অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া! ফ্রিল্যান্স ক্রেডেনশিয়াল ৭ : চাই পারিবারিক শান্তি ও সম্প্রীতি
ফ্রিল্যান্স ক্রেডেনশিয়াল বই-এর এই অংশটি সরাসরি অনুবাদ করাটা মুশ্কিল কারণ কনটেক্সট আলাদা। এ কারণে ভাবটা অনুসরণ করে নিজের মতো করে তথ্যগুরো সাজিয়ে দিলাম।
আর দেড় পর্ব লিখতে হবে। মোটামুটি হাপিয় উঠেছি।
এখন একমাত্র আল্লাহ ভরসা!
যারা ফ্রিল্যান্সিং করে তাদের কাজের চৌহদ্দি হল তারা নিজেরা, তাদের কম্পিউটার, কাজের টেবিল এবং অনেক সময় আলাদা একটা রুম! কাজে পরিবার হল তার প্রথম সহায়। অনেক পরিবারই ফ্রিল্যান্সিং ব্যাপারটাকে মেনে নেয় না। আমাদের দেশেতো বটেই এমনকি আমেরিকার মতো দেশেও এটিকে মেনে নেওয়া কঠিন কারনটা পুরোপুরি সাংস্কৃতিক। আমরা এখনো রিমোটলি কাজ করাকে মেনে নিতে পারি নাই। পরিবারের দিক থেকে দুই রকমের আচরণ হতে পারে।
প্রথমটি হলো – হায় হায়। এ আমার মেয়ে কী করলো। তার এতো ভাল একটা চাকরি, কয়েক বছরের মধ্যে প্রমোশন পেয়ে ম্যাজেজার হয়ে যেত। তা না। কী সব ছাই পাশ ফ্রিল্যান্সিং না মাথামুণ্ডু করে! আমি তো বুজি না ও কী কাজ করে।
সারাদিনতো দেখি কম্পিউটারের মধ্যে কী সব গুতাগুতি করছে!
এটিপ্রায় সার্জননীন দৃশ্য।
দ্বিতীয়টি হল যারা বুঝদার তারা ব্যাপারটা মেনে নেয় সহজভাবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাপারটা বেশ সহজ হয়।
যাক পরিবার মেনে নেওয়ার পর শুরু হয় প্রধান কয়েকটি সমস্যা। যেহেতু ফ্রিল্যান্সার বাসাতেই থাকে, কাজে সবাই মনে করে ওরে সব কাজে পাওয়া যাবে।
বাবা অফিস যাবার সময় ইলেকট্রিকের বিলটা ধরায় দিয়ে যায়, মা হঠাৎ রুমে এসে বলে – দুপুরে তোর বোন আর দুলাভাই আসবে। খাবে। ফ্রিজেতো কিছু নাই। তুই বাবা একটু দৌড়ে গিয়ে কিছু বাজার করে নিয়ে আয়। এ সময় আমি তোর কম্পিউটারে খেয়াল রাখবো!!!
অনেক বন্ধু অফিস থেকে ফোন করে বা চ্যাটে ধরে।
আজাইরা আলাপ পারে। এই বন্ধুটি যথন তুমি গ্রামীণ ফোনে চাকরি করতে, তখন সহজে ফোন করতো না। ভাবতো তুমি ব্যস্ত। এখন তুমি আগের চেয়েও ব্যস্ত। কিন্তু সেটা সে বোঝে না।
আবার হয়তো দেখা যায় কেহ একজন দোরগোড়ায় হাজির। বন্ধুরা মিলে আড্ডা দেবে। চল। তুইতো বাসায় বসে আছিস!!!!
