আমি খুব সাধারণ মানুষ । সাধারণ থাকার চেষ্টা করি । আগেই বলে রাখি, এইটা নাস্তিকতা বা আস্তিকতা বাচক কোন পোস্ট নয়। এটা শুধুই কোয়ান্টাম ফিজিক্সের আলোকে কিছু যুক্তি। দয়া করে কেউ এটাকে অন্য দিকে নিয়ে যাবেন না।
আমি শুরু করছি...
সৃষ্টিকর্তা, মানুষ ও সময়ঃ
স্রষ্টা নিজের ইচ্ছায় সৃষ্টি করেছিলেন মহাবিশ্ব। মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ব সম্পর্কে "বিগব্যাং" তত্বে বলা হয়েছে অসীম ঘনত্বের (10⁹³ kg/m³ এর চেয়েও বেশী) একটি সুক্ষ কণার থেকেই সৃষ্টি হয়েছে এই মহাবিশ্বের। তাই এটা বলা যায় যে, বিগব্যাং এর সময় থেকেই সময়ের সুত্রপাত। এর আগে সব ই ছিল অস্তিত্বহীন।
এখন প্রশ্ন হল এখানে সময় কি? সময় একটা স্বাধীন সত্ত্বা, স্বাধীন সেট।
কিন্তু পদার্থবিদ্যায় এই অভিমতের বদলে প্রচলিত ধারণা হল, সময় আর স্থান হল চতুর্মাত্রিক বিশ্বের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ নিয়ে কালে কালে বিভিন্ন মতবাদ এসেছে। এসেছে সময়ের বিভিন্ন হিসাব। সময়ের গণনা যন্ত্রও আছে বিভিন্ন রকমের। সিজিয়াম ঘড়ি থেকে শুরু করে রুবিডিয়াম ঘড়ি নিয়ে এসেছে আজকের সভ্যতা।
আমাদের এই সময় গণনা কিন্তু পুরোপুরি আপেক্ষিক একটা ব্যাপার। যা হোক, আমাদের এই সময় প্রত মুহুর্তে হারিয়ে যাচ্ছে কালের গর্ভে। আমরা কি ফিরে পেতে পারি আমাদের এই হারানো সময়কে???
সময় সম্পর্কে একটা ভ্রান্ত ধারণাঃ
ধরি, একটা রকেটে করে ৫ জন নভোচারী "স্বাতী" নক্ষত্রে যাচ্ছে। পৃথিবী থেকে স্বাতীর দুরত্ব প্রায় তেত্রিশ আলোকবর্ষ। এখন ধরা যাক, রকেটের বেগ প্রায় আলোর কাছাকাছি।
তাহলে, নভোচারীরা প্রায় ৬৬ বছর পরে পৃথিবীতে ফিরে আস্তে পারবেন। কিন্তু, আইন্সটাইনের মতে, আপেক্ষিক গতি বৃদ্ধির সাথে সাথে সময়ের গতি হ্রাস পায়। তাই, ৬৬ বছর সময়কে হয়ত নভোচারীদের কাছে মনে হবে ৩০ দিন। কিন্তু, পার্তিব জগতে এসে তারা হয়ত দেখবেন, তাদের ১২ বছরের ছেলে তাদের চেয়ে বয়সে ৪০ বছরে বড়।
অর্থাৎ, কাল বা সময় একমুখী নয়।
এটা বিশ্বব্রিহ্মাণ্ডের একটা অঙ্গ মাত্র, যার অপর একটা অঙ্গ হল স্থান। এরা একটা আরেকটা দিয়ে প্রভাবিত হয়।
ব্লাক হোল ও সময়ঃ
ব্লাক হোল হল এমন কিছু যার ভর অত্যাধিক। এর মহাকর্ষের মাপটিও বিরাট। কোন নক্ষত্রের আলো এর মহাকর্ষের প্রভাবে বেঁকে যায়, এবং এর প্রভাবে সময়ের বক্রতা সৃষ্টি হয়।
ফলে, শেষে ব্লাক হোলে গিয়ে সময় হয়ে যায় স্তব্ধ।
মহাবিশ্বঃ
মহাবিশ্ব সম্ভব্য তিন রকমের হতে পারে।
♣ বর্তুলাকার। যেখানে ক্ষেত্র/স্থান ও কানা বক্রতা লাভ করে।
♣ সমতলীয় মহাবিশ্ব।
এখানে বক্রতা হবে শুন্য।
♣ পরাবৃত্তাকার মহাবিশ্ব। এখানে বক্রতা দুই দিকে ছড়ানো। এটা ইলেকট্রন যেমন এটা বিশ্বব্রাহ্মাণ্ডের অংশ, তেমন একটি বিশ্বব্রাহ্মাণ্ড অনে্কগুলো বিশ্বব্রাহ্মাণ্ডের অংশ। মেগা কসমিক ও মাইক্রোকসমিক পর্যায়ে এড়া জটিল বন্ধনে আবদ্ধ থাকে।
