মানুষে মানুষে সমানাধিকারে বিশ্বাস করি এতদিন গ্রহকদের নানাভাবে প্রতারিত করে আসছিল হারামীর ফোন হিসেবে খ্যাত গ্রামীণ ফোন। এই কর্পোরেট লুটেরাদের বিরুদ্ধে লেখা আমার একাধিক ব্লগে এই ব্লগের কিছু গ্রামীণের দালাল ব্লগার গ্রামীণের বিরুদ্ধে লেখায় অশ্লীল খিস্তি খেউড় করেও প্রতিবাদ জানানোর চেষ্টা করেছিল। আজ নিশ্চয়ই তাদের অনেকেই নিজের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে আন্দোলন করছে। কর্পোরেট সংস্কৃতিই এমন শুধু নিজেরটা বোঝে সাধারণের বিষয়ে মাথাব্যাথা নেই। আমরা যারা সাধারণের সমস্যা বা বঞ্চিত হওয়ার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ ছিলাম তারা এখন গ্রামীণের এই অন্যায় কর্মী ছাটাই প্রক্রিয়ারও বিরোধিতা করছি।
হারামীর ফোন বর্জন করুন আমার লেখা সেই পুরনো ব্লগটি
দেশের বৃহৎ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনে চলমান কর্মী ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী। এই প্রতিবাদের অংশ হিসেবে গঠন করা হয়েছে কর্মীদের বিশেষ সংগঠন। তাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন ছাঁটাই হওয়া কর্মীরাও।
প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা চলমান ছাঁটাইকে অনৈতিক আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে তা বন্ধ করাসহ ৫ দফা দাবি আদায়ে একটি লিফলেট প্রকাশ করে তা বিতরণ করছেন।
শুধু তাই নয়, কর্মী ছাঁটাই প্রক্রিয়ার মতো বেআইনি কার্যক্রমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
গত ৪ জুলাই সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারাস্থ গ্রামীণ ফোন প্রধান কার্যালয়েই একটি সভার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে গ্রামীণফোন কর্মীদের সংগঠনটির।
সংগঠনের উদ্যোক্তাদের একজন ই-মেইল বার্তায় বাংলানিউজকে তাদের সংগঠন তৈরির খবর জানান।
তিনি লিখেছেন, আগামী ৬ জুলাই রাজধানীর মগবাজারে সংগঠনের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন, নতুন সদস্য সগ্রহ, রেজিস্ট্রেশন, সংগঠনের আইনগত ভিত্তি, ভবিষ্যত করণীয় নির্ধারণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার একটি লিফলেটও বিতরণ করেন কর্মীরা।
এই লিফলেটে কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ ও বর্বর বলে উল্লেখ করে। এতে বর্তমান ইনক্রিমেন্ট পদ্ধতি পুনর্বিবেচনা করে ন্যায্য ও যৌক্তিকহারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ঘোষণা করা, ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের যথাবিহিত সম্মানপ্রদর্শনপূর্বক যথাযথ সামাজিক/আর্থিক/মানসিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া, কোম্পানির কাছে ন্যায্য পাওনা বাবদ ৫ শতাংশ মুনাফা লভ্যাংশ বকেয়াসহ প্রদান করার দাবি জানানো হয়।
ব্যয় সংকোচনের কথা বলে দেশের বৃহৎ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ছাঁটাই শুরু করে। এর অংশ হিসেবে কর্তৃপক্ষ কর্মীদের চাকরিচ্যুৎ করছে। এর অন্যতম টার্গেট পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানের নারী কর্মীরা।
বিশেষ করে যারা অন্তঃসত্ত্বা কিংবা শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ।
বাংলানিউজের এক অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ‘কথিত চাকরি রক্ষার পরীক্ষা’ নামেই গ্রামীণফোন কর্মী ছাটাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। গ্রামীণফোনে বর্তমানে ৪ হাজার ৮০০ লোকবল রয়েছে।
এই চাকরি রক্ষার পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কর্মীরা।
একাধিক কর্মী ফোনে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন তাদের ক্ষোভের কথা।
চাকরিচ্যুত একজন গ্রামীণফোন কর্মী বাংলানিউজকে জানান, তিনি ২০ নম্বরের মধ্যে ১৪ নম্বর পেয়েও চাকরি হারিয়েছেন। আবার অনেকেই ১০, ১১ নম্বর পেয়েও চাকরিতে বহাল রয়েছেন।
পরীক্ষাকে কর্মী ছাঁটাইয়ের হাতিয়ার বলেই উল্লেখ করেছেন তিনি।
মূলতঃ টরে জনসেন ২০১১ সালের মার্চে গ্রামীণফোনের নতুন সিইও হয়ে আসার পর থেকেই কর্মী ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু হয়।
টরে জনসেনের ব্যয় সংকোচনের জন্য সুখ্যাতি রয়েছে। এর আগে তিনি যখন মালয়েশিয়াতে ছিলেন তখনও এই কাজে তাকে ব্যবহার করা হয়েছিলো। জনসেন মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠানের তার ঘনিষ্ট দু’একজনকেও গ্রামীণফোনে নিয়ে আসেন। তার মধ্যে অন্যতম মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান পাকিস্তানী বশোদ্ভূত হারুণ ভাট্টি। আর হারুণ ভাট্টিই কর্মী ছাঁটাই কাজের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন।
