© এই ব্লগের কোন লেখা আংশিক বা সম্পূর্ণ আকারে লেখকের অনুমতি ব্যতীত অন্য কোথাও প্রকাশ করা যাবে না।
টাইটানিক জাহাজের সেই ভয়াবহ ট্র্যাজেডির কথা জানেনা এমন কা্উকে খুঁজে পাওয়া রীতিমতো অসম্ভব। এই টাইটানিককে ঘিরে রচিত হয়েছে অনেক বিখ্যাত বই, বানানো হয়েছে কতোই না বিখ্যাত সব চলচ্চিত্র কিংবা গান। তবে আপনাকে যদি বলি টাইটানিককে ঘিরে একটি সিনেমা কিংবা একটি গানের নাম আলাদা করে বলতে,আপনি নির্ঘাত বলে উঠবেন জেমস ক্যামেরুনের সেই বিখ্যাত চলচ্চিত্র "টাইটানিক" এবং সেই একই চলচ্চিত্রের সেই বিখ্যাত "মাই হার্ট উইল গো ওন"- এর কথা। পরিচালক জেমস ক্যামেরুন টাইটানিক ট্র্যাজেডিকে সবার চোখের সামনে অসাধারন দক্ষতায় তুলে এনেছিলেন, যার স্বাক্ষর আমরা পাই মুভিটির ব্যাবসায়িক সাফল্য এবং অস্কারে টাইটানিক মুভিটির পুরষ্কারের ঝুলিটি দেখলে।
আর এজন্য জেমস ক্যামেরুনকে একটা বিশেষ ধন্যবাদ অবশ্যই অবশ্যই দিতে হয়।
তবে এইখানেও একটা ব্যাপার আছে। জেমস ক্যামেরুনের টাইটানিক মুভিটি দেখে আমি যতোটা না মুগ্ধ হয়েছি, তার থেকেও পরিচালকের দূরদৃষ্টি এবং তার অসাধারন মেধা ও বিচক্ষণতার মাত্রা আমাকে বেশি মুগ্ধ করেছে। কারন টাইটানিক ট্র্যাজেডিকে কেন্দ্র করে বানানো অন্যান্য মুভিগুলোর সাথে একটা বিশেষ জায়গায় ক্যামেরুনের মুভিটার বিশাল বড়ো পার্থক্য রয়েছে। আর তা হলো, অন্যান্য মুভিগুলোর সামগ্রিক দৃশ্যপট ছিলো পুরো টাইটানিক জাহাজের সমস্ত যাত্রীদের ঘিরে, কিন্তু জেমস ক্যামেরুন এতো বড়ো টার্গেটে না গিয়ে জ্যাক এবং রোজের একটি অসাধারন রোমান্টিক স্টোরিকে সেই টাইটানিকের ট্র্যাজেডির মাঝে মিশিয়েছেন।
আর তাই সেটার ব্যাপকতা খুবই নির্দিষ্ট এবং সিনেমা হিসেবে অনেক শক্তিশালী হয়ে যায়। এবং সেই জ্যাক আর রোজের লাভস্টোরি ছিলো পুরোটাই কল্পিত, সুতরাং টাইটানিক ডুবেছিলো, প্রায় ১৫০০ মানুষ মারা গিয়েছিলো, এবং সেই সিনেমার অনেক চরিত্রই ঐতিহাসিকভাবে সত্য ছিলো বটে কিন্তু মানুষের কাছে বিশেষ আবেদন জাগিয়েছিলো সেই কল্পিত জ্যাক আর রোজের প্রেমের গল্পটিই। আর জেমস ক্যামেরুনের দূরদর্শিতা সেইখানেই। তিনি জানতেন ডকুমেন্টারি টাইপের মুভি বানালে মানুষ যতোটা গিলবে, তার চেয়ে সেইখানে একটি অসাধারন লাভ স্টোরি থাকলে তা মানুষের কাছে আরো দর্শকপ্রিয়তা পাবে। আর এই লাভস্টোরিকে টাইটানিক ট্র্যাজেডির সাথে এতো চমৎকার ভাবে মিশানোর জন্য গোটা মুভির পিছনে টাকা ঢালার পিছনে মোটেও কার্পণ্য করেন নি তিনি, প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে আউটস্ট্যান্ডিং মানের স্টেজ আর কস্টিউম ডিজাইন থেকে শুরু করে অসাধারন ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস আর সাউন্ড ইফেক্ট তৈরি করা হয়।
