আমার লেখা জুড়ে আমার ভালবাসা ছাড়া আর কিছু নেই।
- দাঁত বের করলেই হাসি হয়ে গেল? প্রাণ থাকতে হবে হাসির মধ্যে।
একটা প্রাণ সমৃদ্ধ হাসি দিল শিশির। ক্যামেরা হাতে সেই প্রাণ সমৃদ্ধ হাসি সমেত ছবি তুলল ঢেউ।
- ইশ।
খুব সুন্দর হইছে রে তোর ছবিটা। একেবারে নায়িকাদের মত। বাংলাদেশের মোটা নায়িকা না। বলিউডের স্লিম নায়িকা।
মুখ ঘোমড়া করে শিশির তাকাল ঢেউ এর দিকে।
- ছবি তুলছিস কি আমাকে অপমান করার জন্য? আমি ছেলে মানুষ। আমাকে কেন নায়িকাদের মত লাগবে?
- নামটা যে মেয়েদের তোর।
- দেখ, এক কথা প্রতিদিন বলবি না। শিশির ছেলেদের নামই হয়। তোর নাম কি? ঢেউ।
জীবনে আমি এই নাম শুনি নায় কারও।
- exceptional নাম আমার। তুই তো ছেলে হয়ে মেয়েদের নাম নিয়ে ঘুরিস।
কিছু বলল না শিশির। কলেজে উঠার আগ পর্যন্ত ভালই যাচ্ছিল দিন।
কলেজে উঠার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর হৈমন্তী যত নষ্টের মূল। তার কেন হৈমন্তীর নাম না বলে প্রথমে শিশির বলতে হবে? হৈমন্তী হৈমন্তীই থাকত প্রথম থেকে, কি দরকার ছিল এসব লেখার? শুধু শুধু একটা নিরীহ মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলা। আর পরবর্তী আঘাত আসল নামের উপর, সাকিব ভাই এর কারণে। সাকিব আল হাসান। বিয়ে করলেন।
আর কোন নামের মেয়ে পেলেন না। শিশির নামের মেয়েকেই করতে হবে? তারা এই কাজগুলো না করলে কি আর এমন মেয়ে মানুষের নাম অপবাদ আসত?
কলেজ এ উঠার আগে পর্যন্ত ক্লাস এর পাজি ছেলেগুলো নাম দিয়েছিল শিশি, মানে বোতল। তাও মানা যেত। অতি মাত্রায় পাজিরা অবশ্য শিশি না বলে হিসু বলত। শিশি থেকে শিশু আর শিশু থেকে হিসু।
হিসু হল বাচ্চাদের মুত্র। তখন একটু গায়ে লাগত। মানুষের নাম কখনও মুত্র হয়? ছিঃ ছিঃ। কিন্তু কিছু বলা যেত না অতি মাত্রায় পাজিদের। এসব ও মেনে নেওয়া যায়।
কিন্তু একটা পুরুষ মানুষের গায়ে মেয়ে মানুষের নামের ছাপ, তা কোনভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব না। প্রেম করার বয়স হয়েছে এখন। বিয়ের বয়স নাইবা হোক। হবে তো এক সময় । এখন মেয়ে বলে ডাকলে গায়ে লাগারই কথা।
শিশির এবং ঢেউ দুজনের আজ প্রথম দিন দেখা। কিন্তু পরিচয় ৩ বছরের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে একটা সামজিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে ২ জনের মাঝে। বন্ধুত্বের সম্পর্ক। মধুর বন্ধুত্ব।
তবে সারাদিনের কথা বার্তা শুনে বোঝার উপায় নেই এরা বন্ধু। মনে হবে জনম জনমের শত্রু। সারাদিন ঝগড়া ছাড়া কিছুই করেনা দুজনে। তবে ঝগড়ার মাঝেও আনন্দ খুঁজে নেয়া যায়। এরা খুঁজে নিয়েছে।
সবাই পারে না। এদের হাসি মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই, এরা দুজনেই এখন ব্রেক আপের কষ্টে আছে। স্ব স্ব প্রেমিক প্রেমিকার সাথে বিচ্ছেদ পর্ব এরা শেষ করেছে। এখন বিরহ বেদনা ভোলার জন্য এই দেখা সাক্ষাৎ। শিশিরের ব্রেক আপ গতকাল আর ঢেউ এর টা বেশ কয়েক দিন আগে হলেও ক্ষত এখনও শুকায়নি।
পরিচয় ফেসবুকে দুজনের। তখন প্রথম দিকের ফেসবুক ব্যবহারকারী শিশির। বন্ধু নাই কোন। খা খা করে ফ্রেন্ড লিস্ট। লাজুক প্রকৃতির ছেলে হওয়ায়, মেয়েদের নাম দেখে প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতে পারত না।
কিন্তু একদিন কি মনে করে যেন ঢেউ কে পাঠাল রিকুয়েস্ট। এসেপ্ট হল। ইনবক্স এ কথা শুরু। নিয়মিত। পড়াশুনা বাদ দিয়ে দুজনের সারাদিন কথা হত।
