বিষযুক্ত খাবারকে আমরা নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছি। মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্ট হয়। সেই কোর্ট তার সীমিত সাধ্য দিয়ে যতুটুকু শাস্তি দেওয়ার দেয়। তারপর আবার সেই আগের অবস্থা। সবাই বুঝে বিষ এবং বিষের ফলাফল।
এবং মেনে নিয়েছি এর কোন প্রতিকার নেই।
তার উপর আবার দেশে নাজিল হয়েছে উন্নয়ন ব্যবসায়ী বুদ্ধিজীবি। তারা সকল কিছুতেই অর্থনীতির ব্যাখ্যা টানেন এবং জ্ঞান ও তাদের পয়দাকৃত তথ্য দিয়ে প্রমাণ করেন যে অর্থ সবকিছুর মূলে। তাই লাভ করতেই হবে এবং উৎপাদন বাড়াতেই হবে । আর এই দুয়ের স্বার্থে বৈধ।
উন্নত শিক্ষার নামের কুশিক্ষাধারী এই বর্বর মানুষগুলা আমাদের খাদ্যকে বিষাক্ত করে তুলতে প্রধান ভূমিকা নিচ্ছেন। যেমন গরু মোটাতাজাকরন তেমন একটা পদ্ধতি। গরুকে কিভাবে ইউরিয়া সার খাইয়ে মোটাতাজা করতে হয় তাও পাঠপুস্তকে পড়ানো হয়। শিশুদের কৃষিশিক্ষার নামে মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেচ, রাসায়নিক সার, রাসায়ানিক কীটনাশকের ব্যবহার। বিশেষ কৌশলে শিক্ষানো হয় এগুলো কৃষি।
এছাড়া দেশীয় প্রজাতিকে নিম্নমানের চিহৃত করে শিখানো হচ্ছে উন্নতমানে জাত মানেই বিদেশীজাত কিংবা কারখানার উৎপাদিৎ বীজ। আর এই জাতের পয়দা ও পরিচর্যা পুরো প্রক্রিয়াটিই বিষযুক্ত খাবারের প্রধান সূত্রপাত। খাদ্যের এইরূপ উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপননের সকল পর্যায়ে বিষ প্রয়োগ চলছে। বছরের পর বছর ধরে এ সব বিষাক্ত উপাদান খাদ্য দ্রব্যে মেশানোর কাজ চলছে প্রায় নির্বিবাদে।
এছাড়া খাবারে যে রং বা রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় তা মানব দেহে নানা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
ক্যান্সার, শিশুর বৃদ্ধি হ্রাস বা বন্ধ হয়ে যাওয়া, কিডনী এবং যকৃত অচল হয়ে পড়ে এরই প্রভাবে । কিন্তু খাদ্য দ্রব্যে এমন সব উপাদানের ব্যবহার বন্ধ করার কোনো কঠোর উদ্যোগ আজও দেখা যাচ্ছে না। যা দেখা গেছে তা হলো, রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি বড় শহরে সামান্য কিছু অভিযান মাত্র। তারও ধারাবাহিকতা নেই। বাজারে তরমুজ, আম, জাম, লিচু, আনারস, কাঁঠালসহ বাহারি সব সুস্বাদু ও তৃপ্তিদায়ক ফলের সমাহার থাকলেও এগুলো কেমিক্যালমুক্ত কিনা এ ব্যাপারে ক্রেতা নিশ্চিত হতে পারছেন না।
ফল পাকানো এবং সংক্ষণ করতে ব্যবসায়ীরা ফলে অহরহ ব্যবহার করছে বিষাক্ত ক্যামিকেল।
স্বতি নেই বিদেশী ফলেও। বিদেশ থেকে আসা ফল আরো ভয়বহ। দেশি ফলতো কিছুটা ভাল পাবেন কিন্তু বিদেশি ফলে শতভাগই বিষাক্ত। ফল ছাড়াও শিশুখাদ্য, চাল, ডালসহ নিত্য ভোগ্যপণ্যতে বিষ মিশানো হচ্ছে।
খাদ্যের মাধ্যমে বিষ/ভেজাল গ্রহণের ফলে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, গ্যাস্টিক লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ ক্যান্সারের মতো মারণঘাতী রোগব্যাধি বাড়ছে আশংকাজনকভাবে। যার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে যেয়ে রোগীর পরিবার-পরিজন সর্বশান্ত হচ্ছে। তাছাড়া রাষ্ট্রকে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।
বড় বড় কোম্পানীর ও উৎপাদিত, প্যাকেটকৃত, প্রক্রিয়াজাত তরল ও কঠিন খাদ্যের অধিকাংশই বিষ ও ভেজালে ভরপুর। বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদিত প্যাকেটজাত খাদ্য যেমন ফলের রস, স্ন্যাকফুড, গ্রীনপী, জ্যাম-জেলী, আচার-চাটনীতে বিভিন্ন ধরণের তিকর রং ব্যবহার করা হয়।
