আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান - শঙ্খচিল

ভবের খেয়া এবার বাওয়া হইল আমার শেষ; এবার তরী ভাসিয়ে দিলাম পরপারের দেশ । । হেমাঙ্গ বিশ্বাস (জন্ম: ১৪ জানুয়ারি ১৯১২ - মৃত্যূ: ২২ নভেম্বর ১৯৮৭) হলেন বাংলা গণসংগীতের পথিকৃৎ কণ্ঠশিল্পী এবং সুরকার । মূলত লোকসঙ্গীতকে কেন্দ্র করে গণসঙ্গীত সৃষ্টির ক্ষেত্রে তাঁর অবদান মৌলিক ও সুদূরপ্রসারী । হেমাঙ্গ বিশ্বাস ছেলেবেলা থেকেই অত্যন্ত মিশুক প্রকৃতির ছিলেন।

হেমাঙ্গ বিশ্বাস এর পিতা হরকুমার বিশ্বাস একজন প্রতিষ্ঠিত জমিদার ছিলেন। হেমাঙ্গ বিশ্বাস জমিদার সন্তান হয়েও জমিদারী শান সৈকত এর প্রতি বিন্দু মাত্র দৃষ্টি ছিল না। সর্বদা আকর্ষণ ছিল নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের পাশে দাড়ানোর, তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে অধিক মগ্ন ছিলেন। তিনি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে জেল জুলুম ও নির্যাতন ভোগ করেন। আজীবন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন ।

নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের কল্যাণে জীবনভর কাজ করেছেন। অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করেন নাই। তিনি কলকাতা রেডিও থেকে নিয়মিতভাবে সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। ১৯৮১ইং সনের ৫ ও ৬ মার্চ তাকে ঢাকায় গণ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। হাজার হাজার শ্রোতা তাকে ফুলে ফুলে রাঙ্গিয়ে দেয়।

তার ঐতিহাসিক গণসঙ্গীত “ঢাকার ডাক” সকল শ্রোতাকে মন্ত্রমুগ্ধ ও অভিভূত করে। হবিগঞ্জেও তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। হেমাঙ্গ বিশ্বাস হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার পশ্চিম মিরাশী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এই ক্ষনজন্মা পুরুষ শুধুমাত্র হবিগঞ্জ জেলার গর্বই নন তিনি এদেশের সকল মানুষের অহংকার। বর্তমানে পশ্চিম মিরাশী গ্রামে হেমাঙ্গ বিশ্বাস এর ভাতুস্পুত্র শ্রী প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস (মানিক বাবু) সন্তানাদি সহ এবং প্রয়াত নির্মলেন্দু বিশ্বাস এর সন্তানাদি বসবাস করছেন এবং বিশ্বাস বংশের স্মৃতিচিহ্ন ধরে রেখেছেন।

হবিগঞ্জ হাইস্কুল থেকে পাশ করার পর তিনি শ্রীহট্ট মুরারিচাঁদ কলেজে ভর্তি হন । সেখানে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন । তিনি ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন । ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে কারাবন্দী থাকাকালে তিনি যক্ষারোগে আক্রান্ত হন এবং সেই কারনে তিনি মুক্তি পান । ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে তেলেঙ্গানা আন্দোলনের সময়ে তিনি গ্রেফতার হন এবং তিন বছর বন্দী থাকেন ।

১৯৩৮-৩৯ খ্রিষ্টাব্দে বিনয় রায়, নিরঞ্জন সেন, দেবব্রত বিশ্বাস প্রমুখের সাথে ভারতীয় গণনাট্য সংঘ বা আই.পি.টি.এ গঠন করেন । পঞ্চাশের দশকে এই সংঘের শেষ অবধি তিনি এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন । ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার প্রগতিশীল লেখক শিল্পীদের আমন্ত্রনে তিনি প্রথম কলকাতায় আসেন সঙ্গীত পরিবেশন করতে । ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর উদ্যোগে এবং জ্যোতিপ্রকাশ আগরওয়ালের সহযোগিতায় সিলেট গণনাট্য সংঘ তৈরি হয় । স্বাধীনতার আগে ভারতীয় গণনাট্য সংঘের গানের সুরকারদের মধ্যে তিনিই ছিলেন প্রধান ।

সেই সময়ে তাঁর গান তোমার কাস্তেটারে দিও জোরে শান, কিষাণ ভাই তোর সোনার ধানে বর্গী নামে প্রভৃতি আসাম ও বাংলায় সাড়া ফেলেছিল । আসামে তাঁর সহযোগি ছিলেন বিনোদবিহারী চক্রবর্তী, সাহিত্যিক অশোকবিজয় রাহা, সেতারবাদক কুমুদ গোস্বামী প্রভৃতি । ষাটের দশকে সোভিয়েত দেশ পত্রিকার সম্পাদকীয় দপ্তরে কাজ করার সময় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতপার্থক্য হলে তিনি কাজ ত্যাগ করেন । চীন - ভারত মৈত্রীর ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল । দুবার তিনি চীনে গিয়েছিলেন।

চীনা ভাষায় তাঁর কয়েকটি গান আছে । মাস সিঙ্গার্স নামে নিজের দল গঠন করে জীবনের শেষ দিকেও তিনি গ্রামে গ্রামে গান গেয়ে বেরিয়েছেন । তিনি কল্লোল, তীর, লাললণ্ঠন প্রভৃতি নাটকের সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন । লাললন্ঠন নাটকে তিনি বিভিন্ন চীনা সুর ব্যবহার করেছিলেন । তাঁর রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য : § শঙ্খচিলের গান § জন হেনরীর গান § মাউন্টব্যাটেন মঙ্গলকাব্য § বাঁচব বাঁচব রে আমরা § মশাল জ্বালো § সেলাম চাচা § আমি যে দেখেছি সেই দেশ হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান এবং শঙ্খচিলের গান তাঁর গানের সঙ্কলন ।

বাংলা ও অসমিয়া ভাষায় তাঁর লিখিত গ্রন্থ - 'লোকসংগীত শিক্ষা' । হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান - শঙ্খচিল কোয়ালিটি - ৩২০ কেবিপিএস এমপি৩ ফাইল সাইজ - ৪৮ মেগাবাইটস ডাউনলোড - হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান - শঙ্খচিল  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৬ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।