২০১০) যা ২০১০ সালের ২৯ জুন সংশোধন করা হয়েছে, তা অনুযায়ী আপিল চেম্বারে ৫ জন স্থায়ী বিচারপতি রয়েছেন। তাদের মেয়াদ ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এছাড়া অন্যান্য চেম্বারের ৮ জন স্থায়ী বিচারপতি এবং ১০ জন ad litem বিচারপতির মেয়াদ ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অথবা সংশ্লিষ্ট মামলা শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত। ট্রায়াল চেম্বারের এক একটি আদালত ৩ জন বিচারপতির সমন্বয়ে হয়ে থাকে। এর মধ্যে স্থায়ী ও ad litem বিচারপতি রয়েছেন।

ট্রায়াল চেম্বারে অবশ্যই ট্রায়াল স্বচ্ছ ও ট্রাইব্যুনালের রুল্স অফ প্রসিডিউর এবং এভিডেন্স অনুযায়ী হয়ে থাকে। এখানে অভিযুক্তের অধিকার পুরোপুরি সংরক্ষিত থাকে। এছাড়া ভিকটিম ও প্রত্যক্ষদর্শীকে প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। আপিল চেম্বার ৭ জন বিচারপতির সমন্বয়ে হয়ে থাকে। এর মধ্যে ৫ জন আইসিটিওয়াই এর স্থায়ী বিচারপতি এবং ২ জন রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনাল (আইসিটিআর) এর স্থায়ী বিচারপতি।

৫ জন বিচারপতি একমত হলেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়ে থাকে। ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট আইসিটিওয়াই-এর বিচারপতিদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাইব্যুনালের স্থায়ী বিচারপতিদের মধ্য থেকে ২ বছরের জন্য হয়ে থাকেন। এখানে পুনঃনির্বাচনের ব্যবস্থা আছে। প্রেসিডেন্ট আপিল চেম্বারের বিচারে সভাপতিত্ব করেন।

এছাড়া তিনি আপিল ও ট্রায়াল চেম্বারের বিচারপতিদের কাজ বণ্টন, ট্রাইব্যুনালের মিটিং-এ সভাপতিত্ব করা, চেম্বারের কাজের সমন্বয় সাধন এবং রেজিস্ট্রারের কাজের সুপারভিশন করে থাকেন। বর্তমানে বিচারপতি প্যাট্রিক এল রবিনসন প্রেসিডেন্ট হিসেবে রয়েছেন। তিনি ২০০৮ সালের ১৭ নবেম্বর প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর তিনি পুনঃনির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৮ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে ট্রাইব্যুনালে বিচারপতি হিসেবে কর্মরত আছেন।

তিনি জামাইকার নাগরিক। ভাইস প্রেসিডেন্টের নির্বাচন পদ্ধতিও একই রকম। দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক বিচারপতি ‘ও গন কেওন' ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০৮ সালের ১৭ নবেম্বর থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০০১ সালের ২২ নবেম্বর থেকে ট্রাইব্যুনালে কর্মরত আছেন। রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনাল : রুয়ান্ডায় মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে জাতিসংঘ চ্যাপ্টারের ৭ ধারা অনুযায়ী মহাসচিব ১৯৯৪ সালের ৮ নবেম্বর ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল ফর রুয়ান্ডা (আইসিটিআর) গঠন করেন।

১৯৯৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রুয়ান্ডায় সংঘটিত গণহত্যাসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লংঘনের ঘটনার বিচার এই ট্রাইব্যুনালের আওতাধীন। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল ফর রুয়ান্ডা (আইসিটিআর) আইন স্ট্যাটিউট অনুযায়ী হয়েছে, যা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৯৫৫ রেজুলেশন অনুযায়ী তৈরি করা। রুল্স অব প্রসিডিউর এবং এভিডেন্স আর্টিক্যাল-১৪ অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের ৩টি অঙ্গ। চেম্বার এবং আপিল চেম্বার, অফিস অব দ্যা প্রসিকিউটর, এর মধ্যে তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউটরও রয়েছে এবং রেজিস্ট্রার, যিনি ট্রাইব্যুনালের পুরো প্রশাসনিক কার্যক্রম, চেম্বার এবং প্রসিকিউটরদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে থাকেন।

