পড়ুন.... খালাফ খুনী গ্রেফতার
০ সৌদি কূটনীতিক খালাফ আল আলী খুনের রহস্য উদঘাটন
০ ৪ খুনী গ্রেফতার
০ খুনীরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে
বিশেষ প্রতিনিধি ॥ অবশেষে ৪ মাস ২০ দিন পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খালাফ মোহাম্মদ আল আলী খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে। খুনের সঙ্গে জড়িত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা পেশাদার অপরাধী। খুনে ব্যবহৃত রিভলবারটি উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে খুনের সময়ে ব্যবহৃত গাড়িটি।
গ্রেফতারকৃত ৪ খুনীকে ৮ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ছিনতাই করতে গিয়ে দুর্বৃত্তরা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে খালাফকে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। ঢাকায় সৌদি দূতাবাসের খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও খুনীরা গ্রেফতার হওয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের সুসম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেফতারকৃত ৪ জন হচ্ছে, সাইফুল ইসলাম ওরফে মামুন, মোঃ আল আমিন, আকবর আলী লালু ওরফে রনি, মোঃ রফিকুল ইসলাম ওরফে খোকন। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদকালে খুনের ব্যাপারে স্বীকার করেছে বলে গোয়েন্দা পুলিশ দাবি করেছেন।
তারা ডাকাতি ও ছিনতাই কাজে জড়িত। সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা ছাড়াও এই সঙ্ঘবদ্ধ দুর্বৃত্ত দলটি সাবেক নৌবাহিনীপ্রধানের বাসায় ও ডেপুটি কর কমিশনারের বাসায় ডাকাতি করেছে বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানিয়েছে।
যেভাবে হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে ॥ রাজধানীর অভিজাত এলাকার কূটনৈতিকপাড়ায় সৌদি দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি সৌদি নাগরিক খালাফ আল আলীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশে এই প্রথম কোন কূটনীতিককে গুলি করে হত্যা করার ঘটনা ঘটল। কারা কি কারণে তাকে গুলি করে হত্যা করেছে তার কারণ এখনও উদঘাটিত হয়নি।
পুলিশ, সিআইডি, র্যাব, ডিবি, এসবি, ডিজিএফআই, এনএসআইসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত শুরু করেছেন। সৌদি কর্মকর্তা নিহত হওয়ার খবর শুনে মঙ্গলবার সকাল ১২টার দিকে সৌদি দূতাবাসের এ্যাম্বাসেডর এ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক এম আলামা সিদ্দিক এবং চীফ অব প্রটোকল এমএএস সাদিক দুপুরে ইউনাইটেড হাসপাতালে ছুটে যান। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সৌদি আরব সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
ঘটনার পর রাত প্রায় সোয়া একটার দিকে গুলশানের নিজ বাসার সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় সৌদী দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি, হেড অব সিটিজেন এ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা খালাফ আল আলীকে (৪৭)। এই হত্যাকা-কে পূর্বপরিকল্পিত এবং সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য বলে তদন্তকারীরা প্রাথমকি ধারণায় উপনীত হয়েছেন।
এটা কোন ছিনতাইয়ের উদ্দেশে দুর্বৃত্তের হাতে খুন হওয়ার ঘটনা নয় বলে তদন্তকারীদের ধারণা। তার দেহে মাত্র একটি গুলির আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। যেখানে খুন হয়েছেন সেখানে কোন রক্ত পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত শেষে খালাজের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়েছে।
ঘটনার পর রাত সোয়া ১টার দিকে রাজধানীর গুলশান-১-এর ১২০ নম্বর রোডে এই খুনের ঘটনাটি ঘটে।
১২০ নম্বর রোড ও ১১৭ নম্বর রোড পাশাপাশি। ১১৭ নম্বর রোড থেকে সোজা পশ্চিম দিকে প্রায় ২০ ফুট চওড়া এবং ৫শ’ ফুট লম্বা একটি রাস্তা আছে। রাস্তার দু’পাশে ৪টি করে মোট ৮টি বাড়ি। ১১৭ নম্বর রোড থেকে পশ্চিম দিকে ঢুকতেই প্রথমেই বামদিকে পড়বে অগানন নামের ডুপ্লেক্স একটি বুটিক হাউস। আর ডানদিকে পড়বে ৬তলা ১৯/বি নম্বর বাড়িটি।
এ বাড়িটিতে বাংলাদেশের ব্রিটিশ দূতাবাসের একাধিক কর্মকর্তার বসবাস। বাড়িটির পঞ্চম তলায় পর্তুগালের কনসুলেট অফিস। এখানে ঢুকেই মাত্র ১০ গজ পরেই ১৯/বি নম্বর বাড়িটির দেয়ালের পাশ থেকে এগুনোর সামনের রাস্তা থেকে খালাফকে উদ্ধার করা হয়। খালাফকে যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তার নিচ দিয়ে মাত্র এক ফুট চওড়া একটি ড্রেন বয়ে গেছে। ড্রেনের ওপর প্রায় ৬ ফুট লম্বা দুটি সিমেন্টের পাটাতন রয়েছে।
