বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা... বাংলাদেশে সাহিত্য পুরস্কার কিভাবে দেওয়া হয়? পুরস্কার যে প্রতিষ্ঠান প্রদান করে, তারা একটি ঘোষণা দেয়। অমুক তারিখের মধ্যে অমুক অমুক শাখায় বই জমা দেওয়া যাবে। বই জমা দেবে লেখক নিজে অথবা প্রকাশক। ওই ঘোষণা শোনার পর পুরস্কারের আশায় আগ্রহী লেখক/প্রকাশকরা তমুক তমুক শাখায় বই জমা দেয়। যে প্রতিষ্ঠান পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিল, তারা তাদের পছন্দ সকই একটি গোপন নির্বাচক প্যানেল গঠন করেন।
কিন্তু বাছাইয়ের কাজটি করেন সেই প্রতিষ্ঠান নিজেই। বাছাই কিভাবে করে? যাদের পুরস্কার দেবার ইচ্ছা তাদের বইগুলো প্রথমেই তালিকায় ঢোকানো হয়। আর কিছু পরিচিত আর কিছু অপরিচিতদের কিছু বইও রাখা হয়। তারপর নির্বাচক প্যানেলকে সেই শর্ট লিস্ট ধরিয়ে অনুরোধ করা হয়, এবার আপনারা একটা রায় দিন। বই পড়ার কাজটি কেউ করেন না।
নির্বাচক প্যানেলের কারো জীবনে ওই তালিকার বই পড়ার সময় নাই। এমন কি যে প্রতিষ্ঠান পুরস্কার দেবে বই পড়ার তাদেরও সময় নাই। তারা মুখ চেনা কয়েকজনের একটি তালিকা তৈরি করেন। কয়েক দিন পর সেই তালিকা নির্বাচক প্যানেলকে দেখানো হয়। তারা জিজ্ঞেস করেন, এর মধ্যে এবার কাকে কাকে দিতে চাও? পরুস্কার যারা দেবেন তারা তখন আরো একটি শর্ট লিস্ট উপস্থাপন করেন।
বিতর্ক এড়াতে একটি কৌশল নেওয়া হয়। সেই কৌশলে দু'চার জন নতুন ঢুকে পড়ে। তারপর ঘোষণা হয় এ বছর অমুক পেলেন তমুক পুরস্কার।
প্রশ্ন হল বই না পড়েই কেন পুরস্কার দেওয়া হয়? জবাব খুব সোজা। সময় নাই।
যারা পুরস্কারের জন্য বই জমা দেয় নাই, তারা তো অটোমেটিক বাদ। তাহলে কিভাবে বোঝা যাবে তমুকের লেখা অমুক বইটি খুব ভালো। বাকি বইতো পড়া-ই হল না। তাছাড়া পুরস্কার যে বইটি পাচ্ছে, সেই বইও পর্যন্ত নির্বাচক প্যানেল বা পুরস্কার প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কেউ পড়ল না। কামের কাম কি হল? পুরস্কার ঘোষণার পর, কিছু লোক স্বউদ্দ্যোগে পুরস্কারপ্রাপ্ত বইটি পড়ার আগ্রহ দেখায়।
কেউ কেউ বইটির উপর রিভিউ লেখে। অথবা পুরস্কার প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কয়েকটি সিলেকট করা বই কাউকে কাউকে দিয়ে টাকার বিনিময়ে রিভিউ করায়। এবার পুরস্কার প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সেই রিভিউগুলোর ফটোকপি নির্বাচক প্যানেলের বাসায় নিজ দায়িত্বে পৌঁছে দেয়। অন্তঃত পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আগে কোনো ফাঁকে যদি নির্বাচক প্যানলের মান্যবর গন্যবররা সেই রিভিউতে চোখ বুলিয়ে পুরস্কার প্রাপ্ত লেখক সম্পর্কে এবং তার বইটি সম্পর্কে একটা ধারণা নিতে পারে।
তারপর মহা ধুমধাম করে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
গোটা ব্যবস্থাপনায় পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক প্রায় সময়ই থাকেন কলুর বলদ। কারণ, বই জমার কাজটি ব্যবসার খাতিরে সাধারণত প্রকাশকের উদ্দ্যোগেই হয়ে থাকে। তবে লেখকের পারমিশান ছাড়া বই জমা করা সম্ভব হয় না। পুরস্কারের চন্য বই জমা হবার পর লেখক উটপাখির মতো সুখবরটির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। আর প্রকাশক পুরস্কার প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন দরবার করতে থাকেন।
এবার লেনদেন দরবার যাদের ভালো হল বলে বিবেচ্য পায়, তারাই শেষ হাসিটি হাসে। কি চমৎকার সাহিত্য পুরস্কার, আহা!!!