১৯৯৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলের রেজুলেশন-৯৭৭ অনুযায়ী এটি তানজানিয়ার আরোশায় অবস্থিত। এই ট্রাইব্যুনালেও বিদেশী আইনজীবীরা প্র্যাকটিস করেছেন। কম্বোডিয়ার বিশেষায়িত চেম্বার কোর্ট (ইসিসিসি) : ১৯৭৫ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে ১৯৭৯ সালের ৭ জানুয়ারি ৩ বছর ৮ মাস ২০ দিনে ৩ মিলিয়ন মানুষের ওপর নির্যাতন হয়। এ সময় ক্ষমতায় ছিলেন খুমার রুজি রিজমি। এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে তার যুগের অবসান হয়।

১৯৯৭ সালে সে দেশের সরকার তাদের সিনিয়র নেতা খুমার রুজি রিজমির বিচারের জন্য জাতিসংঘের সহযোগিতা চায়। ২০০১ সালে সে দেশের জাতীয় সংসদ খুমারের সময়কাল (১৯৭৫-১৯৭৯) কোর্ট গঠনে আইন পাস করে। এই কোর্ট খুমারের সময়ে অপরাধের বিচার নিয়ে কাজ শুরু করে। কম্বোডিয়ান সরকার প্রথমত তাদের আইনে তাদের স্টাফ ও বিচারক এবং কয়েকজন বিদেশী নিয়ে বিচার কার্য পরিচালনা করতে চেয়েছিল। এ ব্যাপারে সরকার কম্বোডিয়ান আইনী ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং বিচারকে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন করার বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের আহবান জানায়।

তাদের সাথে মিটিং করে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৩ সালের জুন মাসে জাতিসংঘের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার ফলে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞগণ সহযোগিতার হাত বাড়ায় এবং এতে অংশগ্রহণ করে। তাই এখন এই কোর্টটি সরকার ও জাতিসংঘ কর্তৃক যৌথভাবে প্রতিষ্ঠিত, তবে তা স্বাধীন। এটা একটা কম্বোডিয়ান কোর্ট, কিন্তু এটা আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন এবং এতে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞগণ অংশগ্রহণ করেছেন। ইসিসিসি হচ্ছে এর ইংরেজি নাম।

ফ্র্যান্স নাম হচ্ছে CETC (Chambres Extraordinaires au sein des Tribunaux Cambodgiens). বিচারক চেম্বারে ৩ ধরনের চেম্বার রয়েছে। প্রি-ট্রায়াল চেম্বার, ট্রায়াল চেম্বার এবং সুপ্রীমকোর্ট চেম্বার। প্রি-ট্রায়াল চেম্বারে তারা তদন্তকালীন সময়ে এই চেম্বার শুনানি গ্রহণ করে থাকে। এখানে ৩ জন কম্বোডিয়ান বিচারক, ২ জন আন্তর্জাতিক বিচারক রয়েছে। যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ৫ জনের মধ্যে ৪ জনের ভোট প্রয়োজন হয়।

তদন্ত শেষ হলে প্রি-ট্রায়াল চেম্বার তা ট্রায়াল চেম্বারে পাঠিয়ে দেয়। ট্রায়াল চেম্বার সিদ্ধান্ত নিবে অভিযুক্ত অপরাধী কি না। এজন্য প্রত্যক্ষদর্শী, দলীল প্রমাণাদি এখানে উপস্থাপন করতে হয়। এখানেও প্রি-ট্রায়ালের মতো ৫ জন বিচারক। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ৪ জনকে একমত হতে হয়।

সুপ্রীম কোর্ট চেম্বার হচ্ছে ট্রায়াল চেম্বারের সিদ্ধান্ত ও রায়ের বিরুদ্ধে এই চেম্বারে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এখানে ৪ জন কম্বোডিয়ান বিচারক, ৩ জন আন্তর্জাতিক বিচারক রয়েছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ৭ জনের মধ্যে ৫ জনের একমত হতে হয়। সিয়েরালিয়নের বিশেষ কোর্ট (এসসিএসএল) : দ্যা স্পেশাল কোর্ট ফর সিয়েরালিওন জাতিসংঘ ও সিয়েরালিয়ন সরকারের যৌথ উদ্যোগে গঠিত হয়। এটা গঠিত হয়েছে তাদের জন্য যারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও দেশীয় আইন লংঘন করেছে, ১৯৯৬ সালের ৩০ নবেম্বরের পূর্বে।