যার ফলাফল পাওয়া যায় মুক্তির প্রথম সপ্তাহ থেকেই। তবে এইখানে একটা মজার ব্যাপার আছে, মুক্তির প্রথম সপ্তাহে কিন্তু মোটামুটি মানের ব্যাবসা করেছিলো মুভিটি। কিন্তু আস্তে আস্তে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে খোদ আমেরিকাতেই ৬০০ মিলিয়ন ডলার ব্যাবসা করে। আর বিশ্বব্যাপী ১৮০০ মিলিয়ন ডলার আয় করে এটি গড়েছিলো মুভির ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যাবসাসফল মুভির খেতাব। সেই ১৯৯৮ থেকে শুরু,অবশ্য ২০০৯ এ এসে সেই একই পরিচালক জেমস ক্যামেরুনের আরেকটি বিখ্যাত মুভি "অ্যাভাটার" এর কাছে শীর্ষস্থান হারিয়েছে মুভিটি।
অ্যাভাটার বর্তমানে কারেন্ট বক্স অফিস রেকর্ড হোল্ডার। আমেরিকায় ৭৬০ মিলিয়ন ডলার আর বিশ্বব্যাপী ২৭০০ মিলিয়ন ডলার ব্যাবসা করেছে মুভিটি।
যাই হোক, এবার টাইটানিকের সত্যিকারের ইতিহাসের কথায় আসি। টাইটানিক জাহাজের পুরো নাম ছিলো আর.এম.এস টাইটানিক। ১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল ইংল্যান্ডের সাউথাম্পটন থেকে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক সিটির উদ্দেশ্যে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু করে টাইটানিক।
মোট যাত্রী ছিলো ২২২৪ জন। টাইটানিক ছিলো সেসময়কার সবচেয়ে বৃহৎ আকারের জাহাজ। এবং টাইটানিকের ডিজাইনারা একে খুবই লাক্সারিয়াস ওয়েতে ডিজাইন করেছিলেন। কি ছিলো না সেই জাহাজে? জিমনেসিয়াম থেকে শুরু করে সুইমিং পুল,লাইব্রেরী,হাই ক্লাস রেস্টুরেন্ট আর হাইক্লাস কেবিন সবই ছিলো টাইটানিকে। ব্রিটেনের তৎকালীন অনেক ধনী মানুষ টাইটানিকে চড়েছিলেন ইতিহাসের সাক্ষী হতে।
টাইটানিককে ঘিরে একটি প্রবাদ ছিলো যে, "যতোকিছুই হোক না কেন, টাইটানিক কখনো ডুববে না। " কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস !!!! ১৫ এপ্রিল নর্থ আটলান্টিক সাগরে একটি বিশালাকার আইসবার্গের সাথে ভয়াবহ ধাক্কা লেগে সাগরে ডুবে যায় টাইটানিক। আর ঐ দূর্ঘটনায় ১৫১৪ জন মারা যায়।
টাইটানিক জাহাজে শক্তিশালী ইন্জিন কিংবা ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফ থেকে শুরু করে সবকিছুতেই এতোটা স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও তার ল্যাকিং ছিলো এক জায়গায়, আর তা হলো পর্যাপ্ত মানুষের জন্য লাইফবোট ছিলো না। মোট যাত্রী আর জাহাজের ক্রুদের সংখ্যার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ জনের ধারনক্ষমতাসম্পন্ন লাইফবোট সেখানে মজুদ ছিলো, যার কারনে এতো মানুষ মৃত্যুবরন করেছিলো।