এক মহাঐকতানে এরা এগিয়ে চলেছে। রাশিয়ার পদার্থবিদ মারকোভবনোন মনে করেন, ক্ষুদ্র বস্তুর পর্যায়ে বিশ্ব অসংখ্য পরবর্তশীল বিশ্ব নিয়ে গঠিত। তিনি বলেন যে, একটি বস্তু অসংখ্য বিরাট বিশ্বকে ধারণ করে চলে। এইটা নিঃসন্দেহে একটা দুঃসাহসিক কল্পনা।
সেই মহাশক্তিঃ
১৯৮৬ সালে কয়েকজন পদার্থবিদ বলেন, বিগব্যাং এর সময় মহাশুন্য ফেটে সূতার মত তন্তুতে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
এইসব তন্তুর এক ইঞ্চির ভর অসীম ও পরমাণুর কেন্দ্রকোষের চেয়েও ১০ কোয়াড্রিলিয়ন গুণ সুক্ষ। বিজ্ঞানীরা এদের নাম দেন কসমিক স্ট্রিং। আজও বিজ্ঞানীরা কসমিক স্ট্রিং খুঁজে বেড়াচ্ছেন। হিগস বোসনের আবিষ্কার অবশ্যই এই ক্ষেত্রে একটি মহা গুরুত্বপুর্ণ ব্যাপার। বিজ্ঞানীগণ বলছেন, সমস্ত মহাবিশ্ব একই সুতায় বাঁধা।
এই সুতা এক অতি পরিবাহী হিসাবে কাজ করছে। ইসলাম ধর্মে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর যে মিরাজেকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে বলা যেতে পারে, এই সুতা বেয়েই তিনি last frontier of the space এ গিয়েছিলেন।
বিজ্ঞানীরা এক নতুর ধরণের কণার কথা বলেছেন, যা নাম "টার্কিয়ন"। টার্কিয়নের ভর হবে অসীম, বেগ আলোর বেগের চাইতে লক্ষ্য গুণ বেশী, কিন্তু আলোর বেগ বা তার চেয়ে নিচের বেগে আনলে এর অস্তিত্বই থাকে না। তবে, এটা তাত্ত্বিকভাবে।
হিগস বোসনের আবিষ্কার আমাদের এই মানস গতিকণা টার্কিয়নের কাছে নিয়েও যেতে পারে।
সৃষ্টিকর্তাঃ
আমি এখানে যা বলছি তা শতভাগ কোয়ান্টাম ফিজিক্সের কথা। কারো সন্দেহ থেকে থাকলে দয়া করে ইন্টারনেটে একটু ঘেটুঘুটে দেখবেন। এছাড়া আইন্সটাইনের কিছু লেকচার ফলো করলেও বুঝতে পারবেন।
যাহোক, প্রতিটা জিনিসই অন্য কারো সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে।
অজস্র আলাদা আলাদা বস্তু গুলো আছে একটা স্পষ্ট ঐক্যের মাঝে, নিখুত সাম্যাবস্থায়। এই সার্বিক সাম্যাবস্থার মাঝে থেকেই বিজ্ঞানীরা মৌল উপাদান খুঁজে পেতে চেষ্টা করছেন, যা হতে পারে বিগব্যাং এর কারণ। কিন্তু, তারা পেয়েছেন, এক অব্যক্ত শক্তি। এ ব্যাপারে আইন্সটাইনের মত হল, অসীম ক্ষমতাধর কোন এক নৈর্ব্যক্তিক কোন এক শক্তির প্রভাবেই হয়েছিল বিগব্যাং। এখন, তিনি নিজের ইচ্ছায় যদি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তৈরী করতে পারেন তাহলে, তিনি আকষ্মিকতার খেলাও খেলতে পারেন! বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম কসমোলজির সাহায্যে এও প্রমাণ করেছেন যে, এই নৈর্ব্যক্তিক শক্তি ছড়িয়ে আছে সর্বত্র, একই সময়ে কিন্তু ভিন্ন মাত্রায়।
অসীম ক্ষমতাধর অব্যক্ত এই নৈর্ব্যক্তিক শক্তির এই একই সময়ে বিভিন্ন মাত্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে থাকাকে বিজ্ঞানীরা বলেন, মহাজাগতিক ডিম্ব বা Cosmic Egg। বিশ্বের সমস্ত বস্তু ও শক্তির সমষ্টি, অর্থাৎ চৈতন্য বিজরিত এই মহাজাগতিক ডিম্ব আর কিছুই নয়, মহান সৃষ্টিকর্তা। অনেক বিজ্ঞানীর মতে, এই কসমিক এগের কোন মাত্রা আসলে নেই। কেননা, সেখান এর কার্যকারণ বিন্দু মাত্র নেই।