উদ্ধারকালে খালাফ অজ্ঞান অবস্থান ওই পাটাতনের ওপর রাস্তার দিকে পা আর দেয়ালের দিকে মাথা দিয়ে পড়ে ছিলেন। দেয়ালসহ ড্রেনের ওপর ফুলের গাছের লতা ঘন হয়ে ছেয়ে আছে। এতে সহজেই আলো বিশেষ করে রাতে ড্রেনের ওপর পড়বে না।
রাত সোয়া একটার দিকে সেখান থেকে অচেতন অবস্থায় অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করে প্রথমেই খালাফকে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
ভোর পৌঁনে ৫টার দিকে ইউনাইটেড হাসপাতালেই খালাফকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খালাফ যে জায়গায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সেখান থেকে বাসার দূরত্ব মাত্র ৩৩ গজ। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে খালাফের মৃত্যু হয়। খালাফের দেহ থেকে এক ফোঁটা রক্তও বাইরে বের হয়নি। খালাফের বাম পাঁজরের নিচে একটি গুলির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
বিকেল ৫টার দিকে খালাফের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
ডিএমপির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যা বলা হয়েছে ॥ বুধবার ডিএমপির দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ০৫/০৩/১২ খ্রিঃ তারিখ রাত (০৬/০৩/১২ খ্রিঃ তারিখ রাত) অনুমান ১.২০ ঘটিকায় গুলশান থানাধীন ১২০ নং রোডে সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খালাফ মোহাম্মদ আল আলী দুষ্কৃতকারী কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। উল্লিখিত ঘটনায় গুলশান থানার মামলা নং-১৫, তারিখ- ০৭/০৩/১২ খ্রি. ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেশী-বিদেশী মিডিয়ায় প্রচারিত হয় এবং মামলাটির বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারও বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। মামলাটি প্রাথমিক পর্যায়ে থানা পুলিশ তদন্ত করে।
পরবর্তী সময়ে গুরুত্ব বিবেচনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ওপর মামলাটির তদন্তভার ন্যস্ত করা হয়।
মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এবং এর সাথে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি জড়িত বিবেচনায় রেখে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটির মূল রহস্য উদঘাটন ও জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালায়। তদন্তকালে মামলাটির তদন্ত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পদক্ষেপের সঙ্গে মৃতের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়। ময়নাতদন্তকালে মৃতের শরীরে বিদ্ধ গুলির অংশ ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার উদ্ধারপূর্বক পুলিশের নিকট হস্তান্তর করেন। পুলিশ উক্ত ফায়ার্ড বুলেট জব্দনামা মূলে জব্দ করেন এবং ফায়ার্ড বুলেটটি কোন ধরনের অস্ত্র হতে নিক্ষিপ্ত হয়েছে তা নির্ধারণের জন্য সিআইডি বাংলাদেশ, ঢাকার ব্যালিস্টিক বিশারদের নিকট প্রেরণ করা হয়।
ব্যালিস্টিক বিশারদ এই মর্মে মতামত দেন যে, ‘ফায়ার্ড বুলেটটি .২২ ক্যালিবারের নিয়মিত আগ্নেয়াস্ত্র হতে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। ’
মামলাটির রহস্য উদঘাটনের জন্য ছিনতাই/দস্যুতা সংঘটনের বিষয়, ভিকটিমের ব্যক্তিগত ও পেশাগত বিষয় এবং কোন দেশী বা আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্র জড়িত থাকার বিষয়সমূহ বিস্তারিত ও নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখা হয়। এ কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের কর্মকা- পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি মাথায় রেখে তদন্ত কাজ অব্যাহত থাকে। ইতোমধ্যে গত ০৪/০৬/১২ খ্রিঃ তারিখ ডিএমপির দক্ষিণখান থানাধীন উত্তর গাওয়াইর এলাকা হতে আসামি (১) সাইফুল ইসলাম মামুন (২৪), পিতা-মৃত আঃ মোতালেব হাওলাদার, সাং-মধ্য খোন্তাকাটা, থানা-শরণখোলা, জেলা- বাগেরহাট; বর্তমানে-১৩২ উত্তর গাওয়াইর, থানা-দক্ষিণখান, ডিএমপি, ঢাকা, (২) মোঃ আল-আমিন (২৫), পিতা- ফারুক ঘরামী, সাং-হাজীখালী, থানা ও জেলা-পটুয়াখালী; বর্তমানে- কুড়িল বিশ্বরোড, থানা-খিলক্ষেত, ডিএমপি, ঢাকা এবং (৩) আকবর আলী লালু রনি (২৪), পিতা-আঃ জলিল, সাং- গোয়ালকোয়া, থানা-ডামুড্যা, জেলা- শরীয়তপুর; বর্তমানে-২৭ নং ধামালকোট, হাজী সোবহান রোড, থানা-ভাষানটেক, ডিএমপি, ঢাকা, দের দেখানো ও দখল হতে একটি কালো রঙের বিদেশী .২২ বোর রিভলবার নং- ১৬১৬৮১৯ উদ্ধার করা হয়।