সেদিন অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল রাত ১১ টা ৪০ মিনিটে সেই আইসবার্গের সাথে ধাক্কা লাগে টাইটানিকের। আর সেই ধাক্কার জন্য টাইটানিকের ১৬টি পানিনিরোধক কম্পার্টমেন্টের মধ্যে ৫ টি ব্যাডলি ড্যামেজ হয়, এবং সেগুলো ধীরে ধীরে পানিতে নিমজ্জিত হতে থাকে। আর সেই পানি একটার পর একটা বাদবাকি কম্পার্টমেন্টে ঢুকে পড়তে থাকে। প্রায় আড়াই ঘন্টার মাঝে রাত ২টা ২০ মিনিটে পুরা টাইটানিক জাহাজটি তলিয়ে যায়। যেহেতু পর্যাপ্ত মানুষের জন্য লাইফবোট প্রযোজ্য ছিলো না তাই "women and children first" এই পদ্ধতিতে যাত্রীদের লাইফবোটে তুলবার ব্যাবস্থা করা হয়।
এভাবে ৭১০ জন মানুষকে লাইফবোটের মাধ্যমে নিরাপদে সরিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছিলো। ৭১০ জনের বাইরের সেই হতভাগ্যরা সাগরের হিমশীতল পানিতে হাইপোথার্মিয়ার দরুন দুই-তিন মিনিটেই মৃত্যুর কবলে ঢলে পড়েন। টাইটানিক ডুববার প্রায় দুই ঘন্টার পর RMS Carpathia নামক আরেকটি জাহাজ এসে সেই ৭১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করে।
এই হলো মোটামুটি সহজ কথায় টাইটানিক ট্র্যাজেডি। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এতো বড়ো একটা আইসবার্গ, কেন টাইটানিক জাহাজের ক্রুরা সেই বরফের টুকরাটিকে সময়মতো দেখতে পারেন নি? কিংবা কেন এই জাহাজের এতো শক্তিশালী ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফ প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও টাইটানিক ডুবে যাওয়ার প্রায় দুই ঘন্টা পরে RMS Carpathia তাকে উদ্ধার করেছিলো? এতো দেরি হয়েছিলো কেন? কিংবা আরো নিকটাবর্তী দূরত্বে আর কি কোনো জাহাজ ছিলো না? কিংবা কেন ২২২৪ জনের মাঝে মাত্র ৭১০ জনের জন্য প্রয়োজনীয় লাইফবোট ছিলো? এইসব প্রশ্ন দেওয়ার আগে আমি টাইটানিককে ঘিরে নির্মিত দুইটা স্পেসিফিক মুভির আপনাদের রিভিউ শুনাতে চাই।
আগেই বলেছি, টাইটানিককে ঘিরে অনেক মুভি, টিভি মুভি কিংবা ডকুমেন্টারী নির্মিত্ হয়েছে। মুভিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত জেমস ক্যামেরুনের ১৯৯৭ সালের সেই টাইটানিক মুভিটি। অন্যান্যগুলোর মধ্যে Titanic (1943), Titanic (1953), A Night To Remember (1958), S.O.S. Titanic (1979) উল্লেখযোগ্য। যেহেতু পোস্টের শিরোনামে টাইটানিকের একাল সেকাল বলেছি, তাই ১৯৯৭ সালের একালের টাইটানিকের কথাতো মাস্ট বলতেই হবে, আর সেকালের মধ্যে ১৯৫৮ সালের A Night To Remember মুভিটার কথা বলা যায়। কারন A Night To Remember (1958) মুভিটা একটা অসাধারন মুভি।
