আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিশুরা খুবই দুষ্ট। খুব।

বেশ কয়েক মাস আগের কথা। একটা টিভি অনুষ্ঠানে আমাকে 'অতিথি' হিসেবে দাওয়াত দেয়া হলো। আমি তো খুশিতে আত্নহারা। জীবনে এই প্রথম কেউ আমাকে টিভিতে ডাকলো। আমি একটা টক শো'র অতিথি।

বিরাট মান ইজ্জতের বিষয়। টক শোর বিষয় : ভূত এবং এর ভবিষ্যত। টক শো-তে ভূত নিয়ে গবেষণা করেন এমন লোকজন থাকবেন, ভূত সাহিত্যের চর্চা করবেন -এমন খ্যাতিমান কথা সাহিত্যিকও একজন থাকবেন। অবশ্য সেই টক শো-তে আমার রোল কি হবে- আমি ঠিক নিশ্চিত না। তবুও আমি মহাখুশি হয়ে টক শো'র জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম।

অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে আমাকে অতিথি করার রহস্য খোলাসা হলো। আমি রবি হিসেবে নয়, টক শো-তে একজন ভূত হিসেবে উপস্থিত হবো। এই ধরণের বেইজ্জতি অফারে আমি বেঁকে বসলাম। কিন্তু টিভির প্রোডিউসার আমাকে হাতে পায়ে ধরে বসলেন, বস, আপনি না করবেন না। , আমাদের আর কোনো অলটারনেটিভ নেই।

হাতে সময় আছে মাত্র এক ঘন্টা। এই ঘন্টায় আমি একটা ভূত কোথায় পাবো, আপনিই বলেন? প্রোডিউসারের কাতর অনুনয়ে আমি গলে গেলাম। মুখে কালিঝুলি মেখে টিভি ক্যামেরার সামনে বসে গেলাম। পরদিন আমার মেয়ে স্কুলে গেল। তার এক বান্ধবী তাকে বলল, তোর বাবার চেহারা এমনিতেই ভূতের মতো।

নতুন করে কালিটালি না মাখলেও চলতো। আমার মেয়েও তার বান্ধবীর সাথে একমত। বাসায় ফিরে দুই বোনের সেকি হাসাহাসি। আমার দুই কণ্যা এবং তাদের সকল বান্ধবীকুলের উপর আমার বিশ্বাস জন্মালো, এরা দুধর্ষ, দুষ্টু এবং মানহানিকর। গত শুক্রবার সোফায় শুয়ে আনমনে টিভি দেখছি।

পেছন থেকে হঠাৎ একটি তরুণী কন্ঠ বলে উঠলো, এই তোমার চোখ এতো কালো ক্যানো? তাকিয়ে দেখি, পিচ্ছি একটি মেয়ে। আমার বড়ো মেয়ের চেয়েও ছোট। সে আবারও বলল, অ্যাই, তোমার চোখ কালো ক্যানো? কি হছৈ? একটা পুঁচকি মেয়ে। আমি তার বাবার বয়সী। প্রথমে সালাম দেবে, তারপর আংকেল বলবে, তা না, সরাসরি তুমি বলে সম্বোধন।

আমি এই শিশুর বেয়াদবিতে স্মম্ভিত হয়ে গেলুম। কর্কষ গলায় বললাম, কে তুমি? তারপর গলায় চড়িয়ে বললাম, এই মেয়ে কে? আমার কণ্যা এসে বলল, গাধার মতো চিল্লাচ্ছো ক্যানো? ও আমার ফ্রেন্ড। সেই মেয়েটি বলল, তোমার বাবা পাগল নাকি? আমার বেয়াদব কণ্যা অবলীলায় উত্তর দিলো, একটু। আমি পুরোপুরি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লাম। মুসাপুত্র রাইদের জন্মদিনে গেছি।

ভাবলাম এভারেস্টজয়ী এই শিশুপুত্রটিকে এই বিশেষ শুভদিনে কিছু উদ্দীপনামূলক কথা বলা দরকার। বললাম, রাইদ, কেমন আছো? মনে রাখবে স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। কাজেই বেশি বেশি খাবে, খেলে শক্তি বাড়বে। বাবার মতো আরও উচুঁ পাহাড়ে উঠতে পারবে। বাচ্চাটি খুব মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনছে।

আমার মনে হলো, বেয়াদব এবং দুষ্টমতি শিশুদের ভীড়ে এই শিশুটিই ব্যতিক্রম। কাজেই আমি আমার বক্তৃতার তোড় বাড়িয়ে দিলাম। বললাম, আমাদের সবাইকে শক্তিশালী হতে হবে। এই জাতির দরকার বলবান মানুষ, বলবান শিশু। দেখি তো তোমার শক্তি কেমন? মুসাপুত্র কোনো প্রস্ততি এবং পূর্বাভাস ছাড়াই কুংফু স্টাইলে একটা পাঞ্চ মারলো।

আমার শরীরের খুব বেকায়দার জায়গায় সেটি লাগলো। ব্যাথায় গোটা জগত কালো হয়ে এলো। চিৎকার দিতে গিয়েও শেষ মুহুর্তে সামলে নিলাম। চিৎকার দিলে, মুসা ছুটে আসবে। আমার অসুখবিসুখের ব্যাপারে মুসা খুব সিরিয়াস।

কাজেই সে ব্যস্ত হয়ে ক্ষতস্থানে বরফটরফ ঘষার চেষ্টা করবে। সেটা হবে আরও বেইজ্জতিকর বিষয়। কাজেই হাসি হাসি মুখে এই অকথ্য যন্ত্রণা সহ্য করা ছাড়া অন্যকোনো উপায় রইলো না। সেই থেকে বাচ্চাদের কাছ থেকে আমি শতহস্ত দূরে থাকি। আরেক বন্ধুর বাসায় গেছি।

তার শিশুপুত্র আরশান দারুন শান্তশিষ্ট, একেবারে দেবশিশু। আনমনে ''ডোনালডাক'' দেখছে। মনে হলো এই শিশুটি অন্যদের মতো নয়, কাজেই একটু ভাব জমানো যেতেই পারে। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া বাচ্চা কাজেই ইংরেজি লাইনেই এগুনো বোধহয় ঠিক হবে। মনে মনে ইংরেজি একটা বাক্য গুছিয়ে নিয়ে বললাম, হাই আরশান, হাউ আর ইউ? কোনো উত্তর নেই।

বোধহয় আমার ইংরেজি বোঝে নাই। একটু ইংলিশ একসেন্টে বললাম, হাই, আড়সান, হাউ আর ইউ? এবারও নিরুত্তর। এবার পুরো ব্রিটিশ স্টাইলে বলাম, হেই, আর্সা, হাউ আর য়ু? আরশান মুখ ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো। তারপর খুব শান্তস্বরে বলল, ইউ শাট আপ, ডোন্ট ড্রাইভ মি ক্রেইজি। শিশুরা খুবই দুষ্ট।

খুব। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।