তো এসব সমস্যাতো থাকবে। এগুলো সমস্যা না ভেবে চ্যালেঞ্জ হিসাবে ভাবতে হবে।
এসব ক্ষেত্রে অনেকে রেগে-মেগে পরিবার, বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। অথচ আপনি যে ফ্রিল্যান্সিং করছেন সেটাতো পরিবারকেই বেশি সময় দেওয়ার জন্য!।
এই ডিলেমা থেকে বের হওয়ার সহজ রাস্তা কি আছে? জানি না।
কয়েকটি টিপস শোনা যাক –
১. নিজের কাজ ও সাফল্য সম্পর্কে ঘন ঘন সবাইকে আপডেট রাখা : সবাই নিজের কাজ সম্পর্কে বলতে ভালবাসে। তোমাকেও বলতে হবে।
প্রথমত ওদেরকে জানাতে হবে যে একটিমাত্র কম্পিউটারে বসে থাকলেও তুমি আসলে অনেক কাজ করো, অনেকের কাজ করো। দ্বিতীয়ত এর মাধ্যমে ওদের মধ্যে তোমার কাজ সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি হবে। সেটি আখেরে তোমার কাজে দেবে।
২. বাস্তব কাজ দেখাও : তোমার কাজের অনেক অংশ থাকবে যা দেখা যায়। পরিবার, বন্ধুদের সেটা দেখাও।
আমরা যারা চাকরি করি তারা কিন্তু অফিসের নানান গল্প করি বাসাতে। তাই না – আজকে না আমার বসের জন্মদিন ছিল। বুঝলে মা, আমরা একটি কেক এনেছি। ওনাকে বুঝতে দেয়নি...। তা এমনটা বলা তো হবে না্।
তাহলে? তাহলে এই বাস্তব উদাহরন। তুমি নতুন একটা ওয়েব সাইট বানিয়েছো, নতুন একটা টেমপ্লেট তৈরি করেছো, ক্লায়েন্টকে একটা প্রেজেন্টেশন করে দিয়েছো। এসবই তোমার পরিবারকে, বন্ধুকে দেখাও। তোমার ওপর ওদের কনফিডেন্স বাড়বে।
৩. না বলতে শিখো : আগেই বলেছি পরিবারের সবাই ভাবে তুমি সবসময় এভেইলেবল।
কাজে অনেক কিছুর জন্য বলবে। কাজে প্রথম কাজ হবে নিজের একটা কাজের সময় ঠিক করা। ঐ সময় তোমার “ওয়ার্কিং আওয়ার”। সেটা প্রতিষ্ঠা করো। তোমার পরিবার ও বন্ধুরা কয়েকদিনের মধ্যে তোমার স্কিল সম্পর্কে জেনে যাবে।
তারা নিত্য নতুন কাজের বানা করবে।
‘আমাকে একটা গ্রিটিংস কার্ড করে দে আপু”
‘আমার জন্য ওমুক বইটা ডাইনলোড করে দাও।
আমার একটা ওয়েবসাইট বানায়া দিস তো।
কাজে সতর্ক হতে হবে। হুমায়ুন আহমেদের এলেবেলের নায়িকা রাবেয়ার মতো হলে হবে না।
কায়দা করে না বলতে শিখো। যদিও তুমি নিজে তোমার পরিবারের জন্য কিছু কাজ করতে চাও।
৪. একটা রুটিন বানাও – যে সমন্ত বাসায় শিশু বা বৃদ্ধরা আছে তাদের জন্য এটি ম্যান্ডেটরি। কোন নিয়ম না মেনে যখন তখন, সকাল দুপুর সন্ধ্যা মধ্যরাত ব্যাপী কাজ করার অর্থ হলো – সবটাই তোমার কাজের সময়। তারা ভাবতে শেখে – “তাদের জন্য তোমার কোন সময় নাই!” আখেরে এটি তোমার কোন কাজে লাগবে না।
কাজে একটা রুটিন করার চেষ্টা করো। ছেলেটাকে সময় দাও। মেয়েটার পড়ার খোজ নাও। বাবার সঙ্গে হাসিনা-খালেদা বিষয়ে আলোচনা করো। মার কাছ থেকে জানো বাজারের কী অবস্থা।
মা বলার আগে তার কাছে জানতে চাও –ছোট খালার জানি কবে দেশে আসার কথা!
কাজগুল ছোট, তবে রিওয়ার্ডিং। নিজের পরিবারের সঙ্গে একটা ভাল সম্পর্ক থাকলে আখেরে তোমার অনেক লাভ। আমার কথা বিশ্বাস করো।
সহকর্মীদের সাপোর্ট
অনেকেরই জানা নাই অফিসের পানি খাওয়ার জায়গাটি তোমাকে কতো সাপোর্ট দেয়। এটি হল আড্ডা দেওয়ার জায়গা, নিজের রাগ প্রকাশ করার জায়গা এবং ভালবাসারও।
কিন্তু ফ্রিল্যান্সার হিসাবে ওয়াটার কুলার তুমি কই পাবা?
আজকাল এরকম অনেক অনলাইন কমিউনিটি ও ফোরাম হয়েছে যেখানে তুমি তোমার ওয়াটার কুলার পরিবেশ পেতে পারো।
ফ্রিল্যান্সিং ফোরাম – অনেক ফ্রিল্যান্সার সাপোর্টিভ প্রতিষ্ঠান মাঝে মধ্যে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য আড্ডার ব্যবস্থা করে, মুখোমুখি। সেরকম ফোরামে যোগ দাও। কথা বল, শোন এবং মতামত দাও। রাগ করো।
কারো বিরুদ্ধে লাগো। ফান করো।
দক্ষতাভিত্তিক ফোরাম : অনেকগুরো অনলাইন ফোরাম আছে যা কিনা তোমার দক্ষতাকে শানিত করবে, এগিয়ে নিযে যাবে। সেগুলোর মেম্বার হয়। সেখানে সময় দাও।
শেয়ার্ড অফিস : যদি মনে হয় বাসায় কাজ করে পোষাচ্ছে না তাহলে কয়েকজন মিলে অফিস শেযার করো। সেখানে কাজ করো। শেখানে তুমি প্রায় সব ধরণের মিল মহব্বত পাবা।
পরিবার আর সহকর্মীদের তোমার দরকার। কেবল তোমাকে পার্কের সময় দেওয়ার জন্য নয়, তোমার সবচেয়ে বিপদের সময় পাশে থাকার জন্য।
তাদেরকে দূরে রেখো না।
পাশে রাখো, পাশে থাকো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।