আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! টিয়ার শরীরটা কদিন থেকে ভাল যাচ্ছে না । এক জায়গায় বেশিক্ষন বসে থাকলেই কেমন যেন একটা দম বন্ধ হওয়ার মত অবস্থা হয় ,বুকের ভিতর কেমন একটা ব্যাথা শুরু হয় ।
আর টিয়ার চাকরীটা হয়েছে বসে থাকার । একেরপর এক রুগী আসে আর ওকে ঔষধ দিতে হয় । বিরক্তিকর একটা কাজ ।
তবুও কিছু করার নেই , করতেই হবে ।
চাকরী করছে বলেই ও এখনও নিজের বিয়েটা আটকে রেখেছে । চাকরী যদি না করতো তাহলে টিয়ার আব্বা কবেই ওকে বিয়ে দিতো ।
টিয়া ঘড়ি দেখলো , দুটো বেজে গেছে । অপুকে ফোন করার সময় হয়ে গেছে ।
একটু আগে অপু ওকে একটা মেসেজ পাঠিয়েছিল । জানিয়েছে যে ও চলে এসেছে । এখন কেবল ওর ফোনের অপেক্ষায় । টিয়ার ফোন ধরলো না অপু । কখনও ধরে না ।
সব সময় কেটে দিয়ে কল ব্যাক করে । আজও তাই করল । ফোন রিসিভ করে টিয়া বলল
-ইজিবাইক পেয়েছ ?
-না এখনও তো পাই নি । বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে তো !
-বৃষ্টি হচ্ছে ?
টিয়া খানিকটা অবাক হল । কাজের মধ্যে এতোই বিজি ছিল যে টেরই পাই নি ।
-তাহলে এখন ?
-তুমি চিন্তা করো না । আর দশটা মিনিট অপেক্ষা কর । আমি ব্যাবস্থা করছি ।
-আচ্ছা ।
ফোন রাখার পর টিয়ার একটু চিন্তাই হল ।
বাসায় যাবার সময় হয়েছে । যদি অপু সময় মত ইজিবাইক না ঠিক করতে পারে তাহলে হয়তো আজ ওর সাথে আর দেখাই হবে না ।
আর দেখা না হলে ........
টিয়া আর ভাবতে চাইলো না ।
টিয়ার শরীরটা কদিন থেকেই ভাল যাচ্ছিল না , এজন্যই অপু খানিকটা অস্থির ছিল ওকে দেখার জন্য । প্রতিদিন ফোন করলে সবার আগে কেবল একই কথা শরীর কেমন আছে ?
জ্বর নেই তো ?
বুকের ভিতর ব্যাথা করছে না তো ?
টিয়া প্রথম প্রথম বলত সত্য কথা, কিন্তু অপু ওর কথা শুনে খুব অস্থির হয়ে যেত !
তারপর থেকে টিয়া খানিকটা মিথ্যা বলা শুরু করে যে ওর শরীর ভাল আছে ।
যদিও খানিকটা খারাপ লাগত অপুর কাছে মিথ্যা বলাটা কিন্তু অপুর অস্থিরতা ওর কিছুতেই ভাল লাগত না । প্রথম কদিন বিশ্বাস করলেও অপু কেমন করে যেন টের পেয়ে গেল যে ওর শরীরটা ভাল যাচ্ছে না ।
অপুর বারবার জিজ্ঞেস করতো যে তোমার শরীর ভাল যাচ্ছে তো ! যতবার ফোন করতো ততবার সেই একই কথা !
শরীর ভালতো তোমার ? বুকের ব্যাথার কি অবস্থা ?
কি আশ্চার্য !
এই ছেলেটা এতো দুরে থেকেও কেমন করে বুঝে যায় ? টিয়া ভেবে পায় না । কাল দুপুরে ফোন করে বলল যে ও বাসায় আসছে ।
টিয়া খানিকটা অবাক হল ।
একটু রাগও দেখাতে চাইল । বলল
-সামনের সপ্তাহে না তোমার ফাইনাল পরীক্ষা ? এখন বাসায় আসলে পড়ালেখার কি হবে ?
অপু বলল
-পড়া লেখা জাহান্নামে যাক ! তোমাকে না দেখলে মন কিছুতেই শান্ত হবে না ।
টিয়া আর বাঁধা দিতে পারে নি । বাঁধা দিলে অপু শুনতোও না ।
কিন্তু এখন যদি ইজিবাইক না পাওয়া যায় তাহলে তো অপুর এতো কষ্ট করে আশা বৃথা যাবে ।
আজ যদি ওদের দেখা না হয় তাহলে আর হয়তো ভাল ভাবে দেখাই হবে না ।
একটু ভাল করে কথাও বলতে পারবে না । টিয়া বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে এই কথা গুলোই ভাবছিল এমন সময় ফোন বেজে উঠল ।
-কি পেয়েছ ?