কিভাবে কিভাবে যেন ভাল বন্ধু হয়ে গেল। ঢেউ অনেক সুন্দর করে কথা বলে, খুব মিশুক, ৩ দিনের দিন বলে আমি তোকে তুই করে ডাকব। বন্ধুকে তুমি ডাকতে ভাল লাগে না। আর শিশিরকে খুব ভাল ছেলেই লাগত ঢেউ এর। তাই ফেসবুকের কল্যাণে ফেস না দেখেই দুজন ভাল বন্ধু হয়ে গেল।
ফেস না দেখার কারণ হল, দুজনের কেউই প্রোফাইল পিকচার ব্যবহার করেনি। দুজনেই লাজুক কিনা, একজন প্রকৃতিগত ভাবে আর অন্যজন জন্মগত ভাবে। সারাদিন কথা হয়। সম্পর্কটা ভাল হবারই কথা। ঢেউ কোন স্ট্যাটাস দিলে তাতে হুমড়ি খেয়ে কমেন্টের বন্যা, এর মাঝেও শিশিরের কমেন্টগুলো আলাদা ভাবে দেখত ঢেউ।
আর শিশিরের স্ট্যাটাস এ ২ টা লাইক পরত, একটা শিশিরের একটা ঢেউ এর। কমেন্টও শুধু ঢেউ এরই থাকত। ঢেউ এর স্ট্যাটাস এ কেউ কোন খারাপ কথা বললে তেড়ে উঠত তার উপর শিশির। খেয়ে ফেলবে এমন অবস্থা। যদিও সত্যিকার অর্থে কখনও কারও গায়ে হাত তুলেনি শিশির।
তবে একবার মাইর খেয়েছে এক বন্ধুর হাতে। সেসব দুঃখের কথা শিশির ভুলে গেছে। এত ভাল বন্ধু, দুজন দুজনকে এত সাপোর্ট দেয়। স্বাভাবিক ভাবেই বন্ধু থেকে ভালতর বন্ধু তা থেকে সবচেয়ে ভাল বন্ধু মানে বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে গেল দুজন দুজনার। বন্ধুত্ব গুলো কিছু বুঝে হয় না।
কেউ কাউকে দেখেনি। ফোনে কথা হয় না। তারপরও কত ভাল বন্ধুত্ব।
- দে আমি দেখি ছবিটা। কেমন হইছে।
ক্যামেরাটা হাত থেকে নিয়ে ছবিটা দেখল শিশির। কিছুটা অবাক হয়ে তাকাল ছবিটার দিকে। তারপর বলল - আমি এত সুন্দর না। এত সুন্দর উঠছে কেন ছবি? আমি তো শ্যামলাঙ্গ।
- শ্যামলাঙ্গ? সেইটা কি?
- এই ধর তুই তো ফর্সা, তুই শ্বেতাঙ্গ।
কেউ আছে কৃষ্ণাঙ্গ। আর আমি হলাম শ্যামলাঙ্গ। কিন্তু ছবিতে আমাকে এত সুন্দর লাগছে কেন?
- আমি তুলছি না? বন্ধু ভালবাসা নিয়ে তুলছে তাই এত সুন্দর হইছে।
- ঢেউ, তোকে একটা কথা বলি?
-বল।
- আমি কি এতই খারাপ?
- না।
- তবে নীলা আমাকে ছেড়ে চলে গেল কেন?
- আরে ধুর, বাদ দে তো। চলে গেছে যেতে দে। সবাই সবার মর্যাদা বুঝে না। তুই তো কত্ত সুইট একটা ছেলে। কত্ত ভাল।
ভদ্র। ঐ জংলি, দজ্জাল মেয়ের কথা ভেবে কষ্ট পাস না তো।
- সুইট? যা। এটা মেয়েলি শুনায়। হ্যান্ডসাম বল।
- ওহ, সরি। তুই অনেক হ্যান্ডসাম। হইছে এখন? দুঃখ করিস না। আমি আছি না তোর পাশে। আমি তোকে ভাল বলতেছি তাতে হয় না তোর?
- হুম, তুই আমার অনেক ভাল বন্ধু রে।
- তুই ও আমার অনেক ভাল বন্ধু। তোর মত ভাল ছেলে, ভাল বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। সবাই আমার মত লাকি না।
ঠোঁট কামড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে শিশির। কি বলা উচিৎ বুঝছে না।
নীলা সারাটাদিন insult করে, তুমি এমন না, তুমি অমন, এই পার না, ঐ কর না। আর এই মেয়েটা সারাদিন ভাল বলে। শিশিরের মনে হয় না দুজনের একজন ও ঠিক বলে। ও এতটা খারাপ না যতটা নীলা বলে। আর অতটা ভালও না হয়ত যতটা ঢেউ বলে।
চট করে শিশির বলে দিল- তুই অনেক ভাল তো তাই সবাইকে ভাল ভাবিস। ভাল মানুষগুলো সবাইকে ভাল ভাবে আর নিজেদের ভাবে খারাপ।
একটা চোখ বন্ধ করে তাকাল শিশিরের দিকে তাকাল ঢেউ। বলল- বাবা, কে এটা? শিশির নাকি? আপনি এই কথা শিখছেন কই থেকে? বুঝছি,চল এখন। ক্ষুধা লাগছে খাব।
শিশির আর ঢেউ রাস্তার পাশের এক হোটেলে ঢুকে খিচুরি খাচ্ছে। শিশির ডিম খিচুরি। আর ঢেউ মুরগি খিচুরি। হঠাৎ বাম হাত দিয়ে শিশিরকে মারা শুরু করল ঢেউ- ঐ , শয়তান, কুত্তা, তুই আমার মুরগির মাংস চুরি করছিস কেন? ডিম দিয়ে খাইতেছিস, আমার টার দিকে নজর দিবি কেন?
