পৃথিবীতে মানুষ খুব অদ্ভুত প্রাণী । আর থেকেও হয়ত বড় অদ্ভুত তার জীবন । অন্য প্রাণীর থেকে আলাদা তার বেঁচে থাকা , তার বোধ শক্তি । যেখানে আর অন্যসব প্রাণীর থেকে মানুষ শ্রেষ্ঠ, সেখানে এক অদ্ভুত কারণে কখনও কখনও সেই মানুষ কোন হিংস্র প্রাণীর কাছে পরাস্ত কিংবা তার সাথে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে লিপ্ত। বেঁচে থাকাটা একটা শিল্প ।
সেখানে একটা মানুষ কিভাবে তার নিজের জীবনকে অতিবাহিত করবে কিংবা বেঁচে থাকবে তা সেই মানুষটাকেই বেছে নিতে হয় । “Life of Pi” , যেন বেঁচে থাকার লড়াইয়ে লিপ্ত এক কিশোরের জীবনের গল্প । যেখানে একদিকে নিজের বেঁচে থাকার লড়াই গভীর সমুদ্রে, অন্যদিকে হিংস্রপ্রাণী বাঘ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার এক প্রাণান্তকর চেষ্টা । এ যেন দুই বিপরীত মেরুতে অবস্থান করা দুই প্রাণী মানুষ এবং বাঘের বেঁচে থাকার এক ভ্রমণ গল্প ।
জীবন খুব অদ্ভুত ।
মানুষ যেখানে ভাবে তার জীবনের সমাপ্তি হয়ত এখানেই , ঠিক সেখানেই হয়ত নতুন করে শুরু হয় বেঁচে থাকার গল্প । প্রতিদিন সূর্যটা নিয়ম করে অস্ত যায় , কিন্তু সেই সূর্যটাই প্রতিদিন নিয়ম করে নতুন করে বেঁচে উঠে , জেগে উঠে । পৃথিবীর নিয়মের এক অদ্ভুত কারণে মানুষ সবকিছু হারিয়েও বেঁচে থাকার সংগ্রামে নতুন করে লিপ্ত হয় । pi এর পরিবার পশুর ব্যবসা করে । যেখানে মানুষ বেঁচে থাকার জন্যে কিংবা জীবিকার জন্যে বিভিন্ন পেশায় লিপ্ত ।
সেখানে জীবিকার জন্যে হিংস্রপ্রাণীদের সাথেই pi এর পরিবারের বেঁচে থাকা এবং জীবন । সেলুলয়েডের পাতায় যেন এ অদ্ভুত মেলবন্ধন প্রাণীদের সাথে মানুষের আবার ঠিক তেমনি এক সাদৃশ্যময় পার্থক্য । আর তা হয়ত মানুষ বলেই সম্ভব হয়েছে ।
একটা সমুদ্রের ঝড় যেখানে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে একটা পরিবারকে , যেখানে বিচ্ছিন্ন কিশোর pi তার পরিবার থেকে । সেখানেই প্রিয়জনদের হারিয়ে সমুদ্রে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার এক প্রাণান্তকর চেষ্টা ।
জীবনের প্রতিটা ক্ষণ মৃত্যুর হাতছানি তবু বেঁচে থাকার এক আকুল চেষ্টা । জনমানবহীন সমুদ্রে তার চিৎকার পৌঁছায়না কোন মানুষের কাছে । কোথায় কেউ নেই একটা মানুষ কথা বলার । সেখানেই নৌকায় আশ্রয় নেয়া pi এর জীবনটা আরও বিভীষিকাময় হয়ে উঠে যখন সেই নৌকাতেই আশ্রয় নেই হিংস্র বাঘ । একদিকে হিংস্র বাঘ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা , অন্যদিকে সেই হিংস্রপ্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখার এক প্রাণান্তকর চেষ্টা।
এ যেন সেলুলয়েডের পাতায় এক অদ্ভুত মেলবন্ধন মানুষ এবং হিংস্রপ্রাণী বাঘের । একটা বাঘের সাথে কিভাবে খাদ্য ভাগাভাগি করে খাওয়া pi এর সাথে চলতে থাকে ,আবার সেই বাঘের কাছ থেকেই নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা । একাধারে নিজের ভেতর মানবিকতা ও নিজের বেঁচে থাকার জন্যে এক সাহসী চেষ্টা ।
মানুষ ও হিংস্রপ্রাণীর বেঁচে থাকার চেষ্টার এ যেন এক বহিঃপ্রকাশ সেলুলয়েডের পাতায় । অসাধারণ স্ক্রিনপ্লে , অসাধারণ গল্পের উপস্থাপনার সাথে অভিনয়ের মেলবন্ধন ।
একদিকে স্বজন হারানোর কষ্ট অপরদিকে একজন কিশোরের বেঁচে থাকার লড়াই এবং মানবিকতা । ইয়াং মারটেলের গল্প অবলম্বনে ডেভিড মেগ এর স্ক্রিনপ্লেতে পরিচালক এংলি যেন বাস্তবতায় থেকেও মানবিকতার সংস্পর্শ দেয়ার চেষ্টায় ছিলেন “Life of Pi” ছবিতে । অসাধারণ গ্রফিক্সের কাজ , সমুদের ওপর মাছেদের ঝড় যেন ১২৭ মিনিটের ছবিটিকে আরও প্রাণবন্ত ও ছবিকে যেন আরও বেশি অর্থবহ করে তুলেছে । যেখানে বিপর্যয়ের পর বিপর্যয় , সেখানেই মাছেদের ঝড় সে বিপর্যয়টা কিভাবে একটা কিশোর pi কিংবা হিংস্র রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্যে যে কি রকম আশীর্বাদ বহে এনেছে তার এক অসাধারণ শৈল্পিক ব্যবহার দেখিয়েছেন পরিচালক এংলি ।
অভিনয় দিয়ে যেন ছাপ রেখে গেছে কিশোর pi দর্শকের চোখে মানবিকতা এবং বেঁচে থাকার থাকার সংগ্রামের ।
গল্পকে আরও শক্ত অবস্থানে নিয়ে গেছে যেন pi এর অভিনয় । ছবির বিভিন্ন দৃশ্যায়নে অভিনয় করেছে সুরজ শর্মা , ইরফান খান , আদিল হোসেনসহ আরও অনেক । পোশাক থেকে শুরু মেকআপ , দৃশ্যায়ন , সংলাপ যেন একই সুতোয় বেঁধেছেন পরিচালক এংলি ।
এক একটি দৃশ্য যেন মানুষের মনে জাগিয়ে তুলবে কিছু প্রশ্ন । বেঁচে থাকা আসলে কাকে বলে ? মানবিকতা কিংবা পশুত্ব ।
এ এক অদ্ভুত , তবু যেন মানুষের ভেতর আরেকটা সুন্দর মনের মানুষকে জাগিয়ে তোলার এক প্রচেষ্টা ,আর তার যেন এক সার্থক প্রয়াস “Life of Pi” । চোখ জুড়িয়ে যাবে, কিছু প্রশ্ন জাগবে মনেএবং জীবনের অর্থ কি তার জিজ্ঞাসা জাগবে ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ভ্রমণ বিষয়ক জীবনের গল্প “Life of Pi” ছবির ফ্রেমের মাধ্যমে । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।