আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সায়েন্স ফিকশন না কি শুধুই ফিকশন ?

কি জানি খুঁজছি!..পাইতাছি না আজ অনেক আনন্দের দিন। গত ৬বছর ধরে এই প্রজেক্ট-এর কাজ চলছে;আজকের দিনটি তাই অনেক গুরত্বপূর্ণ। ল্যাবরেটরীর main কম্পিউটারের মনিটরের সামনে যে মানুষটি বসে আছে সেই চিফ কো-অর্ডিনেটর। এই পুরো প্রজেক্ট বলতে গেলে তারই brain child.নাম এস.এম.রাহাত.applied physics(honors.D.U),PhD in Advanced Robotics(T.U,Japan).পুরো নাম সিয়াম মুনতাসির রাহাত। robotics –এর জগৎ-এ এক আলোকিত নাম।

ভার্সিটিতে রাহাত ছিল বন্ধুদের আড্ডার মধ্যমনি। প্রানোচ্ছল,পড়াশুনায় প্রচন্ড সিরিয়াস,স্যারদের প্রিয় ছাত্র। ঢাবি থেকে অনার্স করার পর টোকিও ইউনিভার্সিটিতে PhD করতে যায় সরকারি বৃত্তি নিয়ে। সেখানে তার থিসিস মোটামুটি আলোরন ফেলে দেয়। দেশে ফিরে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে রাহাত গড়ে তোলে এই ল্যাব।

গত ৬বসর ধরে রাহাত বলতে গেলে অন্তরিন,লোক চক্ষুর আড়ালে গবেষনা নিয়ে ব্যস্ত। প্রয়োজনিয় check up শেষ। মডেলের দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল চিফ-এর চোখে। আজ পর্যন্ত যা কেবল সায়েন্স ফিকশনে সম্ভব ছিল,তা এখন বাস্তব!তার সারা জিবনের স্বপ্ন সার্থক। model HB-309 এখন তার চো্খের সাম্নে।

এই মাত্র প্রোগ্রাম লোড সম্পন্ন হয়েছে। সে এখন বিশ্বের একমাত্র মানবীয় গুণাবলী সম্পন্ন রোবটের আবিষ্কারক!এখন প্রজেক্ট-এর পরবর্তী অংশে্র কাজ শুরু করতে হবে .................................................................................................................................... অনিক বাসা থেকে বেড়িয়ে রিক্সার জন্য দাড়ালো। উদ্দেশ্য ধানমন্ডি মহিলা ক্লাব মাঠ,মিলার কনসার্ট। ব্যস্ত নগরী ঢাকা,অনেকক্ষণ পর খালি রিক্সা পেল সে। রিক্সায় উঠতে গিয়ে হটাৎ চোখ আটকে গেল বিপরীত দিক থেকে আসতে থাকা একটি রিক্সার উপর বসা মায়াবি একটি মুখে।

মুহুর্তে যেন এক ঝিলিক বিদ্যুৎ খেলে গেল তার হ্রদপিন্ডের এপাশ থেকে ওপাশে। অনিক একটা কথা কোথায় যেন শুনেছিল “যদি কাউকে তুমি ভালবাসো, তাহলে জীবনে minimum তার সাথে তোমার ৫বার দেখা হবে!” যাই হোক, সেই কথাকে সত্য প্রমানের জন্যই হয়ত মেয়েটির সাথে তার আবার দেখা হল ঠিক পরদিনই !এবার বসুন্ধরা সিটি, লেভেল-৬, সিডির দোকানে। মুহুর্তেই অনিক নিয়তির ইশারা বুঝতে পারল!! অসীম সাহস তার বুকে এসে ভর করল। মেয়েটির কাছে গিয়ে বললো-excuse me,আপনি কি ধানমন্ডি-২৭নম্বরে থাকেন?আপনাকে চেনা চেনা লাগছে। কথাগুলো বলে অনিক নিজেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল,সে কি বলল এসব!মেয়েটি তার দিকে তাকলো।

এই অনাহূত ছেলেটির অযাচিত কৌতুহলের আড়ালে লুকিয়ে থাকা চোখের ভাষা তার দৃষ্টি এড়াল না। শীতল কন্ঠে জবাব দিল,sorry…not interested.মুহুর্তেই অপমানে অনিকের চেহারাটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। বাসায় ফিরে মেয়েটির মনে পরে গেল আজ শপিং-এ ঘটা interesting কাহিনীটা!নাহ্,সে এতটা rude না হলেও পারত। ছেলেটার সাহস আছে বলতে হবে। তার আবার মিনমিনে স্বভাবের ছেলে একদমই পছন্দ না!তাছাড়া দেখতেও অনেক cute!অনেক guilty feelings হচ্ছে;একবার sorry বলতে পারলে ভাল হত-মেয়েটি ভাবলো।

…………………………… ৬মাস ২৭ দিন পর… ধানমন্ডী লেকের পাড়ে কড়ই গাছের নিচে অনিক বসে আছে। তার পাশে বসা মেয়েটি খিলখিল করে হাসছে। আর সেদিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে অনিক। মেয়েটির নাম সারাহ,সুরাইয়া মেহজাবিন সারাহ। BBA 3rd semester,NSU.অনিকের সাথে সারাহ্র প্রথম দেখা হয় আজ থেকে প্রায় ৭মাস আগে,একটা শপিং মলে।