হোটেল সুদ্ধ মানুষ তাকিয়ে আছে ঢেউ আর শিশিরের দিকে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে দুজন চুপ চাপ খেয়ে বের হয়ে আসল।
বের হয়ে ঢেউ এর ঝাড়ি শুরু - তুই এত্ত বড় চোর , তা তো আগে বুঝি নায়।
- তাই বলে তুই অত গুলা লোকের সামনে আমারে মারবি?
- চুরি করলি কেন তুই?
- ডিমটা পচা পচা লাগতেছিল, তাই তোর মুরগি থেকে একটু নিলাম।
- মিথ্যুক শয়তান। পচা পচা লাগতেছিল তোর? খাইছিস তো আবার। রেখে তো আসিস নায়।
- টাকা দিয়ে কিনছি না?
- কিপ্টুস, টাকা তো দিলাম আমি।
- ফুসকা যে আমি খাওয়ালাম,
- হুহ। কই ফুসকা আর কই খিচুরি।
- খাইলি তো ২ প্লেট।
- তুই আমারে খাওয়া নিয়ে খোটা দিস?
- তুই যে আগে দিলি? মাইর ও দিছিস।
মনে আছে। ঐ শোন না, চল লাচ্ছি খাই। গরম লাগছে খুব। লাচ্ছি খেলে ভাল লাগবে।
ঢেউ মুখ ঘোমড়া করে বলল - না, খাব না।
- কেন রে? কি হল?
- লাচ্ছি সিহাব অনেক পছন্দ করত। লাচ্ছি খেতে গেলে ওর কথা মনে পরবে।
- ও পছন্দ করত বলে তুই খাবি না? আরে ধুর, বাদ দে তো। চলে গেছে যেতে দে। সবাই সবার মর্যাদা বুঝে না।
তুই তো কত্ত সুইট একটা মেয়ে । কত্ত ভাল। ভদ্র। ঐ জংলি, দজ্জাল ছেলের কথা ভেবে কষ্ট পাস না তো।
ঢেউ মুখ তুলে শিশিরের দিকে তাকাল।
ফিক করে হেসে দিল। তুই আমার কথা আমাকে শুনাচ্ছিস? আমি যা বললাম তোকে তাই শুনালি উল্টা আমাকে? গাধা একটা। সান্ত্বনাও দিতে পারিস না কাউকে। চল।
- কোথায়?
- লাচ্ছি খাব।
ঢেউ এর সাথে হেঁটে যাচ্ছে শিশির। নীলা থাকলে হাতটা ধরত আলতো করে। সেদিন রাতে কয়েকবার কল করল নীলাকে শিশির। বার বার ওয়েটিং। মন মেজাজ সব প্রচণ্ড খারাপ লাগছিল।
কার সাথে এত কথা বলছে যে শিশিরের ফোনটাও ধরা যাবে না। এত important সে। শিশিরের থেকেও বেশি? শিশির তো কখনও এমন করে না। নীলা ইদানীং বদলে গেছে। মেয়েটা সবসময় অবহেলা করে।
শিশির তো সব কিছুর থেকে বেশি নীলাকে গুরুত্ব দেয়। আর নীলা এমন করে যেন শিশির ওর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বহীন জিনিস। ধ্যাৎ জিনিস না। শিশির কি জিনিস নাকি? গুরুত্বহীন মানুষ। প্রায় ১ ঘণ্টা পর ধরল নীলা।
- কি ব্যাপার? ফোন ধর না কেন?
- দেখছ না কথা বলছি, এত বার কল করার কি দরকার? কথা শেষ হলে আমিই তো কল করব তোমাকে।
- কার সাথে কথা বলতেছিলা?
- আমার এক ফ্রেন্ড এর সাথে।
- ছেলে না মেয়ে?
- আজব। তোমাকে এত কিছু বলতে হবে এখন আমার?
- বল।
- আমি এত জবাবদিহি করতে পারব না।
অন্য কিছু বলার থাকলে বল নয়ত রেখে দাও। ঘুম পাচ্ছে।
- এতক্ষণ কথা বললা, তখন ঘুম পায় নায়?
- ধাৎ।
ফোনটা কেটে দিল নীলা। শিশির ফোন করে চলছে।
নীলা ধরছে না। হাত পা কাপছে রাগে শিশিরের। মাথাটা কেমন যেন ভন ভন করে ঘুরছে। শিশিরের রাগ অনেক কম। সহজে রাগ উঠে না।
আর রাগ উঠলে এমন পাগলের মতন হয়ে যায়। নীলা কল রিসিভ করছে না। নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। এই মুহূর্তটাতে যে কারও ই অসহায় লাগবে। কিছু করার নেই।
কিছু না করার পেয়ে শিশির মেসেজ করল নীলাকে - কল রিসিভ কর। রাগে আমার হাত পা কাপছে। আমি কিন্তু খারাপ কিছু করে ফেলব।
তারপর আবার কিছুক্ষণ কল করল। ধরল না।
মাঝে একবার কেটেও দিল, তার মানে জেগে আছে নীলা। ইচ্ছা করে ধরছে না। খুব কান্না পাচ্ছে। ছেলেদের কাঁদতে নেই। কিন্তু ভালবাসা ঘটিত বিষয়ে দুঃখ পেলে সব ছেলে মেয়েই বোধহয় কাঁদে।
রাগে শরীর কাপছে একদিকে অন্য দিকে চোখ থেকে পানি পরছে।
হঠাৎ মোবাইল ভাইব্রেশনে চমকে উঠল শিশির। নীলা কল করেছে নিশ্চয়। না, একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এসেছে। গলাটা যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা রেখে , কান্না যেন না বুঝে সেভাবে রিসিভ করে হ্যালো বলল শিশির।
ওপাশ থেকে একটা মেয়ের কণ্ঠ। প্রথমে মিষ্টতা থাকলেও হ্যালো এর মধ্যে। একটু পরেই চিৎকার করে উঠে ওপাশ থেকে- শয়তান আমারে চিনিস নায়? আমি আমি।
শিশির জানে এমন করে কথা বলার মানুষ শুধু ঢেউ ই।
- হ্যাঁ, চিনেছি।
কেমন আছিস?