ধৃত আসামি সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় সে সহ আসামি আল আমিন ও আকবর আলী লালু রনি গং পর্যায়ক্রমে উক্ত অস্ত্রটি দখলে রাখে। এতদসংক্রান্তে উক্ত তিনজনের বিরুদ্ধে দক্ষিণখান থানার মামলা নং- ০৮ (০৬) ১২ খ্রিঃ, ধারা- ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯-এ রুজু হয়। মামলাটির তদন্তকালে প্রকাশ পায় যে, উল্লিখিত উদ্ধারকৃত .২২ বোরের রিভলবারটি গত ২৯/০৯/১১ খ্রিঃ তারিখ রাতে খিলক্ষেত থানাধীন সেবা ক্লিনিকের মালিক আবুল হোসেনের বাসায় উল্লিখিত আসামি (১) সাইফুল ইসলাম মামুন (২৪), (২) মোঃ আল-আমিন (২৫), (৩) আকবর আলী লালু রনি (২৪), (৪) মোঃ রফিকুল ইসলাম খোকন (৩০), পিতা-আব্দুস সালাম, সাং-নাটকঘর বাইলেন, থানা- কোতোয়ালি, জেলা-ময়মনসিংহসহ অন্যরা ডাকাতি করে অন্য মালামালের সাথে নিয়ে যায়।
অতঃপর খালাফ মোহাম্মদ আল আলীর মামলাটি তদন্তের স্বার্থে উদ্ধারকৃত রিভলবারটি হতে ভিকটিমের মৃত দেহ থেকে উদ্ধারকৃত ফায়ার্ড বুলেটের অংশ নিক্ষিপ্ত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত প্রদানের জন্য বিজ্ঞ আদালতের অনুমতিক্রমে সিআইডি বাংলাদেশ, ঢাকার ব্যালিস্টিক বিশারদের নিকট প্রেরণ করা হয়। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ব্যালিস্টিক বিশারদ এই মর্মে মতামত প্রেরণ করেন যে, “ক্রমিক নং ১-এ বর্ণিত আলামত রিভলবার (রিভলবার নং-১৬১৬৮১৯ অজগওঘওঙঝ, গঅউঊ ওঘ এঊজগঅঘণ) দ্বারা ক্রমিক নং ২-এ বর্ণিত আলামত ফায়ার্ড বুলেট ফায়ার করা হয়েছে।
” উক্ত মতামত প্রাপ্তির পর সঙ্গতকারণেই প্রতীয়মান হয় যে, উল্লিখিত আসামি (১) সাইফুল ইসলাম মামুন (২৪), (২) মোঃ আল-আমিন (২৫), (৩) আকবর আলী লালু রনি (২৪), (৪) মোঃ রফিকুল ইসলাম খোকন (৩০) আলোচ্য মামলার ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে। কেননা মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্টের মতোই ফায়ার্ড বুলেটে বিভিন্ন ধরনের মার্ক থাকে, যা শুধুমাত্র কোন নির্দিষ্ট আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা গুলিবর্ষণের ঘটনাই প্রমাণ করে এবং এটি একটি চূড়ান্ত সাক্ষ্য। তাছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আসামিদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি যাচাই ও নিশ্চিত করা হয়। এ কারণে তাদেরকে উক্ত মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে এবং তদন্তের স্বার্থে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রকৃত রহস্য উদঘাটনসহ অন্যান্য বস্তুগত সাক্ষ্য সংগ্রহ করার জন্য আট দিনের পুলিশ রিমান্ডে আনা হয়। রিমান্ডে ধৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে আসামি মোঃ রফিকুল ইসলাম খোকনের দেখানো মতে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত গাড়িটি গত ২৪/০৭/২০১২ খ্রি. তারিখ রাতে ঢাকার মানিকদী এলাকা হতে উদ্ধার করা হয়।
উল্লেখ্য, উক্ত আসামিরা অভ্যাসগতভাবে ডাকাতি ও ছিনতাই কাজের সাথে জড়িত। ইতোপূর্বে সাবেক নৌবাহিনী প্রধানের বাসায় ও ডেপুটি কর কমিশনারের বাসায় তারা ডাকাতি করে বলে তদন্তকালে প্রকাশ পায়। নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে মামলাটির তদন্ত অব্যাহত আছে।
মামলাটির আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বিবেচনায় মোল্যা নজরুল ইসলাম পিপিএম (বার), ডিসি (ডিবি-উত্তর), ডিএমপি, ঢাকা মহোদয়ের নেতৃত্বে মামলাটির তদন্তকারী অফিসার মোঃ ওবায়দুল হক পিপিএমসহ ডিবি-উত্তর বিভাগের এডিসি, এসি ও অন্য অফিসারদের দীর্ঘদিনের ঐকান্তিক ও সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আলোচ্য মামলাটির মূল রহস্য উদঘাটন ও জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়, যার ফলে দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ তথা বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়।
সে সময় কে কি বলেছিলেন ॥ গুলশান থানার অপারেশন অফিসার জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, খালাফের দেহের ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে।
