আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শরীর এবং কয়েকজন অমানুষ

তুমি ক্ষমাশীল হও, সৎ কাজের আদেশ কর, আহাম্মকদের থেকে দূরে থাকো. -সুরা আরাফ, আয়াত.১৯৯ রিতা উঠে তার বুকের উপর শাড়ির আঁচল টা টেনে দেয়। বিছানার এলো মেলো চাদরের উপর আয়েসি ভংগিতে শুয়ে সিগারেট ধরায়, সেজান। রিতা এবার অগোছানো চুলে খোপা বাধে, সেজান সিগারেটের ধোয়ার কুন্ডলীর দিকে তাকিয়ে বলে, - এখন কোথায় যাবে? অফিসে। - বাসায় ফিরবে কটায়? দেখি তাড়াতাড়িই ফিরব, শরির টা তেমন ভালো লাগছেনা। - তাহলে আজ আর অফিস গিয়ে কি হবে? নাহ এমনিতেই দেরি করে ফেলেছি, এরকম চলতে থাকলে চাকুরী টা টেকানো যাবেনা, - ধুর, মেয়েদের আবার চাকুরী যায় নাকি? বলে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে সেজান, রিতা সেটা খয়াল করে না, আনমনে শাড়ি টা ঠিক করতে করতে বলে, কি বললে? - নাহ কিছুনা, তাড়া তাড়ি বাসায় ফিরো, লোক জনের চিন্তা হয়, বলে আবারো তার চেহারায় এক ধরনের হেয়ালী ভাব ফুটিয়ে তোলে, রিতা কিছু বলেনা।

ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলে - তোমাকে যে কথা টা বলে ছিলাম মনে রেখো, ব্যাপারটা খুব জরুরী, সময় কমে এসেছে, আশা করি বুঝতে পারছো। - ইয়েস ডার্লিং আই ডু। বলে সেজান আবার আনমনে সিগারেটের ধোয়ার কুন্ডুলি টার দিকে তাকিয়ে থাকে, ধোয়াটা ঘুরন্ত ফ্যানের পাখায় ভর করে কিছুক্ষন এদিক সেদিক গিয়ে, মিলিয়ে যায়। রিতা সেজানের নাকে নাক ঘষে আল্লদি ভাব নিয়ে বলে যাচ্ছি, দরজা পর্যন্ত এসে অন্তত আমাকে বিদায় দিয়ে যাও। ২ সারা দিনের অফিসের ঘ্যান্তা গিরি শেষে বাসায় ফের রিতা, ভীষন ক্লান্তি নিয়ে দরজার কলিং বেল টেপে।

দরজা খুলে দেয় রিয়ন, রিতার ছেলে, এবার ইন্টার দেবে, বেশ সফষ্টিকেটেট ছেলে, মায়ের সাথে তেমন একটা কথা বলে না, কর্পরেটদের মতন কেবল অফিসিয়াল কথা ছাড়া আর কিছু বলেনা সে। বোধ করা যায় মাকে সে তেমন একটা পছন্দও করেনা। ইদানিং অবস্হা এতো খারপ হয়েছে, সে মাকে দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। রিতা অবশ্য কারনটা ধরতে পেরছে, সে ঘাটতে চায়না ছেলেকে, কি দরকার? থাকুক না ওর মতন। আরতো মাত্র কটা দিন, এসব ভাবনার ফাঁকে রিতা মবিনের দিকে তাকায়, মবিন রিতার স্বামী।