- ভাল না। তোরে অনেক মিস করছি এতদিন। আমার সুইট দোস্তটারে এত দিন কত্ত মিস করছি বলে বুঝাতে পারব না। তুই তো একটা বদমাইশ। আমার কথা একবারও ভাবিস নায়, আমি খুব ভাল করে জানি।
- বলছে তোরে। আমিও অনেক মিস করছি তোরে।
- আর বলিস না। বাসায় একটু ঝামেলা হল, এক পোলায় সারাদিন ফোনে ডিস্টার্ব করে। একদিন আম্মা ধরছে ফোন।
আম্মারে জান টান ডাইকা সেই অবস্থা। পরে আর কি। মোবাইল নিয়ে গেল। তোর সাথে কথা বলা বন্ধ। ফেসবুকেও যাওয়া হয় না।
তাই এতদিন যোগাযোগ করতে পারি নায়।
ঢেউ ওপাশ থেকে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে, শিশিরের নীরব কান্নার শব্দ। নাক টেনে পানি উপরে নেবার শব্দ।
- শিশির? কাদতেছিস তুই? আরে তুই এত ইমোশনাল ছেলে তা তো জানতাম না। এতদিন আমাদের কথা হয় নি তাই কান্নাকাটি করতেছিস?হাহা।
- চুপ। সে জন্য কাঁদবো কেন?
- তাইলে কি হইছে? বল। তারাতারি বল। আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড না? আমার বন্ধুটাকে কে কষ্ট দিছে?
- নীলা। ওকে ফোন দিচ্ছি ধরে না।
এরপর সব বলল ঢেউ কে। অনেক দিন পর ঢেউ এর সাথে মোবাইলে কথা হচ্ছে। প্রথম বার কথা হয়, ঢেউ এর জন্মদিনে। মেডিকেল এডমিসন টেস্ট এর জন্য পড়াশুনার চাপ থাকাতে বেশ কয়েকদিন ফেসবুকে যায় নি শিশির। তারও আগে থেকে ঢেউ হাওয়া।
তো এডমিসন টেস্ট এর ৩ দিন আগে, ঠিক আজকের মত অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন।
- হ্যালো কে?
- তোর খালাম্মা।
- ও কেমন আছেন খালাম্মা? আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। তারপর কি খবর তোর?
- জি খালাম্মা ভাল।
শিশির মনে মনে ভাবছে, শিশিরের ২ খালাম্মাই তো ওকে তুমি করে বলে। হঠাৎ তুই তুই করছে কেন?
- শুনলাম, তুই নাকি ফেসবুকে মেয়েদের সাথে সারাদিন টাংকি মারিস?
একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল শিশির। খালাম্মার মুখে এসব কি কথা?চোখ বুলালো একটু নাম্বারের দিকে। এয়ারটেল নাম্বার। খালাম্মা গোত্রের মানুষরা গ্রামীনফোনের বিশাল সমর্থক।
এয়ারটেল নাম্বার এদের হবার কথা না। শিশির ফোন কেটে দিল। কতক্ষণ পর আবার কল করল। ভয়ে ভয়ে ধরল শিশির। ওপাশ থেকে চিৎকার করে বলে উঠল- শিশির, তুই ভয় পাইছিস।
হিহি। আমি আমি। আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড।
- কে ঢেউ?
- কেন? আরও কাউকে বানাইছিস নাকি? একেবারে খুন করে ফেলব।
- আরে না।
তুই তো তোর জায়গায়ই আছিস।
- তাই যেন থাকি সবসময়। ঐ কুত্তা, তুই আমারে উইশ করিস নায় কেন জন্মদিনে? আজ আমার জন্মদিন জানিস না তুই? তোর নাম্বার ফেসবুক থেকে নিয়ে কল করছি আমি। ফেসবুকেও পাই না তোরে।
- ওহ, সরি রে।
একদম মনে ছিল না।
এরপর অনেকক্ষণই কথা হয়েছিল। বলতে বলতে শিশির বলেছিল ওর নতুন সম্পর্ক এর কথা নীলার সাথে। আর ঢেউ বলল ওর সিহাবের সাথে সম্পর্ক ভাঙ্গনের কথা। নীলার সম্পর্কে জানল ঢেউ।
শুভ কামনা করল ওদের। এরপর আর ফোনে কথা হয়নি দুজনের। ঢেউ নিজে থেকেই বলে, আমার সাথে কথা বলিস শুনলে নীলা রাগ করবে। একটা সম্পর্ক হবার পর অন্য কোন মেয়ে বা ছেলের সাথে কথা বলা কোন বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডই সহ্য করতে পারে না। মাঝে মাঝে ফেসবুকে কথা হত শুধু।
তাও ঢেউ ওভাবে কথা বলত না অত আগের মত। হঠাৎ করে হাওয়া হয়ে গেল। ফোনেও পাওয়া যায় না, ফেসবুকেও না।
আজ এতদিন পর আবার কথা। খুব কষ্টের সময়টাতে কাছের বন্ধুটা কি করে বুঝল এখন ওকে দরকার?