আর জেমস ক্যামেরুনের টাইটানিকের সাথে এই মুভিটার গল্প বলার আরেকটি কারন হলো A Night To Remember (1958) মুভিটি হিস্টোরিক্যালি বেশ অ্যাকুরেট এবং এটি অতি সম্প্রতি আমি দেখেছি।
তাহলে A Night To Remember (1958) মুভিটি দিয়ে শুরু করা যাক।
A Night To Remember (1958):
ব্রিটিশ পরিচালক Roy Ward Baker মুভিটি বানিয়েছিলেন আমেরিকান লেখক Walter Lord এর একই শিরোনামের একটি বইকে কেন্দ্র করে। বইটি অনেকটা ডকুমেন্টারী টাইপ হওয়াতে মুভিটি বেশ হিস্টোরিক্যালি অ্যাকুরেট হয়েছিলো। এটি এই মুভির প্রথম এবং প্রধান প্লাসপয়েন্ট।
এই মুভিটি দেখলে উপরের উল্লেখ করা সকল প্রশ্নের জবাব আপনি পেয়ে যাবেন। মুভিটির রানিং টাইম পাক্কা দুই ঘন্টার সমান। মুভির শুরুটা বেশ চমৎকার। শুরুর ১৫ মিনিটের মাঝেই মুভির প্রধান প্রধান চরিত্রের সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে। আর সেই আইসবার্গের সাথে ধাক্কা খাওয়ার ঘটনাটি ঘটবে তার ১৫ মিনিট বাদেই, অর্থাৎ মুভির আধাঘন্টার সময়কালে।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন বাদবাকি দেড় ঘন্টা কি হতে চলেছে। আর এই মুভিটার আরেকটি পজিটিভ জিনিস হলো, টাইটানিক ট্র্যাজেডিকে ঘিরে ঐ জাহাজের অনেক যাত্রীর উপরে মুভিটির ফোকাস রাখা হয়েছিলো। সুতরাং অনেক মানুষকে খুব কাছ থেকে দেখবার সুযোগ রয়েছে মুভিটাতে। আর সেই মানুষগুলোকে ঘিরে নানান ঘটনা-দুর্ঘটনাগুলোর বিন্যাসটাও হয়েছে অসাধারন মাপের। পুরা মুভিতে অনেকগুলো খন্ড খন্ড জিনিস রয়েছে যেগুলো মুভিটিকে অন্য রকম উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
এর অনেকগুলোই জেমস ক্যামেরুনের মুভিতে হুবহু দেখা যায়, কিন্তু সেই ফ্লেভারটি আমি Titanic (1997) এ পাইনি যা আমি পেয়েছি A Night to Remember (1958) মুভিটিতে। বিপন্ন মানবতার মাঝে মানুষ যখন নিজের গন্ডীর বাইরে এসে ধরা দেয় সেটার বহিঃপ্রকাশটা কীই চমৎকার হয় !!! এখানে দেখি একজন মানুষের প্রতি তার সহধর্মিনীর ভালোবাসা, একজন সন্তানের প্রতি তাদের বাবা-মায়ের ভালোবাসা, একজন অচেনা মানুষকে বাঁচাতে আরেকজন অচেনা অজানা মানুষের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিজের জীবন বাঁচাতে মানুষ কতোটা স্বার্থপরই না হতে পারে !!!! আর হিস্টোরিক্যালী অ্যাকুরেসির কথা না বললেই নয়, কেন সেই আইসবার্গের সাথে ধাক্কা লেগেছিলো, কিংবা কেন ১০ মাইল দূরের একটি জাহাজ টাইটানিকের ডুবে যাওয়ার গোটা সময়টুকু কোনো ও্য়্যারলেস মেসেজ ক্যাচ করতে পারলো না, কেন ৫৫ মাইল দূরের জাহাজ ক্যাপরাথিয়া এসে ডুবে যাওয়ার দুই ঘন্টা পরে উদ্ধারে আসলো? সবকিছুর বেশ পরিষ্কার জবাব দেয়া আছে মুভিটায়। এইখানে Titanic (1997) এর