যার ফলে খালাফকে রক্ত দেয়ার কোন পথ ছিল না। খালাফের বামপাঁজরের নিচের দিকে একটি মাত্র গুলির আলামত পাওয়া গেছে। গুলিটি বের হয়ে যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, খুব কাছ থেকে খালাফকে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হতে পারে। ঘটনাস্থল থেকে সিআইডি আলামত সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।
ক্রাইম সিন বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার জনকণ্ঠকে জানান, খালাফকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। খুব কাছ থেকে খালাফকে মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হতে পারে।
জানা গেছে, খালাফ বাংলাদেশের সৌদি দূতাবাসে প্রায় আড়াই বছর যাবত কর্মরত ছিলেন। তিনি আড়াই বছর যাবত গুলশান-১-এর ১২০ নম্বর রোডের বেসরকারী ডেভেলপার কোম্পানি বিটিআইয়ের তৈরিকৃত ৬ তলা ২২/এ নম্বর বাড়িতে বসবাস করছিলেন। তিন ইউনিট বিশিষ্ট বাড়িটির পঞ্চম তলার পূর্বদিকের এ-৪ নম্বর প্রথম ফ্ল্যাটেই বসবাস করছিলেন।
বাড়িটির ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম তখন জনকণ্ঠকে জানান, তিনি বাড়িটিতে প্রায় ৫ বছর ধরে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। নিহত খালাফ পূর্বদিকের ২১৩৮ বর্গফুট আয়তনের এ/৪ নম্বর ফ্ল্যাটে মাসিক প্রায় অর্ধলাখ টাকা ভাড়ায় বসবাস করছিলেন। খালাফ একাই বসবাস করতেন। তাঁর পরিবার সৌদি আরবে বসবাস করেন। ফ্ল্যাটে কাজের লোক ব্যতীত তেমন কেউ ছিল না।
বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, খালাফের ব্যবহৃত দ ৮৪-০৫৯ নম্বরের কালো কাচের অফ হোয়াইট রঙের টয়োটা কারমি গাড়িটি বাড়ির নিচেই পার্কিং করা। খালাফ খুন হওয়ার পর বাংলাদেশের সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তারা খালাফের গাড়িচালক আল আমিনকে সৌদি দূতাবাস কার্যালয়ে নিয়ে যান। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাড়িটির সিঁড়ির পাশেই খালিফের প্রাইভেটকারের পাশেই প্রিয় হলুদ রঙের চায়নার তৈরিকৃত হারকিউলেস বাইসাইকেলটি অযতেœ পড়ে আছে।
বাড়িটির দ্বিতীয় তলার সি-২ নম্বর ফ্ল্যাটের বাসিন্দা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক ড. শাহ জহির আহমেদ (৪৫) তখন জনকণ্ঠকে জানান, তিনি পরিবার নিয়ে প্রায় সাড়ে ৪ বছর ওই বাড়িতে বসবাস করছেন।
কিন্তু এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। তিনি আরও বলেন, খালাফ প্রায়ই অভিযোগ করতেন, তাঁর প্রিয় বাইসাইকেলটি কে বা কারা প্রায় সময়ই নষ্ট করে রাখে। এতে খালাফ প্রায় বিরক্তি প্রকাশ করতেন। ওইদিন খালাফ বাইসাইকেল নষ্ট থাকায় হেঁটেই ব্যায়াম করতে বের হন।
ড. জহির আহমেদের ছেলে শাহ নাভিন আহমেদ (১৬) বলেছিলেন, সে গুলশানের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্র।
সৌদি নাগরিক খালাফের সঙ্গে তাঁর প্রায়ই দেখা হতো। খালাফ প্রচুর ব্যায়াম করতেন। ব্যায়ামের মধ্যে তিনি বেশি করে হাঁটতেন আর বাইসাইকেল চালাতেন। বাড়িটির নিচতলায় খালাফের সাইকেল থাকত। সোমবার রাত ১০টার দিকে লিফটে খালাফের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়।
খালাফ প্রায়ই তাকে ব্যায়াম করার পরামর্শ দিত। ব্যায়ামের সময় খালাফের হাতে পানির বোতল দেখা যেত। দীর্ঘ সময় এলাকাটিতে বসবাসকালে এ ধরনের ঘটনা তার নজরে আসেনি। তার ধারণাÑ এ ধরনের বাড়িটির নিরাপত্তাকর্মী তাপস রেমা (২৭) জনকণ্ঠকে জানিয়েছিলেন, ঘটনার পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে খালাফ একটি হাফহাতা সাদা গেঞ্জি, ট্রাউজার আর কেড্স পরে হাঁটতে বের হন। ওই সময় তিনি গেটের ভেতরের দিকে বসে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
খালাফ প্রতিদিনই হাঁটতেন। কোন কোন সময় গভীররাত পর্যন্তও তিনি ব্যায়াম করতেন। ব্যায়ামের মধ্যে তিনি হাঁটতেন আর বাইসাইকেল চালাতেন। যেদিন সাইকেল নষ্ট থাকত সেদিন হাঁটতেন। রাত ১টা ১২ কি ১৩ মিনিটের সময় একটি আওয়াজ পান।
আওয়াজ তেমন জোরালো নয়। সামান্য জোরে গাড়ির চাকা পাংচার হলে যেমন আওয়াজ হয় ঠিক তেমনি একটি আওয়াজ পান। এরপরই একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকার দ্রুতগতিতে পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে চলে যায়। যতদূর মনে পড়ে গেটের ভেতরে থেকেই তিনি দেখেন গাড়িতে চালকসহ ২ জন ছিল।
যে বাড়ির দেয়ালের পাশে খালাফ গুলিবিদ্ধ হন তার সামনের ২১ নম্বর বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী রবিউল ইসলাম (৫০) জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, তিনি বাড়িটিতে প্রায় আড়াই বছর হচ্ছে চাকরি করছেন।
