মানুষে মানুষে সমানাধিকারে বিশ্বাস করি
বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (আইএসডি) বন্ধ থাকে ১৮২ দিন। অথচ এখানে গ্রেড ১২ (এ লেভেল) এর একজন শিক্ষার্থীকে সব মিলিয়ে বছরে খরচ করতে হচ্ছে ২০ লাখ টাকারও বেশি।
অভিভাবকদের অভিযোগ, লাখ লাখ টাকা খরচ করেও এই স্কুলে তাদের সন্তানরা আশানুরূপ শিক্ষা পাচ্ছে না।
তাদের কথায়, ভর্তির সময় ভাল ভাল প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে কথা রাখছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। এই ফি, সেই ফি’র নামে স্রেফ টাকা খরচ হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা পাচ্ছে না। অন্যদিকে হারাচ্ছে দেশীয় সংস্কৃতির প্রায় সবটুকুই।
ইংরেজি মাধ্যমের আর্ন্তজাতিক মানদণ্ড আইবি (International Baccalaureate) অনুযায়ী পাঠদানের কথা থাকলেও তা মেনে চলছে না স্কুলটি। আর বিদেশি শিক্ষকদের ভারে ন্যুব্জ স্কুলটিতে দেশীয় শিক্ষকরা হচ্ছেন বঞ্চনার শিকার।
লাখ লাখ টাকা দিয়ে সন্তানকে ভর্তি করালেও পরবর্তী সময়ে কথায় কথায় স্কুল বন্ধ, বিভিন্ন অজুহাতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও অনিয়মের কারণে অভিভাবকরা হতাশ হয়ে পড়ছেন।
এছাড়াও রাষ্ট্রভাষা বাংলা-বিমুখতা প্রকট হওয়াতে এরই মধ্যে স্কুলটির বিরুদ্ধে কোমলমতি শিশুদের নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯-এ ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতেও বাংলা শিক্ষা ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বাধ্যতামূলক করা হলেও তা মানছে না স্কুলটি। অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বাংলা শিক্ষা দেওয়া হয় না।
গ্রেড-৬ এর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, বাংলা বই থেকে বেছে বেছে নামমাত্র কয়েকটি গল্প ও কবিতা পড়ানো হয়। আবার বাংলাদেশ স্টাডিজের বদলে অনেক ক্লাসেই বিদেশি বিভিন্ন বই পড়ানো হয়।
যেমন গ্রেড -৫ এর শিক্ষার্থীদের আমেরিকান ভূগোল শিক্ষা দেয়া হয়। এছাড়াও ধর্ শিক্ষা নেই বলেও অভিযোগ অভিভাবকদের।
আগামী ২৬ আগস্ট শুরু হবে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস। ৭ অাগস্ট শুরু হচ্ছে আবেদনপত্র বিতরণ।
সূত্র জানায়, আইএসডি’তে এ-লেভেলের শিক্ষার্থীদের গ্রেড-১১ ও গ্রেড-১২ এর প্রতিটি শ্রেণীতে খরচ করতে হয় বছরে প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ টাকা।
এছাড়াও এ-লেভেলের শিক্ষার্থীদের
পরীক্ষার ফি ও কোচিং বাবদ আরো কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়। সব মিলিয়ে এই লেভেলে একেকজন শিক্ষার্থীর পেছনে বছরে ২০ লাখ টাকারও বেশি খরচ করেন অভিভাবকরা।
গ্রেড-৯ ও গ্রেড-১০ এ প্রতিটি ক্লাসে পড়তে খরচ হচ্ছে বছরে ১৬ লাখ ১২ হাজার ৪৫০ টাকা। এছাড়াও ও-লেভেল পরীক্ষার পেছনে শিক্ষার্থীকে আরো কয়েক লাখ টাকা খরচ করতে হয় বলে জানান অভিভাবকরা।
গ্রেড-৬, গ্রেড-৭ ও গ্রেড-৮, তিনটি শ্রেণীর প্রতিটিতে পড়তে গড় বার্ষিক খরচ ১৫ লাখ ১৫ হাজার ৫৫০ টাকা।
গ্রেড-৩, গ্রেড-৪, গ্রেড-৫ এ তিনটি শ্রেণীতে শিক্ষার্থীর পেছনে বছরে খরচ হয় ১৩ লাখ ১৩ হাজার ২৫০ টাকা। এ ক্ষেত্রে কেবল স্কুল ফিই দিতে হয় ৯ লাখ ৪ হাজার ৪০০ টাকা।
কেজি, গ্রেড-১ এবং গ্রেড-২ এর প্রতিটি শ্রেণীতে একটি শিশুর পেছনে খরচ হয় বছরে ১২ লাখ ৭ হাজার ৪০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে স্কুল ফি গুনতে হয় আট লাখ ২৮ হাজার ৭৫০ টাকা ও ভর্তি ফি দিতে হয় ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