মতো কোনো বিশেষ জ্যাক আর রোজের লাভ স্টোরি নেই, বরং এখানে দেখি হাজার হাজার প্রেমময়তার সলিল সমাধি। একই সাথে সঠিক ঘটনা আর ট্র্যাজেডির এইরূপ বহিঃপ্রকাশের জন্যই মুভিটা এ্তোখানি স্পেশাল। মুভিটাতে নেই কোনো স্পেশাল ইফেক্টসের কারসাজি, মুভিটাতে নেই কোনো অদ্ভূত মানানসই সাউন্ড ইফেক্ট, কিন্তু তারপরেও সেই দূর্ঘটনার ভয়াবহতা আমাদের কতোই না আঘাত করে !!!! ব্রিলিয়ান্ট সব অভিনেতা আর অভিনেত্রীদের মাধ্যমে পরিচালক অসামান্য দক্ষতায় সেই জীবনবোধ আর মৃত্যুর রূঢ়তাকে দেখিয়েছেন।
মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৮/১০, আমার পার্সোনাল রেটিং ৯/১০। মুভিটি Best English-Language Foreign Film হিসেবে ১৯৫৯ সালে গোল্ডেন গ্লোবে পুরষ্কার জিতেছিলো। মুভিটি সবার জন্য হাইলি রেকমেন্ড করলাম। এই মুভিকে বলা হয় the most accurate of all Titanic movies।
ডাউনলোড লিংক: Click This Link
Titanic (1997):
এইবার আসি সেই বিখ্যাত Titanic (1997) মুভিটি নিয়ে।
পরিচালক জেমস ক্যামেরুন নিজেই মুভিটির চিত্রনাট্য লিখেছেন। তবে সেই লেখায় কল্পনার সাথে বেশ কিছু সত্যি ঘটনার উল্লেখ করেছেন মুভিটায়। যার বেশ কিছু দৃশ্য হুবহু A Night to Remember (1958) মুভিটায় দেখতে পাওয়া যায়। Titanic (1997) মুভিকে ঘিরে কিছু কথা পোস্টের শুরুতেই বলেছি। বাড়তি করে বলতে গেলে বলা যায়, এই মুভির রানিং লেংথ অনেক অনেক লম্বা।
প্রায় সোয়া তিন ঘন্টার মতো। আর প্রথম অর্ধেক সময়টুকু জাহাজের বিভিন্ন ঘটনা দেখিয়ে পার হয়, মুভিটির শেষের অর্ধেক হয় আইসবার্গের সাথে ধাক্কা খাওয়ার পরবর্তী সময়কে ঘিরে। গোটা ট্র্যাজেডিটা উঠে আসে জ্যাক আর রোজের প্রেমকে ঘিরে। তবে সেটা হয়েছে নিতান্তই কাহিনীর জোরে,কারন মুভিটি শুরুই হয় একটি ডায়ামোন্ড উদ্ধার এক্সপেডিশান টীমের সাথে রোজের স্মৃতিচারনকে ঘিরে। যেহেতু ধরে নিচ্ছি এই মুভিটি সবাই দেখেছেন তাই মুভিটির কাহিনীর দিকে আর আগালাম না।
মুভিটি টেকনিক্যাল অ্যাসপেক্টসে শতভাগ সফল। আর্ট ডিরেকশান কিংবা কস্টিউম থেকে শুরু করে গ্রাফিক্স আর সাউন্ড ইফেক্টসের অসাধারন নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় মুভিটাতে। আর জ্যাক-রোজের ভূমিকায় অসাধারন অভিনয় করেন ডি ক্যাপ্রিও আর কেট উইন্সলেট। শুধুমাত্র বক্স অফিস কাঁপিয়েই থেমে থাকেনি টাইটানিকের জয়রথ। অস্কারে রেকর্ড ১৪ টি নমিনেশান পেয়ে ১১টির পুরষ্কার জিতে কোনো মুভির পক্ষে সর্বোচ্চ অস্কার জয়ের রেকর্ড স্পর্শ করে মুভিটি।
এর আগে বেন হার ১৯৫৯ সালে ১২ টি নমিনেশান পেয়ে ১১ টি জিতেছিলো, আর টাইটানিকের পরে The Lord of the Rings: The Return of the King মুভিটি ২০০৩ সালে ১১ টির নমিনেশান পেয়ে ১১টি্ই অস্কার লাভ করে।
