আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! -ব্যস্ত ?
-একটু !
-তাহলে পরে ফোন দেই ?
-না ঠিক আছে বল ! এক স্যার ক্লাস নিয়ে মাত্র বের হল । আর একজন আসা পর্যন্ত কথা বলি ।
নিশি খুব ভাল করে জানে অপু খুব খুশি হয়েছে কথাটা শুনে । নিশি যখনই ওর সাথে কথা বলে কিংবা নিজ থেকেই ফোন করে তখন অপু অসম্ভব খুশি হয় ।
-দেখা করবা না ?
নিশির মনটা একটু খারাপ হয় ।
ছেলেটা প্রতিটা দিন কত আগ্রহ নিয়ে প্রশ্নটা করে । আশা করে আজকে নিশ্চই একটা পজেটিভ উত্তর আসবে ।
কিন্তু ও এমন কোন কথা শোনাতে পারে না ।
অপু তবুও রাগ করে না । একটু মন খারাপ করে কিন্তু মুখেও সেটা প্রকাশ করে না ।
বলে ঠিক আছে পাখি তোমার অসুবিধা হয় এমন কোন কাজ আমি করবো না ।
নিশি জানতে চাইল
-তুমি কবে যাবে ?
-কালকে সকালে !
নিশির মনটা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেল । এক সপ্তাহ আগে অপু ঢাকা থেকে এসেছে । নিশি একবারও ওর সাথে দেখা করার সুযোগ পায় নি ।
কি করে পাবে? ও যখন ট্রেনিংয়ে আসে প্রতি বারই বাড়ির কেউ না কেউ ওর সাথে আসে ।
ওকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যায় আবার গেট থেকেই নিয়ে যায় ।
-আজ দেখা করবে?
কিভাবে করবো বল ? আব্বা যে নিতে আসবে ?
-ও !
নিশি বুঝতে পারে অপুর মনটা খারাপ হয়ে গেছে । এতো দিন পর ও ঢাকা থেকে এসেছে কেবল ওর সাথে দেখা করার জন্য ।
আর ও কি করছে ? পরিবারের দোহাই দিয়ে ওর সাথে দেখা কয়ছে না ।
খুব কি অসম্ভব ওর সাথে দেখা করা টা ? নিশি বলল
-মন খারাপ করলে ?
-না ঠিক আছে ।
সমস্যা থাকলে তো মেনে নিতেই হবে । আর এখন এখন না হোক পরের বার নিশ্চই হবে । তবে ...
-তবে কি ?
-তোমার হাতটা ধরতে খুব ইচ্ছে করছিল পাখি ! একটু যদি ধরতে পারতাম !
নিশি লক্ষ্য করল ওর চোখে পানি চলে এসেছে ! বুকের ভিতরটা কেমন একটা খালি খালি লাগছে । ওর মনে ও যদি অপুর এই সমান্য ইচ্ছাটা পূরণ না করতে পারে তাহলে আজকেই ও দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে ।
নিশি এদিক ওদিক একটু দেখল ।
স্যার আসতে এখনও দেরী আছে মনে হচ্ছে । এই সুযোগটা কি কাজে লাগানো যায় ?
নিশি আর কিছু ভাবল না । আস্তে করে রুম থেকে বের হয়ে করিডোরের দিকে হাটতে লাগল ।
বারবার আল্লাহর কাছে দোয়া করতে লাগল যেন পেছন থেকে যেন কেউ ডাক না দেয় !
-আছো পাখি !
-এই তো আছি ।
-তোমাদের স্যার এখনও আসে নি ।
-নাহ । আচ্ছা শোন না একটা মজার কথা বলি ।
-বল ।
-জানো আমাদের এখানে একটা নতুন ভবঘুরে টাইপের একটা লোক এসেছে ।
-এতে মজার কি হল ?
অপু হাসল ।
নিশি বলল
-মজার হল আমাদের ট্রেনিং যেখানটাতে হয় ঠিক সেই ঘরের সামনে বসে থাকে চুপচাপ । আর আমরা যখন ট্রেনিং নিতে আসি ঠিক তখনই লোকটা আসে আর ট্রেনিং শেষে আমরা যখন চলে যাই ঐ লোকটাও চলে যায় ।
-বাহ বেশ মজার তো ! মনে হয় তোমাদের সাথে টেনিং নিতে চায় । তা কত দিন ধরে চলছে ?
-এই ছয় সাত দিন ধরে তো দেখছি ।
-তা দেখতে কেমন লোকটা ?
-কেমন করে বলি বল ! লোকটা যে এই গরমের ভিতরও চাদর মুড়ি দিয়ে বসে থাকে ।
-তাহলে তো খুব বেশি সুবিধার লোক মনে হচ্ছে না ।
-হুম ! আমারও তাই মনে হচ্ছে । আচ্ছা আমি এখন রাখি, কেমন ?
-এখনই রাখবে ?
-হুম বাবু রাখতে হবে ।
-আচ্ছা ।
নিশি ফোন টা কেটে দিল ।
ফোন টা কেটে দিতেই হল । কারন ঐ চাদর মুড়িদেওয়া লোকটার কাছে চলে এসেছে ও ।
পেছন দিক দিয়ে ঘুরে এসেছে যাতে লোকটা টের না পায় । নিশি খুব আস্তে করে লোকটার কাধে হাত রাখল ।
নিশি ঠিক করে এসেছিল খুব রাগ করবে, খুব বকাবকি করবে অপুর সাথে কিন্তু অপুর এরকম হাসি মুখে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ও কিছুতেই রাগ করতে পারল না ।
কেবল বলল
-এরকম টা কেন করলে ? এই যে প্রতিটা দিন তুমি সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তুমি এখানে বসে থাকো , কেন ? এটার কি কোন দরকার আছে ?
অপু কোন জবাব না দিয়ে কেবল একটু হাসল ।
-হাসবে না খবরদার । জবাব দাও । আমি তো প্রথমে বুঝতেই পারি নি । কালকে তুমি যখন চলে যাচ্ছিলে তোমার প্যান্টটা দেখে বুঝেছি ।
এরকম পাগলামো করার মানে টা কি ?
অপু আবার একটু হাসল । বলল
-হয়তো কোন মানে নেই কিন্তু এই যে তুমি আমার আশেপাসে আছো এর থেকে আনন্দের আর কি কিছু আছে আমার কাছে ! পাখি, আমি কেবল তোমার আসেপাশে থাকার জন্য কেবল সকাল থেকে বিকাল না সারাটা জীবন এখানে বসে থাকতে পারবো ।
নিশি আরো কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু কেন জানি বলতে পারল না । কেবল অপুর দিকেই তাকিয়ে রইল একভাবে ।
এই পাগল ছেলটাকে নিয়ে ও যে কি করবে !
কিভাবে দুরে থাকবে অপুর কাছ থেকে ! খুব ইচ্ছা হল অপুকে একটু জড়িয়ে ধরতে ।
কিন্তু সেই উপায় নেই এখানে ।
যে কারো চোখে পরে যেতে পারে ! তবুও অপুর হাত টা ধরল । অন্তত এই ইচ্ছাটা ওর পুরণ হোক !
ফেবু লিংক ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।