ঘটনার সময় তিনি দায়িত্বরত ছিলেন। রাত প্রায় সোয়া একটার দিকে একটি আওয়াজ পান। আওয়াজ তেমন জোরালো নয়। পরে তিনি পুলিশের গাড়ির উপস্থিতি টের পান।
যে বাড়ির দেয়ালের পাশ থেকে খালাফকে উদ্ধার করা হয়েছে ওই বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী জুলফিকার আলী (৪০) জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, তিনি রাতে একটি গুলির শব্দের মতো শব্দ শুনতে পান।
এরপর বিষয়টি তিনি পুলিশকে জানান। পুলিশ গিয়ে খালাফকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে।
এই বাড়িটির ঠিক সামনের বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী জনকণ্ঠকে জানান, তাঁরা গুলির শব্দ শুনতে পান। এর খানিক পরে পুলিশের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। খালাফকে যে বাড়ির দেয়ালের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ওই বাড়িটিতে নির্মাণ কাজ চলছে।
অনেক রাত পর্যন্তও নির্মাণ কাজ চলে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে ভেতরে নির্মাণ শ্রমিকসহ নিরাপত্তাকর্মীরা থাকেন।
অগাননের কর্মচারী আব্দুর রহিম জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, খালাফ যেখানে খুন হয়েছেন তার থেকে প্রায় ১০ গজ দূরে তিনিসহ অগাননের ৪ কর্মচারী অগাননের দ্বিতীয় তলায় বসবাস করেন। সোমবার রাতের খাওয়া-দাওয়া সেরে তারা ঘুমিয়ে পড়েন।
তাঁরা হত্যাকা- সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
সৌদি দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব (হেড অব সৌদি সিটিজেনস এ্যাফেয়ার্স) দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বাংলাদেশ ও সৌদির মধ্যে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক বজায় থাকবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নিহত কর্মকর্তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে, তদন্তের পর ব্যবস্থা নেয়া হবে। খালাফ খুনী গ্রেফতার
০ সৌদি কূটনীতিক খালাফ আল আলী খুনের রহস্য উদঘাটন
০ ৪ খুনী গ্রেফতার
০ খুনীরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে
বিশেষ প্রতিনিধি ॥ অবশেষে ৪ মাস ২০ দিন পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খালাফ মোহাম্মদ আল আলী খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে।
খুনের সঙ্গে জড়িত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা পেশাদার অপরাধী। খুনে ব্যবহৃত রিভলবারটি উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে খুনের সময়ে ব্যবহৃত গাড়িটি। গ্রেফতারকৃত ৪ খুনীকে ৮ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ছিনতাই করতে গিয়ে দুর্বৃত্তরা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে খালাফকে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। ঢাকায় সৌদি দূতাবাসের খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও খুনীরা গ্রেফতার হওয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের সুসম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেফতারকৃত ৪ জন হচ্ছে, সাইফুল ইসলাম ওরফে মামুন, মোঃ আল আমিন, আকবর আলী লালু ওরফে রনি, মোঃ রফিকুল ইসলাম ওরফে খোকন। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদকালে খুনের ব্যাপারে স্বীকার করেছে বলে গোয়েন্দা পুলিশ দাবি করেছেন। তারা ডাকাতি ও ছিনতাই কাজে জড়িত।
সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা ছাড়াও এই সঙ্ঘবদ্ধ দুর্বৃত্ত দলটি সাবেক নৌবাহিনীপ্রধানের বাসায় ও ডেপুটি কর কমিশনারের বাসায় ডাকাতি করেছে বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানিয়েছে।
যেভাবে হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে ॥ রাজধানীর অভিজাত এলাকার কূটনৈতিকপাড়ায় সৌদি দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি সৌদি নাগরিক খালাফ আল আলীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশে এই প্রথম কোন কূটনীতিককে গুলি করে হত্যা করার ঘটনা ঘটল। কারা কি কারণে তাকে গুলি করে হত্যা করেছে তার কারণ এখনও উদঘাটিত হয়নি। পুলিশ, সিআইডি, র্যাব, ডিবি, এসবি, ডিজিএফআই, এনএসআইসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত শুরু করেছেন।
