একদিন পাহাড় উড়িয়ে দেবার স্বপ্ন দেখতো মানুষ। কিন্তু পাহাড় যেন বিশাল এক দৈত্যের মতো দাঁড়িয়ে থাকতো বাঁধা হয়ে। তাকে কেটে সমান করা ছিল মানুষের জন্য অসম্ভব এক কল্পনা। কিন্তু একদিন পাহাড় ভেঙ্গে পড়লো মানুষের কাছে। শুধু পাহাড় নয়, শক্ত পাথর আর যা কিছু কঠিন সবই এক মুহূর্তেই চুরমার হয়ে গেল এক আবিষ্কারের কাছে।
তার নাম ডিনামাইট। ডিনামাইট এক ধরনের বিস্ফোরক। সবকিছু উড়িয়ে দেওয়াই এই বস্তুর ধর্ম। যে মানুষটি ডিনামাইট আবিষ্কার করছিলেন তিনি কিন্তু তার আবিষ্কারের মতো এত কঠিন ছিলেন না, ছিলেন অনেক নরম মনের মানুষ। এই আবিষ্কার তাকে অনেক ধনী করলো, কিন্তু শান্তি দিল না।
কারণ কিছু খারাপ যুদ্ধবাজ মানুষ তার আবিষ্কারকে মানবকল্যাণের বদলে মানুষ মারার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করলো। হাজার হাজার মানুষ তাই মরতে লাগলো যুদ্ধক্ষেত্রে। নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তদেরকে ইংরেজিতে নোবেল লরিয়েট বলা হয়।
তাই মনের শান্তি জন্য শেষে ঠিক করলো এই আবিষ্কার থেকে অর্জিত টাকা মানব সেবায় দিয়ে যাবেন। এই টাকা সেই পাবে যে মানুষের জন্য ভালো কাজ করবে।
কেউ যদি সুন্দর গল্প লিখে, কেউ যদি বিজ্ঞানের এমন আবিষ্কার করে যা মানুষের কাজে আসবে, মানুষের শান্তির জন্য যারা কাজ করে যাবে তারাই পাবে এই টাকা পুরস্কার হিসেবে। আজ এই পুরস্কার সারা বিশ্বের অন্যতম সেরা পুরস্কার হিসেবে পরিচিত। এর নাম নোবেল পুরস্কার। যার টাকায় এই পুরস্কার দেওয়া হয় তার নাম আলফ্রেড নোবেল। নোবেলের নামেই নোবেল পুরস্কারের নাম হয়েছে।
১৮৬৬ সালে যখন তার বয়স ৩৩ বছর তখন তিনি এক নিরাপদ বিষ্ফোরক আবিষ্কার করেন। যার নাম ডিনামাইট। আলফ্রেড নোবেল সারা জীবন বিয়ে করেননি। তাই তার মৃত্যুর পর তার এত টাকা দিয়ে কী করা হবে জীবিত অবস্থায় তিনি তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। ২০০৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মোট নোবেল লরিয়েটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮৭ যার মধ্যে ৭৬৮ জন (৩৩ জন নারী) ব্যক্তিবিশেষ এবং ১৯টি প্রতিষ্ঠান।
লরিয়েটদের কয়েকজন পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ১৯৪০ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত পুরস্কার প্রদান বন্ধ ছিল। নোবেল পুরস্কার মৃত কাউকে দেয়া হয় না। লরিয়েটকে অবশ্যই পুরস্কার প্রদানের সময় জীবিত থাকতে হবে।
আলফ্রেড নোবেলের বাড়ী ছিল সুইডেনে।
নোবেল গল্প ভালোবাসতেন কিন্তু তার সাথে তিনি ভালোবাসতেন বিজ্ঞান। রসায়ন আর পদার্থবিদ্যায় তিনি বরাবরই মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ১৮৯৫ সালে তিনি শেষবার যে উইল তৈরি করেন তাতে তিনি লেখেন, তাঁর আয়ের ৯৪ ভাগ তিনি এক পুরস্কারের জন্য দিয়ে যাচ্ছেন। এর এক বছর পর তিনি মারা যান। ১৯০১ সালে ঠিক আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুর পাঁচ বছর পর বিশ্বে প্রথম নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়।
বাংলাদেশ, ভারত পাকিস্তানের মোট আটজন পুরস্কার পেয়েছে। নোবেল বিজয়ীদের নিয়ে যেমন সাধারণ মানুষের উৎসাহের কমতি নেই, তেমনি ভবিষ্যতে নোবেল কে পেতে পারেন তা নিয়েও ফি বছর চলে দস্তুর গবেষণা । ১৯০২ সাল থেকে সুইডেনের রাজা স্টকহোমে পুরস্কার বিতরণ করে আসছেন। জীবদ্দশায় নোবেল অনেকগুলো উইল লিখেছিলেন, এর মধ্যে সর্বশেষটি লিখেন তার মৃত্যুর মাত্র এক বছর আগে নভেম্বর ২৭, ১৮৯৫ তারিখে। নোবেল পুরস্কার পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার ।
