https://twitter.com/nanarkota
দারিদ্র্য বিমোচনে লড়াইয়ে স্বীকৃতি হিসেবে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল দেয়া হল ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে।
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরেক অনন্য সম্মানে ভূষিত হলেন। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস গতকাল বুধবার তাকে কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল প্রদান করেছে। এই অনন্য সম্মাননা আরও উঁচুতে নিয়ে গেল গরিবের ব্যাংকার হিসেবে পরিচিত ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। স্থানীয় সময় সকাল ১১টার পর (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার পর) মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষ সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের এক যৌথ অনুষ্ঠানে তাকে এ সম্মাননায় ভূষিত করা
হয়।
বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য মার্কিন সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ নেতারা তাকে এ পুরস্কার দেন। ২০১০ সালে ভোটের মাধ্যমে মার্কিন কংগ্রেস ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এই অনন্য সম্মাননা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
কর্মক্ষেত্রে বিশেষ অবদান ও সাফল্যের জন্য এই গোল্ড মেডেল বেসামরিক নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা। জমকালো এ অনুষ্ঠানে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ স্পিকার জন বোয়েনার, সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হ্যারি রেইড, সিনেটে রিপাবলিকান নেতা মিটচ ম্যাককনেল, হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ডেমোক্র্যাট নেতা ন্যান্সি পেলোসি, সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের উপনেতা ডিক ডারবিনসহ কংগ্রেসের উভয় কক্ষের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এই পদক দেওয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক লাভলু আনসার।
তিনি বিবিসিকে বলেন, ড. ইউনূসের এ সম্মাননাপ্রাপ্তি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের সমাজকর্মী, সাংবাদিক, পেশাজীবী, কবি, সাহিত্যিক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এবং ড. ইউনূসের বন্ধুরা উপস্থিত ছিলেন। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদেরও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে বর্তমানে সম্পৃক্ত নন, এ ব্যাপারে কোনো কথাবার্তা কি হয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে লাভলু জানান, না। এ ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি।
অনুষ্ঠান শেষে ড. ইউনূস জানিয়েছেন, এ পুরস্কারপ্রাপ্তিতে তিনি আনন্দিত। তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য খুবই গৌরবের।
মার্কিন কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেলপ্রাপ্তি উপলক্ষে ১৫ এপ্রিল নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে ইউএন ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন জাতিসংঘের উপমহাসচিব জ্যান এলিয়েসন। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে ড. ইউনূসকে আগাম অভিনন্দন জানান এবং তার উদ্ভাবিত ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার চিন্তাধারায় পিছিয়ে থাকা বিশ্বে আরও ব্যাপকভাবে বিস্তৃত করার সংকল্প ব্যক্ত করেন।
অনাড়ম্বর পরিবেশে আন্তরিক এ সংবর্ধনায় অভিভূত ও কৃতজ্ঞ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এমন একটি সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরে তিনি ব্যক্তিগতভাবে যেমন সম্মানিত বোধ করছেন, তেমনিভাবে গ্রামীণ পরিবারের সব সদস্য উপকৃত হয়েছেন।
এর আগে ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির এক মিলনায়তনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এ বিশাল প্রাপ্তি উপলক্ষে তার কন্যা মনিকা ইউনূস বর্ণাঢ্য এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। মনিকা ইউনূসের সংগঠন 'সিং ফর হোপ'-এর এ অনুষ্ঠানে বাংলা বর্ষবরণের আমেজে সবাই অংশ নেন। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব থমাস স্টেলজার ছিলেন অতিথির অন্যতম।
গতকাল কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল প্রদান অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাউস স্পিকার জন বোয়েনার।
এরপর বাজানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত। এরপর সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন নিউজার্সির হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ সদস্য রাশ হোল্ট, ফ্লোরিডার ইলিয়েনা রস লেহটিনেন, উইয়োমিংয়ের সিনেটর মাইকেল এনজি ও ইলিনয়ের সিনেটর রিচার্ড জে ডারবিন। অনুষ্ঠানে ড. ইউনূসের মেয়ে মনিকা ইউনূসের 'বিউটিফুল ড্রিমার' শীর্ষক সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। পরবর্তী ধাপে বক্তব্য রাখেন জন বোয়েনার, ন্যান্সি পেলোসিসহ হাউস ও সিনেটের নেতারা। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল তুলে দেওয়া হয়।
এই অনন্য সম্মাননায় ভূষিত হয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেন ড. ইউনূস।
কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক। নিরাপত্তা, অগ্রগতি ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এই পদক দেওয়া হয়। গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে ড. ইউনূস ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলন শুরু করেন। এর ফলে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।
তার সৃষ্টিশীল চিন্তা, কঠোর পরিশ্রম এবং পরিকল্পনার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ বিশেষ করে নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটেছে।
কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেলকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডমের সমমর্যাদার বলে বিবেচনা করা হয়। কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল প্রদানের বিষয়টি মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। ড. ইউনূসের আগে এই পদক পেয়েছেন জর্জ ওয়াশিংটন, স্যার উইনস্টন চার্চিল, ইলি ওয়েসেল, পোপ দ্বিতীয় জন পল, মার্কিন লুথার কিং প্রমুখ। মার্কিন সিনেটর ডিক ডারবিন সিনেটে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন ড. ইউনূসকে কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল প্রদানের বিষয়ে।
ড. ইউনূসকে পদক দেওয়ার বিষয়ে কংগ্রেসে ভোট হয় ২০১০ সালে। ডারবিনের সঙ্গে ড. ইউনূসের প্রথম সাক্ষাৎ হয় বাংলাদেশে। ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে এবং দরিদ্র দেশগুলোতে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে ডারবিন ১০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন ড. ইউনূসের সঙ্গে।
সমকাল
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।