(প্রিয় পাঠক অনেকে ভাবছেন আমি বোধহয় নামটা ভুল লিখছি, এরকম ভুল লেখার অভিযোগ আমার বিরুব্ধে আছেও, কিন্তু না। আমি মোটেও ভুল নাম লিখিনি, এটা একটা পরকীয়ায় বলি হওয়া কিছু জীবনের গল্প। ) রিতা ভ্রু কুচকে মবিনের দিকে তাকিয়ে জানতে চায়- কি ব্যাপার, তুমি এত তাড়া তাড়ি? - নাহ তেমন কিচ্ছুনা, শরিরটা ও ভালো যাচ্ছেনা, ভাবলাম একটু তাড়া তাড়ি বাসায় যাই। রিতা সোফার উপর ব্যাগ রেখে, সোফায় শরীর এলিয়ে দেয়, একটা প্রশান্তির ভাব শরীরের মধ্যে ঢেউ খেলে যায়, মবিন উঠে এসে রিতার পাশে বসে, সে রিতার মাথাটা তার কাধে রেখে বলে, - খুব কষ্ট হয়েছে তোমার, না? এই তো আর কটা দিন, ছেলেটা বড় হয়ে যাচ্ছে, ও কাজ বাজ আরম্ভ করলে তো আমাদের ছুটি, দুজনে মিলে সংসার টা চালিয়ে নিচ্ছি আমরা। আমার একদম ইচ্ছে করেনা তুমি চাকরী টা করো।

কিন্তু কি করবো বলো? আমি তো একা চালাতে পারছিনা। ওহ ভালো কথা, যা গরম পরেছেনা আজকে। দেখি তুমি এই কুশনটায় ঢেলান দিয়ে শুয়ে থাকো, আমি দেখি ফ্রিজে ঠান্ডা পানি আছে কিনা? রিতা কিছুটা আল্লাদি ভাব নিয়ে বলে, না থাক, তুমি বসো না আমার পাশে কিছুক্ষন। আচ্ছা একটা কথা বলি? - হ্যা বলো। তুমি আমাকে এতোটা ভালো বাসো কেন? মবিন রিতার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে, ভালো বাসার কোন পরিমাপ করা যায় না, পরিমাপ করা গেলে আমি তোমাকে দেখাতাম কতখানি ভালো বাসি তোমায়, তুমিতো আমার প্রথম প্রেম।

রিতা সামান্য অস্বস্তি নিয়ে বলে ছাত্রী পড়াতে গিয়ে তাকে আজ বৌ বানিয়ে ফেলেছো। - কেনো রিতা তুমি আমাকে ভালো বাসো নি, সে সময়? রিতা কিছু বলে না, তার মনের ভেতর দহন চলে, মবিন তার মাস্টার ছিলো, রিতা তখন এইটে পড়ে, আর মবিন অনার্সে, এক সন্ধায় মবিন পড়াতে আসে, মা বাবা বাসায় ছিলেন না। বাসায় রেখে গিয়েছিলো রিতা কে আর কাজের বুয়াকে, সারা সন্ধ্যা বৃষ্টি হলো সেদিন সাথে ঝড়। ইলিক্ট্রসিটি চলে যাওয়া তে বুয়া গিয়েছিলো মোম আনতে, দোকানে। বৃষ্টিতে ফিরতে পারছিলো না, সে।

আর সেই শ্রাবন সন্ধ্যায় চুরি হয়ে গেলো....... নাহ থাক এসব আর এখন ভেবে কি হবে? মবিনই তো ওকে বিয়ে করেছে, ও তো পালিয়ে যায় নি। ৩ রিতা শুয়ে আছে সেজানের পাশের বালিশে মাথা রেখে, সকালের সোনা রোদে ভেসে যাচ্ছে ওদের বিছান বালিশ, জানালার আলো আসার ফাকা টুকু থেকে আকাশ দেখা যায়, রিতা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে- তুমি ক্যানো ফিরে এলে সেজান? সেজান রিতার চুলে হাত ডুবিয়ে বলে, বিদেশের সেই উচ্ছল জীবনে কেবল একটা কথাই বার বার মনে পড়তো আমার, কি এক দায় বন্ধন জেনো ফেলে রেখে গিয়েছিলাম এই দেশে। তোমার মনে আছে তুমি আর আমি এক স্কুলে পড়তাম, ছেলে মেয়ের কম্বাইন্ড স্কুল, তুমি এইটে পড়তে আর আমি টেনএ, তোমাকে একটা লাভ লেটার দিয়েছিলাম। তুমি চিঠিটা নিয়ে আলতো হেসে ছিলে, তুমি আসলে ভিষন ইচড়ে পাকা ছিলে বুঝলে রিতা। রিতা মুচকি হেসে বলে- হ্যা হয়েছে আমি ইচড়ে পাকা হলে তুমি কি ছিলে? টেনে পড়তে-পড়তে মেয়েদের লাভ লেটার দেওয়া, কি সাহস তোমার? সেজান রিতার নাকে নাক ঘসে বলে তুমি সাহসের দেখোছ কি.............? ৪ রিয়নের আজকে মেজাজ খুব খারাপ, এত টা খারপ যে তার কষ্টে কষ্টে মরে যেতে ইচ্ছা করছে, কিন্তু চাইলেই তো মরে যাওয়া যায় না, মরে গেলেই তো সব শেষ।

