গনজাগরনের মাধ্যেমে পরিবর্তন সম্ভব....মানুষের চিন্তার পরিবর্তন করাটা জরুরি ....বুদ্ধিবৃত্তিক পুনরজাগরনে বিশ্বাসী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভিসি ও প্রোভিসি বিরোধী আন্দোলনের নেপথ্যে বিএনপি এবং জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা কলকাঠি নাড়ছেন। তাদের সহযোগী হিসেবে রয়েছে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ভিসি ও প্রো-ভিসিপন্থী শিক্ষকরা এ অভিযোগ করেছেন। তারা বলেছেন, বুয়েটের মাত্র ২২ শতাংশ শিক্ষক প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার অধিকারী এবং সরকার সমর্থক। বাকিরা বিএনপি জামায়াতের সমর্থক।
তারা বুয়েটকে অস্থির করার মাধ্যমে ফায়দা লুটতে চায়। বিএনপি জামায়াতের সমর্থনে ছাত্র পরিচয়ে বহিরাগতরা আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। তবে আন্দোলনকারীরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এমনকি তারা নিজেদের পরিচয়ও তুলে ধরেছেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে অপপ্রচার বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের অবস্থান ধর্মঘট চতুর্থদিনেও অব্যাহত ছিল। তাদের পদত্যাগের দাবিতে শপথও নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের পক্ষ নিয়ে শিক্ষকদের একাংশ এবং ছাত্রলীগের কর্মীরা মাঠে নেমেছেন। দুপক্ষের অনড় অবস্থানে দীর্ঘ হচ্ছে বুয়েট সংকট। ভিসি ও প্রো-ভিসিপন্থীরা অভিযোগ করেছেন, বুয়েটের আন্দোলনের নেপথ্যে জামায়াত ও নিষিদ্ধঘোষিত হিযবুত তাহরীর কলকাঠি নাড়ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
১১টি বর্ণনা, ৪টি মন্তব্য ও ৪টি সুপারিশ সংযুক্ত ৩ পাতার এ গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির মাত্র ২২ ভাগ শিক্ষক বর্তমান সরকার ও প্রগতিশীল মতাদর্শের অনুসারী। ৭০ ভাগ শিক্ষকই বিএনপি-জামায়াত ও হিযবুত তাহরীরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাকি ৮ ভাগ শিক্ষক মোটামুটি নিরপেক্ষ। কেবল তাই নয়, ১৩ সদস্যবিশিষ্ট শিক্ষক সমিতির অধিকাংশই সরকারের ঘোরতর বিরোধী এবং তারাই হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্রদের মদদ দিচ্ছেন। তবে গোয়েন্দাদের এসব প্রতিবেদন বানানো গল্প বলে মনে করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
তাদের মতে, দুর্নীতিবাজ উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিজেকে বাঁচানোর জন্য এখন অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তাদের পদত্যাগ করাতে আমরা শপথ নিয়েছি। কেউ আমাদের আন্দোলন থেকে ফেরাতে পারবে না। ভিসিপন্থী এক শিক্ষক সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত হয়ে পড়েছেন জামায়াত ও হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা। অধ্যাপক মাহবুব রাজ্জাক ও তার স্ত্রী অধ্যাপক সুলতানা রাজিয়ার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ রয়েছে।
মাহবুব রাজ্জাক ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং যুদ্ধাপরাধী দায়ে অভিযুক্ত গোলাম আযমের দেহরক্ষী ছিলেন বলে গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছেন। এ ছাড়া শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক মাকসুদ হিলালী, হাফিজুর রহমান রানার বিরুদ্ধে হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীকে ফেসবুকে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে হাফিজুর রহমান রানার বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে চলছে তদন্ত। সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. আশরাফুল ইসলাম, সমিতির সদস্য ড. সোহেল রহমান, ড. এ কে এম মাসুদ, অধ্যাপক মো. এহসান প্রমুখের বিষয়েও খোঁজখবর নিচ্ছে গোয়েন্দারা।
