ভাবনার জালে বন্ধী,তুমি-আমি
গাছের ডালে পা ঝুলিয়ে বসে ছিলাম। নিজেকে ডারউইনের সূত্র অনুযায়ী বানর ভাবার চেষ্টা করছিলাম। চেষ্টা করতেই মনটা কেমন যেনো উদাস উদাস হয়ে গেল। নিশির কথা মনে পড়ছে। নিশি আমাকে একদিন বানর বলেছিল।
নিশির ঐ কথা শোনার পর থেকে আমি বাসার সাথের এই তেঁতুল গাছে বসবাস করছি। নিশির প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা বোধ করলাম। ভাগ্যিস সে আমাকে বানর বলেছিল, কেঁচো বলেনাই। তাহলে আমি মাটিখুঁড়ে বসবাস করতাম। এটা আমার জন্য কোন ব্যাপার না হলেও আমার বাবা-মা মেনে নিতেন না।
তারা আমার গাছে থাকার ব্যাপারটাই মেনে নিচ্ছেন না। জগতে আসলে আপন বলে কেউ নেই। বাবা-মাও না। ছেলে প্রেমের জন্য গাছে বসবাস করছে, এতে তিরস্কারের কি আছে! রোমিওর মা কি তাকে বকা দিত? রোমিওর কথা মনে পড়ে বিপদ হল। রাশিনের কথা মনে পড়ে গেলো।
তার সাথে আমার গল্পটা অসমাপ্তই রয়ে গেলো। রাশিনকে একটা ফোন দিতে গিয়ে দেখি তার নাম্বারটা আমি মুছে ফেলেছি! মেজাজ খুব খারাপ হয়ে এল। রাশিনের সাথে প্রেমের ইতিহাস বিষয়ক আলাপ ভালই জমত। মেয়েটার কথা ভেবে মনটা কেমন যেনো করতে লাগলো।
-আপনার সমস্যা কি?
মেয়েলী কণ্ঠ শুনে তেঁতুলের চিরল পাতার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি নিশি!
-আমার?
খানিকটা বোকা বানরের ভাব আনার চেষ্টা করলাম চেহারায়।
-গাছের ডালে কি করেন?
-না। এমনি বসে আছি। আসলে এখান থেকে শুক্রগ্রহ স্পষ্ট দেখা যায়। তাই আগেভাগে এই জায়গা দখল করে রেখেছি। অন্য বানরদের সুযোগ দেবনা।
-অন্য বানর মানে? আপনি কি বানর?
-হ্যা আমি বানর। তুমি ওইদিন আমাকে বানর বলেছিলে। সেইদিন থেকে আমি বানর হয়ে গেছি। আমার সমস্ত দেহমন জুড়ে বানরীয় অনুভূতির লালন করছি।
নিশি ফিক করে হেসে ফেলল।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-নেমে আসুন বলছি।
নিশির কথার অবাধ্য হবার সাহস আমার নেই। আমি নেমে আসলাম। নেমে আসতেই নিশি আমাকে জড়িয়ে ধরল। লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম।
কি লজ্জা! নিশি আমার কাঁধে মাথা রেখে বলল, "তুমি এমন কেন? আমার একি সর্বনাশ করলে গো? আমি যে তোমাকে ছাড়া আর ভাবতে পারিনা। "
নিশির এমন আবেগে আমার ভেতরের বানর অনুভূতি প্রকট হল। আমি বললাম,
-চল, আমরা গাছে উঠে যাই। সেখান থেকে বিলকিছের গোসলের জায়গাটা ভালোভাবে দেখা যায়।
এই কথা শুনে নিশি আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।
কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-তুই একটা হারামি, তুই একটা ছাগল।
নিশি বসে বসে কাঁদতে লাগল। আমি রহিমদের বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম। ওদের ছাগলের খোঁয়াড় আছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।