কাঁদলে কেমন হয়? নাহ ছেলেদের কাদতে নেই। টুম্পা কে তার খুব ভালো লাগে, এক সাথে কলেজে পড়ে ওরা, টুম্পার মা জিনিয়া রহমান রিয়নের মায়ের অফিস কলিগ, টুম্পা মেয়েটা বেস উচ্ছল আর কাটা কাটা কথা বলে, ওর চোখের প্রগাড় চাহুনি রিয়ন কে ভাবায়। অবাক বিস্ময় নিয়ে সে টুম্পার দিকে তাকিয়ে থাকে, পরীরা কি এত সুন্দর হতে পারে? সেই টুম্পা আজকে ওকে ফিরয়ে দিয়েছে। কাল পর্যন্ত মেয়েটা ওকে ভালো বাসতো, কিন্তু আজ কেন হঠাৎ টুম্পাটা এরকম করল? সে বুঝে উঠতে পারছেনা। ও কেবল জিগ্যেস করে ছিলো- কি হয়েছে টুম্পা? টুম্পা কেবল কাঁদতে- কাঁদতে বলেছে- তোমার মাকে গিয়ে জিগ্যেস করো।

৫ রিতা দ্রুত হাটছে, অনেকটা শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে। সকালে সেজানের ফ্লাটে গিয়ে সে পায়নি সেজানকে। দরজায় তালা দেখে মোবাইলে কল করে ছিলো, সেটাও বন্ধ। রিতা অফিসে গিয়ে ছিলো, তার বস তাকে ডেকে একটা কাগজ হাতে দিয়ে বলেছে- ইউ আর টার্মিনেটেড। রিতা কিছু বোঝেনি, অফিস কলিগ জিনিয়া রহমান রিতা কে ডেকে বলেছে আপনার নষ্ট ভিডিও বেড়িয়েছে।

ছিঃ আপনার মতন একজন মানুষ এরকম কাজ কেন করলেন?! কত সুন্দর সংসার আপনার, ছেলেটা কি ম্যরিটরিয়াস! মেট্রিকে গোল্ডেন জিপিএ পেলো আর আপনি, ঘেন্যা হয় জানেন। রিতা আর কিছু বলেনি, কেবল ভাবছে- কেনো এমন করলো সেজান!? কেনো সেও তাকে ঠকালো? রিতা আবার নতুন করে তাকে নিয়ে সংসার বাধার কথা ভেবে ছিলো। ছেলেটার একটা চাকরী হলে মবিন নামক মাংস পিন্ডটাকে ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলো সেজানের সাথে। আর সেই সেজান তাকে ধোকা দিলো। সে বার বার মনে করিয়ে দিতো কথা গুলো সেজান কে আর সেজান কেবল বলত- আই ডু।