সমগ্র বিশ্ব থেকে নির্বাচিত ৩০০০ জনকে এই মনোনয়নপত্র দেয়া হয় যাতে তারা তা পূরণ করে পুরস্কারের আবেদন করতে পারে। নোবেল শান্তি পুরস্কার নির্বাচনের জন্য এমন সব ব্যক্তিদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয় যারা এ বিষয়ে বিশেষ কর্তৃত্বের দাবীদার। গণিতে নোবেল পুরস্কার নেই ।
নোবেল পুরস্কারে দেওয়া হয় ১০ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার যার অর্থমূল্য ১.৫ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০ কোটি ৫ লক্ষ টাকার সমান।
তার সাথে দেওয়া হয় একটি সোনার মেডেল ও সনদপত্র। নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয় নরওয়েতে। আর বাকী পুরস্কারগুলো দেওয়া হয় সুইডেনে। উভয় দেশের প্রধান এই পুরস্কার বিজয়ীর হাতে তুলে দেন। প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
এই তারিখটিতে পুরস্কার দেওয়ার কারণ ১৮৯৫ সালের ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেল মারা যান। সমস্ত নোবেল জাদুঘরে একটা মাত্র আবক্ষ ভাস্কর্য রাখা আছে, সেটি সমগ্র এশিয়ার প্রথম নোবেল বিজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। অনেক বিখ্যাত সাহিত্যিক যারা হয়তো বড় কোন আদর্শের জন্ম দিতে পারেনি, তারা নোবেল পুরস্কার পায়নি। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ লিও তলস্তয় এবং হেনরিক ইবসেন। উপন্যাস ও নাটকের জগতে কিংবদন্তীতুল্য এই দুই ব্যক্তির নোবেল না পাওয়া নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে কলঙ্কময় অধ্যায়।
১৮৯৫ সালে তিনি শেষবার যে উইল তৈরি করেন তাতে তিনি লেখেন- তার আয়ের ৯৪ ভাগ তিনি পুরস্কারের জন্য দিয়ে যাচ্ছেন। এর এক বছর পর নোবেল মারা যান। সে সময় তিনি পুরস্কারের জন্য রেখে যান ৩১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার। নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে পুরস্কার দেওয়া হয়নি ১৯৪০, ১৯৪১, ১৯৪২ সালে। চিকিৎসায় নোবেলজয়ী নারী ১০ জন।
বর্তমানে পদার্থ, রসায়ন, শান্তি, সাহিত্য, চিকিৎসা ও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। নোবেল পুরস্কারের মত মোটা অংকের টাকা পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় নেই। নোবেল মৃত্যুবরণ করার আগে ঘোষণা করেছিলেন, পুরস্কারটি দাতার নির্দেম অনুযায়ী পৃথিবীর যে কোনো জাতির মানুষ লাভ করতে পারে। ১৫ মিলিয়ন ইহুদী যেখানে ১৮০-টি নোবেল প্রাইজ পেয়েছে সেখানে ১৫০০ মিলিয়ন মুসলিম পেয়েছে মাত্র ৯-টি! অতএব, আধুনিক সভ্যতায় মুসলিমদের কোন অবদান নেই। প্রায় এক বিলিয়ন হিন্দুর মধ্যে থেকে সর্বসাকুল্যে মাত্র ৭ জন নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন – যাঁদের মধ্যে ৪ জনই পশ্চিমা বিশ্বের নাগরিক – শুধুমাত্র জন্মসূত্রে ভারতীয়।
ভারতে প্রায় আট হাজার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ পর্যন্ত এক জনও নোবেল প্রাইজ পাননি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন সেই বৃটিশ আমলে।
( তথ্যসুত্রঃ ইন্টারনেট ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।