নীলার জন্য কষ্ট পেতে মানা করল ঢেউ।
বলে দিল নীলা যেমন করে ওকেও তেমন করতে। সবসময় গাধার মত সব মেনে না নিতে।
- শোন, শুধু কষ্ট পাবি কেন? পারলে কাউকে কষ্ট দিবি। তুই একটা পুরুষ মানুষ। গাধার মতন সব মেনে নিবি কেন? নীলা যা বলবে তাই শুনবি আর নীলা তোর কিছু শুনবে না এটা কোন কথা হল?
- ও কয়েকদিন ধরেই এমন করছে।
আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না। কার সাথে যেন কথা বলে। জিজ্ঞাসা করলে কিছু বলে না। ভাব ধরে ফোন রেখে দেয়। মনে হয় আমি কোন রাস্তার পোলাপান, তেমন ব্যবহার করে আমার সাথে।
আমার সাথে প্রেম করে কিন্তু ওর কিছুই আমার সাথে share করতে চায় না। আমি ওকে নিয়ে সারাক্ষণ ভাবি, আর ও আমাকে মনেই করে না। কথায় কথায় বলে তোমার ইচ্ছা হলে থাক, না হলে থেকো না।
- তা তুই কেন ঐ মেয়ে নিয়ে পরে আছিস?
- ভালবাসি যে।
- ভালবাসিস তাতে কি? তোর নিজের একটা personality আছে।
be brave. আর কতদিন এমন গাধা থাকবি। তুই এত বোকা কেন? বুঝতেছিস না ও তোকে এড়িয়ে চলছে? ও ভাল থাকার কিছু পেয়েছে তাই তোর সাথে এমন করছে। ওকে সরাসরি বলবি যে তুই যেভাবে চাস ও ওভাবে চলতে পারবে কিনা। যদি পারে তো ভাল। না পারলে good bye বলে চলে আসবি।
প্রেম করতেই হবে ঐ মেয়ের সাথে এমন কথা নাই। তুই ভাল ছেলে, ওর থেকে ভাল মেয়ে পাবি জীবনে।
- আমি ওকে কি বলব? ঐ তো আমাকে সারাদিন বলে এভাবে চলতে ওভাবে চলতে।
- এখন থেকে তুই বলবি। দে এক্ষনি কল দে ওকে।
- মোবাইল রিসিভ করে না।
- তাহলে লক্ষ্মী ছেলের মতন সুন্দর একটা ঘুম দে এখন। সকালে উঠে ওর সাথে বোঝাপারা করবি , ঠিক আছে? good night.
- আচ্ছা, good night.
শিশিরের ভিতরে এখন অন্যরকম ভাললাগা কাজ করছে। কিছুক্ষণ আগের কষ্টগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। কিছু মানুষ জীবনে আসে জীবনটাকে এলোমেলো করে দিতে, আর কিছু মানুষের কাজ তা সাজিয়ে দেওয়া।
সাজিয়ে দেওয়ার কাজটা যারা করে তারা বিনিময়ে কিছুই চায় না। নীলার এলোমেলো করে দেওয়া কষ্ট গুলো কত সহজে একটা বন্ধু ভুলিয়ে দিল।
শিশির একটা মেসেজ করল নীলাকে- তুমি কারও সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতে পারলে, আমিও পারি। তুমি যার সাথে বল তার নাম বলনা। আমি তোমার মত ভিতু না।
আমি আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু ঢেউ এর সাথে কথা বলছি। তোমার সাথে ফাইনাল কিছু কথা আছে। এমন ভাব আমার একদম পছন্দ না। কাল আমরা দেখা করছি বিকালে। শেষ কথাগুলো বলার জন্য।
তোমার ভার্সিটির সামনে আমি অপেক্ষা করব।
মেসেজ দিয়ে খুব শান্তি লাগছে শিশিরের। একটা সম্পর্কের অবসান হয়ত হয়ে যাবে তাতে একটুও মন খারাপ হচ্ছে না। বরং খাটের উপর দাঁড়িয়ে কয়েকবার বিজয়সুচক নাচ দিল শিশির। এই নাচ কাউকে দেখান যায় না।
ব্যক্তিগত নাচ।
পরদিন বিকালে। নীলা এবং শিশির সামনাসামনি দাঁড়ানো। শিশির গরমের মধ্যেও ফুল হাতা শার্ট এর হাতা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।
কথা বলা নীলাই শুরু করল।
- তুমি কাল রাতে সত্যি ঢেউ এর সাথে কথা বলছ?
- হ্যাঁ।
- কেন?
- তুমি কারও সাথে বলতে পারলে আমি পারব না কেন?
- তুমি কি sure আমি কোন ছেলের সাথে কথা বলছি?