৬ রিতার ঘর থেক পুলিশ রিতার ঝলসে যাওয়া লাশ উদ্বার করেছে, পুলিশের ধারনা ব্যাপারটা আত্য হত্যা, কারন তারা রিতার ঘরটা ভেতর থেকে বন্ধ পয়েছে। তবুও তারা মবিন কে থানায় নিয়ে গেছে, ভদ্র লোকের রেকর্ড তেমন একটা ভালো পাচ্ছেনা পুলিশ, তার নাকি এক অফিস কলিগের সাথে বহু দিনের অবৈধ সম্পর্কের খোঁজ পায়া গেছে, তদন্ত চলছে। ৭ রিয়নকে আর পাওয়া যায়ানা। সে হারিয়ে গেছে, মবিনের যাবৎ জীবন জেল হয়েছে, তার স্ত্রী কে সেই খুন করেছে, খুন করার আগে সে রিতার নষ্ট ভিডিওর ব্যাপারে কিছুই জানতো না, কেবল তার সেই অফিস কলিগ কে বিয়ে করার জন্যই পরিকল্পিত ভাবে খুন করে মবিন রিতাকে। রিতার ঘরের দরজা ভেতের থেকে লাগিয়ে টয়লেট দিয়ে বেড়িয়ে আসার একটা রাস্তা মবিনের চেনা ছিলো।

৮ এর কিছু দিন পর, এক ট্রেন লাইনের উপর অগ্যাত এক ব্যাক্তির বিভৎস লাশ উধ্যার হয়, ট্রেনে কাটা পড়া, ময়না তদন্তে জানা যায় স্বাশ রোধ করে হত্যার পর, ফেলে দেয়া হয়েছিলো লাইনের উপর। লোকটার মুখ এতটাই থেতলে গেছে চেনা যাচ্ছিলনা, পরে সেই ট্রেন লাইনের পাস থেকেই পুলিশ একাটা পাসপোর্ট উধ্বার করে, যে টির মালিক সেজান রহমান নামে কেউ, পুলিশের ধারনা যে লাশ টি উদ্বার করা হয়েছে, পাসপোর্রট টি ও তার। পুলিশ সেজান রহামানের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছে, এই লোকের উদ্দেশ্য ই ছিলো নারী দের সাথে দৈহীক সম্পর্ক গড়ে তার অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা, সম্প্রতি তার যে ভিডিও এসে ছিলো সেখানে নারী চরিত্রে ছিলো রিতা নামের এক মহিলা, সেও মারা গেছে আগুনে পুড়ে, রিতার ছেলে রিয়ন নিখোঁজ অনেক দিন। প্রতি হিংসা পরায়ন হয়ে সেই কি, সেজানকে হত্যা করেছে কিনা? পুলিশ বুঝতে পারছেনা। তবে কেউ কেউ মনে করছে সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।

মুখ বন্ধঃ গদ বাধা কিছু কথা লিখে নেই, এই গল্পের প্রত্যেক টা চরিত্রই কাল্পনিক। কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে আমি দাই নই। গল্পটার শেষ যখন ট্রেন লাইন দিয়ে করলাম, তাই ট্রেন লাইনের কথাই বলি, আমরা বিভিন্ন সময় খবর পাই, বিমর্ষ হয়ে দেখি ট্রেন লাইন চুত্য হওয়ায় ২০ জনার মৃত্যু আমরা বেথিত হই। একবারো ভাবিনা আমাদের এই জীবনও একটা ট্রেন। আর সেওট্রেন যে লাইনের উপর চলেছে সেটা হলো ধর্ম এবং ধর্মের আদবে শেখা মুল্য বোধ।

যখন কেউ সেই শিক্ষা থেকে দুরে সরে যায় সেই ছিটকে পড়ে, লাইনচুত্য ট্রেনের মতন। বহু গামীতাকে যারা ব্যাপার না বলে বগল দাবায়, তারা জানেকি এই বহু গামীতার বলি হচ্ছে কতো রিয়নরা। জানে তারা ঠিকই, বলবেনা। বিবাহ বহির্ভুত যৌন কামনা কোন সমাজে শান্তি আনতে পারনা, সম্ভব না। কবে জাগবে মানুষ, আগাছার ভিড় ঠেলে? তবে হ্যা প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে কাউকে হত্যা করা বুদ্বিমানের কাজ না, রিয়ন যতই পালিয়ে বেরাক ধরা সে একদিন পরবেই, হয়তো এপারে না হলে ওপারে।

০০০০ ফেইস বুকে আমাকে আমার পেইজ দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যানঃ View this link আমার রিসেন্ট আর একটি লেখাঃ কাম সাধনা এবং কামরুপ-কামাখ্যা  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৮৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।