ভবের খেয়া এবার বাওয়া হইল আমার শেষ; এবার তরী ভাসিয়ে দিলাম পরপারের দেশ । ।
গীতা দত্ত (জন্ম: ২৩ নভেম্বর ১৯৩০ - মৃত্যু: ২০ জুলাই ১৯৭২) - পুরো নাম গীতা ঘোষ রায় চৌধুরী। জন্ম ১৯৩০ সালের ২৩ নভেম্বর, বাংলাদেশের বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায়। বাবা ছিলেন বিত্তশালী জমিদার।
১৯৪২ সালে মাতৃভূমি পূর্ববঙ্গ ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমায় গীতার পরিবার। বসতি গড়েন বোম্বের দাদর এলাকায়।
ছোটবেলা থেকেই গান শিখতেন। একদিন প্রতিবেশী পণ্ডিত হনুমান প্রসাদের কানে এসেছিল সেই সুর। সে-ই শুরু।
হনুমান প্রসাদেরই সংগীত আয়োজনে 'ভক্ত প্রহ্লাদ' ছবির গানে সহশিল্পী হিসেবে হিন্দি চলচ্চিত্রে প্রথড আত্মপ্রকাশ। সেটি ১৯৪৬ সালের কথা। তবে সত্যিকার অর্থে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে কাঁপন ধরালেন পরের বছর শচীন দেব বর্মণ সুরারোপিত 'দো ভাই' ছবির মাধ্যমে। ছবিতে তাঁর গাওয়া 'মেরা সুন্দর স্বপ্না বিত গায়া' গানটি দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল গীতার কণ্ঠের জাদু।
জন্ম নিল নতুন এক গানের পাখি।
'দো ভাই'-এর পর 'দেবদাস' (১৯৫৫) এবং 'পিয়াসা'য় (১৯৫৭) গীতার গলাকে কাজে লাগালেন শচীন দেব বর্মণ। সে সময়ের আরো অনেক নামকরা সংগীত পরিচালকের সুরে বার শরও বেশি গান গেয়েছেন গীতা দত্ত। তাঁর গাওয়া গানগুলোর মধ্যে 'তু মেরা চাঁদ ম্যায় তেরি চাঁদনী', 'অ্যায় দিল মুঝে বাতা দে', 'বাবুজি ধীরে চালনা', 'ভগবান দো ঘড়ি', 'মেরা নাম চিন চিন চো', 'ঠাণ্ডি হাওয়া কালি ঘাটা' ইত্যাদি একসময় খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। 'কাভি কাভি' ছবির সেই বিখ্যাত 'কাভি কাভি মেরে দিলমে খায়াল আতা হ্যায়' গানটি খৈয়াম সাহেব 'কাফির' নামে একটি ছবির জন্য গীতার কণ্ঠে প্রথম রেকর্ড করিয়েছিলেন।
কিন্তু 'কাফির' আর আলোর মুখ দেখেনি। পরে লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে 'কাভি কাভি' ছবিতে গানটি আমরা শুনি।
কলকাতার বাংলা ছবিতে প্রায় ১৭টি গান গেয়েছিলেন তিনি। । নচিকেতা ঘোষের সুরে ১৯৫৭ সালে মুক্তি পাওয়া 'পৃথিবী আমারে চায়' ছবিতে 'নিশি রাত বাঁকা চাঁদ' ছাড়াও একই ছবির রাগাশ্রয়ী 'তুমি বিনা এ ফাগুন বিফলে যায়' গানটি গেয়েছিলেন গীতা।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে 'হারানো সুর' ছবির 'তুমি যে আমার, ওগো তুমি যে আমার' বাংলা রোমান্টিক গানের জগতে এক মাইলফলক। ১৯৬০ সালে মুক্তি পাওয়া 'হসপিটাল' ছবির সেই বিখ্যাত গান 'এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়' আমাদের সেই সোনালি যুগে নিয়ে যায়। ১৯৫০ দশকের শেষ এবং ১৯৬০এর দশকের শুরুতে গীতা বেশ কিছু বিখ্যাত বাংলা গান গান । এই সময়ে বাংলা ছবি এবং সঙ্গীতের স্বর্ণযুগ চলছিল । তাঁর বেশিরভাগ বাংলা গানেরই সুরকার ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তবে তিনি নচিকেতা ঘোষ এবং সুধীন দাশগুপ্তের সুরেও কিছু গান গেয়েছিলেন ।