গর্ভবতী মহিলারা জন্ম দিচ্ছে বিকলাঙ্গ শিশু। দীর্ঘদিন ধরে এসব ভেজাল/বিষাক্ত খাবার গ্রহণের ফলে বয়স্কদের মধ্যে ক্যান্সার জাতীয় রোগের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে খুব বেশী।
ফাস্টফুড/জাঙ্কফুড নিয়ে তো কোন কথাই বলার নেই। এক শব্দে বলা যায় ঘাতক। এটা স্থূলতা বৃদ্ধি, বহুমূত্র এবং হৃদরোগসহ নানান ধরনের অসুখের সৃষ্টি করে।
জাঙ্কফুডে প্রয়োজনের তুলনায় কম পরিমাণে থাকে - প্রোটিন, ভিটামিন ও আঁশ জাতীয় খাদ্য কিংবা নাও থাকতে পারে। বরং যেটা থাকে তাহলো অতিরিক্ত লবণ, চিনি ও চর্বি যা শরীরে মেদবৃদ্ধি সহ হৃদরোগ , ব্লাডপ্রেসার ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। আর আধুনিকতার নামে শিশুদের আমরা অভ্যস্ত করে তুলছি এই ফাস্ট ফুড নামে ফাস্ট ডেড কালচারে।
ঘন চিনি (সোডিয়াম সাইকামেট) বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ। কিন্তু দেশের মিষ্টি জাতীয় খাবার উৎপাদনে এই ঘন চিনির ব্যবহার করা হচ্ছে।
খাদ্যদ্রব্যে কোন সংরক দ্রব্য (প্রিজারভেটিভ) ব্যবহৃত হলে তা অবশ্যই নিরাপদ হতে হবে এবং স্বীকৃত নির্দিষ্ট মাত্রার বেশী হবে না। পণ্যের মোড়কে পণ্যের নাম, কোম্পানির নাম, পূর্ণ ঠিকানা, ফোন নম্বর, উৎপাদনের তারিখ , মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ ও ব্যবহার বিধি, ব্যাচ নম্বর, মূল্য ও ওজন লেখা থাকতে হবে । কিন্তু কিসের কি? দেশের সকল টেলিভিশন, পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন বিলিয়ে যাচ্ছে কোম্পানী। যেন কারো কোন দায়বদ্ধতা নেই।
পলিথিন ও প্লাস্টিক প্যাকেটে তৈলাক্ত কোন খাবার রাখা যাবে না।
পলিথিন বা প্লাস্টিকজাত দ্রব্যে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ (প্লাস্টিসাইজার) মানুষের শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করে। কিন্তু বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমাদেরকে বুঝানো হচ্ছে প্যাকেটজাত খাদ্য মানেই নিরাপদ। আমরা এই নিরাপদ খাবারের পিছনে ছুটছি।
এ অবস্থা চলতে থাকলে ধীরে ধীরে আমরা পঙ্গু জাতিতে পরিনত হব । ভ্রাম্যমান আদালত গণহত্যামূলক এ অপরাধের দোষীদের স্বল্প অর্থদন্ড করায় শাস্তি দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
শুধুমাত্র বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ভেজাল বিরোধী অভিযান বিষাক্ত খাদ্যের ব্যাপকতার বিপরীতে যথেষ্ট নয়। বিষমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারকে খাদ্যে বিষ মিশ্রণের উৎসমূল থেকে শুরু করে সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা কঠোর নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
এগিয়ে আসতে হবে আপনাকে আমাকে। জনতা তো কতবার রাস্তায় নেমেছে অধিকার রক্ষায়। রাস্তায় নামা ছাড়া তো আর আমাদের অধিকার রক্ষা হয় না।
আসুন আবারও রাস্তায় নামি। একটু সচেতন হই। প্রাথমিকভাবে আসুন সপ্তাহের একটি দিন এটা ফরমালিন কিট নিয়ে নিকটস্থ বাজারে যাই। একবার যদি চেক করি আর বর্জন করি তাহলে পরিবর্তন আসতে বাধ্য। আমরা আমাদের সাধ্য মত চেষ্টা করি।
সবকিছু পুলিশ দিয়ে আইনের বেড়া জালে জয় করা যাবে এই বিশ্বাস থেকে বের হয়ে আসতে হবে। খাই আমি তাই সিদ্ধান্ত আমাকেই নিতে হবে। লড়তে হবে আপনাকে আমাকে....
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।