আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আপোষহীন আপোষ (গল্প, ছোটগল্প নাকি আজাইরা প্যাঁচাল জানিনা আমি)

-এই সিগারেট দে। -দিচ্ছি। শেষ টান দিয়ে নি। গলগল করে একরাশ ধোয়া ছাড়ে আকাশ। এমনভাবে ধোয়া ছাড়ছে যে, দেখে কে বলবে এক বছর আগেও এই ছেলে সিগারেটকে ঘৃণা করতো! এখানে আমরা একরুমে এখন ৫জন।

সবাই নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যে আলাদা ছিলাম আমরা। কিন্তু এখন আলাদা করে চেনা মুশকিল। সবাই এডিক্টেড আমরা, এটাই আমাদের পরিচয়। ধোয়ার রিং বানাচ্ছে শাকিল। আমাদের মাঝে একজন হিন্দু।

কৈলাস। ৫জনের মাঝে একমাত্র সেই-ই আগে থেকে সিগারেটের সুখ নিতো। -আর এভাবে সহ্য হয় না। এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মইরা যাওয়াই ভালো-বলে মাসুদ। বলে আবার গাজাখোরদের মত হাসতে থাকে।

আমরা কেউ তার কথা পাত্তা দিই না। এমন কথা সবসময়ই শুনি আমরা। সমাজতন্ত্রের ভুত মাথায় থাকা এই ছেলেটা ছিল চরম বিপ্লবী। বিল্পবের জন্যই জন্ম হয়েছে তার এমনটি ভাবতাম আমরা। এখন আর সমাজতন্ত্রের বালাই নেই তার মাঝে।

সমাজ-হীনতাই এখন উপভোগ্য। বছর দেড়েক হলো ভার্সিটি থেকে বের হলাম আমরা। অনেক স্বপ্ন-আশা ছিল আমাদের। সব হারিয়ে জলাঞ্জলি দিয়ে ৬ মাসের মাঝেই আমরা সবাই বদ্ধ মাতাল, গাজাখোর। -তন্ময় সিগারেট নে।

-আমি টানবোনা। তোরা টান। বললাম আমি। বলেই হারিয়ে গেলাম আমি নিউরনের জমানো স্মৃতির গভীরে। আকাশের কথাই সবার আগে আসলো মনের ভেলাতে।

সহজ-সরল ভালো ছেলে। প্রমিত-ভাষাবিদ বলে খেপাতাম আমি। বানান ভুল একদম সহ্য হতোনা তার। পারতোনা মেনে নিতে কোন অন্যায়, অপরাধ। সম্ভাবনাময় ছিল অনেক, কিন্তু এই কঠিন সমাজে টিকতে পারলো না।

প্রথম বছরেই প্রেমে পড়া, মজায় আড্ডা ঘুরাঘুরিতে সময় কাটানো এই ছিল তার কাজ। ভার্সিটি একদম পারফেক্ট ছিল এসবের জন্য। পড়ালেখার তেমন দরকার ছিলোনা ভার্সিটিতে। জিপিএ ও ভালো আসতো না। পরীক্ষার জন্য নানান টপিক দেয়া হতো, দেয়া হতো নানান ভুল ব্যাখ্যা।

তোতাপাখির মত মুখস্থ করতাম আমরা- কমিউনিকেশান, ম্যাথ, পোগ্রামিং সব। পরীক্ষায় যতটা সম্ভব বমি করতাম, আর পরীক্ষা শেষে ভুলে যেতাম সব। কখনও কেউ কল্পনা করেনি আকাশের এই হাল হবে। বের হবার এক মাসের মাঝেই প্রেম হারাই যায় তার কঠিন বাস্তবতায়। জুতা ক্ষয়ে চাকুরী জোটায়, কিন্তু তাও টিকেনা দুর্নীতির প্রতিবাদ করায়।

আর তাই হতাশ হয়ে এই রুমে সে। শাকিল-সমাজসেবক ছিল। সবার উপকার করাই তার দায়িত্ব-কর্তব্য এবং আগ্রহ ছিল। সবারটা করলেও নিজের উপকার করতে পারেনি তেমন। বাস্তবতাকে অনেক সহজ ভাবতো।

কিন্তু সহজ বাস্তবতা ধরা দেয় কঠিন হয়ে। রক্তাক্ত-ভগ্ন হৃদয়ে চলে এলো গাজার আসরে। বহুবিদ প্রতিভার অধিকারী কৈলাস। গান-বাজনা, আঁকাআঁকিতে তার জুড়ি ছিল না। এখনও সুখটান দিতে দিতে গান গায় সে।

