আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্রামীণ ভালবাসা আমার লেখা গল্পটি ভালবাসা সংকলনে প্রকাশিত

বড়াইগ্রাম(নাটোর) উপজেলার সমস্যা সম্ভাবনা নিয়ে এই ব্লগে আলোচনা করা হবে। বেশী করে নিমগাছ লাগান, আপনার পরিবেশ ভাল থাকবে।

নিজের কথাঃ যৌবনের প্রারম্ভের ভালবাসাটি ছিল নিখাদ খাঁটি। কামনা ছিল না, ছিল না কোন লালসা। শুধু ভিন্ন ধর্মের কারণেই আমাদের ভালবাসার মিলন ঘটেনি।

অথবা আমি কাপুরুষ বলে। দোয়া করবেন সবাই সে যেখানেই থাকুক ভাল থাকুক। ভালবাসা কোন জাত ধর্ম মানে না। ভাল মন্দ কোন কিছু নির্ধারণ না করে মনের গভীরে অজান্তেই কাউকে না কাউকে স্থান করে দেয়। কিভাবে যে সে আমার মনের অজান্তে শরতের শিউলী ঝরা দিনে মনের গভীরে স্থান করে নিল বুঝতে পারলাম না।

আমাদের জাত ধর্ম আলাদা, আমরা একই এলাকায় বসবাস করি কিন্তু আলাদা সমাজ ব্যবস্থায়, আলাদা ধর্মীয় বিশ্বাসে। কিন্তু ভালবাসা আমাদের কাছে নিয়ে আসে। ভুলিয়ে দেয় জাত ধর্ম অনুশাসন। সে আর আমি যেন যুগ যুগ ধরে একে অপরকে চিনি। এভাবেই শুরু হলো আমাদের কিশোর থেকে যৌবনে পর্দাপনের শুরুটা।

আমরা একে অপরকে উপলদ্ধি করলাম গভীরভাবে। আমরা একদিন দেখা না করে থাকতে পারি না। অনেক কষ্ট করে হলেও তার সাথে দেখা করি। সামাজিক বাধা, অভিভাবকের চোখ রাঙানী কোন কিছুই আমাদের দমাতে পারে না। বন-বাদাড়ে, মেঠো পথে আমরা সুযোগ পেলেই দেখা করি।

তার সৌন্দর্য মুগ্ধ করার মতোই। সবচেয়ে সৌন্দর্য ছিল তার মনের বিশালতায়, আমি অনেক সময় বলতাম কে বেশী ভালবাসি? তুমি বেশী না আমি! আমি তার কাছে বার বার হার মানতাম। আর এই হার মানাতেই ছিল আনন্দ। আকাশে চাঁদ উঠলে যেমন সবাই দেখতে পায়, তেমনি আমাদের অসম ভালবাসাও প্রকাশিত হয়ে গেল সমাজের কাছে। একদিন কাকী মা আমাকে ডেকে বললেন, বাবা তোমাকে দোষ দিয়ে কোন লাভ নেই, আমার নিজের ছুরি আমার পেট কেটেছে।

কথাটি বুঝতে আমার বেগ পেতে হলো না। তিনি নিজের মেয়েকেই দোষারোপ করছেন। আমাদের দেখা সাাত সীমিত হয়ে গেল। রাতের আঁধারে ওদের বাড়ির পিছন দিকের জঙ্গল দিয়ে আমি তার পড়ার ঘরে জানালার কাছে দেখা করি। কোন কথা বলা যায় না, তার বাবা বারান্দায় জল চৌকিতে শুয়ে থাকেন।

শুধু চোখের দেখা-অশ্র“পাত আর নিরব ভালবাসা। ছোট্ট চিরকুট লিখে ওর হাতে রাখি, আমাকেও দেয় তার লেখা। কতবার যে সেগুলো পড়া হয়েছে বলতে পারব না। এরই মধ্যে আমার ভার্সিটিতে ভর্তি যুদ্ধে নামতে হলো। অনেক কষ্ট করে রাত জেগে পড়াশোনা করলাম, সে আমাকে সাহস আর প্রেরণা দিল।

আমাদের দেখা সাাতের সময় কমে গেল। আমি ইচ্ছে থাকলেও তার সাথে দেখা করতাম না, যদি পড়াশোনায় তি হয় এই ভেবে। একই বছর সে ভাল পজিশন নিয়ে এসএসসি পাশ করে নাটোর শহরে সরকারী মহিলা কলেজে ভর্তি হলো। যাক, এবার আমাদের আর কোন সমস্যা হবে না। ভর্তির পরে বেশ কয়েকবার দেখা হলো।

