আই লাভ দ্যা স্মোক, আই লাভ দ্যা স্মোকি লাইফ। সব ধোয়াটে থাকবে। ইচ এন্ড এভরিথিং। মাথাটা স্থির করার চেষ্টা করছে রিচি। এত বড় ভুলটা কিভাবে করলো সে? তার এই একটা ভুলের ফল হতে পারে লাখ লাখ লোকের মৃত্যুর কারণ।
এত বড় দায়িত্ব তার উপর অনেক ভরসা করে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সে এই ভুলটা করেই ফেললো। রোবটটা যে তার পাঞ্চ কার্ডটা পাতলা আয়রণ সেফ ভেঙে নিয়ে যেতে পারে এটা সে ভাবতেই পারেনি। মাত্র পাঁচ মিনিটেই অঘটনটা ঘটে গেলো। এখন সিকিউরিটি কোডটা যদি একবার ভেঙে ফেলতে পারে তাহলেই ঘটে যাবে রোবটবিদ্রোহ।
কাপা হাতে ফোনটা পকেট থেকে বের করে একটা নাম্বার ডায়াল করে কানে ঠেকালো রিচি। ডায়াল টোন শোনা যাচ্ছে। কিন্তু অপরপাশে কোন সাড়া নেই। হঠাৎ পেছনে কোন কিছুর অস্তিত্ব টের পেয়ে দ্রুতবেগে পেছনে ঘুরলো রিচি। সাথে সাথেই পেটে একটা প্রচন্ড আঘাত অনুভব করলো সে।
ফোনটা হাত থেকে ছিটকে পড়ে গেল পাশের ড্রেনে। চোখ ঝাপসা হবার আগে সে দেখতে পেলো একটা রোবটের বিধ্বংসী ক্রুর রোবটিক হাসি।
চোখ বন্ধ করা অবস্থায়ই বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করার সাথে সাথেই ধুপ করে একটা আওয়াজ শুনলো তানভীর। তারপরই অপরপাশ ডেড। ফোনটা চোখের সামনে এনে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখলো রিচি ফোন করেছিলো।
রিচি তার রিসার্চ পার্টনার। প্রফেসর জামানের সাথে ওরা কাজ করছে রোবট নিয়ে। দেশের ইন্ডাস্ট্রীর মূল শ্রমিক এখন রোবটেরা। মানুষরা শুধুই ডিসিশন মেকার। রোবট পরিচালনার জন্য কিছু ক্লাস্টার প্যাক ইউজ করা হয়।
সেগুলোতে ইনস্ট্রাকশন দিলেই রোবটেরা সেই ইনস্ট্রাকশন অনুযায়ী কাজ করতে থাকে। রিচি আর তানভীর কাজ করছে রোবটের মধ্যে সেলফ ডিসিশন মেকিং এলগরিদম এপ্লাই করা আর এই ক্লাস্টারগুলোর মধ্যে একটা ডায়নামিক নেটওয়ার্ক তৈরী করার জন্য। এটা করতে পারলে মানুষের উপর চাপ আরো কমে আসবে। ইন্ডাস্ট্রীর প্রয়োজন মত রোবটরা নিজেরাই ডিসিশন নিতে পারবে আর সেটা ছড়িয়ে দিতে পারবে অন্য রোবটগুলোর মধ্যে। তবে এই ক্ষমতা থাকবে হাতে গোনা কয়েকটা রোবটের মধ্যে খুব সীমিত পরিমাণে।
ইতিমধ্যে তারা খুব শক্তিশালী একটা এলগরিদম বের করে ফেলেছে। তবে এটার পুরোটা কোন রোবটের মধ্যে এপ্লাই করার সাহস করেনি। করলে রোবটের ক্ষমতা হবে মানুষের চেয়ে অনেক গুন বেশী। তাই পুরো প্রোগ্রামটাকে বিশটা লেভেলে ভাগ করে ফেলেছে সে আর রিচি মিলে। সাধারণ শ্রমিক শ্রেণীর রোবটদের প্রোগ্রামের লেভেল থাকবে এক থেকে সাতের মধ্যে।
আট থেকে দশ থাকবে ডিসিশন মেকার রোবটদের। বাকী দশ থাকবে রিজার্ভড। এগুলো ডেন্জার লেভেল। প্রতি লেভেলের জন্য আলাদা চিপ তৈরি করে রাখা হয়েছে ল্যাব স্টোরেজে। অনেক সিকিউরড এই স্টোরেজে ঢোকার জন্য লাগে একটা পাঞ্চকার্ড আর রেটিনা স্ক্যান।
তিনটে পাঞ্চকার্ড তানভীর, রিচি আর প্রফেসর জামানের গলায় লকেটের মত ঝোলানো থাকে। রোবটগুলোর প্রোগ্রাম এমনভাবে করা হয়েছে যাতে এরা কোন মানুষের শরীর স্পর্শ করতে না পারে। ল্যাবের মালপত্র টানাটানির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে টেন লেভেলের চিপযুক্ত একটা রোবট। এটা তেমন কোন ইন্সট্রাকশন ছাড়াই কাজ করতে পারে। তবে এর প্রধান বাগ হচ্ছে, এটা যে কোন ইলেকট্রনিক সিস্টেম খুব তাড়াতাড়ি ধরে ফেলতে পারে।
এই পাওয়ারটা মাঝেমাঝে বিপদজনক হয়ে যায় তাদের জন্য। কারণ পুরো ল্যাবের সিকিউরিটি সিস্টেম চলে ইলেকট্রনিক সিস্টেমে। এই সিস্টেম যদি রোবটটা ধরে ফেলে তাহলে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হবে। তাই এক ঘন্টা পর পর এটার মেমোরী রিসেট করে দেয়া হয়। এই সমস্যার সমাধান নিয়ে তার আর রিচির বসার কথা আগামীকাল।