- এত রাতে ঘণ্টা খানেক ধরে কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে যাবে না। আর তুমি আমার সাথে কথা বললেই পারতা রাতে। তাহলে আর ঢেউ এর সাথে আমার কথা বলতে হত না।
- আমি তোমাকে কাল রাতে একটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে বার বার মানা করার পরও তুমি ওটা নিয়ে কথা বলতেছিলা তাই আমি রেখে দিছি।
-ভাল করছ। আমি এখন থেকে তোমার কোন কথা শুনতে পারব না।
- মানে ? তোমার মাথা ঠিক আছে? কি বলতেছ তুমি?
মাথায় একটা হাত দিল শিশির।
- হ্যাঁ একদম ঠিক আছে। আগের জায়গায়ই তো আছে।
- তুমি আমার সাথে ফাজালামি করতেছ?
রাগে রাগে বলল কথাটা নীলা।
- না,আমি ফাজিল না। কেন ফাজলামি করব? আমি অনেক ভদ্র একটা ছেলে। আমাকে আমার বন্ধুরা কয়েকজন বলদ ডাকে। বলদ শুধু মাত্র বোকাসোকা ও ভদ্র ছেলেদেরই ডাকে মানুষ।
- তুমি বলদ?
- না, মানুষ। ভদ্র মানুষ।
- নিজের প্রশংসা নিজে করছ?
- তুমি পারলে আমিও পারি।
- কে শিখিয়ে দিছে এসব? তোমার ঢেউ বান্ধবী?
- আমি বাচ্চা ছেলে না যে আমাকে কারও কিছু শিখিয়ে দিতে হবে। আমি অনেক সহ্য করেছি।
আমি এখন কঠোর। আর কিছু মুখ বুজে সহ্য করব না।
জামার হাতার বোতাম ২ টা খুলে একটা করে ভাঁজ করে বলল শিশির। চোখে মুখে কঠোর হওয়ার একটা ভাব।
- কি সহ্য করবা না তুমি শুনি?
- এত দিন যা সহ্য করছি।
এখন থেকে তুমি আমার সব কথা শুনবা। আমি যেভাবে বলব সেভাবে চলবা। আমার কাছে সব বলতে বলে। এতদিন লুকিয়ে লুকিয়ে যা করছ কিছু করতে পারবা না এখন থেকে। কথা বলার মাঝে মোবাইল কেটে দিতে পারবা না।
তারপর ....
- ওহ, আমি এত কিছু মানতে পারব না।
- আমিও পারব না তাহলে। তুমি যেমন করবা আমিও তেমন করব।
- মানা করছে কে? যাও যা খুশি কর, তোমার মত ছেলের সাথে আমার না থাকলে কিছুই হবে না।
- আমার ও তোমার মত মেয়ের সাথে না থাকলে কিছু হবে না।
মেয়ের অভাব নাকি বাংলাদেশ এ। শুধু বাংলাদেশ কেন, বিদেশী মেয়েরও অভাব নেই।
- কি? এত্ত বড় কথা? তোমার মত ছেলের সাথে আমি প্রেম করছি এটাই তো তোমার ভাগ্য। তোমার থেকে কত গুন ভাল ছেলে আমার পিছনে ঘুরে।
- এহ, প্রেম করতে আসছিল কে? আমি না তুমি?
- তখন কি আর বুঝছি তুমি এমন একটা মিনমিনা শয়তান।
- আমি শয়তান? তুমি মিনমিনা।
- হুহ। আমার সাথে আর কখনও যোগাযোগ করার চেষ্টা করবা না। i hate you.
বলে উঠে চলে গেল নীলা। শিশিরের হঠাৎ মনে হল হেরে গেল নাকি।
তাই দূর থেকেই চিৎকার করে বলল- hate you too.
ভালবাসা ভাঙ্গনে কোন প্রকার কষ্ট লাগছে না শিশিরের। ঢেউ কে ফোন করল এসে। সব শুনে ঢেউ বলল- এই না হলে ছেলে মানুষ। আমার যোগ্য বন্ধু। একদম কষ্ট পাবি না।
ভেবে নিবি যা হয়েছে ভালোর জন্য হয়েছে। যে তোকে বুঝে না তার সাথে থাকার কোন মানে হয় না। তোর জীবনে ওর চেয়ে অনেক ভাল মেয়ে আসবে।
- তুই এত সুন্দর করে বলিস, কষ্ট লাগার উপায় আছে বল? আর প্রেম করার কি দরকার? তোর মতন একটা বন্ধু থাকলেই আর কিছু লাগে না।
- এইতো লক্ষ্মী ছেলে।
কত্ত বুঝে। শিশির, চল না কাল আমরা দেখা করি। সারাদিন ঘুরি।
- কাল? আচ্ছা ঠিক আছে।
আজই প্রথম দেখা।
লাচ্ছি খাচ্ছে দুজন। লাচ্ছির কারণে সিহাব কষ্ট হচ্ছে না ঢেউ এর, আর গতদিনের প্রেম ভাঙনেও নীলা কষ্ট হচ্ছে না শিশিরের।
ঢেউ শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলল- শিশির, কথা শোন একটা।
- হ্যাঁ বল।
- আমাকে কাল একজন প্রপোস করছে।
- কে?