অপু বলল
-এই প্রায় চলে এসেছি । তুমি বাইরে বের হও ।
যাক , মনে মনে একটা শান্তি অনুভব করলো । অন্তত এই অল্প কিছুক্ষন অপুর কাছাকাছি থাকা যাবে ।
টিয়া বাইরে বেরিয়ে দেখলো বৃষ্টি বেশ ভালই পড়ছে ।
অপু সব সময় এমন বৃষ্টি দিনের কথা বলত ! বৃষ্টি শুরু হলেই অপু ফোন করে বলত জানো পাখি আমার জীবনের সব থেকে সুন্দর স্বপ্ন গুলোর মধ্য একটা হচ্ছে তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভেজা । তোমার হাত ধরে বৃষ্টির পানিতে লাফালাফি করা ।
আজ কি ঐ রকম কিছু হবে !
নাহ , টিয়ার বৃষ্টিতে ভেজার উপায় নেই । অফিস থেকে যাওয়ার পথে যদি বৃষ্টিতে ভেজে তাহলে টিয়াকে ওর বাবা হাজারটা প্রশ্ন করবে ।
মোড়ের মাথায় পৌছিয়ে দেখল অপু দাড়িয়ে আছে । ইস ! কতদিন পরেই না অপুকে দেখলো ও । গত মাসের প্রথম দিকে ওকে দেখেছিল আর আজকে এই মাসের অর্ধেকটা ইতি মধ্যে পার হয়ে গেছে ।
টিয়া চুপচাপ ইজিবাইকটা তে উঠে বসলো । টিয়ার ইজিবাইকে চড়তে ভালই লাগে , বিশেষ করে যখন অপু এরকম রিজার্ভ করে আনে । কেবল ওরা দুজন । অবশ্য একটা সমস্যা আছে । ইজিবাইক গুলো একদম খোলামেলা ।
সিএনজির মত আটকানো না । তাই টিয়ার মনে খানিকটা ভয়ও কাজ করে । যদি পরিচিত কারো চোখে পরে যায় বাসায় খবর পৌছাতে একটুও দেরি লাগবে না । আর বাসায় খবর পৌছালে টিয়ার আব্বা কি করবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ।
তাই অপুর সাথে ইজি বাইকে চড়াটা একটু রিস্কি হয়ে যায় ।
কিন্তু টিয়ার এই রিস্কটুকু নেয় ।
অপু এতো কষ্ট করে ওর সাথে দেখা করতে এসেছে এইটুকু রিস্ক নেওয়াই যায় ।
যাত্রা শুরু হল ।
যদিও ওর পাশাপাশা বসে কিন্তু আজ অপু ওর মুখোমুখী বসছে । এরকম বসার কারনটা হল বাইরে বেশ জোরে বৃষ্টি হচ্ছে ।
আর বৃষ্টির ছাট আসছে বাইকের ভিতর । অপু পলিথিন পেপার দিয়ে খানিকটা বৃষ্টি আটকানোর চেষ্টা করছে । আর বাকিটা নিজের শরীর দিয়ে । টিয়া বলল
-তুমি তো ভিজে যাচ্ছ ।
অপু হাসল ।
বলল
-সমস্যা নাই । তুমি না ভিজলেই হল ।
-আরে একটু ভিজলে সমস্যা নাই । তুমি ওভাবে ভিজো না । অপু আবার হাসল ।
বলল
-আমার ভিজতে ভাল লাগছে ! জানো আমার জীবনের ইচ্ছা গুলো কেমন করে জানি আস্তে আস্তে পুরন হয়ে যাচ্ছে ।
-কি রকম ?
-এই যে বাইরে কি চমত্কার বৃষ্টি হচ্ছে । আমরা দুজন একসাথে মুখোমুখি বসে । বৃষ্টির ফোটা এসে পড়ছে গায়ে ! কি চমত্কার এই অনুভুতি !
টিয়ার আসলেই খুব ভাল লাগছে । ভাল লাগছে এই পাগল ছেলেটার আনন্দ দেখে ।
-টিয়াপাখি চল না একটু বৃষ্টিতে ভিজি !
