একটা মেয়ের একটু কথা।
ধর্ষিতা - কি নিদারুণ একটা শব্দ। আমাদের দেশে প্রতিদিন কত কত নারী ধর্ষিত হচ্ছে কতটুকু আমরা জানি? উত্তর সহজ! যতটুকু পত্রিকায় আসে ঠিক ততটুকু! পত্রিকায় নিউজে আসার পরে ফেইসবুকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। স্ট্যাটাস লাইক কমেন্টের বন্যায় ভেসে যায় ফেইসবুক! লাইক মারাই যে প্রতিবাদ নয় এটাও কিন্তু আমরা জানি না এমন নয়। আমরা জানি।
কিন্তু রাস্তায় কতজন নামি? প্রতিদিনই খবর আসে কোন না কোন জায়গায় কোন না কোন মেয়ে ধর্ষিত। সোনার দেশের সোনার ছেলেদের কীর্তি। একজন ধর্ষিতার প্রতি আমরা আসলে কতটুকু সহমর্মী? নিজেকে জিজ্ঞেস করুন তো! আন্সার আসবে- অনেক খানি সহমর্মী। কিন্তু আসলে আমরা তা না। ধর্ষিতা একটি মেয়ে ধর্ষনের পরে যে রকম শারিরীক মানসিক সামাজিক যন্ত্রনার মধ্যে বাস করে আমরা তা কোনদিন কল্পনা করতে পারবো না।
শারিরীক ক্ষত হয়তো শুকিয়ে যায়। কিন্তু মানসিক যন্ত্রনা সহ্য করে যেতে হয় দিনের পর দিন! আর সামাজিক যন্ত্রনা? সেটা কি রকম নগ্নভাবে বাস্তব আমরা প্রত্যেকেই জানি! শুধু ধর্ষিতার কষ্টটুকু অনুভব করতে পারি না। আছেন কোন বীরপুরুষ যে নাকি একজন ধর্ষিতাকে বিয়ে করতে আগ্রহী? আর যদি ধর্ষিতা মেয়েটি বিবাহিত হয় তাহলে তো কথাই নেই। এই খবর কোন দিন কেউ জানতে পারে না। কোন ভাবে জানাজানি হলে হয়তো বিচ্ছেদ নয়তো সারাজীবন কটাক্ষ নিয়ে বসবাস করতে হয়।
গত কয়েকদিনের প্রিন্ট মিডিয়া এবং অনলাইন মিডিয়ার নিউজগুলোতে চোখ বুলালে ধর্ষন এবং ধর্ষিতা শব্দটি এত কমন দেখা যাবে যে মনে হবে এই দেশের আপামর পুরুষ সমাজ ধর্ষক। একটি মেয়েকে একটা নরপশু রেপ করার পরে আমরা সবাই মিলে তাকে সারাজীবন রেপ করেই যাই। সামাজিক ভাবে মানসিক ভাবে। ধর্ষিত (শব্দটা ইউজ করতে খুব খারাপ লাগছে আসলে) খুব সাহসী কোন মেয়ে বা পরিবার থেকে দৃঢ় সাপোর্ট পাওয়া মেয়ে নেকাব না পড়ে মুখ খোলা রেখে চলতে পারে। জীবনে পরবর্তী স্টেজে যেতে পারে।
আমরাই সমাজবাসী মানুষরা মেয়েটিকে বারবার রেপ করি। আসলে আমাদের নিজেদের পরিবারে কেউ রেপড না হওয়া পর্যন্ত আমাদের টনক নড়বে না। আর মেয়েদের কথা যদি বলি অন্য একটা মেয়ে রেপড হয়ছে বিষয়টা ভেবেই গা গুলিয়ে ওঠে প্রথমে দুফোঁটা ধরলাম চারফোঁটা অশ্রুই বিসর্জিত হয়। কিন্তু তারপরও আমাদের পরের জন্যে আমাদের রাস্তায় দুঘন্টা দাঁড়ানোতে আপত্তি। কিন্তু নিজেদের কিছু হলে দৌড়াদৌড়ি করে জুতো ক্ষয় করে ফেলি।