- কায়েস কে চিনিস না? আমার ফ্রেন্ড লিস্টে আছে।
- ঐ কায়েস? দুনিয়ার বদ। একদম রাজি হবি না। মেয়ে দেখলেই ওর প্রেম করতে ইচ্ছা করে। তোর মনে না থাকতে পারে আমার আছে, ঐ ছেলে তুই যখন প্রথম ছবি দিলি ফেসবুকে কেমন একটা কমেন্ট করেছিল।
সব মেয়েই ছবিতেই ও কমেন্ট করে বেড়ায়। আমার এক ফেসবুক ফ্রেন্ড কেও কয়েকদিন আগে প্রপোস করল। আরও কয়েকজনকে করছে, আমার কাছে খবর আছে।
- বুঝছি, আমাকে বলল আর আমি রাজি হয়ে গেলাম? তুই আমাকে সরাসরি বললেই পারতি ওর সাথে না করতে, তোর কথা কি আমি ফেলতাম? এত্তগুলো কথা বানিয়ে বলতে হয়?
- ছেলে তো ভাল না।
- হ্যাঁ, আমিও জানি।
ছেলেটা ভাল না। চল এখন। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। কাল আবার দেখা করবি কিন্তু। করবি না বল।
শিশির মাথা নেড়ে বলল- হ্যাঁ করব।
- তুই অনেক ভাল রে।
- তুইও অনেক ভাল।
চারপাশটা অন্ধকার হয়ে আসছে। সূর্য ডুবে গেছে।
দুজন অনেক আপন মানুষ পাশাপাশি হেঁটে চলছে। যারা দুজন দুজনকে অনেক বেশি ভাল করে চিনে। কষ্ট পেলে, দুঃখ এলে সাহস দিতে পারে, পাশে থাকতে পারে। কষ্টের সময় সান্ত্বনা, সাহস সবাই দিতে পারে, কিন্তু পাশে কম মানুষই থাকে। ঢেউ আস্তে করে শিশিরের হাতটা ধরল।
শিশির চমকে দাঁড়াল। ঢেউ মুখ তুলে বলল- শিশির, বন্ধু হয়ে থাকবি তো সবসময় পাশে? আমাকে ছেড়ে চলে যাবি না তো? নীলার মত কাউকে পেলে ভুলে যাবি না তো আমাকে? তুই আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু, তোর মত এত বেশি বিশ্বাস আমি কখনও কাউকে করিনি। তোর মত বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তোকে আমি চোখ বুজে বিশ্বাস করতে পারি, অন্য কাউকে পারি না। এমন বন্ধু বারে বারে আসে না জীবনে।
আমার পাশে থাকবি না বল।
শিশির চুপ করে আছে। শিশির মানুষটাই এমন। কাউকে খুব বেশি কিছু বলতে ইচ্ছা করছে তখন মুখ থেকে কিছুই বের হয় না। এখন মেয়েটাকে অনেক কিছু বলতে মন চাচ্ছে, কিন্তু মুখ থেকে বের হচ্ছে না কিছু।
শুধু আস্তে করে বলল- হ্যাঁ, থাকব। তুই ও থাকিস।
- যা, গাধা, তোকে রেখে আমি কোথাও যাব না। এমন বন্ধু হয়ে সারাজীবন থাকব।
বাসায় আসার পর ঢেউ এর কি যেন হল।
বড্ড বেশি একা লাগছে। আজকের দিনটা কত্ত ভাল ছিল। কত্ত ভাললাগার অনুভুতি। বার বার পেতে ইচ্ছা করে এমন অনুভুতি। বিছানায় শুয়ে আগামী দিনের জন্য কিছু সিদ্ধান্ত নিল।
কালকেই করবে সেগুলো।
সকাল সকাল শাহবাগ গিয়ে ফুলের দোকান থেকে কতগুলো গোলাপ কিনল। মেয়েরা ফুল কিনে না। ছেলেরা কিনে মেয়েদের দেয়। কিন্তু মাঝে মাঝে উল্টা হয়।
আজ ঢেউ কিনল। ফুল গুলো নিয়ে ঢেউ TSC তে বসে আছে । ঢেউ অনেক আগে চলে এসেছে। এত আগে আসার কথা না। শিশির ঠিক সময় মত চলে আসবে।
ফুলগুলো বার বার দেখছে ঢেউ। কত সুন্দর লাগছে দেখতে। শিশির আর ওর বন্ধুত্বের মতই সুন্দর।
শিশির এসে ঢেউ এর পাশে বসল। মুখ ঘোমড়া।
- কিরে, কি হইছে? মুখের এই অবস্থা কেন? মনে হচ্ছে কত দুঃখ কষ্টে আছিস।
- কিছু নারে। সকালে নীলা ফোন দিয়ে সরি বলল। মাফ চাইল। বলল, আমার কাছে ফিরে আসতে চাচ্ছে।
শিশিরের মুখ ঘোমড়া ভাব এখন ঢেউ এর মুখে ভর করল। হঠাৎ করে খুব কষ্ট হচ্ছে। বুকের ভিতরটায় চিন চিন ব্যথা করছে। কিন্তু এমন তো হবার কথা না। ঢেউ এর চোখের কোণে একটুখানি পানিও জমেছে।
- তুই রাজি হয়ে গেছিস, তাই না?
ঢেউ মুখ নিচু করে করে কথাটা বলল। শিশিরও অন্য দিকে তাকিয়ে বলে যাচ্ছে।
- না, মানা করে দিছি।
- সত্যি?