এক বছরে সারা দেশে সৃজনশীল যতো বই ছাপা হয় তার কয়টার নাম জানে ওই পুরস্কার প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান? শতকরা ১ ভাগও না। কয়জন ভালো লেখকের নাম জানে? শতকরা ১ ভাগও না। কয়টি বই বাছাই করল? শতকরা ভাগে হিসাব করা যায় না। কারণ এটা ইসারা হিসাবে করা হয়।
এই হিসাব কারা শিখায়? আমাদের সাজ্জাত শরিফ গংরা। যাকে যে বছর টার্গেট করে, তার ভাগ্যে সে বছর পুরস্কার জোটে। একটা উদাহরণ দেই। শহীদুল জহির আমার একজন পছন্দের লেখক। প্রথম আলো বর্ষ সেরা বই পুরস্কার পান শহীদুল জহির।
কোন বইটায়? শহীদুল জহির সারা জীবনে যা লিখেছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল যে বইটি, সেটি প্রথম আলো'র বিবেচনায় বর্ষ সেরা বই পুরস্কার পেল। বর্ষ সেরা বই কথাটি কি ঠিক? মোটেও না। কারণ, সারা দেশের সকল বই বাছাই করা হয়নি। নির্বাচিত কয়েকটি বই থেকে কয়েকটি রিভিউ করা হয়। সেই রিভিউ করা বইয়ের তালিকা থেকে দুই জনকে প্রথম আলো সৃজনশীল আর মননশীল শাখায় পুরস্কার দেয়।
সৃজনশীল আর মননশীলের পার্থক্য কি? এটা পৃথিবীর একমাত্র সাজ্জাদ শরিফ ভালো জবাব জানেন। তাও আমরা মেনে নিলাম, যে এটা তাদের বানানো নীতিমালা। কিন্তু নির্বাচিত কয়েকটি বই থেকে বর্ষ সেরা বলাটা কি সঠিক? মোটেও না। প্রথম আলো দেশে এভাবে সাহিত্য পুরস্কারের নামে সাহিত্য সন্ত্রাস ছড়িয়ে সাহিত্য চর্চার কাজটিকে নষ্ট করার পায়তারায় ব্যস্ত।
স্বয়ং বাংলা একাডেমী পুরস্কার এমন অনেক লেখককে দেওয়া হয়েছে যারা এখনো ভুল বাক্য লিখে অভ্যস্থ।
সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য জানে না। কিন্তু বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেয়ে গেছেন। বাংলা একাডেমী'র গায়ে লেখা 'জাতির মননের প্রতীক'। কিন্তু সারা বছর তাদের কাম হল আকাম অলস সময় কাটানো। সাহিত্য নিয়ে গবেষণা তো করেই না।
গল্পের বই ছাপে না। কিন্তু আপনি যদি কোনো একটা আপজাপ বিষয়ে প্রবন্ধ লিখে নিয়ে বাংলা একাডেমীর কোনো কর্মকর্তাকে ভালো করে তেল মারতে পারেন, তাহলে আপনার প্রবন্ধের বইখানা বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশ পাবে। তেল ঠিক মতো না মারতে পারলে কিন্তু খবর আর হল না। সেই অথর্ব একটি প্রতিষ্ঠান কিভাবে জাতির মননের প্রতীক হয়? যে দেশে জাতীয় সংসদে একজন সাংসদ অশ্লীল ভাষায় কথা বলতে সাহস পান, সে দেশে তো অমন অথর্ব বাংলা একাডেমী-ই হাজার বছর টিকে থাকবে।
বাংলা একাডেমী সারা বছর কয়টি ভালো বই প্রকাশ করে? একটিও না।
কালে ভদ্রে দুই একটা। তাও হাজার বছর অপেক্ষার পর। সো, সেই দেশে সাহিত্য পুরস্কারের মত একটি মামলি ব্যাপার নিয়ে এতো হৈ চৈ-এর কিছু নেই। তার চেয়ে পুরস্কার প্রাপ্ত লেখকের বইটি চুপচাপ পড়ার পর সেটি নিয়ে আলোচনা করলে বা লিখলে সেটি বরং কাজের কাজ হয়। পুরস্কারের ব্যাপারটির ধাপ্পাবাজির সঙ্গে প্রকাশকরা জড়িত।
কেউ যদি এটাকে চ্যালেঞ্জ করেন, আমি হাতে নাতে প্রমাণ দিতে পারব। নইলে অনেক পুরষ্কারের খবর আমি আগেই জানতে পারি ক্যামনে? আমি তো কোনো এ্যাসট্রোলোজার নই। ভবিষ্যৎ গণনাও জানি না। তবে পুরস্কার প্রাপ্ত লেখকের একটা লাভ হয় বটে। সবাই তার বইটি সম্পর্কে জানতে পারে।
নকুন অনেকে তখন বইটি পড়তে আগ্রহ দেখায়।
বাংলাদেশের পুরস্কার প্রাপ্ত সকল জীবিত ও মৃত লেখককুলকে একসঙ্গে সহস্র বছরের পুরাতন চলমান ও ভবিষ্যৎ অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে রাখলাম। আপনারা কেউ আবার ব্যাপারটা নিজের গায়ে মাইখেন না। আমি সিস্টেম নিয়ে কথা বলেছি। সেই বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে কইতে পারেন।
আওয়াজ দিয়েন। আর সাধু সাবসান। কি ভাইজানরা কি মাইন্ড খাইলেন??? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।