বিশ্বের সবকিছু তাঁরই বন্দেগীতে রত।
অথচ এর বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য হল, প্রতিটি কণাই তার নিজ জায়গায় থেকে কাঁপছে। কোনকিছুই থেমে নেই।
বস্তুঃ
আসলে প্রতিটি বস্তুর মাঝেই লুকিয়ে আছে আলো। বিজ্ঞানীরা এই ধারণাটি করেন এইভাবেঃ
♦বস্তু -> অণু -> পরমাণু -> নিউক্লিয়াস -> নিউট্রন -> কোয়ার্ক।
দেখা যায়, কোয়ার্কের ব্যাসার্ধ প্রায় 1/10²⁴ অটো মিটার।
এর পর সেটি পরিণত হয় শক্তিতে। আর সেই শক্তি হল আলোকশক্তি।
মৃ্ত্যুর পরে পুনর্জন্মঃ
বিজ্ঞানী টিপলার বলেন, সময়ের চুড়ান্ত বিভাজনে হারিয়ে যাওয়া সকল কিছুকে তুলে আনা সম্ভব এবং মৃত মানুষের উত্থান সম্ভব। বিজ্ঞানী ফার্গুসন, পলা ডেভিস প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, কসমিক এগ প্রাকৃতিক সুত্রাবলিকে অগ্রাহ্য করে আমাদের উপর প্রভাব বিস্ার করতে পারে। তাই, কোয়ন্টাম ফিজিক্সের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ/ঈশ্বর/সৃষ্টিকর্তা আছেন; আছে স্বর্গ/বেহেশত, নরক/ দোযখ।
কোয়ান্টাম ফিজিক্স আমাদের এটাই বলছে যে, সৃ্ষ্টিকর্তা আছেন এবং আমাদের উপর প্রভাব বিস্তার করছেন।
বিজ্ঞানীরা এও বলছেন যে, পৃথিবী কোন তথ্যই হারিয়ে যাচ্ছে না। মানুষ যেহেতু সামাজিক জীব, সে প্রতিটি প্রাণীর সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই, সে যখনই কোন কাজ করছে, তখনই তা জমা হয়ে যাচ্ছে,অনেক স্থানে- নিউরনে নিউরনে, রন্ধ্রে রন্ধ্রে । এই তথ্য ধারণ ক্ষমতাও অসীম।
ইসরায়েলী বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, প্রতিটি DNA অণুর তথ্য ধারণ ক্ষমতাই প্রায় 10¹⁴ টেরাবাইট। এই তথ্য অবশ্যই সময়ের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে কোন একটি গন্তব্যের দিকে, যা কেবল হতে পারে সৃষ্টিকর্ার দিকেই। তাই, শেষ বিচারে আমাদের পুনর্জন্ম সত্যিই হবে।
শেষকথাঃ
সময়ের জালকের মাধ্যমে আমরা সৃষ্টিকর্তার সাথে সম্পর্কযুক্ত। সময়, মানুষ আর সৃষ্টিকর্তা- একটা চেইন।
সৃষ্টিকর্তা সময় আর স্থানের চতুর্মাত্রিক জালকে আবদ্ধ করেছেন তাঁর সৃষ্টিকে। যাই হোক, মানুষ সৃষ্টিকর্তার দান করা ক্ষুদ্র জ্ঞানেই এগিয়ে চলেছে সেই সৃষ্টিকর্তার দিকেই।
পুনশ্চঃ
আমার ঐ প্রশ্ন আর এই কথাগুলোর কারণ ছিল এক্টাই- একটা মেসেজ পৌছে দেয়া। সেটা হল- আসুন আমরা ভাল কাজ করি। স্থান আর কাল, যার জালে আবদ্ধই হই না কেন, সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রেখে ভাল কাজের দিকে এগিয়ে যাই।
জীবনটাকে অর্থবহ করে গড়ে তুলি। সৃষ্টিকে ভালবাসি।
সংগৃহিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।