আমি সবার কথা বলছি না অবশ্যি। অনেককেই চিনি যারা কোন রকম স্বার্থ না রেখে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর কাজে নিজেকে বিলিযে দেন। এই রকম মানুষরাই আলোকিত মানুষ। তাদের বলছি কিভাবে সহ্য করছেন এমনটা? কেন প্রতিবাদ করতে পারছি না? আমরা কি ধর্ষকদের কাছে কোন ভাবে দায়বদ্ধ? নাকি প্রতিবাদ করতে ক্লান্ত লাগে? মেয়েদের বলছি আমাদের প্রতিবাদ অন্য কেউ এসে করে দিয়ে যাবে না। নিজেদেরই করতে হবে।
ধর্ষকদের দ্রুত দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি হলেই ধর্ষনের হার কমে যাবে। বলছি না রাতারাতি সমাজ পাল্টাবে কিন্তু আমরা তো প্রতিবাদ করতে পারি! আমরা কি পারি না ধর্ষিতাদের জন্যে কিছুক্ষণ সময় রাস্তায় দাঁড়াতে? একটি প্ল্যাকার্ড হাতে যেখানে লেখা থাকবে “আমাদের ক্ষমা করো বোন, আমরা মানুষ হিসেবে লজ্জিত ” ভাইরা তাদের বোনদের জন্যে কি একটুও লজ্জিত হবেন না? নাকি অপেক্ষা করছেন সেই দিনের জন্যে যেই দিন কোন নরপশু ঝাপিয়ে পড়বে আপনার বোনটির উপর বা বান্ধবী বা স্ত্রীর উপর? তখন চোখে অন্ধকার দেখবেন আর গলায় দলা পাকিয়ে কিছু আটকে রেখে দেখনে কেউ আপনার পাশে দাঁড়াচ্ছে না! বাংলাদেশে ভার্চুয়াল জগত যেখানে ধর্ষনের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়ছে আসুন আমরা ভাচুয়াল জগতের এই ক্ষোভ নিয়ে রাস্তায় কিছুটা সময় দাঁড়াই! আসুন একটি প্ল্যাকার্ড হাতে নিই যেখানে লিখা কিছু বাণী আমাদের দায়বদ্ধতা খেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিবে।
চলে আসুন ২১ জুন শুক্রবার বিকাল ৪ টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে । আমরা কজন ধর্ষিতা বোনের ভাই-বোনেরা প্রতিবাদে নামবো। এইদিন আমরা রাজপথে থেকে প্রতিবাদ জানাবো।
বেশ কিছু দাবি থাকবে আমাদের এ আন্দোলনে :
১. ধর্ষণ মামলায় জামিন আবেদন নিষিদ্ধ করণ;
২. ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে শুধুমাত্র ফাঁসি বলবৎকরণ;
৩. ধর্ষণের দায়ে অভিষুক্ত আসামীকে রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমার বাইরে রাখা;
৪. দুই মাসের মাঝে রায় কার্যকর করা;
৫. ধর্ষিতার অনুমতি ব্যতীত ছবি ও পরিচয় প্রকাশ থেকে বিরত থাকা;
৬. ধর্ষিতার ভবিষ্যত জীবনের দ্বায়ভার রাষ্ট্রের উপর ন্যস্তকরণ;
এইখানের প্রতিটি পয়েন্টর যৌক্তিকতা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত! বোনেরা কে কে আছেন যারা বিকালের সময় টুকু একটি পবিত্র কাজে ব্যায় করতে পারবেন? ভাবতে পারেন? ধর্ষিতা মেয়েটির স্থলে আপনিও থাকতে পারতেন! ভাইয়েরা কে কে আছেন? যে ধর্ষককে পুরুষ না ভেবে নরপশু আখ্যা দিতে রাজি আছেন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।