এরপর একদিন রিক্সায় বাসা যাওয়ার পথে সারাহ্র চোখে পড়ে অনিক ফুটপাথ দিয়ে হেটে যাচ্ছে। রিক্সা থামিয়ে সারাহ্ই প্রথম কথা বলে। তারপর?তারপর বাকিটা nuclear reaction.মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান,ফোনে কথা বলা,ফাস্টফু্ড,চাইনীজ,রিক্সা,পার্ক…অতঃপর ভালবাসা। এর মাঝেই সারাহ জেনে গেছে অনিকের বাবা অনেক বিত্তশালী ছিলেন। ছোট বেলায় একটা কার অ্যাকসিডেন্টে অনিকের বাবা-মা দুজনেই মারা যান।

অনিকের পছন্দ music আর হবি computer programming! গোধুলীর আভা ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। এবার ঘরে ফেরার পালা। অনিক সারাহকে বাসায় পৌছে দিতে রিক্সা নিল। কিছুদুর গিয়ে রাস্তার মোড়ে ল্যাম্পোস্টের নিচে দুজন যুবক তাদের রিক্সার গতিরোধ করল। জায়গাটা নির্জন।

যুবকদের একজন অস্ত্র বের করে সারাহর দিকে তাক করে বললো,মোবাইল,মানিব্যাগ সব ওর হাতে বাইর কইরা দে;এই বলে নিজের সঙ্গির দিকে ইঙ্গিত করল। সারাহ ভয়ার্ত চোখে অনিকের দিকে তাকাল। অনিক দেখলো রিভালবারটা নকল,ম্যাগাজিনটা খালি। তাই সে সারাহকে বলল,ভয় পেয় না,কিসসু হবে না। অনিকের নির্লীপ্ততা দেখে সারাহ বিষ্মিত না হয়ে পারল না।

এরই মধ্যে রাস্তায় লোকজনের আনাগোনা দেখে যুবকদ্বয় ভয়ে পালিয়ে গেল। এবার সারাহর মুখ খোলার পালা। -তুমি চুপচাপ বসে ছিলে কেন?কয়টা টাকা আর একটা মোবাইল তোমার কাছে এত important হল? -আসলে ওদের রিভালবারটা নকল ছিল -তো কি হয়েছে?আর তুমি বা কি করে জানলে সেটা? এ প্রশ্নের উত্তর অনিকের জানা নেই। রিক্সায় বাকিটা সময় কেউ কোন কথা বললো না। পরদিন সকাল ১০টায় সারাহর ফোন।

জরুরি তলব,দেখা করতে হবে। অনিক বেরিয়ে পড়ল। পার্কের বেঞ্চে বসে wait করতে করতে সারাহ চলে আসলো। এসেই হরবড়িয়ে বলতে শুরু করল, -তোমাকে একটা কথা বলা হয় নি -বলো -আমার ক্লাসের একটা গুন্ডামার্কা ছেলে আমাকে disturb করত -কী বলো!তুমি এতদিন বল নি কেন? -প্রয়োজন মনে হয় নি। প্রতিবার ও অফার করেছে আর আমি reject করেছি।

-হুম,then? -আজকে ও আবার offer করেছে;but আজ আর আমি না করতে পারি নি। -কী বলছো এসব! -আমি ঠিকই বলছি -না। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না। তুমি শুধু একবার বলো আমি কি ভুল করেছি,আমি সব শুধরে নিব promise -তুমি কোনো ভুল কর নি অনিক। তুমি হলে perfect good boy.but আমার life-এ perfect কাউকে লাগবে না।

ভাল থেকো অনিক। good bye সারাহ চলে গেল। পার্কের বেঞ্চে বসে হিস্টিরিয়াগ্রস্ত রোগীর মত অনিক কাপতে লাগল। প্রচন্ড আবেগ ইলেকট্রিক ইমপালসের imbalance ঘটানোয় ইমারজেন্সী প্রোগ্রাম অ্যাকটিভেট হয়ে গেল। হাতের চামড়ার নিচে লুকানো যোগাযোগ মডিউলের বাটন চাপ দিয়ে অনিক বলে উঠল- -হ্যালো… model HB-309 speaking…!!! …………………………………….. Lab-এর টেবিলে model HB-309 শুয়ে আছে।

repair এর জন্য তাকে reboot করা হবে। অনিক ভাবলো তার ক্ষুদ্র জিবনের এখানেই সমাপ্তি। তবুও সে আবার আগের মত হতে পারবে। তাই reboot এর আগে পৃথিবীর সকল পুরুষ সম্প্রদায়ের কথা ভেবে দুই ফোঁটা জল দু চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। চীফ কো-অর্ডিনেটর এস.এম.রাহাত মনিটরের সামনে বসে আছে চিন্তিত ভঙ্গীতে।

সে কিছুতেই প্রজেক্ট ফেইলের কারন খুজে পাচ্ছে না। model HB-309-কে প্রায় পুরোপুরি তার আদলে প্রোগ্রাম করা হয়েছিল। তখনই তার কাছে সব স্পষ্ট হয়ে গেল। রাহাত নিজেই কোনোদিন কোনো নারীর ভালবাসা পায় নি। তাই নারী জাতির সাইকোলজি তার কাছে স্পষ্ট নয়-এটাই স্বাভাবিক! তখনি রাহাতের মনে হল বাস্তবে মিসির আলি টাইপের সাইকোলজিস্ট থাকলে তার কতই না উপকার হত!কিংবা কে জানে,মিসির আলিও তাকে female psychology-র ব্যাপারে আদৌ কোনো সাহায্য করতে পারত কি না!! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.