সরকারী মহিলা কলেজের কঠোর নিয়ম, বাবা ভাই ছাড়া ছাত্রীদের সাথে কারও দেখা করার বিধান নেই। তবুও সুদুর রাজশাহী হতে আমি আসি দেখা করার জন্য। একটু দেখা হয়, কথা বলা যায় না। এই দেখাতেই মনে হয় আকাশে চাঁদ হাতে পেয়েছি। ভার্সিটিতে নতুন কাস অনেক নতুন অভিজ্ঞতা কিন্তু আমার মন পড়ে রয় নাটোরে।

কাসে মন বসে না। ভয়াবহ ছাত্র সংর্ঘষে অনির্দিষ্টকালের জন্য ভার্সিটি বন্ধ করে দেয়া হলো। আমি পড়লাম মহা ফাপড়ে। বাড়িতে ফিরে কিছুতেই তার সাথে যোগাযোগ রা করতে পারলাম না। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম এখন সে হোষ্টেলে থাকে না।

শহরের বাইরে এক আতœীয়র বাসায় থেকে কাস করছে। বন্দুক হাতে শিকারীর ছদ্মবেশে ওর আতœীয় বাড়ির আশে পাশে পাখি শিকারে নামলাম। যদি একটিবার দেখা হয়! ভাগ্য ভাল বলতে হবে। পড়ন্ত বিকালে দেখা গেল প্রেয়সীর। নদীর ধারে হাঁটতে বেড়িয়েছে।

সঙ্গে অচেনা একটি মেয়ে। আমাকে সে ঠিকই চিনতে পারলো। অনেকদিন পর দেখা, দেখা মাত্রই সে কেঁদে ফেললো মনের অজান্তেই। আমারও চোখ ঝাপসা হয়ে এলো, কোন কথা শব্দ হয়ে বের হতে চাইল না। দু’একটি কথা হলো আকার ইঙ্গিতে।

সঙ্গের মেয়েটি বুঝতে পারেনি। তখন ছিল রমজান মাস, একটু পরেই ইফতারের সময় হবে। তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। বিশ্বজয়ী বীরের মতো বাড়ি এসে লম্বা ঘুম দিলাম। কালের স্রোতে হারিয়ে গেল আমাদের দেখা সাাতের সুযোগ।

প্রায় ৬ মাস পরে আমার এক আতœীয়র মাধ্যমে জানতে পারলাম, আমাকে সে ভুলে যেতে অনুরোধ করেছে। বিশ্বাস করতে পারলাম না। পৃথিবীর নির্মম সত্যের মুখোমুখী আমাকে হতে হবে- একদিন খবর পেলাম দু’দিনের জন্য সে বাড়ি এসেছে। এই তো সুযোগ! এ সুযোগ হাত ছাড়া করা যায় না। গেলাম ওদের বাড়ি।

সদ্য গোসল করে ভেজা কাপড়ে উঠানে একধারে চুল শুকানোতে সে ব্যস্ত। আমি তার মুখোমুখি হলাম, দিনের বেলায় ভুত দেখার মতোই চমকে উঠলো। তার কাছে জানতে চাইলাম, এসবের মানে কি? সে কোন উত্তর দিলো না। তার ছোট ভাই এসে আমার সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করলো। নিরবে সে এসব দেখলো... কোন কথা বলল না।

ােভে নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে অচেনা মনে হলো। এই কি সেই? যে আমাকে পাগলের মতোই ভালবাসতো! নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তার চেতনাহীন নিরাসক্ত মুখটা দেখে বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠলো। তার হাত ধরে শুধু বললাম... আমাকে তুমি নিজ হাতে হত্যা করো, এভাবে আমাকে কষ্ট দিও না।

আমাকে সে শুধু বললো, একই ধরণের কষ্ট আমিও পাচ্ছি, তবুও আমি নিরুপায়। তুমি চলে যাও। এর মাঝে ওর ভাই এসে হ্যাচকা টানে তাকে ঘরে তুলে দরজা আটকিয়ে দিল, পরাজিত সৈনিকের মতো আমি পেছন দিকে পা বাড়ালাম। তার কান্না জড়িত কন্ঠ আমাকে বিচলিত করলো না। আমি তার কোন কথা শুনতে পেলাম না..... লক্ষ কোটি জনতার মাঝে হারিয়ে গেলাম।

আর পিছু ফিরবো না। আমাকে এগিয়ে যেতে হবে। সামনে আমার অনেক দায়িত্ব, একজন মানুষের জন্য জীবনকে নষ্ট করার মানে হয় না। তার ভালবাসাকে পুঁজি করেই আমি সামনের দিকে এগুলাম। হতাশায় থামা নয়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.