প্লে-গ্রুপ, নার্সারি ও প্রি-কিন্ডারগার্টেনে ভর্তির আবেদন পত্রের দাম ৫০ ডলার, যা টাকার অংকে ৪ হাজার ২৫০ টাকা।
প্রি-কেজি শ্রেণীতে ৪ বছরের একটি শিশুর ভর্তি হতে নার্সারির চেয়ে বেশি দিতে হবে, স্কুল ফি ৪ লাখ ১০০ টাকা এবং দুপুরের খাবার খরচ দিতে হয় ৬১ হাজার ২০০ টাকা।
৩ বছর বয়সী শিশুদের জন্যে রয়েছে নার্সারি। আবেদনপত্র কিনতে লাখে ৪ হাজার ২৫০ টাকা। এছাড়াও এ শিশুর নার্সারি সম্পন্ন করতে বাৎসরিক ফি দিতে হয় ৩৫ হাজার ৭০০ টাকা। স্কুল ফি দিতে হয়, ৩ লাখ ৪০ হাজার ৮৫০ টাকা।
স্ন্যাকস এর জন্যে খরচ করতে হবে ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা। সব মিলিয়ে নার্সারি সম্পন্ন করতেই একটি
শিশুর খরচ করতে হয়, ৩ লাখ ৯৫ হাজার ২৫০ টাকা।
২ বছরের শিশুদের জন্যে স্কুলটিতে প্লে গ্রুপে ভর্তির ব্যবস্থা। তাদের স্কুল ফি নেওয়া হয় বছরে ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা।
অভিভাবকদের অভিযোগ, শুধু এ পরিমাণ অর্থ নিয়েই ক্ষান্ত নয় স্কুলটি।
মাস ঘুরতে না ঘুরতেই বিভিন্ন অনুষ্ঠান, খেলাধুলার ফি, বিভিন্ন ক্লাবের খরচ সহ আরো কয়েক লাখ টাকা দিতে হয়।
বিশাল পরিমাণের অর্থ আদায় করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের শোষণ করেও কথা রাখছে না আইএসডি। অভিভাবকদের অভিযোগ, নিয়মিত ক্লাস হয় এবং স্কুলের পড়া স্কুলেই পড়িয়ে দেয়া হয় প্রতিশ্রুতি থাকলেও স্কুলটি বছরে বন্ধ থাকে বছরে প্রায় ২০০ দিন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের জন্যে করা একাডেমিক ক্যালেন্ডারে সাপ্তাহিক ছুটি সহ স্কুলটি বন্ধ রাখা হয়েছে ১৮২ দিন। এর মধ্যে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার মিলিয়ে রয়েছে ৭১ দিন।
সরকারি ছুটি ১০ দিন। অন্যসবই স্কুল নির্ধারিত ছুটি। এর মধ্যে জুলাই ও আগস্ট মাসে স্কুল খোলা থাকে মাত্র ৫ দিন। ফলে শিক্ষার্থীদের বাড়তি কোচিং করাতে হয় অভিভাবকদের।
এছাড়াও কোন সেমিস্টারে দেরিতে ভর্তি হলে শিক্ষার্থীদের দিতে হয় মোটা অংকের অর্থ।
সূত্র জানায়, প্রতিদিন দেরির জন্যে শ্রেণীভেদে লেট ফি দিতে হয় কয়েক হাজার টাকা।
এদিকে স্কুলটিতে অন্যান্য যেসব সুযোগ সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় সেগুলোও বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।
সরেজমিন স্কুল পরিদর্শন করে দেখা যায়, স্কুলটির লাইব্রেরিতে ২৫ হাজার বই রয়েছে বলা হলেও সেখানে ১০ হাজারের বেশি বই পাওয়া যাবে না। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় বই অনেক সময়ই থাকে না বলে জানান অভিভাবকরা।
এছাড়াও ক্লাব কার্যক্রমের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিলেও সেগুলো হয় খুবই সাদামাটা ধরনের।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলটির ভর্তি কর্মকর্তা শারমিন ফারুক বলেন, এটি বিদেশি কারিকুলামে চলে। জুলাই-আগস্ট দু’মাস বন্ধের পরই স্কুল শুরু হয়। অগাস্টের ২৬ তারিখ থেকে ক্লাস শুরু হয়।
স্কুলের অতিরিক্ত বেতনের ব্যপারে জানতে চাইলে বলেন, যাদের পর্যাপ্ত অর্থ আছে তারাই এখানে সন্তানকে ভর্তি করান।
এসব স্কুলের ব্যাপারে সরকারের এখনো কোন নীতিমালা নেই।
তবে অভিভাবকদের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান-উর-রশিদ।
তিনি জানান, শিক্ষানীতিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে বাংলাদেশ স্টাডিজ পড়াতে হবে এবং বাংলা বিষয়ে পড়াতে হবে। শিক্ষানীতিতে পর্যায়ক্রমে অর্ন্তভুক্ত করে এসব স্কুলকে নিয়ন্ত্রণে আনা হবে বলে জানিয়েছেন নোমান-ইর-রশিদ।
সূত্র: বাংলানিউজ২৪ডটকম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।