২০০৩ সালের প্রসিকিউটর পক্ষ থেকে ১৩টি অভিযোগ দায়ের করা হয়। ডিসেম্বরেই ২টি অভিযোগ প্রত্যাহার হয়, অভিযুক্ত মারা যাওয়ার কারণে। আর্ম ফোর্সেস রেভুলেশনারি কাউন্সিল (এএফআরসি)-এর সাবেক ৩ নেতা, সিভিল ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ)-এর ২ সদস্য, রেভুলেশনারি ইউনাইটেড ফ্রন্ট (আরইউএফ)-এর সাবেক ৩ নেতা এর বিচার সম্পন্ন হয়েছে। তাদের আপিলও শেষ হয়েছে। সাবেক লিবারিয়ান প্রেসিডেন্ট চাল্স টেইলরের বিচার এখন চলছে।

স্পেশাল ট্রাইব্যুনালটির ৩টি অর্গান। এর মধ্যে একটি চেম্বার (আপিল চেম্বার, ট্রায়াল চেম্বার-১ এবং ট্রায়াল চেম্বার-২)। রেজিস্ট্রার অফিস (ডিফেন্সসহ) এবং প্রসিকিউটর অফিস। স্পেশাল কোর্টে ২টি ট্রায়াল চেম্বার এবং একটি আপিল চেম্বার আছে। একটি ট্রায়াল চেম্বার ৩ জন বিচারক নিয়ে গঠিত।

একজন সিয়েরা লিওন সরকার এবং বাকি ২ জন জাতিসংঘের মহাসচিব কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত। তবে ট্রায়াল চেম্বার-২-এর জাতিসংঘ একজন অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ দিয়েছেন টেইলরের বিচারের জন্য। আপিল চেম্বার ৫ জন বিচারক নিয়ে গঠিত। ২ জন সিয়েরা লিওন সরকার কর্তৃক এবং ৩ জন জাতিসংঘের মহাসচিব কর্তৃক নিযুক্ত। আর আপিল চেম্বারের প্রেসিডেন্টই স্পেশাল কোর্টের প্রেসিডেন্ট।

তিনি এক বছরের জন্য আপিল বিভাগের বিচারপতিদের ভোটে নির্বাচিত হন। আর বিচারপতিগণ ৩ বছরের জন্য নিয়োগ প্রাপ্ত হন। তবে এ সময় বর্ধিত করা যায়। বর্তমানে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিচারপতি জন কামান্ডা। তিনি সরকার কর্তৃক বিচারক নিযুক্ত হয়েছিলেন।

২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি সে দেশের আপিল বিভাগে কর্মরত ছিলেন। ২০০৭ সালে তিনি স্পেশাল কোর্টে বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। স্পেশাল কোর্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন জাতিসংঘ কর্তৃক নিযুক্ত নাইজেরিয়ার বিচারপতি ইম্মুনাওয়াল আইওল। তিনি নাইজেরিয়ার সুপ্রীমকোর্টে কর্মরত ছিলেন। তিনি গাম্বিয়ার প্রধান বিচারপতিও ছিলেন।

বিচারকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও স্বচ্ছ করার বিষয়ে দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বারবার সরকারকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশেষ রাষ্ট্রদূত ষ্টিফেন র‌্যাপ, এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশনের ওয়ার ক্রাইম কমিটি, হিউম্যান রাইট্স ওয়াচসহ বিভিন্ন মহল থেকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)-এর আন্তর্জাতিক মান নিয়ে কথা বলে আসছে। আইন ও রুল্স অব প্রসিডিউর-এর সংশোধন ছাড়া আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও স্বচ্ছভাবে যুদ্ধাপরাধের বিচার করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ। চিঠিতে সংগঠনের এশীয় অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড এডাম্স ৮ দফা সুপারিশ দিয়েছিল। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান মারিও ডিয়াজ ব্যালার্ট।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের সাথে অসংগতিপূর্ণ ও অব্যবস্থাপনায় পূর্ণ এই ট্রাইব্যুনাল থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। এর আগে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ আইনে স্বচ্ছ বিচারে বিশ্বস্বীকৃত মানদন্ড অনুপস্থিত বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছিলেন মার্কিন সিনেটর জন বুজম্যান। এই চিঠিতে এই অভিযোগে আটকদের ব্যাপারে মৌলিক মানবাধিকার খর্ব করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.