কর্মী ছাঁটাইয়ের পর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষকে এর কারণ জানতে চেয়ে চিঠি দেয়। এরপর গ্রামীণফোনের কর্মীরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে গ্রামীণফোনের সিইও টরে জনসেন কর্মীদের সান্ত্বনা দিয়ে ই-মেইল বার্তা পাঠান। তবে এরপরেও কর্মীরা শান্ত হননি। উল্টো তারা সংঘঠিত হচ্ছেন, লিফলেট বিতরণ করছেন।
পাঠকদের উদ্দেশ্যে গ্রামীণফোন কর্মীদের বিতরণ করা লিফলেটের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘গ্রামীণফোনের প্রহসনমূলক নীতি এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা’
১৯৯৭ সাল থেকে শুরু করে অদ্যবদি ৩৮ মিলিয়ন গ্রাহক ও ৫০ শতাংশের বেশি মার্কেট শেয়ার নিয়ে গ্রামীণফোন তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে। প্রসঙ্গ সফলতার নয়। এই সফলতার পেছনে যাদের বিনিদ্র ও রক্তঝরা পরিশ্রম তাদের প্রতি অবিচারের কথা। অবিবেচনার অন্তরালে চাপা পড়ে আছে এই বিশাল কোম্পানির প্রতিটি বিভাগের কর্মীদের আশা আকাঙ্খা।
এখানে বিবেচনা করা হচ্ছে শুধু ব্যবসা। এ যেন মনে করিয়ে দেয় ইংরেজ কোম্পানির শাসনামলে নীলকুঠির নিষ্ঠুরতার কথা।
শুরুতেই আসে অমানবিক ইনক্রিমেন্ট পলিসির প্রসঙ্গ। সরকার ঘোষিত ইনফ্লেশন (মূল্যস্ফীতি) যেখানে ১১ শতাংশ সেখানে আজ আমরা শূণ্য থেকে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট নিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করছি। যা বাস্তবিকভাবে অসম্ভব।
এখানেই শেষ নয়। ঘটনার ক্রম বিবর্তনে এলো এমপ্লয়ী ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া। অস্বচ্ছ ও বর্বর পন্থায় টরে (গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) ও ভাট্টি (মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান হারুণ ভাট্টি) গং তাদের অসাধু ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু করলো ‘পি এন্ড ও’ ডিভিশন থেকে। ধীরে ধীরে তা কমার্শিয়াল বিভাগ পর্যন্ত বিস্তার করলো। শোনা যাচ্ছে তা টেকনোলজি, ফাইন্যান্স ও অন্যান্য বিভাগেও হবে।
যেভাবে মিটিংয়ের নাম করে জোর করে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হলো এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ছুটিতে থাকা অবস্থায় অফিসে ডেকে এনে পদত্যাগপত্রে সই করতে বলা হলো তা একাত্তরের পাক হানাদারদের পাষণ্ডতা ও বর্বরতাকেও হার মানায়। শুধুমাত্র মৌখিক আদেশের ভিত্তিতে এই ধরনের অমানবিক প্রক্রিয়া চালানো কর্তৃপক্ষের অসাধু মানসিকতার পরিচয় বহন করে।
এমতাবস্থায় আজ আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। আমাদের শত আবেদন সত্ত্বেও স্বৈরাচারী ম্যানেজমেন্ট কোনো কথায় কর্নপাত করছে না। তারা তাদের অসাধু, ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থ চরিতার্থ করার নিমিত্তে আমাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে।
আমরা আমাদের রক্তে গড়া এই প্রতিষ্ঠান একটি স্বার্থান্বেষী চক্রের খেয়াল খুশির কারণে নষ্ট হতে দিতে পারি না। হাজার হাজার নিষ্ঠাবান কর্মীর ভদ্রতার সুযোগ নিয়ে গ্রামীণফোন ম্যানেজমেন্ট দিনের পর দিন যেসকল অন্যায় কার্যক্রম চালিয়েছে, সময় এসেছে সবাই একত্রিত হয়ে এর প্রতিবাদ জানানোর।
আমাদের দাবিগুলো নিম্নরূপ:
* অবিলম্বে অনৈতিক ছাটাই প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে
* বর্তমান ইনক্রিমেন্ট পদ্ধতি পুনর্বিবেচনা করে ন্যায্য ও যৌক্তিকহারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ঘোষণা করতে হবে।
* ছাঁটাই করা কর্মীদের যথাবিহিত সম্মানপ্রদর্শনপূর্বক যথাযথ সামাজিক/আর্থিক/মানসিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
* কোম্পানির কাছে ন্যায্য পাওনা বাবদ ৫ শতাংশ মুনাফা লভ্যাংশ বকেয়াসহ প্রদান করতে হবে।
নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করি, আর কতদিন আমরা এসব নির্যাতন মুখ বুঁজে সইবো। উপরোক্ত দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আসুন বজ্রকন্ঠে আওয়াজ তুলি।
--গ্রামীণফোনের সকল এমপ্লয়ি
সৌজন্যে: বিডিনিউজ২৪ডটকম। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।