সৌদি কর্মকর্তা নিহত হওয়ার খবর শুনে মঙ্গলবার সকাল ১২টার দিকে সৌদি দূতাবাসের এ্যাম্বাসেডর এ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক এম আলামা সিদ্দিক এবং চীফ অব প্রটোকল এমএএস সাদিক দুপুরে ইউনাইটেড হাসপাতালে ছুটে যান। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সৌদি আরব সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
ঘটনার পর রাত প্রায় সোয়া একটার দিকে গুলশানের নিজ বাসার সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় সৌদী দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি, হেড অব সিটিজেন এ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা খালাফ আল আলীকে (৪৭)। এই হত্যাকা-কে পূর্বপরিকল্পিত এবং সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য বলে তদন্তকারীরা প্রাথমকি ধারণায় উপনীত হয়েছেন। এটা কোন ছিনতাইয়ের উদ্দেশে দুর্বৃত্তের হাতে খুন হওয়ার ঘটনা নয় বলে তদন্তকারীদের ধারণা।
তার দেহে মাত্র একটি গুলির আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। যেখানে খুন হয়েছেন সেখানে কোন রক্ত পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত শেষে খালাজের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়েছে।
ঘটনার পর রাত সোয়া ১টার দিকে রাজধানীর গুলশান-১-এর ১২০ নম্বর রোডে এই খুনের ঘটনাটি ঘটে। ১২০ নম্বর রোড ও ১১৭ নম্বর রোড পাশাপাশি।
১১৭ নম্বর রোড থেকে সোজা পশ্চিম দিকে প্রায় ২০ ফুট চওড়া এবং ৫শ’ ফুট লম্বা একটি রাস্তা আছে। রাস্তার দু’পাশে ৪টি করে মোট ৮টি বাড়ি। ১১৭ নম্বর রোড থেকে পশ্চিম দিকে ঢুকতেই প্রথমেই বামদিকে পড়বে অগানন নামের ডুপ্লেক্স একটি বুটিক হাউস। আর ডানদিকে পড়বে ৬তলা ১৯/বি নম্বর বাড়িটি। এ বাড়িটিতে বাংলাদেশের ব্রিটিশ দূতাবাসের একাধিক কর্মকর্তার বসবাস।
বাড়িটির পঞ্চম তলায় পর্তুগালের কনসুলেট অফিস। এখানে ঢুকেই মাত্র ১০ গজ পরেই ১৯/বি নম্বর বাড়িটির দেয়ালের পাশ থেকে এগুনোর সামনের রাস্তা থেকে খালাফকে উদ্ধার করা হয়। খালাফকে যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তার নিচ দিয়ে মাত্র এক ফুট চওড়া একটি ড্রেন বয়ে গেছে। ড্রেনের ওপর প্রায় ৬ ফুট লম্বা দুটি সিমেন্টের পাটাতন রয়েছে। উদ্ধারকালে খালাফ অজ্ঞান অবস্থান ওই পাটাতনের ওপর রাস্তার দিকে পা আর দেয়ালের দিকে মাথা দিয়ে পড়ে ছিলেন।
দেয়ালসহ ড্রেনের ওপর ফুলের গাছের লতা ঘন হয়ে ছেয়ে আছে। এতে সহজেই আলো বিশেষ করে রাতে ড্রেনের ওপর পড়বে না।
রাত সোয়া একটার দিকে সেখান থেকে অচেতন অবস্থায় অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করে প্রথমেই খালাফকে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। ভোর পৌঁনে ৫টার দিকে ইউনাইটেড হাসপাতালেই খালাফকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
খালাফ যে জায়গায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সেখান থেকে বাসার দূরত্ব মাত্র ৩৩ গজ। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে খালাফের মৃত্যু হয়। খালাফের দেহ থেকে এক ফোঁটা রক্তও বাইরে বের হয়নি। খালাফের বাম পাঁজরের নিচে একটি গুলির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বিকেল ৫টার দিকে খালাফের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
ডিএমপির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যা বলা হয়েছে ॥ বুধবার ডিএমপির দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ০৫/০৩/১২ খ্রিঃ তারিখ রাত (০৬/০৩/১২ খ্রিঃ তারিখ রাত) অনুমান ১.২০ ঘটিকায় গুলশান থানাধীন ১২০ নং রোডে সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খালাফ মোহাম্মদ আল আলী দুষ্কৃতকারী কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। উল্লিখিত ঘটনায় গুলশান থানার মামলা নং-১৫, তারিখ- ০৭/০৩/১২ খ্রি. ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেশী-বিদেশী মিডিয়ায় প্রচারিত হয় এবং মামলাটির বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারও বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। মামলাটি প্রাথমিক পর্যায়ে থানা পুলিশ তদন্ত করে। পরবর্তী সময়ে গুরুত্ব বিবেচনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ওপর মামলাটির তদন্তভার ন্যস্ত করা হয়।
মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এবং এর সাথে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি জড়িত বিবেচনায় রেখে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটির মূল রহস্য উদঘাটন ও জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালায়। তদন্তকালে মামলাটির তদন্ত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পদক্ষেপের সঙ্গে মৃতের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়। ময়নাতদন্তকালে মৃতের শরীরে বিদ্ধ গুলির অংশ ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার উদ্ধারপূর্বক পুলিশের নিকট হস্তান্তর করেন। পুলিশ উক্ত ফায়ার্ড বুলেট জব্দনামা মূলে জব্দ করেন এবং ফায়ার্ড বুলেটটি কোন ধরনের অস্ত্র হতে নিক্ষিপ্ত হয়েছে তা নির্ধারণের জন্য সিআইডি বাংলাদেশ, ঢাকার ব্যালিস্টিক বিশারদের নিকট প্রেরণ করা হয়। ব্যালিস্টিক বিশারদ এই মর্মে মতামত দেন যে, ‘ফায়ার্ড বুলেটটি .২২ ক্যালিবারের নিয়মিত আগ্নেয়াস্ত্র হতে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
’
মামলাটির রহস্য উদঘাটনের জন্য ছিনতাই/দস্যুতা সংঘটনের বিষয়, ভিকটিমের ব্যক্তিগত ও পেশাগত বিষয় এবং কোন দেশী বা আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্র জড়িত থাকার বিষয়সমূহ বিস্তারিত ও নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখা হয়। এ কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের কর্মকা- পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি মাথায় রেখে তদন্ত কাজ অব্যাহত থাকে। ইতোমধ্যে গত ০৪/০৬/১২ খ্রিঃ তারিখ ডিএমপির দক্ষিণখান থানাধীন উত্তর গাওয়াইর এলাকা হতে আসামি (১) সাইফুল ইসলাম মামুন (২৪), পিতা-মৃত আঃ মোতালেব হাওলাদার, সাং-মধ্য খোন্তাকাটা, থানা-শরণখোলা, জেলা- বাগেরহাট; বর্তমানে-১৩২ উত্তর গাওয়াইর, থানা-দক্ষিণখান, ডিএমপি, ঢাকা, (২) মোঃ আল-আমিন (২৫), পিতা- ফারুক ঘরামী, সাং-হাজীখালী, থানা ও জেলা-পটুয়াখালী; বর্তমানে- কুড়িল বিশ্বরোড, থানা-খিলক্ষেত, ডিএমপি, ঢাকা এবং (৩) আকবর আলী লালু রনি (২৪), পিতা-আঃ জলিল, সাং- গোয়ালকোয়া, থানা-ডামুড্যা, জেলা- শরীয়তপুর; বর্তমানে-২৭ নং ধামালকোট, হাজী সোবহান রোড, থানা-ভাষানটেক, ডিএমপি, ঢাকা, দের দেখানো ও দখল হতে একটি কালো রঙের বিদেশী .২২ বোর রিভলবার নং- ১৬১৬৮১৯ উদ্ধার করা হয়। ধৃত আসামি সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় সে সহ আসামি আল আমিন ও আকবর আলী লালু রনি গং পর্যায়ক্রমে উক্ত অস্ত্রটি দখলে রাখে।
এতদসংক্রান্তে উক্ত তিনজনের বিরুদ্ধে দক্ষিণখান থানার মামলা নং- ০৮ (০৬) ১২ খ্রিঃ, ধারা- ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯-এ রুজু হয়। মামলাটির তদন্তকালে প্রকাশ পায় যে, উল্লিখিত উদ্ধারকৃত .২২ বোরের রিভলবারটি গত ২৯/০৯/১১ খ্রিঃ তারিখ রাতে খিলক্ষেত থানাধীন সেবা ক্লিনিকের মালিক আবুল হোসেনের বাসায় উল্লিখিত আসামি (১) সাইফুল ইসলাম মামুন (২৪), (২) মোঃ আল-আমিন (২৫), (৩) আকবর আলী লালু রনি (২৪), (৪) মোঃ রফিকুল ইসলাম খোকন (৩০), পিতা-আব্দুস সালাম, সাং-নাটকঘর বাইলেন, থানা- কোতোয়ালি, জেলা-ময়মনসিংহসহ অন্যরা ডাকাতি করে অন্য মালামালের সাথে নিয়ে যায়।
অতঃপর খালাফ মোহাম্মদ আল আলীর মামলাটি তদন্তের স্বার্থে উদ্ধারকৃত রিভলবারটি হতে ভিকটিমের মৃত দেহ থেকে উদ্ধারকৃত ফায়ার্ড বুলেটের অংশ নিক্ষিপ্ত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত প্রদানের জন্য বিজ্ঞ আদালতের অনুমতিক্রমে সিআইডি বাংলাদেশ, ঢাকার ব্যালিস্টিক বিশারদের নিকট প্রেরণ করা হয়। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ব্যালিস্টিক বিশারদ এই মর্মে মতামত প্রেরণ করেন যে, “ক্রমিক নং ১-এ বর্ণিত আলামত রিভলবার (রিভলবার নং-১৬১৬৮১৯ অজগওঘওঙঝ, গঅউঊ ওঘ এঊজগঅঘণ) দ্বারা ক্রমিক নং ২-এ বর্ণিত আলামত ফায়ার্ড বুলেট ফায়ার করা হয়েছে। ” উক্ত মতামত প্রাপ্তির পর সঙ্গতকারণেই প্রতীয়মান হয় যে, উল্লিখিত আসামি (১) সাইফুল ইসলাম মামুন (২৪), (২) মোঃ আল-আমিন (২৫), (৩) আকবর আলী লালু রনি (২৪), (৪) মোঃ রফিকুল ইসলাম খোকন (৩০) আলোচ্য মামলার ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে।