ভারতের প্রথম সিনেমাস্কোপ ছবি 'বাজি'র শুটিংয়ের সময় ছবির তরুণ পরিচালক গুরু দত্তের সঙ্গে রোমান্সে জড়িয়ে পড়েন গীতা। বিয়ে ১৯৫৩ সালের ২৬ মে। গীতা ঘোষ রায় চৌধুরী হয়ে গেলেন গীতা দত্ত। গুরু দত্তের সঙ্গে প্রেম ও বিয়ের পর প্রথম দু-তিন বছর ছিল গীতার সংগীতজীবনের সবচেয়ে সোনালি সময়। ব্যক্তিগত জীবনের সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি তাঁর।
অরুণ (১৯৫৪) ও তরুণ (১৯৫৬) জন্মের পর 'গৌরী' ছবির সূত্রে গুরু দত্ত আটকা পড়েন সেকালের গ্ল্যামারাস নায়িকা ওয়াহিদা রেহমানের প্রেমে।
কষ্ট ভোলার জন্য গীতা গানের কণ্ঠে তুলে নিয়েছিলেন অ্যালকোহল। সেসময় হিন্দি সিনেমার প্লে-ব্যাকে প্রধান শিল্পী ছিলেন গীতা দত্ত ও লতা মঙ্গেশকর - আশা ভোঁশলে তখন নবাগতা ও অনভিজ্ঞা। প্রধান সংগীত পরিচালক, শচীন দেব বর্মণ, লতার চেয়ে গীতাকেই বেশী চাইতেন, তাই গীতার ক্যারিয়ারই ছিল বেশী সম্ভাবনাময়। কিন্তু পারিবারিক টানাপড়েন, অশান্তি ও মদ্যপান গীতাকে দূরে সরিয়ে নেয়।
একের পর এক রেকর্ডিং মিস করতে থাকায়, শচীন দেব বর্মণ একসময় হাল ছেড়ে দিয়ে লতাকে দিয়েই গান রেকর্ডিং করাতে শুরু করেন, আজকের লিজেন্ড, লতা মঙ্গেশকরের দৃঢ় ভিত্তি তখনই গড়ে ওঠে।
একদিকে গীতা, অন্যদিকে ওয়াহিদা, এই টানাপোড়েনে অতিরিক্ত ঘুমের বড়ি খেয়ে নিজের জীবনের ইতি টানেন গুরু দত্ত, ১৯৬৪ সালে। তাঁর মৃত্যুতে গীতা এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে ছয় মাস নিজের সন্তানদেরও চিনতে পারেননি। একাধারে মদ্যপানের পরিনতিতে একসময় লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হন গীতা দত্ত। ১৯৭২ সালের ২০ জুলাই ৪১ বছর বয়সে পৃথিবীকে বিদায় জানান এই শিল্পী।
আগামী ২০ জুলাই, তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা স্মরণ করবো সেই গানের পাখীকে, যিনি মর্মবেদনার গান গেয়ে কালজয় করেছেন, কিন্তু যার নিজের জীবনটাই ছিল মর্মবেদনায় ঘেরা এক ট্র্যাজেডি। আমরা আরও স্মরণ করবো আমাদের এই মাটির সেই কিশোরীটিকে, যে কণ্ঠের যাদুতে জগত জয় করতে পারত, কিন্তু নিয়তির পরিহাসে, তীব্র কষ্ট আর হাহাকার নিয়ে হারিয়ে গেছে অজানার দেশে।
গীতা দত্ত - কালজয়ী বাংলা গান - হিটস অফ গীতা দত্ত
কোয়ালিটি - ১২৮ কেবিপিএস এমপি৩
ফাইল সাইজ - ১১০ মেগাবাইটস
ডাউনলোড - হিটস অফ গীতা দত্ত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।