টিয়া বলল
-তোমার কি মাথা খারাপ ? আমি যদি বৃষ্টিতে ভিজে বাড়িতে যাই আমার মা আমার খবর করে দেবে ।
অপু আর কিছু বলল না । বাসার কথা বললে অপু কখনই আরগু করে না । আপু আবার বলল
-কিন্তু বিয়ের পর কিন্তু বৃষ্টি হলেই ভিজতে হবে । তখন কিন্তু কোন কথা শুনবো না !
টিয়া হাসে ।
সত্যি এই পাগল ছেলেটা সামনের দিন গুলো নিয়ে কতগুলো ভেবে রেখেছে । বৃষ্টি ধরে এল কিছুক্ষন পর । অপু আর একটু ভাল করে বসল টিয়ার মুখোমুখি । আপু বলল
-জানো আমার এখন কি করতে ইচ্ছা করছে ?
টিয়া হাসল । বলল
-কি করতে ইচ্ছা করছে ?
-গেছ কর ।
অপুর চোখ দুটো কেমন দুষ্টমিতে ভরে উঠল । টিয়া খানিকটা চোখ গরম করে বলল
-শোন দুষ্টামী করবা না ।
অপু ভাল ছেলের মত বলল
-একটা মাত্র !
-শোন হবে না ।
অপু খানিকটা মন খারাপ করলো । টিয়া বলল
-প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা কর ।
-আচ্ছা সমস্যা নাই । তুমি যা চাও তাই হবে । তবে বিয়ে আগে হোক তখন মজা দেখাবো !
এই বলে অপু টিয়ার হাতটা ধরল । তারপর হাতে আলতো করে একটা চুম খেল ।
-এখন এটাতেই আমি সন্তুষ্ট থাকছি কিন্তু ঈদে যখন বাড়িতে আসব তখন কিন্তু ...
টিয়া খানিকটা লজ্জা পেল ।
এই ছেলেটা দিন দিন কেমন দুষ্ট হয়ে যাচ্ছে । কিন্তু টিয়া এটা নিয়ে কোন অভিযোগ করতে পারে না । আসলে অভিযোগ করতে চায় না । ওর এই আচরন গুলো টিয়ার খুব ভাল লাগে !
দেখতে দেখতে জার্নি শেষ হয়ে আসল । অপু বলল
-কি রকম ভাবে সময়টা শেষ হয়ে গেল ।
জানো তোমার সাথে সময়টা কেমন করে তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় । দেখতে দেখতে সময় পার হয়ে যায় !
অপুদের বাসাটা একদম রাস্তার পাশে ! প্রতিবার অপু এরকম ভাবেই নেমে পরে !
--------------------
গল্পটা এখানেই শেষ করি ! আরো কিছু লিখতে গেলে কষ্টের কথা লিখতে হবে । কারন টিয়াপাখিকে যতবার টিয়াপাখিকেআমি এভাবে রেখে চলে এসেছি অথবা আমাদের দেখা হবার পর আমরা যতবার এভাবে আলাদা হয়েছি কেমন যেন একটা কষ্ট অনুভব করেছি । বুকের মাঝে কেমন একটা হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে ! মনে হয়েছে আমার সব কিছু যেন আমিম রেখে চলে যাচ্ছি । এবার যখন আমি ইজিবাইক থেকে নামলাম, টিয়া পাখির কাছ থেকে বিদায় নিলাম তকখনও কিছু মনে হয় নি ।
কিন্তু যখন ইজিবাইকটা চলতে শুরু করলো মনে হল আমার সবটুকু অস্তিত্ব যেন ঐ বাইকটার সাথে চলে যাচ্ছে ! মনের ভিতর কেন জানি একটা আন্দোলন সৃষ্টি হয় ! খুব ইচ্ছা করছিল দৌড়ে বাইকটাতে উঠে পড়ি । কিন্তু ইচ্ছে টাকে দমন করতে হয় ! যতদুর চোখ যায় তাকিয়ে থাকি । টিয়াপাখিও ফিরে তাকায় বার কয়েক ! আমার চোখে যেমন অস্থিরতা ঐ চোখেও তেমন একটা অস্থিরতা দেখা যায়।
নিজের মনকে তখন বোঝাই এই বলে যে আজ তোমাকে যেতে দিচ্ছি কেবল তোমাকে আরো আপন করে পারো বলে ! এমন একটা দিন আষবে যেদিন আর কখনই তোমাকে ছেড়ে যেতে হবে না !
ফেবু লিংক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।