খুব ছোটকাল থেকে লেখালেখি করছি। গদ্য ,পদ্য দুটোই লেখার চেষ্টা করি। তবে সবাই বলে আমার গদ্যের হাত ভাল, আমিও তা মনে করি। তাই গল্প নিয়ে বেশি পড়ে থাকি। তবে পড়ালেখা ছেড়ে কখনো অন্য কিছু করার চেষ্টা করি না।
আমার সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা `প্রভাতী' নামে একটা শিশু পাত একদিন আমি আর সুমন বল খেলে বাড়ি ফিরছিলাম। তখন প্রায় সন্ধ্যা হয় হয় অবস্থা। দু’জনের মধ্যেই আজ ভয়, বাড়ি গেলে মার খেতে হবে। কিভাবে মার খাওয়া থেকে বাঁচা যায় সে বিষয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা করতে লাগলাম। কিন্তু কোন উপায়ই খুঁজে পেলাম না।
দু’জনে রাস্তা দিয়ে হাটছি পায়ের আওয়াজগুলোও ভূতোরে মনে হচ্ছে! গাছের শুকনো পাতার মর্মর আওয়াজটাও যেন ভয় পাইয়ে দিচ্ছে! ক্রমে চারদিকে নিকশ কালো অন্ধকার হয়ে এলো। আমার বুক দুরু দুরু করতে লাগল। আমি এমনিতেই ভীতু, তার উপরে এমন পরিবেশ! তাই সুমনের হাত ধরে ভয়ে কাপছি!
আমার মতো সুমন কিন্তু অতো ভয় পেতো না। ওর ভূতে বিশ্বাস নেই। ভূতের কথা বললে সে বলে, ‘যে দিন ভূত এনে সামনে দেখাতে পারবি, সেদিনই বিশ্বাস করব।
আসলে ভূত-টূত বলে কিছু নেই!’ ওকে কতবার ভূতের গল্প শুনিয়ে ভয় দেখাবার চেষ্টা করেছি,কিন্তু সব চেষ্টা বৃথা হয়েছিল।
আমরা যখন গগণ শেখের বাড়ির সীমানায় পৌঁছলাম ঠিক তখন ঝোপ থেকে একটা সাদা মূর্তি বেরিয়ে আসল। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেল। প্যান্টটা ভিজে গেল কিনা বুঝলাম না! ‘ভূত, ভূত’ বলে চিৎকার দিয়ে উঠলাম।
ভূতটা আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।
ভয়ে আমি পিছিয়ে যেতে লাগলাম। ভূতের কথা শুনে সুমনের আগ্রহ আরো বেড়ে গেল!সে বলল, ‘ওহহো, জীবনে কখনো ভূত দেখিনি, আজ আমাকে ভূত কেমন দেখতেই হবে!’ এ কথা বলে সে ভূতের দিকে এগিয়ে গেল! আমি তাকে বার বার নিষেধ করলাম, যাসনে, ভূত তোর ঘাড় মটকাবে। কে শোনে কার কথা!সে এগিয়ে গেল ভূত দেখতে।
তাকে এভাবে হঠাৎ করে এগিয়ে যেতে দেখে ভূত বাবাজিও হয়ত ভয় পেয়েছে। তাই বার বার বলতে লাগল, হাঁউ মাঁউ খাঁউ মাঁনুঁষেঁরঁ গঁন্ধঁ পাঁও।
যাঁরে পাঁবোঁ কাঁছেঁ ঘাঁড় মঁটঁকেঁ নেঁবঁ গাঁছেঁ। সুমন ভূতের কাছে গিয়ে বিনয়ের সঙ্গে বলল,‘ভূত ভাই আমি কখনো ভূত দেখিনি, আপনি যদি দয়া করে একটু আপনার চেহারাটা ভালো করে দেখাতেন তাহলে হয়ত আমার চিরদিনের আশা পূরণ হতো। ’
তখন ভূত বলল, হেঁহ্ঁহেঁ আঁমাঁরঁ কোঁনঁ চেঁহারা নেঁই, শঁরীঁরঁ নেঁই। আঁমিঁ থাঁকিঁ বাঁতাঁসেঁ, হিঁহঁহি। সুমন ছিল নাছোড়বান্দা সে যা বলে তাই করে ছাড়ে।
আমিও তা টের পেয়ে গেলাম! কিন্তু তবুও ভয়ে শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছিল!
সুমন ভূতের চেহারা দেখার জন্য জোরাজুরি করতে লাগল। আমি ভাবলাম ভূতের হাতে বুঝি ওর প্রাণটাই যায়! ঠিক তখন ভূতের ভয়ার্ত কন্ঠে শুনলাম, সাঁবঁধাঁনঁ! গাঁয়েঁ হাতঁ দিঁবিঁ নাঁ। সেও কম কিসে! ভূতের কাপড় ধরে টানাটানি শুরু করে দিল।
ওর এভাবে টানাটান দেখে আমারও ভয় কেটে গেল। আমিও ওর সঙ্গে যোগ দিলাম।
ভূতের চেহারা দেখার ইচ্ছা আমারও হলো। দু’জনের টানাটানিতে ভূতের গায়ের সাদা কাপড়টা খুলে গেল।
একি! এ তো আমাদের ক্লাসের ভল্টু। ওর পরিচয় প্রকাশ পাওয়াতে বেচারা কাঁদতে লাগল। আমাদেও ভয় দেখাতে এসে বেটা নিজেই নাকানি-চুবানি খেয়ে গেল।
দু’জনে মিলে আচ্ছামত ধোলাই দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। সেদিন থেকে ভূতের প্রতি আমিও বিশ্বাস হারালাম। ভয় পেলেই মনে হতো , ভূত বলতে কিছুই নেই। এসব হচ্ছে মনের ভীতি। সুমনের ভূতের প্রতি এত কৌতূহল থাকাতেই তো ভূতটাকে ধরতে পেরেছিলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।