- হ্যাঁ, আর সম্ভব না। ভালবাসা ছাড়া থাকলে কিইবা হয়? ভালবাসায় জড়ালে এই নিয়ে ঝগড়া ঐ নিয়ে ঝগড়া।
আবেগ অনুভুতি গুলো জটিল হয়ে যায়। নিজের আপন সত্ত্বা বলে কিছু থাকে না। ভালবাসলেই কষ্ট পেতে হয়। নিজেকে অসহায় মনে হয় মাঝে মাঝে। ভালবাসার মানুষের উপর রাগ করে থাকা যায় না, রাগ দেখান যায় না, আবার সবকিছু সহ্য ও করা যায় না।
বেশির ভাগ ভালবাসাই কেমন যেন মোহের উপর। মোহ কেটে গেলেই শেষ। কষ্ট পেতে ভাল লাগে নারে আমার। তাই একটু ভাল থাকি না হয়। দেখ তোর আমার সম্পর্কটা কত সুন্দর।
কোন জটিলতা নেই, অবিশ্বাস নেই, মোহ নেই, তা কাটার ভয় নেই। সারাজীবন পাশাপাশি হাঁটলেও কখনও খারাপ লাগার ব্যাপার নেই। কষ্ট পাবার ব্যাপার নেই। মান অভিমান হলেও ভাঙ্গনের ব্যাপার নেই। আমারও কখনও মনে হবে তুই দেখতে একদম পচা তোর সাথে থাকা যায় না, বা তোর ও কখনও মনে হবে না তোর আমার থেকে হ্যান্ডসাম ছেলের সাথে থাকা উচিৎ।
প্রেমের সম্পর্ক break up হয়। বন্ধুত্বের সম্পর্ক না।
ঢেউ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথাগুলো শুনছে।
- শিশির, আমরা bf gf হতে পারি না?
- আরে আমরা তো bf gf ই। আমি তোকে ভালবাসি, তুই বাসিস।
bf= best friend, gf= great friend. বিপদে পাশে আছি, কষ্টে আছি, আনন্দে আছি। সবসময় আছি। বল আছিস না?
- হ্যাঁ, তাইতো আমরা তো bf gf ই। আরও কিছু বলনা, আজ তোর কথা শুনতে ভাল লাগছে অনেক।
- কি বলব?
- বল যা ইচ্ছা।
শিশির কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবল। তারপর আবার শুরু করল- দেখ, নীলা আমার x-gf, সিহাব তোর x-bf. কিন্তু আমরা যে bf gf তার আগে x বসা সম্ভব না। সারাজীবনের জন্য আমরা। বন্ধুত্ব কখনও ভাঙ্গে নারে। এটা অনেক সুন্দর সম্পর্ক, অনেক পবিত্র একটা সম্পর্ক।
ঢেউ ফুলগুলোর দিকে তাকাল। অনেক সুন্দর লাগছে দেখতে ওদের সম্পর্কের মতই সুন্দর। তাইতো প্রেমিক প্রেমিকা হয়ে কেন থাকতে হবে? প্রেমিক প্রেমিকা বিহিন জীবন কি খুবই খারাপ। না তো ঢেউ এর তো একদমই খারাপ লাগছে না। বন্ধুটাকে নিয়ে কত ভাল আছে? কয়টা প্রেমিক প্রেমিকা এত সুখে আছে।
হয়ত কেউ আছে, হয়ত নেই। ভালবাসা অন্য জিনিস। মুখ ফুটে বার বার দিন রাত ভালবাসি বলে ২ দিন পর কষ্ট দিয়ে চলে গেলেই ভালবাসা হয় না। আবার বুকের ভিতর ভালবাসাটা রেখে কারও পাশে সারাজীবন কাটিয়ে দেবার মধ্যেও ভালবাসা আছে। যে ভালবাসা খুঁজে নিতে হয়।
সবাই পায় না। ঢেউ এর মত সবাই ভাগ্যবান না।
ঢেউ ফুলগুলো শিশিরের দিকে বাড়িয়ে দিল।
শিশির বলল- কি এগুলো?
- গাধা, ফুল ও চিনিস না?
- চিনি,কিন্তু আমাকে হঠাৎ...
- বন্ধুকে দেওয়া যায় না ভালবেসে?
-যায়।
শিশির ফুল গুলো নিল।
ঢেউ ক্যামেরাটা বের করে ফুল হাতে শিশিরের একটা ছবি তুলল।
-ইশ খুব সুন্দর হইছে রে। একেবারে নায়িকাদের মত।
বলে ঢেউ হাসছে, আর শিশির মুখ ঘোমড়া করে তাকিয়ে আছে। দুজনের মাঝে বোঝা পারার একটা ব্যাপার আছে।
ভালবাসার সম্পর্ক। এই ভালবাসায় কোন জটিল আবেগ নেই। এটা বন্ধুত্ব, অনেক পবিত্র একটা সম্পর্ক। ঢেউ অনেক কিছু বলার আশা নিয়ে এসেছিল, কিছু পাবার আশায় এসেছিল ফুলগুলো নিয়ে। কিন্তু তা পায়নি।
এর চেয়েও বড় কিছু পেয়ে গেছে। কিছু কথা বুকের ভিতর রেখে দিতে হয়, ভাল কিছু পাবার জন্য। এই সম্পর্কটা অনেক সুন্দর। সম্পর্কে জটিল আবেগ আনার কি দরকার?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।