কোথাও প্রতিভার মর্যাদা পায়নি সে। সমাজের অকর্মা এবং অক্ষম ছাত্রের ট্যাগ পড়ে যায় গায়ে। আসলে এই ৪ জনের কেউই নিজেদের প্রমাণের সুযোগ পায় নি। পারেনি বশ্যতা স্বীকার করে অন্যদের সাথে আপোষ করতে। পথে পথে পেয়েছে চরম নির্মমতা।

চাইলেই পারতো ভালো অবস্থানে যেতে। তবে ত্যাগ করতে হতো নিজে ব্যক্তিসত্তা। সেইদিন মাসুদ ভার্সিটির এক স্যারকে সামনে পেয়ে হইচই শুরু করে দিলো। কেন আমাদের জীবন নিয়ে খেলেন আপনারা? কেন গ্রুপিং, রাজনীতি এইসব দিয়ে শেষ করে দেন আমাদের?-এসব ছিল তার প্রশ্ন। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন রাজনৈতিক শিক্ষক তাকে কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করেন নি।

শুধু বললেন, এই বদ্ধ মাতাল তাকে সরাও। ব্যাস! মাসুদের গায়ে পড়ে গেল বিনে পয়সায় নানান উপাদেয়। সবার কথা ভাবতে ভাবতে আমার নিজের স্মৃতি মনের আকাশে উড়তে লাগলো। মনের আকাশ জুড়ে ভেসে এলো নিতুর মুখ। উপহাস ভরা হাসি সেই মুখে।

বলেছিলাম, নিতু তোকেই বিয়ে করবো। যদি তা না করতে পারি তাহলে আর কোন মেয়ের সাথে জড়াবোনা। কথা রেখেছি আমি। কোন মেয়ের সাতে জড়াইনি। তবে তাকে দেয়া আর কোন কথাই রাখতে পারিনি আমি।

বছর-খানেক আগে চোখের সামনেই বিয়ে হয়ে গেল নিতুর। তাকিয়ে দেখেছিলাম। রাতভর গাজায় মেতে ছিলাম সেদিন। ৩দিন পরে অফিসে যাই। অন্যায়ভাবে এক জুনিয়রকে নিয়োগ দিতে বলে এমডি।

গালিগালাজ-তর্কাতর্কি এবং একপর্যায়ে চাকুরী ছেড়ে এখানে জমায়েত হলাম। এখন কিছুটা ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা আসে। সবাই বলতো আমার চাকুরী নিয়ে সমস্যা হবেনা। হয়নি ও। অনেক ভালো পজিশনেও ছিলাম।

কিন্তু পারলাম না রাজনৈতিক ক্যাচাল মানতে। চোখে ঝাপসা দেখছি। কয়েক ফোটা পানি ঝরলো। পরিষ্কার দেখতে পেলাম সবার মুখে। একে একে তাকিয়ে দেখলাম- আকাশ, শাকিল, মাসুদ, কৈলাসকে।

আয়নায় গিয়ে নিজেকে দেখলাম কিছুক্ষণ। দেখলাম ভয়ঙ্কর ব্যর্থ আমাকে, ব্যর্থ এক সমাজকে, ব্যর্থ এক রাষ্ট্রকে। ফিরে এলাম সবার মাঝে। কষে দিলাম সুখটান। ঢুলুঢুলু চোখে ভেসে এলো নিতুর চোখ।

ভেজা-শান্ত চোখ। [... পরদিন ভোরে লাস পাওয়া যায় তন্ময়ের। রাতে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে সে। তার ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠায় পাওয়া যায় কিছু বাক্য: বন্ধুরা আমি যাচ্ছি। তোরা আমার পথে আসিস না।

শিক্ষাব্যবস্থা আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে প্রাণ দিয়ে গেলাম আমি। তোরা পারলে কিছু করিস এই সমাজের। আর নিতুর সাথে দেখা হলে বলিস, তাকে সত্যিই অনেক ভালবাসতাম আমি। ] বি. দ্র.: এই কাহিনীটি বাস্তবাতার সাথে কল্পনা মিশিয়ে লিখা। কারও সাথে মিলে গেলে তার জন্য আমিই দায়ী।

চাইলে আমাতে মারতেও পারে সে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.