জ্যাকের চরিত্রে ডি ক্যাপ্রিও:
রোজের চরিত্রে কেট উইন্সলেট:
এইবার আসি মুভিটির হিস্টোরিক্যাল অ্যাকুরেসি নিয়ে, সবচেয়ে বড়ো ব্যাপারটি হলো, জ্যাক আর রোজের চরিত্র দুইটি ছিলো সম্পূর্ণ কাল্পনিক, এছাড়া 'Heart of the Ocean' নামে যেই ডায়ামন্ডের নামটি উল্লেখ রয়েছে তার অস্তিত্ব সঠিক হলেও তার সাথে টাইটানিকের কাহিনীর মিল আদৌ ছিলো কি না সেই সম্পর্কে কোনো কিছুই জানা যায় নি, এটির হদিশ যে আজো পাওয়া যা নি এইটা সত্যি। তবে ঐ মুভিটির অনেক চরিত্রই কিন্তু হিস্টোরিক্যালি অ্যাকুরেট ছিলো, এদের মধ্যে কয়েকজনের নাম নীচে দেয়া হলো,
Thomas Andrews: The builder of the Titanic.
Molly Brown: 'The Unsinkable Molly Brown", in real life she took control of her lifeboat and rescued several survivors out of the water.
Edward Smith: The captain of the Titanic.
John Jacob Astor: A first-class passenger.
Wallace Hartley: The Titanic's band leader
তবে এইটা ঠিক, সত্যি হোক কিংবা ফিকশানালই হোক, টাইটানিক (১৯৯৭) সালের লুভিটার জ্যাক আর রোজের লাভস্টোরিটা খুবই আবেগপ্রবন ছিলো, আর এই লাভ ইন্টারেস্টটাই মুভিকে এতোদূরে নিতে পেরেছে। এই মুভি দেখলে মন বিষাদগ্রস্থ হবেই। এই মুভি দেখে অনেকেই চোখের জল ধরে রাখতে পারে না, বিয়োগাত্মক প্রেম মানুষকে কাঁদায় ঠিক, কিন্তু তা মানুষকে আরো ভালোবাসতে শিখায়।
ভালোবাসার মানুষের আরো আরো ভাবতে শিখায়। মনে আছে যখন ক্লাস সেভেনে থাকতে প্রথম এই মুভিটি দেখি। তবে ঐ দেখার পিছনে কেট উইন্সলেটের সেই দৃশ্যটার দেখবার ইচ্ছাটাই একমাত্র কারন ছিলো। ক্লাস সেভেনের ঐ ছেলে কীইবা এমন মুভি বুঝে, তার কাছে যৌনতার আবেদনটাই যেই আসল। তবে পরিণত হয়ে এই মুভিটি অনেকবার দেখেছি, যতোবারই দেখি ততোবারই খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েছি।
ভালোবাসার শক্তি দেখে অনুপ্রাণীত হই। আর এইখানেই জেমস ক্যামেরুন জিতে গেছেন।
মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৭.৫/১০, আমার পার্সোনাল রেটিং ৮.৫/১০। আইএমডিবিতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ ইউজার এই মুভিটিকে রেটিং করেছেন। এই মাসের ৪ তারিখ, অর্থাৎ ৪ এপ্রিল ২০১২, আমেরিকায় আর ৬ এপ্রিল ইউকেতে মুভিটি থ্রি-ডিতে আবারো মুক্তি পেয়েছে।
ডাউনলোড লিংক: Click This Link
সবশেষে এ নাইট টু রিমেম্বার মুভিতে ব্যবহৃত একটি অসাধারন সাউন্ডট্র্যাক দিয়ে আজকের পোস্টটি শেষ করছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।