কেননা মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্টের মতোই ফায়ার্ড বুলেটে বিভিন্ন ধরনের মার্ক থাকে, যা শুধুমাত্র কোন নির্দিষ্ট আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা গুলিবর্ষণের ঘটনাই প্রমাণ করে এবং এটি একটি চূড়ান্ত সাক্ষ্য। তাছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আসামিদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি যাচাই ও নিশ্চিত করা হয়। এ কারণে তাদেরকে উক্ত মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে এবং তদন্তের স্বার্থে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রকৃত রহস্য উদঘাটনসহ অন্যান্য বস্তুগত সাক্ষ্য সংগ্রহ করার জন্য আট দিনের পুলিশ রিমান্ডে আনা হয়। রিমান্ডে ধৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে আসামি মোঃ রফিকুল ইসলাম খোকনের দেখানো মতে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত গাড়িটি গত ২৪/০৭/২০১২ খ্রি. তারিখ রাতে ঢাকার মানিকদী এলাকা হতে উদ্ধার করা হয়। উল্লেখ্য, উক্ত আসামিরা অভ্যাসগতভাবে ডাকাতি ও ছিনতাই কাজের সাথে জড়িত।
ইতোপূর্বে সাবেক নৌবাহিনী প্রধানের বাসায় ও ডেপুটি কর কমিশনারের বাসায় তারা ডাকাতি করে বলে তদন্তকালে প্রকাশ পায়। নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে মামলাটির তদন্ত অব্যাহত আছে।
মামলাটির আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বিবেচনায় মোল্যা নজরুল ইসলাম পিপিএম (বার), ডিসি (ডিবি-উত্তর), ডিএমপি, ঢাকা মহোদয়ের নেতৃত্বে মামলাটির তদন্তকারী অফিসার মোঃ ওবায়দুল হক পিপিএমসহ ডিবি-উত্তর বিভাগের এডিসি, এসি ও অন্য অফিসারদের দীর্ঘদিনের ঐকান্তিক ও সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আলোচ্য মামলাটির মূল রহস্য উদঘাটন ও জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়, যার ফলে দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ তথা বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়।
সে সময় কে কি বলেছিলেন ॥ গুলশান থানার অপারেশন অফিসার জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, খালাফের দেহের ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে। যার ফলে খালাফকে রক্ত দেয়ার কোন পথ ছিল না।
খালাফের বামপাঁজরের নিচের দিকে একটি মাত্র গুলির আলামত পাওয়া গেছে। গুলিটি বের হয়ে যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, খুব কাছ থেকে খালাফকে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হতে পারে। ঘটনাস্থল থেকে সিআইডি আলামত সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। ক্রাইম সিন বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার জনকণ্ঠকে জানান, খালাফকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
খুব কাছ থেকে খালাফকে মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হতে পারে।
জানা গেছে, খালাফ বাংলাদেশের সৌদি দূতাবাসে প্রায় আড়াই বছর যাবত কর্মরত ছিলেন। তিনি আড়াই বছর যাবত গুলশান-১-এর ১২০ নম্বর রোডের বেসরকারী ডেভেলপার কোম্পানি বিটিআইয়ের তৈরিকৃত ৬ তলা ২২/এ নম্বর বাড়িতে বসবাস করছিলেন। তিন ইউনিট বিশিষ্ট বাড়িটির পঞ্চম তলার পূর্বদিকের এ-৪ নম্বর প্রথম ফ্ল্যাটেই বসবাস করছিলেন।
বাড়িটির ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম তখন জনকণ্ঠকে জানান, তিনি বাড়িটিতে প্রায় ৫ বছর ধরে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত।
নিহত খালাফ পূর্বদিকের ২১৩৮ বর্গফুট আয়তনের এ/৪ নম্বর ফ্ল্যাটে মাসিক প্রায় অর্ধলাখ টাকা ভাড়ায় বসবাস করছিলেন। খালাফ একাই বসবাস করতেন। তাঁর পরিবার সৌদি আরবে বসবাস করেন। ফ্ল্যাটে কাজের লোক ব্যতীত তেমন কেউ ছিল না। বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, খালাফের ব্যবহৃত দ ৮৪-০৫৯ নম্বরের কালো কাচের অফ হোয়াইট রঙের টয়োটা কারমি গাড়িটি বাড়ির নিচেই পার্কিং করা।
খালাফ খুন হওয়ার পর বাংলাদেশের সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তারা খালাফের গাড়িচালক আল আমিনকে সৌদি দূতাবাস কার্যালয়ে নিয়ে যান। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাড়িটির সিঁড়ির পাশেই খালিফের প্রাইভেটকারের পাশেই প্রিয় হলুদ রঙের চায়নার তৈরিকৃত হারকিউলেস বাইসাইকেলটি অযতেœ পড়ে আছে।
বাড়িটির দ্বিতীয় তলার সি-২ নম্বর ফ্ল্যাটের বাসিন্দা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক ড. শাহ জহির আহমেদ (৪৫) তখন জনকণ্ঠকে জানান, তিনি পরিবার নিয়ে প্রায় সাড়ে ৪ বছর ওই বাড়িতে বসবাস করছেন। কিন্ত।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।