বুয়েট শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. মুনতাজ আহমেদ বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করে সমস্যা সমাধান করতে বলেছেন। সেখানে কার মদদে তারা এ আন্দোলন চালাচ্ছেন সেটা আমরা সবাই জানি। সময়মতো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অপেক্ষাকৃত ছোট প্রতিষ্ঠান হওয়ায় উপাচার্যের পাশাপাশি উপ-উপাচার্য দরকার নেই বলে অভিযোগ করে বুয়েট শিক্ষক সমিতি।
তারা গত এপ্রিল থেকে উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। কিন্তু এক পর্যায়ে শিক্ষক সমিতি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম নজরুল ইসলামের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পান। আন্দোলনকারীদের অভিযোগÑ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে দ্বিতীয় দফায় চেষ্টা করে উপাচার্য পদে নিয়োগ পাওয়া নজরুল ইসলাম শিক্ষকদের সব সময়ই চাপে রাখতে চাইতেন। শিক্ষক সমিতি ও নিয়মতান্ত্রিকতাকে পাশ কাটিয়ে তিনি নিজের ইচ্ছামতো নিয়োগ দিচ্ছিলেন এবং সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন। এসব কাজে তার প্রত্যক্ষ সহযোগী ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) অধ্যাপক হাবিবুর রহমান।
নবসৃষ্ট এ পদে ৪৪ জনকে ডিঙিয়ে নিয়ম লঙ্ঘন করে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। তবে প্রো-ভিসি বরাবরই বলে আসছেনÑ নিয়ম মেনেই তাকে প্রো-ভিসি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বুয়েটের সুনাম ক্ষুণেœর জন্য কিছু জামায়াত-নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীর আন্দোলন করছে। সর্বশেষ সরকারদলীয় সমর্থক দুই ছাত্রকে নিবন্ধন ও পরীক্ষার ফলাফল পরিবর্তনের অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো শিক্ষকরা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার জন্য প্রকাশ করেছে। সেখানে আমরা জড়িত নই।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন, ভিসি দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে একের পর এক শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে চলেছেন। তিনি রেজিস্ট্রার পদে বুয়েটের বঙ্গবন্ধু পরিষদ সভাপতি কামাল আহম্মদকে ভূতাপেক্ষ নিয়োগ দেন। এ নিয়োগের বিরোধিতা করলে সাধারণ শিক্ষকদের রাজনৈতিকভাবে জড়ানোর চেষ্টা করেন ভিসি, প্রো-ভিসি এবং তাদের ঘনিষ্ঠরা। তবে আন্দোলনের মুখে সম্প্রতি কামাল আহাম্মদকে সরানো হয়। এ ছাড়া ভিসি ও প্রো-ভিসির বিরুদ্ধে মো. মোকাম্মেল হোসাইন নামে এক ছাত্রলীগ নেতার ফল ও গ্রেড পরিবর্তনে বিশেষ সুযোগ দেয়ার অভিযোগও উঠেছে।
ভিসিসহ প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তারা বিভিন্ন সভায় উপস্থিত থাকার নামে অপ্রচলিতভাবে মোটা অঙ্কের সম্মানী ভাতা নিতেন। কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতেও অনিয়ম হয়েছে। কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে পছন্দের কমিটি করে অনিয়মের মাধ্যমে অন্তত ১৬টি পদে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ আছে। ফলে প্রথমে নবসৃষ্ট প্রো-ভিসি নিয়ে আপত্তি থাকলেও ভিসির দুর্নীতির কারণে দুজনকেই সরাতে বদ্ধপরিকর বুয়েটের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা। উল্লেখ্য, ১৬টি অভিযোগ এনে শিক্ষক সমিতি উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে ৭ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করে।
পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এক মাসের জন্য তা স্থগিত করে। কিন্তু সংকট না কাটায় গত ৭ জুলাই থেকে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করে শিক্ষক সমিতি। পরে শিক্ষক সমিতি পুন?ঃকর্মবিরতির ডাক দিলে উপাচার্য গ্রীষ্মকালীন অবকাশের নামে ৪০ দিনের ছুটি ঘোষণা করেন। আর এতেই ফুঁসে ওঠে বুয়েট। চলছে লাগাতার আন্দোলন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।