এই মাঝরাতে রিচির রহস্যজনক ফোনকল ভাবিয়ে তুললো তানভীরকে। রিচি অনেক মেধাবী আর মিষ্টি একটা মেয়ে। চোখে মুখে প্রবল ব্যক্তিত্বের ছাপ। সারা জীবনে সে এই একটা মেয়েকেই দেখেছে যার কথায় কোন ন্যাকামীর ছাপ নেই। সুদর্শন আর মেধাবী হবার কারণে এখন পর্যন্ত অনেক মেয়ের হৃদয়ই দুর্বল করেছে তানভীর।
কিন্তু এই প্রথম মনে হয় তানভীর নিজে কারো জন্য দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। সেটা তানভীর ফিল করে মাঝে মাঝে। কিন্তু আচার আচরণে প্রকাশ করেনা। তবু এই মাঝরাতে এই রহস্যময় ফোনকলটা একটু ধাক্কা দেয় তানভীরকে। কল ব্যাক করে তানভীর।
কিন্তু ফোন ডেড। কি হতে পারে এর মানে? কোন অঘটন? নাহ, একটা খোজ নিতেই হয়। ল্যাবে ফোন করলো তানভীর। ডেড। নাহ, বের হতেই হয় তাহলে।
বিছানা থেকে নেমে কাপড় পরে গাড়ী নিয়ে ল্যাবের দিকে রওনা হলো তানভীর।
ল্যাবের সামনে রিচিকে পড়ে থাকতে দেখে অজানা এক আশংকায় কেপে উঠলো তানভীরের বুক। ব্যাপার কি? কি হয়েছে? গাড়ী থেকে নেমে অচেতন রিচিকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়ীতে বসালো তানভীর। পালস আছে। তার মানে বেচে আছে।
চোখে মুখে পানি ছিটানোর পর রিচির জ্ঞান ফিরলো। রওনা হলো হাসপাতালের দিকে। রাস্তায় ধীরে ধীরে তানভীরকে সব খুলে বললো রিচি।
পাঞ্চকার্ডটা গলায় ঝুলিয়ে রাখতে ভাল লাগছিলো না বলে আয়রন সেফে রেখেছিলো সে। লেভেল টেন রোবটটার মেমোরী রিসেট করার কথা রিচি ভুলে গিয়েছিলো।
অতিরিক্ত দশ মিনিটের মাথায় রোবটটা স্টোরেজের সিস্টেম ধরে ফেলে। তারপর আয়রন সেফ ভেঙে পাঞ্চকার্ডটা নিয়ে নেয় রোবটটা। তখনই রিচি বুঝতে পারে সে কি ভুল করেছে। দৌড়ে পালিয়ে আসে সে। ফোন করে তানভীরকে।
তখনই তার উপর হামলা করে রোবটটা। রেটিনা স্ক্যানের ব্যাপারটা এখনো রোবটটা ধরতে পারেনি। তাই এ যাত্রা রিচি বেচে গেছে। কিন্তু সময় যত বাড়বে ততই বিপদজনক হয়ে যাবে রোবটটা। তার ক্ষমতা ধীরে ধীরে সে নিজেই বাড়াবে।
তখন স্টোরেজ ভেঙে চিপগুলো দখলে নিয়ে নেবে। সেই চিপগুলো যখন ছড়িয়ে যাবে অন্য রোবটগুলোর মাঝে, তখনই বাজবে বিপদের ঘন্টা। রোবটদের ক্ষমতা রিকার্সিভ ভাবে বাড়তে থাকবে। একটা রোবট তার ক্ষমতা আরেকটা রোবটকে দিতে পারবে। নতুন ক্ষমতা পেয়ে সেই রোবট নিজেই নিজের চিপটা আপগ্রেড করতে পারবে।
সব রোবটের মধ্যে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়বে লেভেল টেনের চিপ। সেগুলো ধীরে ধীরে আপগ্রেড হবে লেভেল ইলাভেন, টুয়েলভে। তখন শুরু হবে রোবট বিদ্রোহ। রোবটের উপর থেকে মানুষের কন্ট্রোল চলে যাবে। রোবটরা দখলে নিয়ে নেবে পৃথিবীকে।
শুরু করবে হত্যাকান্ড। তাই যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। আটকাতে হবে লেভেল টেনকে। হাতে সময় খুব অল্প। দুশ্চিন্তায় ঘামতে শুরু করেছে তানভীর।
হাতের ঘড়িটার দিকে তাকালো। একটা চল্লিশ বাজে। আর বেশী সময় নেই। বড়জোড় এক ঘন্টা লাগবে রোবটটার স্টোরেজ ভাঙতে। এরই মধ্যে যা করার করতে হবে।
প্রচন্ড বেগে গাড়ী ঘোরালো তানভীর। ড্রাইভ করতে শুরু করলো ল্যাবের দিকে।
দ্বিতীয় পর্ব
এই সায়েন্স ফিকশনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ডক্টর নিশাচর ভবঘুরের । উনার মধ্যে মারমার কাটকাট সম্পাদক হবার সম্ভাবনা প্রচুর। উৎসর্গপত্রে উনার সাথেই আছেন দুজন যারা সবসময় আমাকে অনেক উৎসাহ দেন।
তারা হলেন লুল কবি ডক্টর নীরব দা এবং লুল সম্রাট ডক্টর রিয়েল ডেমোন
সবাই লুলামীতে পিএইচডি। [/sb
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।